আলাপ অ্যাপ : বিটিসিএল এর নতুন VoIP কলিং অ্যাপ

গত কয়েকদিনে সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে হয়তো আপনি অলরেডি “আলাপ” নামের এই অ্যাপটির ব্যাপারে অনেককিছুই শুনেছেন। যদি এখনো এই অ্যাপটির নাম না শুনে থাকেন, তাহলে জেনে নিন, আলাপ অ্যাপ হচ্ছে বিটিসিএলের লঞ্চ করা একটি নতুন VoIP কলিং অ্যাপ, যা ন্যাশনাল আইডি কার্ডধারী বাংলাদেশের সব জনগনই ব্যবহার করতে পারবেন। এটিকে স্কাইপ বা গুগল ডুয়োর মতো শুধুমাত্র একটি VoIP কলিং অ্যাপ বললে ভুল বলা হবে, কারণ এখানে আপনি শুধুমাত্র VoIP কলিংই করতে পারবেন না, বরং এই অ্যাপ থেকে বাংলাদেশের যেকোনো লোকাল অপারেটরের নাম্বারে লোকাল কল করতে পারবেন।


আলাপ অ্যাপ সেটাপ প্রোসেস

এই অ্যাপটির সেটাপ প্রোসেস নিয়ে আসলে সেভাবে কিছু বলার নেই। এই ক্যাটাগরির অন্যান্য অ্যাপ আপনি যেভাবে সেটাপ করেন, সেভাবেই সেটাপ করে নিতে হবে এই অ্যাপটাও। গুগল প্লে স্টোর কিংবা অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করে নিয়ে প্রথমেই আপনাকে আপনার মোবাইল নাম্বার ইন্টার করতে হবে। এরপরে যথারীতি তারা আপনার মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই করার জন্য আপনাকে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) এসএমএস করবে।

এরপর আপনি জাস্ট OTP কোডটি অ্যাপে ইন্টার করতে পারলেই রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট। তবে সিস্টেমের কিছু বাগের জন্য অধিকাংশ সময়ই আপনি OTP কোডের এসএমএস পাবেন না। সেক্ষেত্রে OTP কোড সেন্ড করে ১ মিনিট অপেক্ষা করার পরে আপনাকে যে Call Me অপশনটা দেওয়া হবে, সেটা ক্লিক করলে আপনার ইন্টার করা ফোন নাম্বারে কল করে আপনাকে OTP কোডটা বলে দেওয়া হবে। OTP কোডের এসএমএস ঠিকমতো ডেলিভার না হলেও ফোনকলটা সাথে সাথেই পাওয়া যায়। আশা করি আপনিও ফোন কল অপশন ব্যবহার করলে খুব দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারবেন।

আইডি কার্ড ভেরিফিকেশন

বর্তমানে ন্যাশনাল আইডি কার্ড ভেরিফিকেশন ছাড়া কোন VoIP অ্যাপই বাংলাদেশের কোন লোকাল নাম্বারে কল করতে দেয়না। আলাপ অ্যাপ এর ক্ষেত্রেও এই একই রেস্ট্রিকশন আছে। আপনার কন্টাক্ট লিস্টের কেউ যদি অলরেডি আলাপ অ্যাপ ব্যবহার করে, তাহলে আপনি কোন আইডি কার্ড ভেরিফিকেশন ছাড়াই এবং কোনরকম চার্জ ছাড়াই অ্যাপ-টু-অ্যাপ কল করে তার সাথে কথা বলতে পারবেন, যেমনটা আমরা ফেসবুক মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে করি। তবে কোন লোকাল নাম্বারে কল করার আগে আপনাকে NID কার্ড ভেরিফাই করে নিতে হবে।

