অ্যাপস ছাড়া একটি অপারেটিং সিস্টেম কল্পনাই করা যায়না। টেকনিক্যালি বলতে গেলে অ্যাপসই হচ্ছে একটি অপারেটিং সিস্টেমের প্রাণ। একটি অপারেটিং সিস্টেমে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকম অ্যাপস থাকে। নেট ব্রাউজ করার জন্য ব্রাউজার অ্যাপস, গান শোনার জন্য মিউজিক প্লেয়ার অ্যাপস, ডকুমেন্ট এডিট করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা গুগল ডক, ছবি এডিট করার জন্য ফটো এডিটর অ্যাপস এবং এমন শত শত কাজের জন্য হাজারো অ্যাপস থাকে একটি অপারেটিং সিস্টেমে।
আর অপারেটিং সিস্টেমটি যদি হয় অ্যান্ড্রয়েড, তাহলে তো কথাই নেই, প্লে স্টোরে একই কাজের জন্য কমপক্ষে ১০০ রকমের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস পাবেন। যাইহোক, আর বেশি ভূমিকা না করে কাজের কথায় আসি। আজকে আমাদের বেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস সিরিজের নবম পর্বে আরো ৫ টি এমন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস শেয়ার করবো যেগুলো আপনার বা আমার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
Mutify
এখন যেহেতু জনপ্রিয় মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিস স্পোটিফাই অফিসিয়ালি বাংলাদেশে এসেছে, এখন অনেকেই গান শোনার জন্য স্পোটিফাই ব্যবহার করছেন। তবে পেইড প্ল্যানের পাশাপাশি অনেকেই স্পোটিফাই ফ্রি প্ল্যানও ব্যবহার করছেন। পেইড প্ল্যানে অবশ্যই কোন অ্যাডস নেই, তবে যারা ফ্রি প্ল্যান ব্যবহার করেন তারা অবশ্যই গান শোনার মাঝখানে স্পোটিফাই এর হটাত করে শুরু হওয়া অডিও অ্যাডসগুলো নিয়ে খুবই বিরক্ত। এই অ্যাপটি আপনার স্পোটিফাই থেকে সব অ্যাডস রিমুভ করে দেবে না, তবে অ্যাডস নিয়ে আপনার ফ্রাস্ট্রেশন কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে।
এই অ্যাপটি ইন্সটল করা থাকলে যখনই আপনি স্পোটিফাইতে কোন একটি মিউজিক প্লে করবেন এবং এর মাঝখানে যখনই কোন বিরক্তিকর অ্যাড প্লে হওয়া শুরু করবে, তখনই এই অ্যাপটি আপনার ফোনের ভলিউম একেবারে জিরো করে দেবে। এর ফলে মিউজিকের মাঝখানে আপনাকে বিরক্তিকর লাউড অডিও অ্যাডস সহ্য করার পরিবর্তে জাস্ট কিছুক্ষন মিউজিক পজ হয়ে থাকা সহ্য করতে হবে। আর মিউজিক পজ করা নিশ্চিতভাবেই অ্যাডসের থেকে কম বিরক্তিকর। আবার অডিও অ্যাডগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আবার আপনার আগের সেট করা ভলিউমে গানটি প্লে হতে থাকবে। স্পোটিফাই ফ্রি ভার্সন ইউজারদের জন্য এটি বেশ ভালো একটি সল্যুশন হতে পারে।
Colorize
