আপনি কম্পিউটার ইউজার হোন আর স্মার্টফোন ইউজার, বিশেষ করে একটা জিনিস হয়তো খেয়াল করে থাকবেন যে, বেশিরভাগ সময় কোন সফটওয়্যার বা অ্যাপ আনইন্সটল করার পরেও ঐ অ্যাপ আপনার ফোনে নিজের নামের ফোল্ডার আর কিছু ফাইল রেখে যায় বা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে জাঙ্ক রিমুভার সফটওয়্যার ব্যাবহার করলে দেখা যায় আনইন্সটল করা সফটওয়্যার গুলো শতশত ফাইল রেখে গেছে।
কিন্তু কেন? — “আরে ভাই আমি তোকে আনইন্সটল করছি মানে আনইন্সটল করছি, রাইট? তারপরে তুই ক্যান ফাইল রেখে যাবি?” — মানে ডেভেলপার তো চাইলেই এমন সিস্টেম করতে পারে তাই না, যে সফটওয়্যার আনইন্সটল করলে সাথে সব ফাইল গুলোও নিয়ে যাবে। কিন্তু সমস্যা কোথায়? চলুন এই নিয়েই আলোচনা করা যাক…
অ্যান্ড্রয়েড জাঙ্ক ফাইল
কম্পিউটারের কথা তো তাও আলাদা, কেননা কম করে হলেও কম্পিউটারে টেরাবাইট খানেক স্টোরেজ থাকে। কিন্তু এখনো অনেকে ১০ জিবি স্টোরেজের ফোন ব্যাবহার করে বা ফাঁকা থাকে মাত্র কয়েক জিবি। আর তারপরে নানান অ্যাপ ইন্সটল আর আনইন্সটল করতে করতে জাঙ্ক ফাইল গুলোই বাকি বেঁচে থাকা স্পেস গুলো দখল করে নেয়।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে জাঙ্ক ফাইলের অত্যাচার আজকের নয়, সেই কিটক্যাটেরও আগের যুগ থেকে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য নানান এই ক্লিনার সেই ক্লিনার দেখতে পাওয়া যেতো। কোন অ্যাপ রান করার জন্য অনেক টাইপের টেম্পোরারি ফাইল তৈরি করে। কিন্তু আনইন্সটল করার পরে আর সেই ফাইল গুলো নিজে থেকে ডিলিট হতে পারে না। ব্যাপারটা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে আর মোবাইলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরো বিস্তারিত বুঝাচ্ছি…
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ক্ষেত্রে কোন অ্যাপ ইন্সটল বা আনইন্সটল করা অ্যান্ড্রয়েড নিজেই হ্যান্ডেল করে। তো আপনি বলতে পারেন অ্যান্ড্রয়েড এর নিজের দোষে অ্যাপ গুলো তাদের টেম্পোরারি ফাইল গুলো পিছে ফেলে রেখে চলে যায়। আবার ব্যাপারটা এমনও হতে পারে যে, যদি অ্যাপ রিমুভ করার সাথে ঐ অ্যাপের দ্বারা তৈরী করা সব ফোল্ডার ও ফাইল একসাথে মুছে যায় সেক্ষেত্রে ইউজার বিপাকে পড়তে পারে।
যেমন ধরুন আপনি ইউসি ব্রাউজার ফেলে দেওয়ার চিন্তা করলেন। এখন ইউসি ব্রাউজার কিন্তু ফোনে “UC Downloads” নামে ফোল্ডার তৈরি করে সেখানে ডাউনলোড করা ফাইল স্টোর করে। এখন ব্রাউজার রিমুভ করলে যদি ঐ ফোল্ডারও সাথে গায়েব হয় তাহলে আপনার ডাউনলোড করা সব ফাইল হাওয়া হয়ে যাবে। বা অনেকে তৃতীয় পক্ষ ফাইল সেফ অ্যাপ ব্যাবহার করে গোপন ফাইল গুলো লক করে রাখেন। ধরুন কোনো কারণে ফাইল সেফ অ্যাপটি আন ইন্সটল হয়ে গেলো, তাহলে তো সাথে আপনার লক করা ফাইল গুলোও হাওয়া হয়ে যাবে, তাই না?
এগুলো জাস্ট উদাহরণ দিয়ে বুঝলাম, জরুরি নয় যে হুবহু এমনই হবে। এখন প্লে স্টোরে আপনি হাজারো অ্যাপ পেয়ে যাবেন যেগুলো নিজেকে জাঙ্ক ক্লিনার রূপে দাবি করে। আমি বলবো গুগলের নিজস্ব “Files” অ্যাপ ব্যাবহার করতে, যেটা খুব ভালো কাজ করে।
কম্পিউটারের জাঙ্ক ফাইল
যেমনটা আগেই বলেছিলাম, কম্পিউটারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণই আলাদা। বেশিরভাগ সময় আপনি যে সফটওয়্যার গুলো আনইন্সটল করেন, যেগুলো আনইন্সটল হওয়ার সময় কোন ফাইল রেখে যাবে আর কোন ফাইল ডিলিট করবে সেটা নির্ভর করে ঐ সফটওয়্যারটির নিজস্ব আন-ইনস্টলার প্রোগ্রামের উপরে।
কম্পিউটারে বেশিরভাগ সময় জেনে বুঝে ডেভেলপার জাঙ্ক ফাইল রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই জাঙ্ক ফাইল গুলোর মধ্যে ইউজার ডাটা থাকে। ডেভেলপাররা বিশ্বাস করেন যে আপনি যে কারণেই সফটওয়্যারটি রিমুভ করছেন সেটা টেম্পোরারি আর আপনি আবার সফটওয়্যারটি ইন্সটল করবেন। তখন আপনাকে আর নতুন করে ইউজার প্রোফাইল বা সেটিং ঠিক করতে হবে না।
আবার অনেক প্রোগ্রাম ইন্সটল করার সময় তারা তৃতীয় পক্ষ প্যাকেজ গুলোকে ইন্সটল করে। মনে আছে, এক যুগে “Winamp” নামক এক ডেস্কটপ প্লেয়ার বেশ জনপ্রিয় ছিল, সেখানে অনেক স্কিন আর ভিজুলাইজেশন ব্যাবহার করা যেতো। বিশেষ কিছু ভিজুলাইজেশন ব্যাবহার করতে চাইলে ডাইরেক্ট এক্স ইন্সটল করার দরকার পড়তো। এখন এই ডাইরেক্ট এক্স কোন আলাদা প্রোগ্রাম বা গেম দ্বারাও ব্যাবহৃত হতে পারে। আপনি Winamp আনইন্সটল করার সাথে যদি ডাইরেক্ট এক্সও রিমুভ হয়ে যায় তাহলে তো আলাদা প্রোগ্রাম গুলো কাজ করতে বন্ধ করে দেবে রাইট?
শুধু জাঙ্ক ফাইল গুলোই নয়, আনইন্সটল করার পরে অনেক সফটওয়্যার উইন্ডোজ রেজিস্ট্রিতে বহু এন্ট্রি রেখে যায়। এখন এর পেছনে নানান কারণ থাকে। ধরুন, আপনি কোন ফ্রী ট্রায়াল সফটওয়্যার ব্যাবহার করছিলেন। এখন যদি ট্রায়াল শেষে সফটওয়্যারটি আনইন্সটল করে আবার ইন্সটল করেন আর সফটওয়্যারটি যদি আপনার সিস্টেমে কোন ছাপই না রেখে যায়, তাহলে তো ট্রায়াল বাইপাস হয়ে যাবে, তাই না? এই জন্যই অনেক সফটওয়্যার আনইনস্টল করার পরেও সিস্টেমে অনেক ছাপ রেখে যায়। সেটা রেজিস্ট্রিতে হোক বা ফাইল সিস্টেমে!
তো আপনি এখন জানলেন আনইন্সটল করার পরেও কেন নানান সফটওয়্যার বা অ্যাপ তাদের জাঙ্ক ফাইল গুলো সিস্টেমে ফেলে রেখে যায়। হতে পারে সেটা ইচ্ছাকৃত ভাবে, হতে পারে সেটা পরবর্তীতে বেটার ইউজার এক্সপেরিয়েন্স দেওয়ার জন্য, বা হতে পারে খারাপ ভাবে ডিজাইন করা আনইন্সটলার প্রোগ্রামের জন্য।
Image: Shutterstock.Com