সাধারনত রেজিস্ট্রেশণ করার পরেই আইডি কার্ড ভেরিফিকেশন করতে অফার করা হবে। তবে আপনি চাইলে এটা স্কিপ করে পরবর্তীতেও করতে পারবেন। তবে অ্যাপটি ব্যাবহার করে লোকাল নাম্বারে কল করার প্ল্যান থাকলে প্রথমেই আইডি কার্ড ভেরিফাই করে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এর জন্য আপনাকে জাস্ট রেজিস্ট্রেশনের পরে নেক্সট স্ক্রিনে আইডি কার্ডের ছবি তুলতে বলা হলে আপনার আইডি কার্ডটির ফ্রন্ট এবং ব্যাক দুই সাইডের ক্লিয়ার ছবি ক্যাপচার করতে হবে। আইডি কার্ডের ব্যাক সাইডের কিউআর কোডটি যাতে স্পষ্ট দেখা যায়, তাই ছবি তোলার সময় ফ্ল্যাশ ব্যাবহার না করাই ভালো। আর ছবিটা ন্যাচারাল লাইটে তুললে ভেরিফাই করাটা সহজ হবে। আইডি কার্ডের ছবিদুটি সাবমিট করার পরে আইডি কার্ড স্ক্যান করে অটোমেটিক্যালি আপনার নাম, অ্যাড্রেস এসব ইনফরমেশন নিয়ে নেওয়া হবে।

এরপরে আপনাকে নিজের একটি সেলফি তুলে সাবমিট করতে হবে যাতে আপনিই আইডি কার্ডটির মালিক কি না তা ভেরিফাই করা সম্ভব হয়। আইডি কার্ড এবং সেলফি ভেরিফাই করা হয়ে গেলে আপনি অ্যাপের সকল ফিচার নিশ্চিন্তে ব্যাবহার করতে পারবেন। অনেকেই কমপ্লেইন করেছেন যে তাদের আইডি কার্ড ভেরিফাই করা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে, তবে আমাকে ভেরিফিকেশন নিয়ে কোন ঝামেলায় পড়তে হয়নি। নতুন স্মার্ট কার্ডের ক্ষেত্রে কি হবে আমি বলতে পারবো না, তবে আমার পুরনো আইডি কার্ড দিয়ে কোন ঝামেলা ছাড়াই ভেরিফাই করতে পেরেছি। আশা করি আপনাকেও কোন সমস্যায় পড়তে হবে না।

ইউজার ইন্টারফেস

সত্যি কথা বলতে, একইধরনের আরও যত অ্যাপ আমাদের দেশে আছে, এর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় দুটি অ্যাপই আমি ব্যাবহার করেছি। তবে “আলাপ” অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেস আমার কাছে সবথেকে সুন্দর এবং সবথেকে মডার্ন মনে হয়েছে। ডিপ ব্লু অ্যাকসেন্ট কালারের অ্যাপটির ইউজার ইন্টারফেস খুবই সিম্পল এবং ক্লিন। অ্যাপটিতে মোট ৫ টি আলাদা আলাদা ট্যাব  আছে, যার একটিতে আপনার করা সাম্প্রতিক কলগুলোর লিস্ট, পাশের ট্যাবে আপনার কন্টাক্ট বুক, তারপাশে আপনার টেক্সট কনভারসেশন হিস্টোরি এবং শেষের ট্যাবদুটির একটিতে নতুন কল করার জন্য ডায়াল প্যাড এবং আরেকটিতে আপনার প্রোফাইল ও আলাপ অ্যাপের অন্যান্য ইনফরমেশন জানতে পারবেন।

বাংলাদেশ সরকারের তৈরি অন্যান্য অধিকাংশ অ্যাপের ইউজার ইন্টারফেস যেমন আউটডেটেড এবং খুব ল্যাগি হয়, আলাপ অ্যাপ এর ইউজার ইন্টারফেস একেবারেই তেমন ছিলো না। ডিজাইন এবং রেসপন্সিভনেসের দিক থেকে এটি যেকোনো মেইনস্ট্রিম VoIP কলিং অ্যাপের সমতুল্য বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। যদিও অ্যাপের কিছু কিছু জায়গায় অনেক আনফিনিশড ইনফরমেশন আছে, তবে আশা করা যায় যে আগামী কিছুদিনের মধ্যে তা ফিক্স হয়ে যাবে।

ফিচার সেট

ফিচারসের কথা বলতে গেলে, এর সাহায্যে অবশ্যই আপনি আরেকজন “আলাপ” ইউজারের সাথে ফ্রি ভয়েস কল, ফ্রি ভিডিও কল এবং ফ্রি টেক্সট বেজড চ্যাট করতে পারবেন। শুধু টেক্সট চ্যাট নয়, আপনি চাইলে টেক্সটে ইমেজও সেন্ড করতে পারবেন। অর্থাৎ, বেসিক একটি অনলাইন মেসেজিং অ্যাপে আপনি যা যা করতে পারেন, সেগুলো আপনি এখানেও করতে পারবেন। তবে আপনার কন্টাক্ট লিস্টের কোন ইউজার যদি আলাপ অ্যাপ ব্যাবহার না করেন, কিংবা যদি “আলাপ” অ্যাপ ব্যাবহার করেন কিন্তু তার ইন্টারনেট কানেকশন না থাকে, তাহলে তার ফোন নাম্বারেও আপনি অ্যাপ থেকে সরাসরি কল করতে পারবেন, যার চার্জ হবে প্রতি মিনিটে ৩০ পয়সা। তবে তার সাথে চ্যাট করার জন্য বা ভিডিও কলিং করার জন্য অবশ্যই তাকেও এই অ্যাপটি ব্যাবহার করতে হবে।

