উইন্ডোজ এখনো পর্যন্ত সবথেকে জনিপ্রিয় ডেক্সটপ অপারেটিং সিস্টেম হওয়ায় উইন্ডোজের জন্য আপনি হাজার হাজার রকম প্রোগ্রামস এবং অ্যাপস পাবেন যেগুলো ব্যবহার করে আপনি আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় সবধরনের কাজই করে নিতে পারবেন। উইন্ডোজে একই কাজ করার জন্যও অনেক ধরনের আলাদা আলাদা কোম্পানির আলাদা আলাদা সফটওয়্যার সল্যুশন আছে।
কিন্তু সবগুলো সফটওয়্যার ব্যবহার করা আপনার ডেক্সটপের জন্য সেফ নয়। অনেক সফটওয়্যারে বিভিন্ন ধরনের ম্যালওয়্যার বা ক্র্যাপওয়্যার থাকে আবার অনেক সফটওয়্যার প্রোগ্রাম জাস্ট আপনার ডেক্সটপের জন্য অপ্রয়োজনীয় এবং আপনার ডেক্সটপকে অযথাই স্লো করবে। আজ এমন কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় উইন্ডোজ প্রোগ্রাম নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি যেগুলো আপনার আনইন্সটল করা উচিৎ।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
CCleaner
কিছুদিন আগেও Ccleaner ডেস্কটপে থাকা জাংক ফাইল ক্লিন করার জন্য বেশ ভালো এবং ট্রাস্টেড একটি অ্যাপ ছিলো। তবে জনপ্রিয় সিকিউরিটি এবং অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি অ্যাভাস্ট (Avast) এটিকে কিনে নেওয়ার পরে এটির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ শোনা যায়। যেমন- ফোর্স আপডেট, পারমিশন ছাড়া ইউজারের পার্সোনাল ডাটা কালেক্ট করা, ইন্সটলেশনের সময় ক্র্যাপওয়্যার অফার করা, ম্যালওয়্যার ছড়ানো, হাই স্টার্টআপ ইম্প্যাক্ট ইত্যাদি। এই সব ইস্যুর কারণে অধিকাংশ ইউজাররাই Ccleaner ব্যাবহার করা বন্ধ করেছেন। যদিও পরবর্তীতে Ccleaner তাদের এই সব সমস্যা ফিক্স করেছে, তবুও ভবিষ্যতে তারা আবার এমন কিছু করবেনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
তাছাড়া জাংক ফাইল ক্লিনার হিসেবে বর্তমানে Ccleaner খুবই অপ্রয়োজনীয়। বর্তমানে উইন্ডোজের সেটিংস মেনুতে থাকা ডিফল্ট Storage Sense অপশনটি ব্যবহার করেই আপনি ডেক্সটপের জাংক ফাইল ক্লিন করে নিতে পারেন। তাছাড়া অপ্রয়োজনীয় এবং টেম্পোরারি ফাইল ক্লিন করার জন্য উইন্ডোজে ডিফল্ট ডিস্ক ক্লিনাপ টুল আছে যা খুবই ইফেক্টিভ। এছাড়া টেম্পোরারি ফাইল আপনি উইন্ডোজের Run প্রোগ্রামে %temp% লিখে ইন্টার করেও খুঁজে পেতে পারেন এবং ডিলিট করে দিতে পারেন। তাই এখন জাংক ফাইল ক্লিন করার জন্য Ccleaner বা এমন যেকোনো থার্ড পার্টি প্রোগ্রাম ব্যবহার করার কোনই প্রয়োজন নেই।
UTorrent
এটি আমাদের দেশে খুবই জনপ্রিয় একটি টরেন্ট ডাউনলোডার প্রোগ্রাম। আমি নিজেও টরেন্ট ডাউনলোড করার জন্য সবসময় UTorrent ব্যবহার করতাম। সত্যি কথা বলতে, সারা পৃথিবীতেই টরেন্ট ডাউনলোডারের গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড ছিলো UTorrent। যারা UTorrent ব্যবহার করেন, তারা জানেন যে UTorrent এর ফ্রি ভার্সনে ইন্টারফেসের ভেতরেই অনেক বিরক্তিকর অ্যাডস থাকে যা কেউই দেখতে পছন্দ করেন না। সাধারন অ্যাডের পাশাপাশি অনেকসময় অনেক ক্ষতিকর সফটওয়্যারের অ্যাডও দেখানো হয় UTorrent এর ইন্টারফেসে। তাছাড়া ইন্সটলেশনের সময় ক্র্যাপওয়্যার তো আছেই।
এছাড়াও গত ২০১৫ সালে জানা যায় যে, UTorrent প্রোগ্রামটি ইউজারের অজান্তেই অ্যাপের সাথে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং সফটওয়্যার বান্ডেল করেছে। যদিও পরবর্তীতে UTorrent নিজেদের ডিফেন্সে বলে যে, ইউজারদের হার্ডওয়্যারে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করে তারা যা প্রোফিট করেছে, তার কিছুটা বিভিন্ন চ্যারিটিতে ডোনেট করা হয়েছে। যাইহোক, এতকিছুর পরে অবশ্যই এই অ্যাপটি এখনো ব্যবহার করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আপনি যদি এখনও ২০২১ সালেও UTorrent ইউজার হয়ে থাকেন, যত দ্রুত সম্ভব UTorrent আনইন্সটল করে টরেন্ট ডাউনলোড করার জন্য qBittorrent অ্যাপটি ব্যবহার করুন। এটি সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি, ম্যালওয়্যারফ্রি একটি ওপেন-সোর্স টরেন্ট ডাউনলোডার। UTorrent এ আপনি যেসব ফিচার পেতেন, তার সবকিছুই আপনি qBittorrent অ্যাপে পাবেন। qBittorent খুবই মিনিমাল এবং লাইটওয়েট একটি প্রোগ্রাম। সত্যি কথা বলতে, এটির থেকে বেটার টরেন্ট ডাউনলোডার আপনি উইন্ডোজের জন্য আর একটাও পাবেন না বলে আমি মনে করি।
Adobe Flash Player
আজ থেকে প্রায় ৭-৮ বছর আগে উইন্ডোজে অনেক ওয়েবসাইটে ফ্ল্যাশ কন্টেন্ট লোড করার জন্য Adobe Flash Player ইন্সটল করে রাখার দরকার পড়তো। তবে আপনি যদি এখনো না জেনে থাকেন, অ্যাডোবি গত বছরেই Adobe Flash Player এর সব ধরনের সাপোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে। এটি বন্ধ করার কারণ হচ্ছে, এখনকার ওয়েব ব্রাউজারগুলোতে কোন ওয়েবসাইটের কোন কন্টেন্ট লোড করার জন্যই আর Adobe Flash Player এর দরকার হয়না। তাই এখনো যদি আপনার ডেক্সটপে Adobe Flash Player ইন্সটল করা থাকে, তাহলে সেটার আর কোনই কাজ নেই।
যদিও এখন প্রায় সব ওয়েবসাইটই অটোমেটিক্যালি Adobe Flash Player ব্লক করবে, তবুও আপনার কাছে এটার কোন লোকাল ইন্সটলেশন থাকলে তা আনইন্সটল করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যেহেতু এটি এখন আর কোন সাপোর্টেড প্রডাক্ট নয় এবং এটার কোন আপডেটও আর কখনোই আসবে না, তাই শুধু শুধু ডেক্সটপে এটা ইন্সটল করে রাখার কোন মানেই হয়না। এটি যেহেতু একটি আনসাপোর্টেড প্রোডাক্ট, এটি আনইন্সটল করে দিলে আপনি ভবিষ্যতে এর থেকে তৈরি হওয়া যেকোনো সিকিউরিটি ইস্যু থেকে সুরক্ষিত থাকবেন।
Java
আমি যতজন অ্যাভারেজ উইন্ডোজ ইউজার দেখেছি, তাদের ১০ জনের প্রায় ৬ জনের ডেক্সটপেই জাভা ইন্সটল করা থাকতে দেখেছি। জাভা মুলত একটি রানটাইম যার দুটি পার্ট আছে- জাভা ফর ডেস্কটপ এবং জাভা প্লাগিন ফর ব্রাউজার। অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের মতোই এটি ৭-৮ বছর আগে অনেক কমন হলেও এখন আর কোন ওয়েবসাইটেরই জাভা রানটাইমের দরকার হয়না। সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে মাত্র ০.০২ শতাংশ ওয়েবসাইট জাভা রানটাইম ব্যবহার করে।
ক্রোম এবং ফায়ারফক্সের মডার্ন ভার্সন এখন জাভা রানটাইম সাপোর্টও করেনা। যদিনা আপনি একজন অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপার হয়ে থাকেন, বা এমন কোন প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ব্যবহার করেন যেখানে জাভা রানটাইমের দরকার আছে, তাহলে আপনার ডেস্কটপে এখন জাভা রানটাইম ইন্সটল করে রাখার কোনই দরকার নেই। বরং আপনার ডিভাইসটি যদি লো-এন্ড হয়, তাহলে জাভা রানটাইম আপনার ডেস্কটপকে কিছুটা স্লো করেও দিতে পারে। জাভা বেশ হেভি একটি রানটাইম। তাই ওপরে বলা কোন কারণ যদি আপনার না থাকে, তাহলে জাভা আনইন্সটল করে দেওয়াই আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। জাভা আনইন্সটল করলেও আপনি আপনার ডেস্কটপে কোন পার্থক্য লক্ষ্য করবেন না।
Microsoft Silverlight
আপনি যদি নতুন উইন্ডোজ ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো আপনি মাইক্রসফট সিলভারলাইটের নাম এই প্রথম শুনছেন। মাইক্রোসফট সিলভারলাইট ছিলো অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের মতোই আরেকটি ওয়েব ফ্রেমওয়ার্ক, যা ব্রাউজারে রিচ মিডিয়া কন্টেন্ট সাপোর্টের জন্য ব্যবহার করা হতো। তবে অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের মতোই এটিও এখন একটি ক্যানসিলড প্রোডাক্ট। রিপোর্টের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এখন ২০২১ সালে প্রায় ০.০৩ শতাংশ ওয়েবসাইট এখনো মাইক্রোসফট সিলভারলাইট ব্যবহার করে। মডার্ন ব্রাউজারগুলো ইভেন মাইক্রোসফট সিলভারলাইট সাপোর্টও করেনা।
মাইক্রোসফট সিলভারলাইট শুধুমাত্র ব্যবহার করা হয় ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্রাউজারে। তাই এখনকার সময়ে যেহেতু আপনি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহার করছেন না, তাই অবশ্যই মাইক্রোসফট সিলভারলাইট আপনার একেবারেই দরকার হবেনা। তাই যদি আপনার ডেস্কটপে এটি এখনো ইন্সটল করা থাকে, আপনি নিশ্চিন্তে তা আনইন্সটল করে দিতে পারবেন, কারণ এটা আপনার কোনই কাজে আসবে না, অন্তত ২০২১ সালে একেবারেই কাজে আসবে না। তাই ফ্ল্যাশ প্লেয়ার আর জাভা রানটাইমের সাথে এটাও আনইন্সটল করে দিন।
Windows 10 Bloatware
হ্যা, যেখানে আমরা উইন্ডোজকে কিভাবে ব্লোটওয়্যার থেকে সুরক্ষিত রাখা যায় সেই চিন্তা করতে ব্যাস্ত, সেখানে মাইক্রোসফট নিজেই উইন্ডোজ ১০ এর সাথে অসংখ্য পরিমান ব্লোটওয়্যার এবং ক্র্যাপওয়্যার ইনক্লুড করে রেখেছে যেগুলোর ব্যাপারে অনেক অ্যাভারেজ উইন্ডোজ ইউজাররাই জানেন না। ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর। উইন্ডোজ ১০ এখনো ১০০% ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম নয়। কোন অপারেটিং সিস্টেমের লাইসেন্স ১০০+ ইউএস ডলার খরচ করে কিনতে হয়, সেই অপারেটিং সিস্টেমে কেন আমাদেরকে অ্যাডস, স্পন্সরড কন্টেন্ট এবং ক্র্যাপওয়্যারের সম্মুখীন হতে হবে?
যাইহোক, কিছু করার নেই। আমরা জাস্ট এসব বিরক্তিকর জিনিসগুলো ম্যানুয়ালি ডিলিট বা আনইন্সটল করে দিতে পারি। আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ এর স্টার্ট মেনু তেমন ঘাটাঘাটি না করে থাকেন, তাহলে একবার ওপেন করে আপনার All Apps লিস্টে লক্ষ্য করলেই দেখবেন সেখানে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ প্রি-ইন্সটল করা রয়েছে যেমন- Microsoft Soltire Collection, Candy Crush SAGA, 3D Viewer, Skype ইত্যাদি এমন অনেক কিছু। এর মধ্যে যদি কোনটা আপনার দরকারী হয়ে থাকে, তাহলে সেটা রাখতে পারেন, এছাড়া আমার মতে এই সব অপ্রয়োজনীয় প্রি-ইন্সটলড অ্যাপসগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব আনইন্সটল করে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এর ফলে আপনার সিস্টেম ড্রাইভে বেশ কিছুটা স্পেসও আপনি ফ্রি করতে পারবেন।