আমাদের মোবাইল ফোন গুলো সেল নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত হতে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা আরএফ (RF) ব্যবহার করে। টেকনিক্যালি আজকের দিনে আপনি মোবাইল সিগন্যাল বাদেও আপনার ফোনে ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনেক কিছুই করতে পারেন। কিন্তু মোবাইল কানেকশনে যে মজা, সেটা ওয়াইফাই এ কই? — আপনি যেখানেই যান বিনা দ্বিধায় কলিং, টেক্সট ম্যাসেজিং, ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে পারেন এই রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির বদৌলতে।
মোবাইল ফোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড কি, এগুলো কিভাবে কাজ করে, আপনার মোবাইল অপারেটর কোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলো ব্যবহার করে আপনাকে সার্ভিস প্রদান করছে, এই সবকিছু জানলে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে, আপনার বর্তমান অপারেটর থেকে সম্ভবত কেন সিগন্যাল এবং গতি কম পাচ্ছেন, কিংবা আপনার এরিয়াতে কোন অপারেটর বেস্ট সার্ভিস প্রদান করছে।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
মোবাইল ফোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড
মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে আজকের সকল আধুনিক যোগাযোগ ব্যাবস্থা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমেই নিশ্চিত করা হয়। বেতার তরঙ্গ হচ্ছে এক ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এনার্জি। এটি ইলেক্ট্রিসিটি এবং ম্যাগ্নেটিজমে মিশ্রিত একটি এনার্জি যা আমাদের চারপাশে সমুদ্রের মতো বিরাজমান।
সমুদ্রের ঢেউ এর মতোই বেতার তরঙ্গেরও রয়েছে একটি নির্দিষ্ট গতি, দৈর্ঘ্য, এবং ফ্রিকোয়েন্সি (কম্পাঙ্ক)। তরঙ্গ গতি নির্দেশ করে যে এটি একটি স্থান থেকে আরেকটি স্থানে কতো দ্রুত যেতে পারবে। আর একটি তরঙ্গ শিখর থেকে আরেকটি তরঙ্গ শিখরের দূরত্ব নির্দেশ করে তরঙ্গদৈর্ঘ্য, যেখানে ফ্রিকোয়েন্সি মানে হলো প্রত্যেক সেকেন্ডে কতোগুলো তরঙ্গ পৌঁছাতে পারে তার নাম্বার।
ফ্রিকোয়েন্সি পরিমাপ করার এককের নাম হলো হার্জ (hertz)। অর্থাৎ এক সেকেন্ডে যদি ৭টি তরঙ্গ এসে পৌঁছায় তবে আমরা একে বলবো ৭ হার্জ (7 Hz)। এবার আবার ভাবুন সমুদ্র ঢেউ এর কথা—সমুদ্র ঢেউ কয়েক সেকেন্ড পরপর সমুদ্র কিনারায় গিয়ে আছড়ে পড়ে। একই ঢেউ শুধু কিছু সময়ের ব্যাবধানে বারবার আসে। ঠিক একই ভাবে এখানে ফ্রিকোয়েন্সি মানে হলো একই তরঙ্গ প্রত্যেক সেকেন্ডে ফিরে আসা।
তো বুঝতেই পারছেন, তরঙ্গে কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সি যতোবেশি, তরঙ্গ ততোই দ্রুত নড়াচড়া করতে পারবে এর মানে এতে বেশি ডাটা আদান প্রদান করানো যেতে পারে। সকল মোবাইল ফোন ফ্রিকোয়েন্সি গুলো ৩ কিলোহার্জ থেকে ৩০০ গিগাহার্জ স্পেক্ট্রাম এর নিচে পড়ে।
