স্মার্টফোন নিয়ে ৭টি ভুল ধারনা, যেগুলো আপনার বিশ্বাস করা উচিৎ নয়!

২০২০ সালে এসেও আমাদের মাঝে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা এখনো স্মার্টফোন নিয়ে তেমন একটা বোঝেন না। তারা পুরাতন আমল থেকে নানান ভুল ধারনা পুষে রেখেছেন এবং এখনো সেগুলোর আমল করতেই থাকেন। কোন কিছু শুনতে একটু বিশ্বাসযোগ্য মনে হলেই অনেকেই সেটা বিশ্বাস করতে শুরু করেন হালকা যাচাই না করেই। কিন্তু যেহেতু আপনি একজন ওয়্যারবিডি পাঠক, তাই আপনার মধ্যে এমন ভুল ধারনা আজো বাসা বেঁধে থাকলে সেটা একদমই মানায় না।

এই আর্টিকেলে ৭টি এমন স্মার্টফোন সম্পর্কিত ভুল ধারনা গুলো নিয়ে আলোচনা করেছি যেগুলো আপনার বিশ্বাস করা একদমই উচিৎ নয়! আর মোটেও সূচনাতে সময় নষ্ট না করে সরাসরি আজকের টপিকে প্রবেশ করা যাক;



ইনকগনিটো মোডে ব্রাউজিং করলে আপনি সম্পূর্ণ সেফ!

দেখতে পারবে না; হ্যাঁ, অনেকেই এখনো এমন ধারনাই পুষে রেখেছেন। হ্যাঁ, আপনি যখন ব্রাউজারের ইনকগনিটো মোড ইউজ করে ব্রাউজ করেন আপনার ফোনে কোন কিছু সেভ থাকে না। মানে আপনার ব্রাউজার সেই ব্রাজিং সেশন, হিস্ট্ররি, ক্যাশ ফাইল জমা করে রাখে না। আমি ইনকগনিটো উইন্ডো ক্লোজ করে দিলে সবকিছু ভ্যানিস হয়ে যায়, আপনার অন্ধকার সাইটের সার্চ গুলো আর কেউ জানতে পারে না।

কিন্তু আপনার আইএসপি আপনার সার্চ গুলো সম্পর্কে অবগত থাকে, তারা এখনো দেখতে পারে আপনি কোন কোন সাইট ভিজিট করেছেন, হোক সেটা যতোই ইনকগনিটো মোড অন রেখে! এরমানে আপনি যতোই ইনকগনিটো মোড চালু রাখুন না কেন, আপনার অ্যাক্টিভিটি এখনো ট্র্যাক করা যেতে পারে। তবে ভিপিএন বা টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা আলাদা ব্যাপার।

চার্জ করতে করতে ফোন ব্যবহার করা যাবে না

এটা এক আদিমকালের সেরা ভুল ধারনা, চার্জ করতে করতে ফোন ব্যবহার করলে নাকি ফোন ব্ল্যাস্ট হয়ে যেতে পারে কিংবা আপনার ব্যাটারি মারাত্মকভাবে ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। অথচ আপনি চার্জ করতে করতে ফোন ব্যবহার করুন, গেমিং করুন, কথা বলুন, মিউজিক শুনুন, কোন কিছুতেই সমস্যা তৈরি হবে না। আপনি যদি খুবই সস্তা কোয়ালিটির চার্জার ব্যবহার করে থাকেন তবে সেটা আলাদা কথা।

এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেল গুলো পড়ে ফেলতে পারেন; ঠিক এই কারণেই আপনার স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়ে যাচ্ছে! | চার্জে লাগিয়ে ফোন ব্যবহার কি আপনার মৃত্যুর কারন হতে পারে?

ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ গুলো ক্লোজ করলেই ফোন ফাস্ট হয়ে যাবে!

হ্যাঁ, এখনো অনেকেই মনে করেন ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ গুলো ক্লোজ করলেই ফোনের পারফর্মেন্স বুস্ট হয়ে যাবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন অ্যাপ ওপেন থাকা আর ঐ অ্যাপটি রান থাকা এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কোন অ্যাপের প্রসেস ব্যাকগ্রাউন্ডে রান থাকার মানে এটা নয় ঐ অ্যাপই রান রয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে অ্যাপ রান থেকে খুব একটা প্রসেস গ্রহণ করে না, হ্যাঁ কিছু অ্যাপের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আলাদা হতে পারে, কিন্তু অ্যাপের প্রসেস গুলো বিশেষ করে অ্যাপকে দ্রুত রান করতে সাহায্য করে এবং অ্যাপটি ক্লোজ হয়ে যাওয়ার পরেও নোটিফিকেশন গুলো পেতে আপনাকে সাহায্য করে।