এই অ্যাপটি বেশ ইউনিক এবং ম্যাজিকাল একটি অ্যাপ। এই অ্যাপটির কাজ হচ্ছে আপনার ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ইমেজগুলোকে রঙিন ইমেজে কনভার্ট করে দেওয়া। না, এখানে ক্যামেরা ফিল্টারের সাহায্যে সাদাকালো ছবিগুলোর কথা বলা হচ্ছেনা। আমাদের অনেকের বাসাতেই আমাদের ফ্যামিলির অনেক আগের সাদাকালো ছবি থাকে, যে ছবিগুলো তোলার সময় ক্যামেরা প্রজুক্তি এতটা উন্নত ছিলো না। আপনি এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনার কাছে থাকা ২৫-৩০ বছর আগের জেনুইন ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট ফিজিক্যাল ফটোগুলোকে একবার স্ক্যান করেই সেগুলোর কালারাইজড ভার্সন বের করতে পারবেন। এটা শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যিকারেই এই অ্যাপটি ম্যাজিকের মত এই কাজটাই করে।
আর আউটপুটে আপনাকে যে কালারাইজড ভার্সন দেওয়া হয়, সেটিও একেবারেই ফেক মনে হয়না। আপনি যদি একটু সময় নিয়ে কেয়ারফুলি ছবিগুলোকে পারফেক্টলি স্ক্যান করতে পারেন, তাহলে আপনি আউটপুটে যে কালারাইজড ভার্সন পাবেন, সেটা দেখে বোঝারই উপায় থাকে না যে এটি AI ব্যবহার করে কনভার্ট করা হয়েছে। তবে এই অ্যাপটির একটাই ডাউনসাইড হচ্ছে, এটি একটি পেইড অ্যাপ। এটি লাইফটাইম ব্যবহার করতে চাইলে আপনাকে প্রতি মাসে ৬ ডলার পেমেন্ট করতে হবে। তবে এই অ্যাপটি প্রথমবার ইন্সটল করলে আপনি ৩ দিনের ফ্রি ট্রায়াল পাবেন। তাই আমি সাজেস্ট করবো, এই অ্যাপটি আপনার দরকার হলে আপনি এটি ইন্সটল করে ৩ দিনের মধ্যেই আপনার যতগুলো ইমেজ কনভার্ট করার দরকার, সব খুব দ্রুত করে নিন। আর যদি পেমেন্ট করতে চান, তাহলে করতেই পারেন।
Tap tap
আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন যে অ্যাপলের গত বছর রিলিজ করা নতুন আইফোনগুলোতে একটি ফিচার যোগ করা হয়েছে যার সাহায্যে আপনি ফোনের পেছনের দিকে কয়েকবার হালকাভাবে ট্যাপ করেই অনেক অ্যাকশন নিতে পারেন। যেমন- ফোনের পেছনে একবার ট্যাপ করে ভয়েস অ্যাসিসট্যান্ট ওপেন করা, ডাবল ট্যাপ করে নোটিফিকেশন বার নামানো, ট্রিপল ট্যাপ করে আপনার পছন্দমত কোন একটি অ্যাপ ওপেন করা ইত্যাদি। স্মার্ফোনের ডেইলি টাস্কগুলোকে আরো দ্রুত করার জন্য এটি বেশ ভাল একটি ফিচার। আপনি চাইলে এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনেও এই ফিচারটি পেতে পারেন। আপনাকে জাস্ট এই অ্যাপটি ইন্সটল করে এটিকে এর প্রয়োজনীয় পারমিশনস এবং অ্যাক্সেস দিতে হবে।
এরপরে আপনি অ্যাপটি ওপেন করে আপনি কতগুলো ট্যাপে কি কি কাজ করতে চান সেসব নিজের মনমতো সেট করে নিতে হবে। ব্যাস! এইটুকুই মুলত আপনার কাজ। এরপরে আপনি ফোনের পেছনে হালকা ট্যাপ করেই নিজের দরকারী টাস্কগুলো আরও দ্রুত ওপেন করতে পারবেন। তবে এটি ফোনের ন্যাটিভ ফিচার না হওয়ায় এখনও কিছু বাগস আছে। যেমন- অনেকসময় দেখা যায় যে অ্যাপটি আপনার ব্যাকট্যাপ সঠিকভাবে ডিটেক্ট করতে পারছে না। তবে এমন ইস্যু খুবই কম সময় আপনি দেখতে পাবেন। অধিকাংশ সময়ই এটি ফোনের ন্যাটিভ ফিচারের মতো দ্রুত কাজ করে। আর এই অ্যাপটি আপনি গুগল প্লে স্টোরে পাবেন না। অ্যাপটি ডাউনলোড করে চাইলে নিচের লিংকে গিয়ে অ্যাপটির গিটহাব রিপোজিটরি থেকে APK ফাইল ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
Macro Droid
এটি বেশ কাজের একটি অ্যাপ। এই অ্যাপটি ব্যাবহার করে আপনি ফোনে নিজের ইচ্ছামত কিছু অটোমেটেড অ্যাকশন সেট করতে পারবেন, যা আপনার স্মার্টফোন এক্সপেরিয়েন্সকে অনেক বেটার করবে। অটোমেটেড অ্যাকশন বলতে এখানে কি বোঝানো হচ্ছে তার কয়েকটি উদাহরন দেওয়া যাক। যেমন- আমরা অনেকসময়ই কলেজ বা ভার্সিটিতে ক্লাসে ঢোকার সময় ফোন সাইলেন্ট করতে বা Do not disturb মোড অ্যাক্টিভেট করতে ভুলে যাই। আপনি চাইলে এই কাজের জন্য এই অ্যাপে একটি অ্যাকশন সেট করে রাখতে পারবেন, যা আপনি আপনার ইন্সটিটিউটে ঢোকার সাথে সাথে জিপিএসের সাহায্যে ডিটেক্ট করে এরপর অটোমেটিক্যালি আপনার জন্য এই কাজটি করে দেবে।
অথবা আপনি চাইলে এমন একটি কাস্টম অ্যাকশন সেট করে নিতে পারবেন যে, ফোনে কথা বলার সময় যখনই আপনি ফোনটি আপনার কান থেকে সরিয়ে নেবেন, তখন অটোমেটিক্যালি কলটি লাউড স্পিকারে চলে যাবে। আবার যখনই আপনি ফোনটি আবার কানে ধরবেন, লাউড স্পিকার বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে আপনি নিজের ইচ্ছামত হাজার হাজার কাস্টম অ্যাকশন সেট করে সেগুলো ব্যাবহার করতে পারবেন। সঠিকভাবে সেটাপ করে নিতে পারলে এটি আপনার স্মার্টফোন এক্সপেরিয়েন্সকে সত্যিকারেই আরও অনেক বেশি সহজ করে দিতে পারে। এই অ্যাপের লাইব্রেরিতে আপনি অন্যান্য ইউজারদের তৈরি করা পাবলিক অ্যাকশনগুলোও টেমপ্লেট হিসেবে দেখতে পারবেন এবং সেগুলোকে এক ক্লিকেই আপনার নিজের ফোনেও এনাবল করে নিতে পারবেন।
Stokie
এটি একটি ওয়ালপেপার অ্যাপ। তবে এই ওয়ালপেপার অ্যাপটির স্পেশালিটি হচ্ছে আপনি এখানে প্রায় সব স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের স্মার্টফোনগুলোর বিল্ট ইন ওয়ালপেপারগুলো খুঁজে পাবে এবং সেগুলো এক ক্লিকেই আপনার নিজের ফোনে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। অ্যাপল থেকে শুরু করে গুগল পিক্সেল, স্যামসাং, শাওমি, ওপ্পো, ভিভো পর্যন্ত জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি অনেক নাম না জানা স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের বিল্ট ইন স্টক ওয়ালপেপারগুলো আপনি এখানে খুঁজে পাবেন। এছাড়া এই অ্যাপটি ফ্রিকুয়েন্টলি আপডেট করা হয়। এর ফলে কোন ব্র্যান্ডের নতুন রিলিজ করা কোন স্মার্টফোনে যদি নতুন একটি ওয়ালপেপার যোগ করা হয়, সেটিও খুব দ্রুত আপনি এই অ্যাপে খুঁজে পাবেন।
শুধু তাই নয়, আপনি চাইলে এসব স্টক ওয়ালপেপার আবার নিজের ইচ্ছামত কাস্টোমাইজ করে নিতে পারবেন। ওয়ালপেপারগুলোর ব্লার, কনট্রাস্ট, হিউ, স্যাচুরেশন সবকিছুই আপনি নিজের মতো করে সেট করে নিয়ে এরপর আপনার ফোনে অ্যপ্লাই করতে পারবেন। আপনি যদি একটি ভালো ওয়ালপেপার অ্যাপের খোঁজ করেন, তাহলে অবশ্যই এই অ্যাপটি ইন্সটল করে দেখতে পারেন। আর এই অ্যাপটির ডিজাইনও খুবই মিনিমাল এবং অ্যাপটি সম্পূর্ণ অ্যাড-ফ্রি।
uporer 3 ta app er download link nai vaia