বাংলাদেশ সরকারের তৈরি অন্যান্য অধিকাংশ অ্যাপের ইউজার ইন্টারফেস যেমন আউটডেটেড এবং খুব ল্যাগি হয়, আলাপ অ্যাপ এর ইউজার ইন্টারফেস একেবারেই তেমন ছিলো না। ডিজাইন এবং রেসপন্সিভনেসের দিক থেকে এটি যেকোনো মেইনস্ট্রিম VoIP কলিং অ্যাপের সমতুল্য বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। যদিও অ্যাপের কিছু কিছু জায়গায় অনেক আনফিনিশড ইনফরমেশন আছে, তবে আশা করা যায় যে আগামী কিছুদিনের মধ্যে তা ফিক্স হয়ে যাবে।

৩০ পয়সা প্রতি মিনিটের এই রেটটি শুধুমাত্র লোকাল অপারেটরের জন্য নয়, আপনি এই একই রেটে বাংলাদেশের যেকোনো ল্যান্ডলাইনেও ফোন করতে পারবেন। আপনি আইডি কার্ড ভেরিফাই করার পরে সব ধরনের লোকাল নাম্বারে কল করার জন্য আপনাকে অ্যাপ থেকেই একটি নতুন কাস্টোমাইজড নাম্বার অ্যাসাইন করে দেওয়া হবে। আপনি কাউকে কল করলে সে আপনার এই কাস্টোমাইজড নাম্বারটিই কলার হিসেবে দেখতে পাবেন।

তবে এই কাস্টোমাইজড নাম্বারটি তৈরি করা হবে আপনি যে নাম্বার ব্যাবহার করে রেজিস্ট্রেশন করেছেন, সেই নাম্বারের শেষের ৬ টি ডিজিটের আগে 09696 যোগ করে। অর্থাৎ আপনার রেজিস্টার করা নাম্বারটি যদি হয় 01715123456, তাহলে আপনার “আলাপ নাম্বার” হবে +8809696123456। কেউ যদি আপনার এই আলাপ নাম্বারে আবার কল ব্যাক করে, তাহলে আপনি আলাপ অ্যাপ থেকে সেই কলটি রিসিভ করতে পারবেন। তবে কল রিসিভ করার জন্য আপনার ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে।

আর হ্যা, আপনি আলাপ অ্যাপ ব্যাবহার করে বাংলাদেশের যেকোনো বিজনেস নাম্বার বা হেল্পলাইনের নাম্বারে সম্পূর্ণ বিনামুল্যে কল করতে পারবেন, যেগুলো ৫ ডিজিটের হয়ে থাকে বা +8809 দিয়ে শুরু হয়ে থাকে। এসব নাম্বারে কল করার জন্য আপনাকে কোনরকম চার্জ দিতে হবে না।

“আলাপ” অ্যাপের পেমেন্ট মেথড নিয়েও আপনাকে কোন চিন্তা করতে হবে না। আপনি আপনার ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড কিংবা বিকাশ বা নগদ মোবাইল ওয়ালেট ব্যাবহার করেই আলাপ অ্যাপে রিচার্জ করতে পারবেন। ১০ টাকা থেকে শুরু করে আপনার নিজের ইচ্ছামত অ্যামাউন্ট সহজেই রিচার্জ করতে নিতে পারবেন। মিনিমাম অ্যামাউন্ট হিসেবে ১০ টাকা রিচার্জ করে আপনি ৩০ মিনিট যেকোনো লোকাল নাম্বারে কথা বলতে পারবেন।

আলাপ অ্যাপের Rates সেকশনে বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও অনেকগুলো দেশের নাম লিস্টে দেখেছি। যদিও বাংলাদেশ ছাড়া আর কোন দেশেই এই মুহূর্তে কল করা যায়না, তবে যেহেতু লিস্টে আরো অনেক দেশ আছে, আশা করা যায় ভবিষ্যতে আলাপ অ্যাপ ব্যাবহার করে ইন্টারন্যাশনাল কলও করা সম্ভব হবে। আর হ্যা, আলাপ অ্যাপের আরেকটা ভালো ফিচার যেটা অন্যান্য অধিকাংশ সিমিলার অ্যাপে নেই, তা হচ্ছে, আপনি আলাপ অ্যাপ থেকে করা সকল লোকাল কল রেকর্ড করেও রেখে দিতে পারবেন আপনার ডিভাইসে।

অ্যাপে একটি Referral অপশনও দেখেছি, যেখানে খুব সম্ভবত আপনার বন্ধুদের এই অ্যাপে রেফার করার বিনিময়ে আপনার অ্যাকাউন্টে কিছু ব্যালেন্স কমিশন হিসেবে দেওয়া হয়। তবে এটা আমি এখনো ট্রাই করে দেখিনি।

কল কোয়ালিটি

সত্যি কথা বলতে কল কোয়ালিটি যদি আপনি এই অ্যাপ থেকে অনেক ভালো এক্সপেক্ট করেন, তাহলে হতাশ হবেন। নিশ্চিতভাবেই ব্রিলিয়ান্ট এবং অন্যান্য সিমিলার অ্যাপগুলোর থেকে এটার ভয়েস কোয়ালিটি কিছুটা বেটার, তবে খুব ভালো নয়। আপনি সাধারনত একটি ফোন থেকে আরেকটি ফোনে লোকাল কল করলে যেমন ভয়েস কোয়ালিটি পেয়ে থাকেন, তেমনই ভয়েস কোয়ালিটি পাবেন আলাপ অ্যাপ ব্যাবহার করে কোন লোকাল নাম্বারে কল করার সময়। তবে যদি দুজন ইউজারই আলাপ অ্যাপ ব্যাবহার করে অ্যাপ-টু-অ্যাপ ফ্রি কল করেন, সেক্ষেত্রে ভয়েস কোয়ালিটি লোকাল কলের থেকে অনেকটা বেটার পাওয়া যায়।

তবে, এক্ষেত্রে ভয়েস কোয়ালিটি অনেকটাই নির্ভর করে আপনার ইন্টারনেট কোয়ালিটি কেমন তার ওপরে। তাই আপনার ইন্টারনেট ভালো থাকলে আপনি মোটামুটি ডিসেন্ট কোয়ালিটির এবং ডিসেন্ট লেটেন্সির ভয়েস কল এক্সপেক্ট করতে পারেন। উল্লেখ্য, আপনি সবসময়ই ৪জি নেটওয়ার্ক বা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যাবহার করে কল করেছি। থ্রিজি বা টুজি নেটওয়ার্কে ভয়েস কোয়ালিটি এবং লেটেন্সি তেমন ভালো নাও হতে পারে। থ্রিজি নেটওয়ার্কে মোটামুটি চললেও খুব সম্ভবত টুজি নেটওয়ার্কে এই অ্যাপ ব্যাবহার না করাটাই ভালো। তবে যারা ফোরজি ব্যাবহার করেন, তারা ভয়েস কোয়ালিটি বা লেটেন্সি নিয়ে কোন সমস্যায় পড়বেন না, এমনটাই আশা করা যায়।

ব্রিলিয়ান্ট অ্যাপে অনেকসময় একটা সমস্যা দেখা যায়। তা হচ্ছে, পিক আওয়ার অর্থাৎ সন্ধার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অনেকসময় কল ড্রপ করে বা কল কানেক্ট হতে অনেক বেশি সময় নেয় কিংবা ভয়েস কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যায়, যেহেতু সেই সময় ইউজার লোড অনেক বেশি থাকে। আলাপ অ্যাপে আমি এখনো পর্যন্ত এই ধরনের কোন ইস্যু লক্ষ্য করিনি। তবে এমন কোন ইস্যু ভবিষ্যতে হবে কিনা তাও নিশ্চিতভাবে বলা যায়না, যেহেতু বর্তমানে আলাপ অ্যাপ এর ইউজার খুবই কম। ইউজার আরও বাড়লে ভবিষ্যতে এমন সমস্যা হতেই পারে।

Images: Shutterstock.com

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories