কেন অনেক ওয়েবসাইট www1 দিয়ে শুরু হয়?

আমরা সবাই জানি যে, ইন্টারনেটে যেকোনো ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেসই শুরু হয় www এই তিনটি লেটার দিয়ে। বর্তমানে ডোমেইনের শুরুতে www থাকা এতটাই কমন হয়ে গেছে যে, এখন প্রায় সব মডার্ন ব্রাউজারই অ্যাড্রেস বারে এই পার্টটুকু হাইড করে রাখে। তবে আপনি অনেকসময় এমন অনেক ওয়েবসাইট দেখতে পাবেন, যেগুলোর শুরু www দিয়ে হয়না, বরং www এর পরে আরও অনেক নাম্বার অ্যাড করা থাকে, যেমন- www1, www2 বা www3 বা এরপরের যেকোনো নাম্বার।

কিন্তু কেন? বর্তমানে সময়ে যখন অনেক ইন্টারনেট ইউজাররাই অনলাইন স্ক্যাম এবং ফিশিং ওয়েবসাইটের শিকার হচ্ছেন, এমন সময়ে যেকোনো ওয়েবসাইটের শুরুতে চিরচেনা www এর জায়গায় এমন কিছু দেখলে ওয়েবসাইটটিকে ফিশিং ওয়েবসাইট হিসেবে ভেবে নেওয়া ভুল কিছু হবে না। কিন্তু না, ব্যাপারটা একেবারেই এমন নয়। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। চলুন জানা যাক, কেন অনেক ওয়েবসাইটে www এর জায়গায় ww1, ww2 ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে।

আপনি অনেকসময় অনেক ব্যাংকের ওয়েবসাইটের ডোমেইনের শুরুতে www এর জায়গায় www1 বা এমন কিছু দেখতে পাবেন। এই ধরনের ব্যাংকিং ওয়েবসাইটগুলোতেই আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা সবথেকে বেশি দরকার। তাই এসব ওয়েবসাইটে অন্যরকম কিছু দেখে ঘাবড়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে চিন্তার কিছু নেই, কোন ওয়েবসাইটের ডোমেইন www এর জায়গায় ww1 বা www2  দিয়ে শুরু হওয়া মানেই এই না যে ওয়েবসাইটটি হ্যাক হয়েছে বা সেটি একটি ফিশিং ওয়েবসাইট।

সাবডোমেইন কি?

এই ব্যাপারটা বুঝতে হলে আগে আপনার সাবডোমেইন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখার দরকার হবে। কারন, www এই তিনটি ডোমেইন প্রিফিক্স নিজেই জাস্ট একটা সাবডোমেইন। সাবডোমেইন হচ্ছে কোন ওয়েবসাইটের মেইন ডোমেইনেরই আরেকটি অংশ যা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়ে থাকে। যেমন, যদি Wirebd ওয়েবসাইটটির কথাই চিন্তা করেন, তাহলে আমরা চাইলে archive.wirebd.com ডোমেইনের আগে নিজেদের ইচ্ছামত কোন প্রিফিক্স জুড়ে দিতে পারতাম যেই একেকটি সাবডোমেইন আমাদের মেইন ওয়েবসাইটের একেকটি পার্ট হিসেবে কাজ করতো।

যেমন ধরুন, হয়তো ডোমেইনের আগে news প্রিফিক্স যোগ করে news.archive.wirebd.com নামের একটি সাবডোমেইন তৈরি করতে পারতাম, যেখানে ভিজিটররা শুধুমাত্র টেক নিউজ পাবেন। আবার তেমনি life.archive.wirebd.com নামের আরেকটি সাবডোমেইন তৈরি করতে পারতাম যেখানে ভিজিটররা শধুমাত্র লাইফস্টাইল আর্টিকেল পাবেন। কিন্তু আমাদের এমন আলাদা আলাদা সাবডোমেইন তৈরি করার দরকার হয়না, কারন আমাদের ওয়েবসাইটটি খুব বেশি বড় না।

মূলত যেসব লার্জ স্কেল ওয়েবসাইটের অসংখ্য পার্ট আছে, সেগুলোর প্রত্যেকটি পার্ট বা প্রত্যেকটি সার্ভিসকে সাবডোমেইন দিয়ে আলাদা করা হয় যাতে ভিজিটররা খুব সহজেই তাদের কাঙ্খিত কন্টেন্টগুলো খুঁজে পেতে পারেন। যেমন- গুগল এবং মাইক্রোসফটের অসংখ্য সাবডোমেইন আছে। উদাহরণস্বরূপ- গুগল ফটোস এর জন্য photos.google.com, বা গুগল প্লে স্টোর ব্রাউজ করার জন্য play.google.com কিংবা মাইক্রোসফট অফিসের জন্য office.microsoft.com ইত্যাদি। খেয়াল করুন, এই সবগুলো ডোমেইনের শেষের পার্টটিই কিন্তু মেইন কোম্পানি ডোমেইন। জাস্ট প্রত্যেকটি ডোমেইনের আগে কিছু প্রিফিক্স যোগ করে দিয়ে বোঝানো হচ্ছে যে এই অ্যাড্রেসে গেলে আপনি ওই কোম্পানির ঠিক কোন সার্ভিসটি পেতে চলেছেন। এটাকেই বলা হয় সাবডোমেইন। আর www নিজেও অন্যান্য সাবডোমেইনের মতোই জাস্ট আরেকটি সাবডোমেইন হিসেবে কাজ করে।

