বিটকয়েনে ইনভেস্ট রিস্ক ছাড়া আর কিছু না | বিটকয়েনের লোভে পড়ার আগে ভাবুন!

অনলাইন জগতে যারা নিয়মিত এবং প্রতিনিয়ত নানাকিছু জানার চেষ্টা করেন, তাদের কাছে কিন্তু বিটকয়েন নামটি খুবই পরিচিত। কমবেশি সবারই বিটকয়েন নিয়ে কৌতুহল – আগ্রহ রয়েছে। বিটকয়েন নিয়ে ইতিমধ্যে ওয়্যারবিডিে কয়েকটি আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়েছে। আজ আমি কথা বলব বিটকয়েন আসলেই কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে। আসলে ভবিষ্যতের জন্য বিটকয়েন কতটা ভরসাযোগ্য এ সব বিষয় নিয়ে। তবে আগে, বিটকয়েন কি এবং বিটকয়েন মাইনিং সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

প্রথমত যারা ভাবে বিটকয়েন ডলার, ইউরো এর মত কারেন্সি তারা একদম ভুল। বিটকয়েন কোনো প্রকার বৈধ কারেন্সি নয়। বিটকয়েন কোন কারেন্সী তথা দেশীয় মুদ্রার মত নয়। বিটকয়েন হল একপ্রকার ইনভেস্টমেন্ট এর ওপর নির্ভরশীল। কী পরিমান মানুষ ইনভেস্ট করল তার ওপর বিটকয়েনের বাজার মূল্য উঠানামা করে। একটি মুদ্রা তথা কারেন্সী, যেমনঃ ডলার,ইউরো,দিনার এর একটি স্টেবল মূল্য থাকে এবং এটি এর থেকে কখনও কমবেশি হয় না, তবে বিটকয়েন তার একদম উল্টো। বিটকয়েন হয়ে গেছে সোনার মত সবসময় এর দাম একরকম থাকে না। আর একারনেই বিটকয়েন কোনো কারেন্সী হয়।


বিটকয়েন এর মূল্য 

কিছুদিন হল বিটকয়েন এর মূল্য ব্যাপকভাবে ওঠানামা করছে, যার কারন বহু মানুষের বিটকয়েনের প্রতি আগ্রহ এবং এর প্রতি বিনিয়োগ এর ইচ্ছা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৬ ডিসেম্বর যেখানে ১ বিটকয়েনের এর মূল্য ছিল ১২৭৭০ ডলার, মাত্র ২৪ ঘন্টার মাথায় তার দাম বেড়ে গিয়ে দাড়ায় ১৬৫৮৩ ডলারে। আবার,নভেম্বর ৮ তারিখে বিটকয়েনের মূল্য ছিল ৭৪৫৮ ডলার তা মাত্র ৪ দিনের মাথায় কমে গিয়ে দাড়ায় ৫৮৫৭ ডলারে, অর্থাত এখানে আবার বিটকয়েনের মূল্যের ঘাটতি দেখা যায়। তবে ডিসেম্বরে অবিশ্বাস্য ভাবে বিটকয়েনের মূল্যের উর্ধ্বহার ব্যাপকহারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ৩ ডিসেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর এর ভেতর মাত্র ৩ দিনের মাথায়, বিটকয়েনের দাম ১১১৮০ ডলার থেকে বেড়ে ১২১৬৮ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। অর্থাত বিটকয়েনের রেটে আমরা সহজেই অনেক বড় বড় উঠা-নামা লক্ষ্য করতে পাচ্ছি।

বিটকয়েন এর ট্রানজেকশন স্পীড 

তো বিটকয়েন এর রেট সম্পর্কে তো ধারনা পেলাম, এবার আসল টপিকে আসি। বিটকয়েনে বিনিয়োগ বা ইনভেস্ট করা কতটা কার্যকর? কতটাইবা নিরাপদ। বিটকয়েনে ট্রানজিকশন কি ক্রেডিট কার্ড বা অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম যেমন পেপাল এর মত কি ফাস্ট? না, বিটকয়েন ট্রানজিকশন খুবই ঝামেলা পূর্ন একটি জিনিস। আপনার বিটকয়েন থেকে ডলারে ভাঙতেও আপনাকে টাকা গুণতে হবে তাদের কাছে, যেখানে আপনি আপনার বিটকয়েনগুলো স্টোর করে রেখেছেন। এখানে বিটকয়েন ট্রানজিকশন কেবল যে শুধু এক্সপেনসিভ তা নয়, এটি অনেক সময়সাপেক্ষ বটে! এক বিটকয়েন ট্রানজেকশন সম্পন্ন প্রায় ৬ ঘন্টার মত সময় লাগে, হয়ত হতে পারে আরো বেশি।

আর আরেকটু ভেবে দেখলে আমরা বুঝতে পারব যে, এক বিট কয়েন ট্রানজেকশন সম্পন্ন হতে কিন্তু বিদ্যুৎ খরচও কম হয়না। বিটকয়েন এর ট্রানজেকশন এর জন্য কয়েকটি নেটওয়ার্ক থেকে রিকুয়েস্ট কনফার্ম হয়, কয়েকদফা ডাটা এনক্রিপ্ট হয়, কয়েকটি ওয়ার্কিং কম্পিউটার এর পেছনে কাজ করে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আরও ভেবে অবাক হতে পারেন এটি জেনে যে, এক বিটকয়েন এর যেকোন রকম ট্রানজেকশন সম্পন্ন হতে যে পরিমান বিদ্যুত খরচ হয়, তা আমেরিকার এর বাড়ির সারাসপ্তাহের বিদ্যুত খরচ। আর এগুলোই বিটকয়েন ট্রানজেকশন একটু বেশি ব্যায়বহুল হওয়ার


বিটকয়েন নিষিদ্ধ জায়গার মত একটি জিনিস, অর্থাত এটি আপনাকে আকর্ষন করে ঠিকই, তবে একবার গ্রহন করলে কি হবে তা অজানা, আপনি বাটপারের বা অন্য কোনো বিপদের খপ্পরে পড়লে কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। আর হ্যাকার, স্প্যামার এর খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়তই বিটকয়েন জনিত কারনে বহু মানুষকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।

২০১৪ সালের ঘটনা, পৃথিবীর তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে বড় বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ এমটি.গক্স হ্যাকারদের কবলে পড়ে এবং তাদের সব জমানো বিটকয়েন হ্যাকাররা চুরি করে নিয়ে যায়। তাদের ৮৫০০০০ বিট কয়েন চুরি হয়ে যায়, আর যার তখনকার মূল্য ছিলো ৪৫০ মিলিয়ন ডলার, তবে এখন তার মূল্য হল প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার,ভাবা যায়?

বিটকয়েনের পেমেন্ট জনিত, ট্রানজেকশন জনিত কোনো সমস্যার জন্য কোনো প্রকার আইনী সহায়তা মেলে না। যদিও এমটি.গক্স তাদের হ্যাক হয়ে যাওয়া বিটকয়েনের জন্য আইনের সরনাপন্ন হয়েছে, তবুও তারা একটি পয়সাও উদ্ধার করতে পারেনি আর তাদের যত ক্লায়েন্ট ছিলো, যাদের টাকা এমটি.গক্সে জমা ছিলো তারাও তাদের বিনিয়োগ কৃত বা জমাকৃত টাকার দেখা পায়নি কখনও।

এভাবে প্রতিটি বিটকয়েন সম্পর্কিত যেকোন প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। আর বিটকয়েন আমাদের দেশে কোনো বৈধ কারেন্সী নয়, কেননা এতে করে দেশের বহু রাজস্ব হানি হচ্ছে। একারনে বিটকয়েন কিনতে বা পরবর্তীতে আপনি যদি কোনোরকম সমস্যার মুখোমুখি হন, তবে আপনি তো আইনী সহায়তা পাবেনই না, উল্টো আপনি সমস্যায় পড়তে

পরিশেষে 

তো এই নিয়ে আমরা দুটি বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট হলাম, একটি হল বিটকয়েন এর ভ্যালু হল আনস্টেবল বা এর মূল্য যেকোন সময় কমবেশি হতে পারে। লাভ – লোকসান দুইটা হওয়াই সমান সমান। আর এর ট্রানজেকশন স্পীড খুবই ধীর। আর অবৈধ তো বটেই!  তবে মানুষ বিটকয়েনে ইনভেস্ট করতে চায় ট্রানজেকশন এর জন্য কম, লাভবান হতে বেশি। অনেকে মাত্র ২০ হাজার টাকার মত ইনভেস্ট করে পরে তার দাম হয়ে যায় ১ লাখ আবার তার দাম ১০ হাজার হতেও সময় লাগে না। আবার অনেকসময় বিটকয়েনে ইনভেস্ট করে লাভবান হলেও তার ইউথড্র করতে বহু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেকসময় যাদের দিয়ে বিটকয়েন ডলারে বা অন্যান্য কারেন্সীতে পরিবর্তন করাতে চান, তারা ফ্রড হয়। আরেকটা সমস্যা হয় বিটকয়েনের ট্রানজেকশন স্পীড হয় অনেক।

আমরা ব্যাংক কার্ড যেমন ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে। আর এখানে পেমেন্ট জনিত অনেকসময় নানা সমস্যা ঘটেই থাকে। তখন আমাদের জন্য অনলাইনে বা ফোনের সাপোর্টের জন্য একটা সিস্টেম থাকে, আমরা তাদেরকে জানাতে পারি, আমাদের এটি কম-বেশি হয়েছে বা অন্য কিছু। কিন্তুু বিটকয়েনের ইন্টারফেসে এরকম কোনো সুবিধা নয়। আপনার পেমেন্ট যদি কোনোভাবে ইনকরাপ্টেড হয়, অর্থ খোয়া যাবে।তাই আমার কাছে বিটকয়েনে বিনিয়োগ করে লাভের সম্ভাবনা যতটুকু, তার চেয়ে নানা রকম সমস্যায় পড়া বা লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories