রিমুভেবল ব্যাটারি : কেন স্মার্টফোনে আর কখনোই রিমুভেবল ব্যাটারি ফিরে আসবে না?

আগের দিনের কথা মনে পরে? ঠিক আজ থেকে ১০-১২ বছর আগে যখন নোকিয়ার ইয়া মোটামোটা ফোন গুলোর অস্তিত্ব ছিল বা স্যামসাং এর ফ্লিপিং ফোন — তখন সব ফোনেই একটি জিনিষ কমন ছিল তা হচ্ছে রিমুভেবল ব্যাটারি। ফোনের পেছনের ঢাকনা খুলে ব্যাস আরামে ব্যাটারি বের করে ফেলা যেতো। কিন্তু আজকের দিনের প্রায় কোন ফোনেই আর রিমুভেবল ব্যাটারি থাকতে দেখতে পাওয়া যায় না! কিন্তু কেন?

আগের দিনই কতো ভালো ছিল তাই না? যখন ইচ্ছা ব্যাটারি খুলে আরেক ব্যাটারি লাগানো যেতো। বাইরে কোথায় গেলে ব্যাস একসাথে ২-৩ টা এক্সট্রা ব্যাটারি বেঁধে নিয়ে চলে গেলেন আর ব্যাস আরামে ফোন ইউজ করতে থাকতেন। ব্যাটারি ফুলে গেলে ফেলে দিয়ে নিজে থেকেই সেটা পরিবর্তন করতে পারতেন, আরো কতোই না সুবিধা ছিল, তাই না? — ওয়েট! — ব্যাপারটা সম্পূর্ণই এমন নয়! নন-রিমুভেবল ব্যাটারির সুবিধার পেয়ে অসুবিধায় ছিল বেশি আর এর জন্যই এই জিনিষ আর কখনোই স্মার্টফোনে ফেরত আসবে না।

প্রিমিয়াম ডিজাইন

সময় পরিবর্তন হয়েছে, আজ থেকে ১০ বছর পূর্বে যখন নোকিয়া N70 ফোন ইউজ করেছি, অনেকেই শুনলে অবাক হতেন, “ওরে বাফ রে… ১৬ হাজার টাকা দিয়ে ফোন কিনেছ?” — কিন্তু আজকের দিনে ১ লাখ টাকা দিয়ে ফোন কিনলেও আমরা আর আশ্চর্য হই না। সময়ের সাথে শুধু ফোন গুলো পাওয়ারফুল হয়েছে তা নয়, ফোনের ডিজাইনের ও অনেক পরিবর্তন এসেছে।

আগের তুলনায় বর্তমান ফোন গুলোতে মেটাল বা গ্লাস ইউজ করা হয় প্ল্যাস্টিকের বদলে। রিমুভেবল ব্যাটারিতে পেছনের ঢাকনা গ্লাস বা মেটালের হলে সেটা ভেঙ্গে যাওয়া, বেঁকে যাওয়া, ঢলঢলে হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে, এতে ফোনের প্রিমিয়াম লুক বা ফিল থাকতে ব্যর্থ হবে।

বর্তমান দিনের নন-রিমুভেবল ফোন গুলোর ব্যাটারি আলাদা টাইপের হয়ে থাকে। বিশেষ করে অনেক পাতলা, বাঁকানো যাবে, নরম, আলাদা আকৃতির হয়ে থাকে। কিন্তু পূর্বের দিনের রিমুভেবল ব্যাটারি গুলো লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন ব্যাটারির সাথে শক্ত প্ল্যাস্টিক কেস লাগানো থাকতো বা ব্যাটারি শক্ত হওয়ার প্রয়োজন ছিল, কেনোনা তাছাড়া সেটাকে বের করে লাগানোর যোগ্যতা থাকতো না। রিমুভেবল ব্যাটারি গুলো মোটা হয়ে থাকে, এতে ফোনের ডিজাইন ও মোটা হয়ে যায়। যেখানে আজকের দিনে আমরা স্লিম ফোনের ডিম্যান্ড রাখি।

প্রিমিয়াম ডিজাইন, বিশেষ করে প্রিমিয়াম অনুভূতির অনেক গুরুত্ব রাখে। মানুষ ফোনের পেছনে লাখো টাকা ও খরচ করতে রাজি, সেখানে প্রিমিয়াম ডিভাইজ তো হতেই হবে। আর রিমুভেবল ব্যাটারির সাথে প্রিমিয়াম ফিল হওয়াটা অনেক মুশকিলের। নন-রিমুভেবল ব্যাটারি ফোনের পেছনের ঢাকনা খুলতে হয় না, এতে ফোন আগের থেকে অনেক বেশি সিম্পল আর সলিড স্টেট ডিভাইজে পরিণত হয়েছে।

