ছোটবেলায় এই একটা প্রশ্নই মাথার মধ্যে ঘোরপাক খেত বারবার, — আচ্ছা, ফ্যান/টিভি/লাইট/কুকার ইত্যাদি সবকিছু প্রায় সরাসরি সুইচ অফ করে বা প্লাগ টেনে বন্ধ করা হয়, কিন্তু কম্পিউটারের বেলায় এতো ঝামেলা কেন? চিন্তা করে দেখুন, প্রথমে স্টার্ট মেনু তে ক্লিক করতে হবে (অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে আলাদা নিয়ম থাকতে পারে), তারপরে শাটডাউন অপশন আসবে, তারপরে সেখানে ক্লিক করলে সাথে সাথে বন্ধ না হয়ে এক লোডিং এনিমেশন এসে ঘুরতে পাকাতে থাকে।
কম্পিউটার অফ হতে হতে কখনো কখনো কয়েক মিনিটও লেগে যায়। “আরে ভাই তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যা…, মানুষের আলাদা কাজও আছে, হয়তো কেউ বাইরে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করছে, আর তোর বন্ধ হওয়ার কোন লক্ষনই নেই!”
তাহলে জাস্ট এতো প্যারা না নিয়ে, সকেট থেকে প্লাগ খুলে ফেললেই কাজ শেষ হয়ে যায় না? মানে এতে এতো চিন্তার কি আছে? — আজকের আর্টিকেলে এই ব্যাপারেই আলোচনা করবো, কি হতে পারে যখন আপনি সরাসরি প্লাগ টেনে কম্পিউটার বন্ধ করতে যাবেন!
পাওয়ার প্লাগ টেনে কম্পিউটার বন্ধ
আজ স্বীকার করেই ফেলছি, ছোট বেলায় মামার কম্পিউটার, স্যারের কম্পিউটার, এরকম অনেকের কম্পিউটার জাস্ট পাওয়ার টেনেই বন্ধ করেছি। কে শাটডাউন বাটন ক্লিক করে বসে থাকবে বলুন! তবে এমনটা মোটেও করা উচিত নয়, না তখন এটা উচিৎ ছিল আর নাইবা এমনটা করা এখন উচিৎ।
আপনি কম্পিউটারের সমস্ত প্রোগ্রাম ক্লোজ করে দেওয়ার পরেও অপারেটিং সিস্টেম ব্যাকগ্রাউন্ডে নানান ডাটা প্রসেস করতেই থাকে। তাছাড়া অনেক প্রোগ্রামও ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করে। আর হঠাৎ করে প্লাগ টেনে কম্পিউটার বন্ধ করলে সেই ডাটা গুলো করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে। আপনি সব প্রোগ্রাম ক্লোজ করে ডেস্কটপে এসে বসে থাকুন, তারপরেও দেখবেন আপনার কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক অ্যাক্টিভিটি লাইট টিপটিপ করছে। এরমানে তখনও আপনার সিস্টেমে কিছু রিড রাইট প্রসেস চলছেই!
যদি আপনি কাজের প্রোগ্রাম গুলো ক্লোজ না করেই বা কাজের ফাইল সেভ না করেই প্লাগ ধরে টান মারেন, তো ভালোর জন্যই কাজের ফাইল গুলো হাওয়া হয়ে যাবে। মানে, ধরুন, ৫ ঘন্টা ধরে অফিসের প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছিলেন। তারপরে ফাইল সেভ না করেই কম্পিউটার পাওয়ার প্লাগ ধরে মারলেন টান! ব্যাস, হয়ে গেলো কাজ… পরের দিন পিঠে বস্তা বেধে অফিস যেতে হবে।
অনেক মডার্ন প্রোগ্রাম বর্তমানে আপনার কাজ অটো সেভ রাখে, কিন্তু বিশ্বাস করুন এরা মোটেও এখনো পারফেক্ট হতে পারেনি। মনে পড়ে গেলো যখন ইউটিউব ভিডিও বানাতাম, কারেন্ট চলে গেলো একবার প্রজেক্ট এর মাঝখানে। ফাইল সেভ করা ছিলনা, অটো সেভ হওয়া ফাইল রিকভার করে দেখি, ঐটা আরো ২ ঘন্টা আগের ?
মডার্ন কম্পিউটার গুলো স্মুথভাবে রান করার জন্য এখন অনেক ক্যাশিং টেকনিক ব্যাবহার করে থাকে। হঠাৎ পাওয়ার টেনে নিলে ক্যাশ করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া হার্ড ডিস্ক ফিজিক্যাল ভেবেও ড্যামেজ হতে পারে।
বর্তমানে মডার্ন উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে NTFS ফাইল সিস্টেম ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আর এটা একটি জার্নাল ফাইল সিস্টেম, মানে, কোন ফাইল কিভাবে মডিফাই হচ্ছে সবকিছুর লগ থাকে। এতে ডাটা করাপশন থেকে খানিকটা বাঁচা গেলেও ১০০% নিরাপদ থাকবেন এমন কোন নিশ্চয়তা নেই।
এইজন্য খেয়াল করে থাকবেন, হঠাৎ করে কম্পিউটার শাটডাউন হয়ে গেলে পরবর্তীতে যখন অন করেন, তখন মাঝেমাঝে ডিস্ক চেক প্রসেস শুরু হয়ে যায়। তো, বুঝতেই পারছেন, কেন প্লাগ টেনে কম্পিউটার অফ করা যাবে না। যদি ডাটা করাপ্টেড না করতে চান, যদি হার্ড ডিস্ক ড্যামেজ না করতে চান তো প্লাগ টেনে কম্পিউটার বন্ধ করা যাবে না।
শাটডাউনে ক্লিক করার পরে কি হয়?
আপনি যখন অপারেটিং সিস্টেমের শাটডাউন বাটনে বা অপশনে ক্লিক করেন তখন আপনার কম্পিউটারে কি হয়? প্রথমত আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম সকল সফটওয়্যার গুলোকে বলে, “বাবারা বহুত হয়েছে, এবার চলো…, ঘুমানোর সময় চলে এসেছে..!”
আপনার কম্পিউটারের সব সফটওয়্যার গুলো যে যা কিছু করছিলো সবাই নিজের কাজ বন্ধ করতে শুরু করে এবং যতদ্রুত সম্ভব কাজ গুলো সেভ করে ফেলে। যদি কোন প্রোগ্রাম ওপেন থাকে সাথে সাথে আপনাকে ফাইল সেভ করার জন্য প্রশ্ন করা হয়। অপারেটিং সিস্টেমের ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস গুলো কম্পিউটার টার্মিনেট করতে থাকে, রেজিস্ট্রি মডিফাই করা বন্ধ করে। তারপরে মেশিন অফ হয়ে যায়।
তো দেখলেন, অপারেটিং সিস্টেমে থাকা বাটন ক্লিক করে কম্পিউটার বন্ধ করলে, কম্পিউটার নিজে থেকেই আপনার সকল ডাটা গুলোকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করে, তারপরেই বন্ধ হয়।
অনেক সময় শাটডাউন অপশন ক্লিক করার পরে উইন্ডোজ আপডেট ইন্সটল হতে শুরু করে এবং কম্পিউটার ফোর্স শাটডাউন করা থেকে নিষেধ করতে বলা হয়। এমনি সময় প্লাগ টেনে কম্পিউটার বন্ধ করলে বড় জোর কিছু ডাটা লস হতে পারে। কিন্তু আপডেট নেওয়ার সময় ধপাস করে অফ করলে সুযোগ থাকতে পারে আপনার সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমই ড্যামেজ হবার। মানে আপনি হয়তো আর মেশিনে বুট ই করতে পারবেন না।
তো আপডেট ইন্সটল করার সময় সরাসরি প্লাগ তো টানা যাবেই না সাথে ডেক্সটপ কম্পিউটার হলে ইউপিএস রাখা ভালো আর ল্যাপটপ এর ক্ষেত্রে ব্যাটারি ফুল চার্জ রাখা উত্তম, এতে অপারেটিং সিস্টেম করাপ্টেড হওয়া থেকে বাঁচতে পারবেন।
তো এখন জানলেন তো, সরাসরি প্লাগ থেকে কম্পিউটার অফ করা কতটা ভয়াবহ ব্যাপার হতে পারে? এটা অনেকটা ডিম পোজ করতে দিয়ে না পোজ হতেই স্টোভ অফ করে দেওয়ার মতো। ডিম পুরো পোজ হবেও না আর আপনি খেতেও পারবেন
Image: Shutterstock.com