আপনি হয়তো ১০টি অ্যাপ ওপেন করেছিলেন, রিসেন্ট অ্যাপে ১০টি অ্যাপই শো করবে, কিন্তু এর মানে এটা নয় ১০টি অ্যাপই ওপেন থাকবে সব সময়, অনেক আগে ওপেন করা অ্যাপ গুলো এমনিতেই টার্মিনেট করে দেয় সিস্টেম, সেগুলোকে রিসেন্ট অ্যাপ থেকে রিমুভ করলে জাস্ট শর্টকাট ডিলিট হয় এতে পারফর্মেন্স এর উন্নতি হয় না।

ফোনের স্ক্রীনের আলো যতো কম হবে চোখের জন্য সেটা ততোই ভালো

আপনি স্ক্রীনের ব্রাইটনেস একেবারে ঠেকিয়ে রাখুন আর কমিয়ে মিটমিটে করে দিন, কোন কিছুতেই আপনার চোখের ক্ষতি হবে হবে না। হ্যাঁ, আপনি ফোনের আলো যদি একেবারে উজ্জ্বল করে রাখেন বা মিটমিটে করে দেন সেক্ষেত্রে চোখের উপরে চাপ পরে ফলে মাথা ব্যাথা শুরু হতে পারে কিন্তু চোখ ড্যমেজ হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই!

চার্জ শেষ না করে ফোন চার্জে লাগানো উচিৎ না

অনেকেই মনে করেন ফোনের ব্যাটারি ০% পর্যন্ত শেষ না করে আবার ফোন চার্জে লাগানো উচিৎ না। এই অভ্যাসে আপনার ফোনের ব্যাটারি কতোটা ভালো থাকবে তার গ্যারান্টি না থাকলেও আপনি যদি এমনটা করা জারি রাখেন সেক্ষেত্রে ব্যাটারি দ্রুত ড্যামেজ হবে এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আপনার ফোনের ব্যাটারি বারবার ডিস-চার্জ করার কোনই দরকার নেই, লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি গুলোতে মেমরি ইফেক্ট থাকে না, মানে ফুল ডিস-চার্জ না করলে যে ব্যাটারি পারসেন্টেজ ঠিক মতো দেখাবে না এমনটা নয়।

বেস্ট হচ্ছে, ফোনের ব্যাটারি যতোটুকুই শেষ হোক না কেন, যখনই সময় পাবেন সাথে সাথে ব্যাটারি চার্জ করে দেবেন, এতে বেশি ব্যাকআপ পাবেন, আরো বেশি ইউজ করতে পারবেন।

সারারাত ফোন চার্জে লাগিয়ে রাখলে ফোনের ক্ষতি হয়

দেখুন, স্মার্টফোন গুলোকে এমনি কিন্তু আর স্মার্টফোন বলা হয়না, আপনার ফোন ভালো করেই জানে কখন ১০০% চার্জ হয়েছে আর চার্জ হওয়া বন্ধ করতে হবে। ফোনের মধ্যে স্মার্ট সার্কিট আগে থেকেই লাগানো থাকে যেটা ১০০% চার্জ সম্পূর্ণ করার পরে ব্যাটারিকে ওভার চার্জিং থেকে রক্ষা করে।

আপনি ফোন সারারাত চার্জে লাগিয়ে ঘুমালেও কোনই সমস্যা নেই, তবে হ্যাঁ, যখন ফোনের চার্জ ৯৯% হয়ে যাবে আবার সাথে চার্জার সেটাকে ১০০% করে দেবে, এভাবে সময়ের সাথে সাথে ব্যাটারির উপরে কিছুটা ইফেক্ট পরতে পারে। তবে এ নিয়ে মাথা ব্যাথার কোন কারণ নেই, কিন্তু বেস্ট হয় আপনি যদি রাতে ঘুমানোর সময় চার্জার ফোন থেকে খুলে রাখেন, যদি না রাখেন এতে কোন সমস্যা নেই!

চম্বুকের কাছে ফোন আনলে সকল ডাটা রিমুভ হয়ে যেতে পারে

হ্যাঁ চম্বুকের কাছে আনলে ফোনের ডাটা মুছে যেতে পারে কিন্তু সেটা কোন চম্বুক? দুনিয়ার সবচাইতে শক্তিশালী চম্বুক হলে আলাদা কথা, কিন্তু আপনার ফ্রিজের গায়ে লাগানো থাকা চম্বুক দিয়ে কিছুই হবে না। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনার ফোনের মধ্যেই অনেক টাইপের চম্বুক লাগানো থাকে ন্যাভিগেশন সিস্টেম কাজ করানোর জন্য।

আজকের দিনের স্মার্টফোন গুলো সলিড-স্টেট স্টোরেজের মধ্যে ডাটা সংরক্ষণ করে, আর এই মধ্যে থাকা ট্রাঞ্জিস্টর গুলো ইলেক্ট্রিক্যালি কাজ করে ম্যাগনেটিকভাবে নয়। তার এদের উপর দিয়ে কোন ম্যাগনেট নিয়ে গেলে সেটা কোন ক্ষতি করতে পারে না। কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভের ক্ষেত্রে বড় চম্বুক ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু সলিড স্টেট ড্রাইভের কোন ক্ষতি হয় না।

Image: Shutterstock.Com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories