আপনি হয়তো জানেন, অ্যান্ড্রয়েড লিনাক্সের উপর তৈরি; কিন্তু তারপরেও লিনাক্স ডিস্ট্র গুলোতে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ চলে না, আবার অ্যান্ড্রয়েডেও আলাদা লিনাক্স ডিস্ট্র গুলোর সফটওয়্যার গুলো চলে না। দেখুন লিনাক্স কিন্তু কোন অপারেটিং সিস্টেম নয়, এটি একটি কার্নেল, অর্থাৎ কেউ যদি বলে, “আমি আমার কম্পিউটারে লিনাক্স ইন্সটল করেছি” —এর মানে হচ্ছে, তার কম্পিউটারে ইন্সটল করা অপারেটিং সিস্টেমটি লিনাক্স কার্নেলের উপর কাজ করে। আর প্রত্যেকটি অপারেটিং সিস্টেম চলার জন্য কার্নেল প্রয়োজনীয়। কার্নেল মূলত সিস্টেম সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার গুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে দিতে সাহায্য করে থাকে। অর্থাৎ লিনাক্স নির্ভর অপারেটিং সিস্টেমের কোর হচ্ছে লিনাক্স।
ডেক্সটপ লিনাক্সে আরো কিছু বিষয় থাকে, যেমন সেখানে লিনাক্স সফটওয়্যার গুলো রান করার জন্য নিজস্ব পরিবেশ থাকে এবং এক্স গ্রাফিক্যাল সার্ভার থাকে। উবুন্টু, মিন্ট, ডেবিয়ান, ফেডোরা, ইত্যাদি সহ আরো অন্যান্য লিনাক্স ডিস্ট্র গুলোতে লিনাক্স কার্নেল ব্যতিতও আলাদা সফটওয়্যার ইন্সটল করা থাকে। জিনোম (GNOME) ডেক্সটপ ইনভারমেন্ট ইন্সটল থাকার জন্য বিভিন্ন লিনাক্স ডিস্ট্রতে ডেক্সটপ ইন্টারফেস দেখতে পাওয়া যায়। অ্যান্ড্রয়েড লিনাক্সের উপর তৈরি সত্য, কিন্তু এতে ডেক্সটপ সফটওয়্যার ব্যবহার করার জন্য পরিবেশ থাকে না, এবং অ্যান্ড্রয়েড নিজেই ভার্চুয়াল মেশিনের উপর কাজ করে, ফলে লিনাক্সের উপর তৈরি হয়েও এটি লিনাক্স সফটওয়্যার না রান করিয়ে জাভা সফটওয়্যার রান করায়। অ্যান্ড্রয়েড কেন আলাদা, এটি বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন।
তো নিশ্চয় বুঝতে পারলেন, অ্যান্ড্রয়েড এবং আলাদা লিনাক্স ডিস্ট্র গুলো আলাদা আলাদা ব্যাপার। তবে ভার্চুয়াল মেশিন বা অ্যান্ড্রয়েড এম্যুলেটর ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনি ডেস্কটপ লিনাক্সে অ্যান্ড্রয়েড সফটওয়্যার রান করাতে পারবেন, যেমনটা উইন্ডোজ কম্পিউটারে ব্লু-স্ট্যাক এম্যুলেটর ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড পরিবেশ তৈরি করা যায়। আমি এই আর্টিকেলে দেখিয়েছি, কিভাবে আপনি স্যাসলিক এম্যুলেটর ব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল গুলোকে লিনাক্সে ইন্সটল করতে পারবেন!
ইন্সটল স্যাসলিক
স্যাসলিক মূলত একটি অ্যান্ড্রয়েড এম্যুলেটর; যেটি লিনাক্স ডেস্কটপ ইউজারদের অ্যান্ড্রয়েড এপিকে রান করার সুবিধা প্রদান করে তাদের সিস্টেমে। প্রথমে স্যাসলিকের অফিশিয়াল লিঙ্ক থেকে প্যাকেজটি ডাউনলোড করে নিতে হবে। আপনি যদি উবুন্টু বা ডেবিয়ান ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে .deb এক্সটেনশন ওয়ালা ফাইলটি ডাউনলোড করুণ, আর আলাদা ডিস্ট্র ব্যবহার করলে AUR প্যাকেজ আপনার জন্য ঠিকঠাক কাজ করবে। আপনি যদি উবুন্টু ইউজার হোন সেক্ষেত্রে টার্মিনাল থেকে নিচের কম্যান্ডটি টাইপ করেও প্যাকেজটি ইন্সটল করতে পারবেন।
ব্যাস এতোটুকুই, এতে আপনার কম্পিউটারে সফটওয়্যারটি মূলত এম্যুলেটরটি ইন্সটল হয়ে যাবে। এখন আপনাকে ইন্টারনেটে যেকোনো সাইট থেকে অ্যান্ড্রয়েড এপিকে ফাইল ডাউনলোড করতে হবে, যেটা আপনি কম্পিউটারে রান করাতে চান। আপনি চাইলে এপিকে মিরর থেকে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ফাইল ডাউনলোড করতে পারেন। এবার আপনাকে আবার টার্মিনাল ওপেন করতে হবে আপনার কম্পিউটারে ফাইলটিকে ইন্সটল করার জন্য, কম্যান্ডে এপিকে ফাইলটির লোকেশন দেখিয়ে দিতে হবে আপনার সিস্টেমে কোন ফোল্ডারে সেটাকে রেখেছেন; “/opt/shashlik/bin/shashlik-install name_of_apk_file”
এবার ইন্সটল হয়ে যাওয়া অ্যাপটিকে রান করানোর জন্য সেম টার্মিনাল সেশন থেকে কম্যান্ড টাইপ করতে হবে; “/opt/shashlik/bin/shashlik-run name_of_splash_png name_of_apk_file”। ইন্সটল করার সময় কিন্তু স্যাসলিক /.local/share/shashlik এই লোকেশনে কিছু প্রয়োজনীয় ফাইল স্টোর করে।
তো ব্যাস, এভাবেই আপনি কোন অ্যাপ ইন্সটল এবং রান করাতে পারবেন। তবে অ্যাপ ইন্সটল করার পরে আপনি চাইলে আপনার কম্পিউটার অ্যাপ মেন্যু থেকেও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ গুলোকে খুঁজে পেতে পারবেন এবং রান করাতে পারবেন। যাই হোক, আপনি এই টিউন থেকে শিখে রাখলেন, কিভাবে কম্যান্ড ব্যবহার করে অ্যাপ রান করাতে হয়। যদি কোন অ্যাপ আনইন্সটল করতে চান, সেক্ষেত্রে কোন আনইন্সটলিং ফাংশন নেই, তবে /.local/share/applications এই লোকেশন থেকে অ্যাপটির সকল ফাইল গুলো ডিলিট করে দিলে অ্যাপটি আনইন্সটল হয়ে যাবে। ডাটা গুলো ডিলিট করার পরে অবশ্যই অ্যাপ মেন্যু থেকেও অ্যাপটি চলে যাবে।
জন্মের পরপরই যেমন কোন শিশু সরাসরি হাঁটতে পারে না, ঠিক তেমনি প্রথম ভার্সনের কোন সফটওয়্যার প্রথমবারেই স্ট্যাবল ভার্সন হয়না। স্যাসলিকেও অনেক ফিচারের অভাব রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ফিচারটি মিসিং তা হচ্ছে অ্যাপকে ল্যান্ডস্কেপ মুডে রান করানো। হাই হোক, একটু পোদ্দারি করলে আপনি এটা করতে পারবেন, চলুন শিখিয়ে দিচ্ছি! আপনার ফাইল ম্যানেজারকে অ্যাডমিন পারমিসনে ওপেন করুণ এবং /opt/shashlik/bin এই লোকেশন থেকে “shashlik.run ফাইলটি টেক্সট এডিটর দিয়ে ওপেন করুণ। “-noskin” খুঁজে বেড় করুণ এবং “-skin 480×320” তে যেকোনো রেজুলেসন এডিট করে সেভ করুণ। এবার নেক্সট টাইম অ্যাপ ওপেন করার সময় আপনার দেওয়া রেজুলেসনে অ্যাপটি ওপেন হবে।
আর্টিকেলটি থেকে বুঝতেই পাড়ছেন, স্যাসলিক সুপার ইজি একটি সফটওয়্যার, যেটা ইন্সটল থেকে শুরু করে ব্যবহার করা সুপার সহজ। তবে এটি কিন্তু কোন পাওয়ারফুল সফটওয়্যার নয়, এতে আলাদা আলাদা কোন ফিচারও দেখতে পাবেন না, জাস্ট ইজি টু ইউজ একটি সফটওয়্যার আর তাই এই আর্টিকেলে সফটওয়্যারটি নিয়ে আলোচনা করলাম।
লিনাক্সে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করানোর আরো অনেক অপশন রয়েছে। Genymotion, Andro VM, Andy OS, Official Android SDK, Jar of Beans —অনেক পপুলার এবং এদের মধ্যে অনেকে অনেক পাওয়ারফুল ফিচার প্রদান করে। আপনি যদি চান, তো পরবর্তী কোন আর্টিকেলে এই সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করে কিভাবে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রান করাতে হয়, সে ব্যাপারে বিস্তারিত পোস্ট লিখে ফেলবো। আপাতত স্যাসলিক ব্যবহার করতে বা ইন্সটল করতে কোন সমস্যা হলে আমাকে নিজে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
Images: Shutterstock.com