ঠিক তেমনি আপনি যেসব ওয়েবসাইটে www1 বা www2 প্রিফিক্স দেখতে পান, সেসবও কিন্তু জাস্ট মেইন ডোমেইনটিরই আরেকটি সাবডোমেইন। যতক্ষণ পর্যন্ত www1 বা যেকোনো প্রিফিক্সের প্রথম ডটের পরের মেইন ডোমেইনটি একই থাকছে, ততক্ষন পর্যন্ত আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে এটি কোন স্ক্যাম বা ফিশিং ওয়েবসাইট নয়। কিন্তু এটা করারই বা দরকার কি? এর উত্তর হচ্ছে লোড ব্যালেন্সিং। সাবডোমেইনগুলো শুধুমাত্র স্পেসিফিক পার্ট বোঝাতেই ব্যবহার করা হয়না, অনেকসময় লোড ব্যালেন্সিং এর কাজেও ব্যবহার করা হয়। লোড ব্যালেন্সিং সম্পর্কে যদি আপনার আইডিয়া না থাকে, এটা নিয়েও কিছুটা আলোচনা করা যাক।

লোড ব্যালেন্সিং

আপনি যখন একটি লার্জ স্কেল ওয়েবসাইট রান করবেন, যেখানে প্রতি সেকেন্ডে লক্ষ লক্ষ ভিজিটর একইসাথে ভিজিট করছেন, আপনি কখনোই ওয়েবসাইটটির লোড একটি সার্ভারে নিতে পারবেন না। যদি একটি সার্ভারে ওয়েবসাইটটি রান করেন, কিছু সংখ্যক ভিজিটর আসার পরেই আপনার সার্ভার আর লোড নিতে পারবে না এবং ওয়েবসাইটটি ডাউন হয়ে যাবে। তাই এন্টারপ্রাইজ স্কেলের কোন ওয়েবসাইটকে স্মুথলি রান করার জন্য আপনাকে ওয়েবসাইটটির ভিজিটর লোড একাধিক সার্ভারের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। সেট হতে পারে ৫ টা সার্ভার, হতে পারে ১০০ টা সার্ভার আবার হাজার হাজার সার্ভারও হতে পারে। আবার এর মধ্যে কোন একটা থাকে মেইন সার্ভার।

এমন অবস্থায় যখন একজন ভিজিটর ওয়েবসাইটটি ভিজিট করেন, তখন যতগুলো সার্ভারে লোড ব্যালেন্সিং করা আছে, এর মধ্যে যে সার্ভারটিতে ওই মুহূর্তে সবথেকে কম লোড আছে, সেই সার্ভার থেকেই সার্ভ করা হয় ওই ভিজিটরকে। আর, কখন কোন সার্ভার থেকে কোন ভিজিটরকে সার্ভ করা হবে তা ঠিক করার জন্যই সাধারনত www1 বা www2 এই প্রিফিক্সগুলো ব্যবহার করা হয়। এই প্রিফিক্সগুলো এটাই কনফার্ম করে যে, কোন ভিজিটরকে মেইন www ডোমেইনটি  যে প্রিন্সিপাল সার্ভারে আছে, সেই সার্ভারটি অন্য ব্যাতীত লোড ব্যালেন্স করা অন্য একটি সার্ভার থেকে সার্ভ করা হচ্ছে। যেমন- ww2 এর অর্থ হচ্ছে ভিজিটরকে ১ম সার্ভার থেকে সার্ভ করা হয়েছে, www2 কে ২য় সার্ভার থেকে সার্ভ করা হয়েছে। এভাবে ww3, ww4 এমন আরও অনেক কিছুই হতে পারে।

তাই www এর জায়গায় www1, www2 ইত্যাদি দেখলে ঘাবড়ানোর কিছুই নেই, এর অর্থ হচ্ছে ওয়েবসাইটটি লোড ব্যালেন্সিং করছে। কিন্তু এমনভাবে সাবডোমেইন চেঞ্জ করে লোড ব্যালেন্স করাটাই লোড ব্যালেন্সিং এর একমাত্র উপায় না। সবসময় সাবডোমেইন সেম রেখেও লোড ব্যালেন্সিং করা যায়, এমনটা ফেসবুক বা গুগল কিংবা মাইক্রোসফট করে থাকে। তবে যেসব ওয়েবসাইটে অনেক সিকিওর ডাটা নিয়ে কাজ করা হয় এবং যেসব ওয়েবসাইটে ভিজিটরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, সেসব ওয়েবসাইটে এভাবে সাবডোমেইন চেঞ্জ করে লোড ব্যালেন্সিং করাটাই বেশি যুক্তিযুক্ত, যেমন ব্যাংকিং ওয়েবসাইটগুলো।

কেন এটা করা বেশি ইফেক্টিভ?  এর পেছনেও অবশ্যই অনেক কারন রয়েছে।  তবে কি কারণে এই সাবডোমেইন চেঞ্জ করে লোড ব্যালেন্স করা ভিজিটরের নিরাপত্তা এবং সেন্সিটিভ ইনফরমেশনের জন্য বেটার, সে বিষয়ে আমার নিশ্চিতভাবে তেমন কিছু জানা নেই।  যদি এই ব্যাপারে কেউ অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন কিংবা কেউ যদি DevOps ইঞ্জিনিয়ার হয়ে থাকেন, তাহলে এ ব্যাপারে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না!

About the author

সিয়াম

Add comment

Categories