বাংলাদেশে রেডিও স্পেকট্রাম বিতরণে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (Bangladesh Telecommunication Regulatory Commission) বা বিটিআরসি (BTRC) প্রধান ভূমিকা পালন করে। তারা রেডিও স্পেকট্রাম কে নানান ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জে বিভক্ত করে মোবাইল অপারেটরদের ভাড়ায় ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করে। নানান রেঞ্জে বিভক্ত করা এই সেলুলার ফ্রিকোয়েন্সি কেই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড বলা হয়, আর এই সেলুলার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড এর রেঞ্জ সাধারনত ৬০০ মেগাহার্জ থেকে ৩৯ গিগাহার্জ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
এখন মোবাইল অপারেটর গুলো সরকারের কাছ থেকে নানান ফ্রিকোয়েন্সি গুলো ভাড়া নিয়ে থাকে যাতে তাদের ইউজারদের সেই ফ্রিকোয়েন্সি গুলো ব্যবহার করে নিজেদের নেটওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত করতে পারে। এই ফ্রিকোয়েন্সি গুলো ব্যবহার করেই ইউজাদের ডিভাইজ গুলো মোবাইল অপারেটরদের সেল টাওয়ারের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারে।
আপনার মোবাইল অপারেটর কিন্তু আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে
কোন নির্দিষ্ট সেলুলার ব্যান্ড ব্যবহার করার জন্য মোবাইল অপারেটর দের বিটিআরসি থেকে ঐ ব্যান্ড এর জন্য লাইসেন্স গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কোন অপারেটরকে সম্পূর্ণ ব্যান্ড ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়না বরং একটি লাইসেন্স কেবল কোন নির্দিষ্ট বড় ব্যান্ড এর ছোট একটি অংশ ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। কোন ব্যান্ড এর ছোট ছোট এই অংশ গুলোকে ব্লক বা চ্যানেল বলা হয়।
এরমানে দুইটি আলাদা আলাদা অপারেটর একই ব্যান্ড ব্যবহার করে সার্ভিস প্রদান করে কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা চ্যানেল থেকে। এতে এক মোবাইল অপারেটর এর সিগন্যাল আরেক মোবাইল অপারেটর এর সিগন্যাল এর সাথে জড়িয়ে পেচিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। অপরদিকে ছোট সাইজের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলোতে আলাদা আলাদা ব্লক বা চ্যানেল থাকে না, এগুলো সংরক্ষিত ভাবে কোন অপারেটরকে দিয়ে দেওয়া হয়।
এখন এই কেনা ব্লক বা চ্যানেল গুলো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রাম এর আলাদা আলাদা সেকশনে বন্টিত করা হয়ে থাকে। তারা একসাথে হাই ফ্রিকোয়েন্সি এবং লো ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে পারে। লো ফ্রিকোয়েন্সি বেশি ভালো ভাবে গাছপালা, পাহাড় পর্বত কিংবা উঁচু উঁচু বিল্ডিং গুলো ভেদ করতে সক্ষম, এতে বেটার কভারেজ পাওয়া যেতে পারে। অপরদিকে হাই ফ্রিকোয়েন্সি লো ফ্রিকোয়েন্সির মতো এতো বেশি বাঁধা ভেদ করতে পারে না, কিন্তু বেশি স্পীড প্রদান করতে সক্ষম। এরমানে গ্রামের জন্য লো ফ্রিকোয়েন্সি বেশি ভালো আর শহরের জন্য হাই ফ্রিকোয়েন্সি!
এখন, ইউজাদের ভালো নেটওয়ার্ক এবং ব্যান্ডউইথ সেবা প্রদান করার লক্ষে মোবাইল অপারেটরদের একসাথে নানান স্পেকট্রামের উপরে লাইসেন্স নেওয়ার দরকার পড়ে। আর অপারেটর গুলো একই সাথে নানান মোবাইল ফোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার করে।
সেলুলার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড কিভাবে কাজ করে?
কোন মোবাইল অপারেটর নেটওয়ার্ক এর সাথে আপনার মোবাইল ডিভাইজটি যুক্ত করতে চাইলে অবশ্যই ডিভাইজটির প্রথমে নেটওয়ার্ক থেকে অনুমতি গ্রহণ করার দরকার পড়ে। এই অনুমতি গ্রহনে সিম কার্ড সাহায্য করে থাকে। প্রত্যেকটি মোবাইল অপারেটরদের নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ থাকে যেখানে কাস্টমাদের তাদের ইউনিক নেটওয়ার্ক এ যুক্ত হওয়া এবং তথ্য আদান প্রদান করতে সাহায্য করে। এরমানে, আপনার মোবাইল অপারেটর যে ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার করে, শুধু সেই ব্যান্ড ব্যবহার করেই আপনার সেলফোন সেল টাওয়ারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
আলাদা আলাদা চ্যানেলে অপারেটর গুলো একই ব্যান্ড বা আলাদা ব্যান্ড গুলো ট্র্যান্সমিট করে।
বেশির ভাগ রেডিও ব্যান্ড এ মূলত দুইটি জোড়া ব্যান্ড থাকে, একটি ব্যবহার করে আপনার মোবাইল ফোন সেল টাওয়ারে তথ্য সেন্ড করে যেটাকে আপলিঙ্ক বলা হয়। আরেকটি ব্যান্ড এ সেল টাওয়ার আপনার মোবাইলে কোন তথ্য সেন্ড করে যেটাকে ডাউনলিঙ্ক বলা হয়। এই দুইটি ব্যান্ড এর মাঝখানে আবার একটি গার্ড ব্যান্ড থাকে যেটা এই দুইটি আলাদা ব্যান্ডকে পেঁচিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
তো এই ধরণের সেলুলার ফ্রিকোয়েন্সি ট্রাঞ্জিশনকে, ফ্রিকোয়েন্সি ডিভিশন ডুপ্লেক্স বা এফডিডি (FDD) বলা হয়ে থাকে। ডাউনলিঙ্ক এবং আপলিঙ্ক এর জন্য আলাদা আলাদা ব্যান্ড ব্যবহার করার জন্য এই সিস্টেমে চলা সেলফোন বেশি দক্ষতার সাথে ভয়েস কল এবং ডাটা হ্যান্ডেল করতে পারে।
আর অন্য ব্যান্ড গুলো টাইম ডিভিশন ডুপ্লেক্স বা TDD ব্যান্ড ব্যবহার করে তথ্য ট্রান্সমিট করে। এখানে FDD এর মতো আলাদা আলাদা ব্যান্ড ব্যবহার না করে বরং সিঙ্গেল ব্যান্ড এর সাহায্যে আপলিঙ্ক এবং ডাউনলিঙ্ক ট্রান্সমিশন করানো হয়। এটা এতো দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করতে পারে যে সিঙ্গেল ব্যান্ড ব্যবহার করার পরেও ইউজাররা তেমন লেটেন্সি ফিল করতে পারে না। তবে ইউজার অনেক বেশি হলে TDD সেল নেটওয়ার্ক কে স্লো করে দিতে পারে।
তো আমরা এতক্ষণে জানলাম মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড নিয়ে, কেন অপারেটর রা আলাদা আলাদা ব্যান্ড ব্যবহার করে সেই ব্যাপারে এবং সেলুলার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড কিভাবে কাজ করে এই বিষয় গুলো। এবার আরো বিস্তারিত আলোচনায় প্রবেশ করার পূর্বে আমাদের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলো হালকা কিছু ইতিহাস যেনে নিতে হবে এবং মোবাইল টেকনোলজির জনপ্রিয় টার্ম গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। তারপরেই আমরা মোবাইল অপারেটর রা আসলে কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে আপনার পর্যন্ত সেল সিগন্যাল পৌছায় এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে!
মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা ২জি, ৩জি, ৪জি মোবাইল টেকনোলজি গুলো নিয়ে আলোচনা করা শুরু করবো। কিন্তু তার পূর্বে মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস না যেনে নিলেই নয়। এখনকার ৪জি মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক বেশি উন্নত আর শতশত মেগাবিট ডাটা ট্র্যান্সফার করার ক্ষমতা সম্পন্ন হলেও প্রথম দিকের ব্যাপারটা মোটেও এতো চাকচিক্য ছিলো না। প্রথম মোবাইল টেকনোলজির নাম ছিলো AMPS বা অ্যাডভান্সড মোবাইল ফোন সার্ভিস, এখানে স্ট্যান্ডার্ড ছিলো ৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড ব্যবহার করে ভয়েস ট্রান্সমিশন করা।
খুবই দ্রুত মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় আর এই ৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড মোটেও বেশি ইউজার সাপোর্ট করার জন্য আদর্শ থাকে না। এরপরে ১৯০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড চালু করা হয় যেটাকে পার্সোনাল কমিউনিকেশন সার্ভিস বা PCS নাম দেওয়া হয়। AMPS এবং PCS এই দুইটি ব্যান্ডই সেলুলার ফ্রিকোয়েন্সিতে শুধু মাত্র ব্যান্ড রুপে বহুদিন যাবত ব্যবহৃত হয়।
এভাবে বছরের পর বছর কেটে যায়, আর মোবাইল ফোন শুধু কল করার জন্য নয় বরং ম্যাসেজিং এবং ইন্টারনেট ডাটা আদান প্রদানেরও প্রধান উৎস হয়ে উঠে, মানে আরো বেশি ব্যান্ডউইথ জরুরী হতে থাকে। এরপরে হাই ডাটা স্পীড সরবরাহ করানোর জন্য অ্যাডভান্সড ওয়্যারলেস সার্ভিস বা AWS ব্যান্ড এর সাথে পরিচিত করানো হয় যেটা হচ্ছে ১৭০০/২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড। পরে বেশি কভারেজ দেওয়ার লক্ষে ৭০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড এর সাথে কাজ করা শুরু করা হয়।
তো এই হচ্ছে মোবাইল ফোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলোর গ্লোবাল ইতিহাস। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে গল্পটা আরো অনেক পরের। এখানে একদিকে রবি, বাংলালিংক, গ্রামীনফোন, টেলিটক জিএসএম টেকনোলজিতে ৯০০ এবং ১৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো, অপরদিকে সিটিসেল একমাত্র অপারেটর যারা সিডিএমএ ৮০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড নিয়ে সেবা প্রদান শুরু করে। পরে ২০১৩ সালে সিটিসেল বাদে বাকি অপারেটর গুলো ২১০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড এর লাইসেন্স গ্রহণ করে ৩জি (UMTS/HSDPA+) সেবা প্রদান করার লক্ষে।
বাংলাদেশে শুরু থেকেই অপারেটর রা অ্যাডভান্সড ওয়্যারলেস সার্ভিস বা AWS ব্যান্ড গুলো দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও সারাদেশে কভারেজ বিস্তার করতে অনেক দেরি করে ফেলে সাথে শুরুর দিকে কল রেট মারাত্মক হাই থাকার কারনে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বাড়তেও অনেক দেরি হয়ে যায়।
যাইহোক, পরে ৪জি প্রদানের সময়ে কোন অপারেটরই আর নতুন কোন ব্যান্ড এর লাইসেন্স গ্রহণ করেনি। সব অপারেটর গুলো তাদের বর্তমানে লাইসেন্স নেওয়া ব্যান্ড গুলোতেই ৪জি প্রদান করা শুরু করে। তবে দেশে ছোট কিছু ওয়্যারলেস অপারেটর ছিল যারা ওয়াইমাক্স টেকনোলজি ব্যবহার করে ৪জি সেবা সরবরাহ করছিলো। এদের মধ্যে বাংলালায়ন ওয়াইমাক্স অন্যতম, তাছাড়া আরো রয়েছে অলো এবং কিউবি যারা ২৫০০ মেগাহার্জ ব্যান্ড ব্যবহার করে ওয়াইমাক্স ৪জি সেবা প্রদান করছিলো। এখন এদের কি অবস্থা, আমার জানান নেই!
তো একটা জিনিস নিশ্চয় খেয়াল করেছেন, যতো প্রযুক্তি উন্নতি লাভ করছে যতো বেশি বেশি ব্যান্ডউইথ জরুরী হয়ে পড়ছে মোবাইল অপারেটর গুলোদের আলাদা আলাদা ব্যান্ড ব্যাবহারের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন- ৫জি আসার পরে আরো ব্যান্ডউইথ এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে ফলে নতুন ব্যান্ডের লাইসেন্স নেওয়া অপরিহার্য হয়ে উঠবে!
১জি
১৯৭০ সালের দিকে মোবাইল টেলিফোন প্রযুক্তি বাজারে চলে এসেছিলো। মানুষ তখন যেখানে ইচ্ছা সেখান থেকে তার মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে একে অপরের সাথে কথা বলতে পারতো। এখন যদি একই ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার করে সকলে কল করে তাহলে সকলের কল গুলো একে অন্যের সাথে গুলিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা ছিল এবং কল ব্যর্থ হতো। তাই প্রত্যেকটি কলকে আলাদা আলাদা ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ডে বিভক্ত করা হয়েছিলো যাতে আলাদা আলাদা ব্যাক্তি সম্পূর্ণ আলাদা লাইন ব্যবহার করে কল করতে পারে।
আর এই সিস্টেমকে বলা হতো—ফ্রিকুয়েন্সি ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস (Frequency-division multiple access) বা এফডিএমএ (FDMA)। আর এই পদ্ধতিতেই আগের ফোন গুলো কাজ করতো। এফডিএমএ এর সাধারন অর্থ হলো এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ প্রত্যেকটি কলের জন্য আলাদা ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার করে তাদের কলকে আলাদা রাখবে। এফডিএমএ ফোন গুলো অনেকটা ল্যান্ড লাইন ফোনের মতোই কাজ করতো এবং একে বলা হতো প্রথম-প্রজন্মের ফোন বা ১জি ফোন।
২জি
এফডিএমএ প্রযুক্তিতে সবচাইতে বড় অসুবিধা হলো যদি এক এলাকায় একসাথে অনেক মানুষ কথা বলতে শুরু করে তবে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা ব্যান্ড সরবরাহ করা সম্ভব ছিল না। তাই ইঞ্জিনিয়ারগন আরেকটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন, আর তারা সম্পূর্ণ সিস্টেমটিকে অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তির দিকে টেনে নিয়ে আসলেন। এই প্রযুক্তিতে মানুষের ভয়েসের স্যাম্পল নেওয়া হয় এবং ভয়েসকে নাম্বারিক কোডে পরিবর্তন করানো হয়ে থাকে।
এফডিএমএ তে প্রত্যেকটি কলকে আলাদা আলাদা ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ডে বিভক্ত করে পাঠানো হতো। কিন্তু এবার ইঞ্জিনিয়াররা সম্পূর্ণ একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভবন করলেন। তারা প্রত্যেকটি কলের জন্য আলাদা ফ্রিকুয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার না করে, আলাদা আলাদা ব্যান্ডে একটি কলকে কিছু সময়ের জন্য প্রচার করার পদ্ধতি নিয়ে আসলো। একটি কল কিছু সময়ের জন্য আলাদা আলাদা ব্যান্ডে একই ফ্রিকুয়েন্সি প্রচার হয়, এতে একসাথে অনেক কল সরবরাহ করা সম্ভব হয়ে উঠে। আর এই প্রযুক্তিকে বলা হয়ে থাকে “টাইম-ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস” (Time-divison multiple access) বা টিডিএমএ (TDMA)। জিএসএম (GSM) নির্ভর মোবাইল নেটওয়ার্ক গুলো প্রত্যেকে টিডিএমএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আর এই ফোন গুলোকে ২জি ফোন বলা হয়ে থাকে।
৩জি
টিডিএমএ প্রযুক্তিকে একদম পারফেক্ট বলা যাবে না—কেনোনা যদি মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী অনেক দ্রুতগতিতে বেড়ে যায় তাহলে এই প্রযুক্তিতেও কল কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যাবে এবং অসংখ্য কল সরবরাহ করতে গিয়ে নেটওয়ার্ক ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই এবার ইঞ্জিনিয়াররা আবারো ভাবতে আরম্ভ করলো যে, কীভাবে আরো ইউজারকে একসাথে সিস্টেমের আয়তায় আনা যায়। আর এবার তারা যে সিস্টেম তৈরি করলো তার নাম হলো “কোড-ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস” (Code-divison multiple access) বা সিডিএমএ (CDMA)। সিডিএমএ আসলে সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি নয়, এটি এফডিএমএ এবং টিডিএমএ এর উপকরন দিয়েই তৈরি।
এই পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি কলকে একটি আলাদা কোডে পরিণত করে ছেড়ে দেওয়া হয়, এবং এই কোডে—কলটি কোথা থেকে আসছে বা কলটি কোথাই যাচ্ছে ইত্যাদি সকল তথ্য দেওয়া থাকে। এই সিস্টেমটি প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজ করে, যা যেকোনো কানেকশন তৈরির জন্য উপযোগী একটি পদ্ধতি। সাধারন সিডিএমএ আরেকটি সিস্টেমের সাথে জড়িত হয়ে আরেকটি উন্নত সিস্টেম তৈরি করেছে যাকে ওয়াইড ব্যান্ড সিডিএমএ বা (WCDMA) বলা হয়ে থাকে। WCDMA হলো তৃতীয়-প্রজন্ম মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ৩জি এর উদাহরণ। ৩জি নেটওয়ার্ক কে UMTS বলা হয়ে থাকে।
৩.৫জি
এবার অনেকেই মনে করবেন, আমি রবির ডায়ালগ কেনো নিয়ে আসলাম, এটা তো ওদের স্লোগান ছিলো! তবে আপনাকে জানিয়ে রাখি, ৩.৫জি টেকনোলজি সত্যিই এক্সিস্ট করে।
সাধারন সিডিএমএ কল করা, এসএমএস সেন্ড করার জন্য আদর্শ নেটওয়ার্ক। কিন্তু এটি ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করার জন্য তেমন একটা আদর্শ নয়। যাই হোক, ইন্টারনেট অ্যাক্সেসে কিন্তু একসাথে দুইটি কাজ হতে থাকে। যেমন আপনার কম্পিউটার সর্বদা সার্ভারকে রিকোয়েস্ট করতে থাকে এবং সার্ভার থেকে পেজ নিতে থাকে। এবং প্রত্যেক সময় আপনি যতটা তথ্য সার্ভারের কাছে আপলোড করেন তার চেয়ে বেশি তথ্য আপনি সার্ভার থেকে ডাউনলোড করেন।
আপনার ঘরের দ্রুতগতির ল্যান্ড লাইন ব্রডব্যান্ডে একসাথে দুইটি কানেকশান থাকে, একটি দিয়ে আপনি কোথা বলেন আর আরেকটি সর্বদা ডাটা আপলোড আর ডাউনলোড করতে থাকে। যেহেতু দুই কাজের জন্য আলাদা লাইন ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাই এর গতি এবং দক্ষতা বেশি হয়ে থাকে। তবে চিন্তার কোন কারন নেই সিডিএমএ তে এই সমস্যাটি দূর করার জন্য চলে আসে HSDPA যা দ্রুতগতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড নামে পরিচিত। এই নেটওয়ার্ক কে মূলত দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করার জন্য উন্নতি করা হয়েছে।
৩.৫জি কে বিভিন্ন পথে কাজ করার জন্য অপটিমাইজ করা হয়েছে। প্রথমটির নাম হলো “এডিএসএল” (ADSL)—এটি অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন একটি ডাউনলোড চ্যানেল HS-DSCH (High Speed Downlink Shared Channel) এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, যেটি একসাথে একই সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমানের ইউজারকে ডাটা ডাউনলোড করার সুবিধা প্রদান করে। এছাড়াও HSDPA এর আরো গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ফিচার রয়েছে। তারা যথাক্রমে, AMC (adaptive modulation and coding), Fast base station scheduling (BTS), এবং Fast retransmissions with incremental redundancy. তো এগুলো কি? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
- AMC (adaptive modulation and coding) হলো এমন একটি সিস্টেম—যা নির্ণয় করে দেয়, আপনার ফোনের নেটওয়ার্ক সিগন্যাল কতটা শক্তিশালী, এবং সেই অনুসারে ডাটা প্রবাহ করানো হয়। সুতরাং আপনি যদি নিকটস্থ কোন সেলফোন টাওয়ারের যতো কাছে থাকবেন আপনার ডাটা স্পীড ততোবৃদ্ধি পাবে।
- Fast base station scheduling (BTS) মানে হলো এর মাধ্যমে প্রধান স্টেশন নির্ধারণ করে ঠিক কোন ইউজারকে কোন সময় এবং কোন পথে ডাটা সেন্ড করা হবে, এবং কোন পথে প্যাকেট পাঠালে তা দ্রুত পৌঁছানো যাবে।
- যেকোনো প্যাকেট সুইচিং সিস্টেমে, প্যাকেট পাঠানোর সময় কিছু প্যাকেট হারিয়ে যায়, যেভাবে ডাকযোগে চিঠি পাঠানোর সময় কিছু চিঠি হারিয়ে যায়। যাই হোক, এই হারানো প্যাকেটকে আবার খুব দ্রুত পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে—কিন্তু এতে সময় লেগে যেতে পারে। HSDPA তে খুব দ্রুত হারানো প্যাকেট রিট্রান্সমিশন করা হয়, এতে হারানো প্যাকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না।
যাই হোক, এই সকল ফিচার গুলো একত্রে নিয়ে একসাথে অনেক ইউজারকে অনেক বেশি ডাটা অনেক বেশি গতিতে সরবরাহ করা সম্ভব। আর যেহেতু এই প্রযুক্তি ৩জি থেকে উন্নত তাই একে ৩.৫জি বলা হয়।
৪জি
এই ৪জির ম্যালা কাহিনী রয়েছে। ৪জি টেকনোলজি ৩জি টেকনোলজির সকল গুন ধারন করে সাথে হাই স্পীড ডাটা ট্র্যান্সফার করতে সাহায্য করে। তবে নানান ভাবে ৪জি সেবা দেওয়া শুরু হয় প্রথম থেকে। মূলত ৩.৫জি বা HSDPA+ নেটওয়ার্ক ৪জি ডাটা স্পীড প্রদানে সক্ষম ছিলো। কিন্তু সেটাকে আসল ৪জি না নামকরণ করে ৩.৫জি নাম রাখা হয়।
বাংলাদেশে LTE আসার আগে কিছু কোম্পানি ওয়াইমাক্স টেকনোলজি ব্যবহার করে ৪জি সেবা প্রদান করছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের বড় বড় অপারেটর গুলো LTE তে ৪জি সরবরাহ করানোর কারনে ওয়াইমাক্স জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলে। কেননা দুনিয়া জুড়ে LTE কেই আসল ৪জি হিসেবে গন্য করা হয়।
এই প্রযুক্তিতে প্রত্যেকটি সিগন্যালকে আলাদা বিটে এবং আলাদা কোডে বিভক্ত করে পাঠানো হয়, এবং অবশ্যই ভিন্ন ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার করে পাঠানো হয়ে থাকে। এটি অতি দ্রুতগতিতে প্যাকেট সেন্ড ও রিসিভ করতে পারে। আর এই উন্নত প্রযুক্তির ফলেই একে বানিয়েছে পৃথিবীর সবচাইতে উন্নত নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি।
৫জি
মোবাইলের এই ৫ম জেনারেশনকে ৫জি বলে আখ্যায়িত করা হয়, দুনিয়ায় ২০১৯ সাল থেকে এর ডেপ্লয়মেন্ট শুরু হয়। ৫জি, ৪জি টেকনোলজির তুলনায় কমপক্ষে ২০ গুন বেশি দ্রুত ডাটা আদান প্রদান করতে সক্ষম। রেডিও স্পেকট্রাম এর সুপার হাই ফ্রিকোয়েন্সি সেকশনে রয়েছে মিলিমিটার তরঙ্গ, যেটার রেঞ্জ ৩০-৩০০ গিগাহার্জ পর্যন্ত। এই ফ্রিকোয়েন্সিতে হিউজ পরিমাণে ডাটা সরবরাহ করানো যেতে পারে তাও একেবারেই লো লেটেন্সি তে।
কোন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলো মোবাইল অপারেটর রা ব্যবহার করছে?
নিচের টেবিলে বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর গুলোর ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড গুলো দেখানো হলো;
২জি, ৩জি, এবং ৪জি ব্যান্ড সমূহ
মোবাইল অপারেটর | ২জি ব্যান্ড | ৩জি ব্যান্ড | ৪জি ব্যান্ড |
রবি/এয়ারটেল | ৯০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৮ ১৮০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৩ |
২১০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ১ | ৯০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৮
১৮০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৩ ২১০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ১ |
বাংলালিংক | ৯০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৮ ১৮০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৩ |
২১০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ১ | ১৮০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৩ |
টেলিটক | ৯০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৮ ১৮০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৩ |
২১০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ১ | ১৮০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৩
২১০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ১ |
গ্রামীনফোন | ৯০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৮ ১৮০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৩ |
২১০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ১ | ৯০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৮
১৮০০ মেগাহার্জ: ব্যান্ড ৩ |
কেন ফোনে সিগন্যাল কম পাচ্ছেন, কেন ইন্টারনেট স্পীড স্লো, কেন বিদেশে গেলে আপনার ফোন কাজ করে না
সঠিক ভাবে কাজ করার জন্য আপনার ফোনের সাপোর্টেড ব্যান্ড এবং মোবাইল অপারেটর এর সাপোর্টেড ব্যান্ড একই হওয়া জরুরী। যদি আপনার ফোন কয়েকটা ব্যান্ড সাপোর্ট করে আর বাকি গুলো করে না তাহলে মোবাইল অপারেটর থেকে ঠিক মতো সেবা পেতে পারবেন না। তবে এই ব্যাপারে আমাদের দেশে খুব একটা কনফিউশন নেই। আমাদের দেশে যতো ফোন আসে সব গুলোই আরামে ব্যান্ড ১, ৩, এবং ৮ সমর্থন করে। তবে আপনার ফোন বিদেশে গিয়ে কাজ করবে কিনা সেটা নির্ভর করছে ঐ দেশে ব্যবহৃত ব্যান্ড গুলোর উপরে এবং আপনার ফোনের ব্যান্ড সাপোর্ট এর উপরে।
আপনার অপারেটর যদি কোন লো ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড এ ৪জি প্রোভাইড করিয়ে থাকে তবে রেঞ্জ তো অনেক ভালো পাবেন, কিন্তু ইন্টারনেট স্পীড অনেক স্লো হয়ে যাবে। স্লো স্পীড পাওয়ার জন্য শুধু ব্যান্ডই দায়ী নয়। সেল টাওয়ারের আসল ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি, টাওয়ার থেকে আপনার দূরত্ব, টাওয়ার এবং আপনার মাঝখানের বাঁধা বিপত্তি, ইত্যাদি নানান বিসয়ের উপরে নির্ভর করে স্পীড কম বা বেশি হয়ে থাকে।
বিশেষ করে একসাথে আলাদা আলাদা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ব্যবহার করে ৪জি প্রোভাইড করানো হয়ে থাকে। হাই ফ্রিকোয়েন্সিতে বেশি স্পীড পাওয়া যেতে পারে কিন্তু কভারেজ কমে যায় অপর দিকে লো ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্যাপারটা উলটা হয়। তবে ক্যারিয়ার আগ্রেগেশন বা ৪জি+ টেকনোলজি ব্যবহার করে স্পীড সংক্রান্ত সমস্যা দূর করা যেতে পারে।