ওয়াটার রেজিস্টান্স

একবার ভেবে দেখুন তো আপনি দিনে কতো ঘণ্টা ধরে ফোন ইউজ করেন? আমি তো যতক্ষণ জেগে থাকি প্রায় ততোক্ষণই ফোনের সাথে থাকি। আমি জানি প্রত্যেকেরই বর্তমানে কম বেশি সময় ফোনের সাথেই কাটে। এখন আপনিই বলুন, আপনার ফোনের উপর আপনার হাত থেকে কফি ঢেলে পরার সুযোগ বা হাত থেকে ফোন টয়লেটে পরে যাওয়ার সুযোগ কতোটা বেশি! ফোন সব সময় কাছেই থাকে, তাই যেকোনো সময় আকাশ থেকে বৃষ্টি এসেও হাতের ফোন ভিজিয়ে দিতে পারে।

তাই কোম্পানি গুলো ফ্ল্যাগশিপ ফোন গুলোর সাথে ওয়াটার রেজিস্টান্ট ফিচার যুক্ত করে দেয়। আপনার ডিভাইজটি যতো সলিড স্টেট রাখা সম্ভব হবে ওয়াটার রেজিস্টান্স ততোই ভালো প্রোটেকশন প্রদান করবে। রিমুভেবল ব্যাটারির সাথে আপনার ফোন ওয়াটার রেজিস্টান্ট তৈরি করা অনেক মুশকিল কাজ। এখন আপনি নিশ্চয় চাইবেন না আপনার ফোনে পানি ঢুকে ফোনের মাদারবোর্ড পুড়ে পাঁপর বানিয়ে ফেলুক! শুধু ওয়াটার নয়, ডাস্ট রেজিস্টান্ট হওয়ার জন্য ও নন-রিমুভেবল ব্যাটারির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

আলাদা ফিচার যুক্ত করার জন্য জায়গা

নন-রিমুভেবল ব্যাটারি গুলো সাইজে অনেক মোটা হয়ে থাকে, সাথে প্রোটেকশনের জন্য আলাদা শক্ত কেস ও লাগানো থাকতো কিছু মডেল ফোন ব্যাটারির সাথে। যখন কোন জিনিষকে বারবার বের করবেন আবার লাগাবেন তো সেটাকে তো মজবুদ বানাতেই হবে, কেনোনা ব্যাটারি অনেক বিপদজনক একটি অংশ। আর ফোনের ব্যাটারি ব্লাস্ট হওয়ার উদাহরণ কম নেই দুনিয়াতে।

রিমুভেবল ব্যাটারি গুলো ফোন থেকে বিরাট অংশ জায়গা খেয়ে ফেলে, যেখানে ইঞ্জিনিয়াররা আরো কুল টেক প্লেস করতে পারতো। নন-রিমুভেবল ব্যাটারি গুলো অনেক পাতলা হয়, ডিভাইজের ভেতরে কম জায়গা নেয়, এতে ফোনে আরো আলাদা প্রয়োজনীয় মডিউল ইন্সটল করার স্পেস পাওয়া যায়। যেমন- বেশি ক্যামেরা সেন্সর, ওয়্যারলেস চার্জিং, ওয়াটার কুলিং ফিচার, স্টেরিও স্পীকার — ইত্যাদি কুল ফিচার গুলো নন-রিমুভেবল ব্যাটারির জন্যই সহজ হয়েছে।

পাশাপাশি রিমুভেবল ব্যাটারি গুলো চারকোনা আকৃতির হয়ে থাকে। যেখানে নন-রিমুভেবল ব্যাটারি গুলোকে যেকোনো আকৃতি দেওয়া যেতে পারে। এখন আপনি তো আর L আকৃতির ব্যাটারি পকেটে নিয়ে ঘুরবেন না, তাই না? — নন-রিমুভেবল ব্যাটারি গুলোর যেকোনো আকৃতির জন্য ফোনের মধ্যে আরো বেশি ব্যাটারি আঁটানো সম্ভব, সাথে ফোনের ডিজাইন ও কার্ভ রাখা সম্ভব হতে পারে।


রিমুভেবল বনাম নন-রিমুভেবল ব্যাটারি নিয়ে অনেক পূর্বেই একটি আর্টিকেল লিখেছিলাম, যেখানে দুই টপিকেরই সুবিধা ও অসুবিধা গুলো হাইলাইট করা হয়েছিলো। দেখুন, আপনি যদি সেই ব্যাক্তিটি হোন, যিনি নেক্সট আইফোন বা গ্যালাক্সি ফোনে রিমুভেবল ব্যাটারি আশা করছেন, তো দুঃখিত সেটা আর জীবনেও হয়তো সম্ভব হবে না। উপরের আলোচনা থেকে হয়তো পরিষ্কারই বুঝতে পারছেন রিমুভেবল ব্যাটারি স্মারফোন থেকে কাজের জন্যই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এটা হেডফোন জ্যাক সরিয়ে ফেলার মতো অযৌক্তিক ছিল না। মোটা সাইজ, সস্তা ডিজাইন, আর আরো বেটার যন্ত্রপাতি ফিট করার লক্ষে রিমুভেবল ব্যাটারি স্মার্টফোন ইন্ডাস্ট্রি থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আর এটাই উত্তম সিদ্ধান্ত!

Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories