উইন্ডোজের ডিফল্ট ফাইল এক্সপ্লোরারটি যথেষ্ট ভালো, তবে আপনি হয়তো জানতেন না যে উইন্ডোজে চাইলে আপনি আরও অনেক থার্ড পার্টি ফাইল এক্সপ্লোরার ব্যাবহার করতে পারবেন, যা ডিফল্ট ফাইল এক্সপ্লোরারটির তুলনায় অনেক বেটার ফাইল ব্রাউজিং এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারে। উইন্ডোজে আপনি ফ্রি থেকে শুরু করে অনেক পেইড ফাইল এক্সপ্লোরারও পাবেন, যা আপনাকে আরও অনেক এক্সট্রা ফিচারস এবং পারফরমেন্স বেনিফিট দেবে, যা আপনি উইন্ডোজের বিল্ট ইন ফাইল এক্সপ্লোরারে পাবেন না। আজকে এমনই কয়েকটি উইন্ডোজ ফাইল এক্সপ্লোরারের অলটারনেটিভ নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
XY Explorer
উইন্ডোজের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় একটি থার্ড পার্টি ফাইল ম্যানেজার হচ্ছে XY Explorer। এটি একইসাথে উইন্ডোজের জন্য সবথেকে ভালো ফাইল এক্সপ্লোরারগুলোর মধ্যে একটি। এর অন্যতম একটি কারন হচ্ছে, এটি খুব ছোট্ট একটি পোর্টেবল অ্যাপ। অর্থাৎ এটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে এটি ইন্সটল করার প্রয়োজন নেই। আপনি চাইলে এটি কোন ইউএসবি স্টিকে নিয়ে যেকোনো ডেক্সটপে ইনস্ট্যান্টলি ব্যবহার করতে পারবেন।
আর এটির ফিচারসেটের কথা বলতে গেলে, এটিকে কিছু এক্সট্রা ফিচারস আছে যা ক্যাজুয়াল ইউজারদের থেকে শুরু করে হার্ডকোর গিক, সবারই কাজে আসবে। যেমন- এর একটি উল্লেখযোগ্য ফিচার হচ্ছে ট্যাবড ব্রাউজিং। ওয়েব ব্রাউজারের ট্যাবসের মতো করে আপনি এটিতে নতুন নতুন ট্যাব খুলে ফাইল ব্রাউজ করতে পারবেন। ট্যাব ব্রাউজিং ফিচারটির কারনে এটি ব্যবহার করে যেকোনো ফাইল একটি ফোল্ডার থেকে ড্রাইভের অনেক ভেতরে থাকা অন্য কোন ফোল্ডারে কপি বা মুভ করা খুবই সহজ। আর এটির ফাইল ইন্ডেক্স করার স্পিডও উইন্ডোজের ডিফল্ট ফাইল এক্সপ্লোরারের থেকে অনেক বেশি ফাস্ট।
এটিতে ফাইল ডিলিট করার পাশাপাশি ফাইল শ্রেড করার ফাংশনালিটিও আপনি পাবেন, যার ফলে ডিলিট করা ফাইল আর কখনোই ফেরত পাওয়া বা রিকভার করার ব্যাবস্থা থাকবে না। যদি অনেক বেশি সিকিউরিটি কনসার্নড ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে ফাইল ডিলিট করার ক্ষেত্রেও এই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটা সমস্যা হচ্ছে, এই অ্যাপটি ফ্রি নয়। এটির আপনি ফ্রি ট্রায়াল ১ মাসের জন্য ব্যাবহার করতে পারবেন। তবে লাইফটাইম ব্যবহার করার জন্য আপনাকে এটি ৪০ ডলার ওয়ান টাইম পেমেন্ট করে কিনে নিতে হবে। যদি আপনি অ্যাপ কিনে ব্যবহার করতে হবে শুনে আশাহত হয়ে থাকেন, তাহলে লিস্টের পরের অ্যাপগুলো দেখুন। এরপরের সবগুলো অ্যাপই সম্পূর্ণ ফ্রি।
Everything
এটিকে ডিরেক্ট একটি ফাইল এক্সপ্লোরার বা ফাইল ম্যানেজার অ্যাপ বললে ভুল বলা হবে, তবে এটি একই ক্যাটাগরির অ্যাপ বলেই এই লিস্টে রাখলাম। এই অ্যাপটিও অত্যন্ত জনপ্রিয়। হয়তো অনেকেই এই অ্যাপটির ব্যাপারে অলরেডি জানেন। যাইহোক, যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি, এটি একটি লোকাল ফাইল সার্চ করার অ্যাপ। অনেকটা ম্যাক ওএসে স্পটলাইট সার্চের মতো। আপনার কোনো প্রয়োজনীয় ফাইল যদি আপনার হার্ডড্রাইভের অনেক গভীরে থাকে এবং ফাইলটি কোন ড্রাইভে কোন ফোল্ডার বা সাবফোল্ডারের ভেতরে ছিলো তা আপনার মনে না থাকে, তাহলে আপনি এই অ্যাপটি ওপেন করে ফাইলটির নাম লিখেই ফাইলটি খুঁজে পেতে পারবেন এবং ওপেন করতে পারবেন।
আপনি হয়তো বলতে পারেন যে, এটা তো উইন্ডোজের ডিফল্ট সার্চ ফিচার ব্যাবহার করেই করতে পারি। হ্যাঁ, অবশ্যই পারবেন, তবে উইন্ডোজের স্টার্ট মেনুতে থাকা সার্চ ব্যাবহার করে হার্ডড্রাইভের অনেক গভীরে থাকা কোনো একটি ফাইল খুজে পেতে অনেকসময় ৫-৭ মিনিট লেগে যায়। উইন্ডোজের ডিফল্ট ফাইল সার্চ খুবই স্লো। তার ওপরে আবার ইউজলেস Bing Search ইন্টাগ্রেশনের কারনে অনকসময় লোকাল ফাইল সার্চ করতে গিয়ে অনলাইন রেজাল্ট দেখে ফ্রাস্ট্রেশনে পড়ে যেতে হয়।
তাই ফাইল সার্চ করার জন্য উইন্ডোজ সার্চ ব্যাবহার না করে Everything অ্যাপটি ব্যাবহার করুন। এতে আপনি যেকোনো ফাইল উইন্ডোজের সার্চের থেকে অনেক দ্রুত খুঁজে পাবেন। Everything ব্যাবহার করলে ফাইল ব্রাউজ করার জন্য আপনার উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার ওপেন করার খুব কমই দরকার পড়বে। আর সবথেকে ভালো ব্যাপারটি হচ্ছে Everything খুব ছোট্ট একটি অ্যাপ এবং এটি সম্পুর্ন ফ্রি এবং অ্যাডফ্রি। এটি একট ওপেন-সোর্স অ্যাপ এবং আপনি চাইলে এটির পোর্টেবল ভার্সনও ব্যাবহার করতে পারেন। যেকোনো উইন্ডোজ ইউজারের জন্য এটি একটি মাস্ট হ্যাভ অ্যাপ বলে আমি মনে করি।
Explorer++
এটি আরেকটি ওপেন-সোর্স ফাইল এক্সপ্লোরার অলটারনেটিভ। এটিও Everything এর মতো খুব ছোট্ট একটি অ্যাপ। তবে এটি এই লিস্টের মধ্যে সবথেকে বেসিক ফাইল এক্সপ্লোরার অ্যাপ। অর্থাৎ, উইন্ডোজের ডিফল্ট ফাইল এক্সপ্লোরারে আপনি যেসব ফিচার পেয়ে থাকেন, তার সবকিছুই আপনি এতে পাবেন। তবে এটিতে আপনি কোন ফ্যান্সি ইউজার ইন্টারফেস বা এক্সট্রা অনেক বেশি ফিচার পাবেন না। তবে, এটার একটি সুবিধা হচ্ছে উইন্ডোজ ফাইল এক্সপ্লোরারের তুলনায় এটি অনেক বেশি ফাস্ট এবং এটিতে মুলত ফাইল এবং ফোল্ডারগুলো ব্রাউজ করার সময় ফাইল ইন্ডেক্স করার স্পিড খুবই ভালো।
প্রোডাক্টিভিটির কথা বললে এই অ্যাপটি এই লিস্টের প্রথম অ্যাপটির সিমিলার। এটিতেও আপনি লিস্টের প্রথম অ্যাপটির মতো ট্যাবড ব্রাউজিং সুবিধা পাবেন যার ফলে আপনি নিজের ইচ্ছামত নতুন নতুন ট্যাব খুলে আপনার ড্রাইভের আলাদা আলাদা ডিরেক্টরি ব্রাউজ করতে পারবেন এবং খুব সহজে ফাইল কপি পেস্ট করতে পারবেন। এছাড়াও আরো কিছু ভালো ফিচার আছে যেমন- ফাইল স্প্লিটিং, মার্জিং, রিয়ালটাইম ফাইল প্রিভিউ ইত্যাদি। লিস্টের প্রথম অ্যাপটির সাথে এটির পার্থক্য হচ্ছে আপনি এটিতে কয়েকটি ফিচার কম পাবেন, তবে এটি সম্পূর্ণ ফ্রি অ্যাপ এবং লিস্টের দ্বিতীয় অ্যাপটির মতো এটিও একেবারেই অ্যাডফ্রি।
Files
আমার মতে এটি এই লিস্টের সবথেকে ভালো থার্ড পার্টি ফাইল ম্যানেজার। এই অ্যাপটির নাম যেমন খুবই সিম্পল, তেমন এটির কাজও একেবারেই সিম্পল। এটি আপনার ফাইল ম্যানেজারে নতুন কোন ফিচার যোগ করবে না, তবে এটিতে আপনি যা পাবেন, তা হচ্ছে খুবই সুন্দর মডার্ন একটি ইউজার ইন্টারফেস। এটি একটি UWP অ্যাপ, অর্থাৎ এটি আপনাকে উইন্ডোজ স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে হবে। এই অ্যাপটি মুলত উইন্ডোজের ডিফল্ট ফাইল এক্সপ্লোরারকে মাইক্রোসফটের ফ্লুইড ডিজাইন সিস্টেমে রিডিজাইন করেছে এবং অ্যাপটি সত্যিকারেই দেখতে খুবই সুন্দর এবং স্মার্ট।
আপনি অবশ্যই খেয়াল করেছেন যে, উইন্ডোজ ১০ এর সেটিংস অ্যাপ, স্টোর অ্যাপ ইত্যাদির মডার্ন ডিজাইনের সাথে উইন্ডোজ এক্সপ্লোরারে ডিজাইনের আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে। উইন্ডোজ ১০ এ মুলত উইন্ডোজ ৭ এবং ৮ এর উইন্ডোজ এক্সপ্লোরার ডিজাইনটিই একইভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে। ফাইল এক্সপ্লোরারকে এখনো মাইক্রোসফটের মডার্ন ডিজাইন সিস্টেমে নতুন করে ডেভেলপ করা হয়নি। উইন্ডোজে একটি মডার্ন ফাইল এক্সপ্লোরারের অভাবটাই পূরণ করবে এই Files অ্যাপ। অ্যাপটি নিয়ে আর বেশি কিছু বলার নেই, কারণ এটির ইউজার ইন্টারফেসই এটার মূল আকর্ষন। তবে এটিতেও আপনি ট্যাব ব্রাউজিং এর সুবিধা পাবেন যা সাহায্যে অন্যান্য অ্যাপগুলোর মতোই খুব দ্রুত ফাইল কপি পেস্ট করতে পারবেন।
মাইক্রোসফট নিজেও উইন্ডোজের আগামী কোনো একটি মেজর আপডেটে তাদের ডিফল্ট ফাইল এক্সপ্লোরার রিডিজাইন করে এমন একটি মডার্ন লুক দেওয়ার চিন্তা করছে। মাইক্রোসফট নতুন ফাইল এক্সপ্লোরারের ডেমোও পাবলিশ করেছে এবং সেই ডেমোটি একেবারেই এই Files অ্যাপটির মতো। তাই আশা রাখতে পারেন যে, Files অ্যাপটির সাহায্যে আপনি মুলত আগামীর উইন্ডোজ ফাইল এক্সপ্লোরারই ব্যবহার করছেন। আর হ্যা, এই অ্যাপটিও সম্পূর্ণ অ্যাডফ্রি।