অনেকেই জিজ্ঞাস করেন, কেন ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করতে হবে? আমার পুরাতন প্ল্যাটফর্ম জাস্ট ফাইন করছে আমাকে কেন ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করা শুরু করতে হবে? — ওয়েল, সেক্ষেত্রে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমি ৫টি এমন গুরুত্বপূর্ণ কারণ বর্ণনা করবো, যার জন্য আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করা উচিৎ। আপনি নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করুন আর আপনার পুরাতন ওয়েবসাইট থাক, ওয়ার্ডপ্রেসে মুভ করা সর্বদায় একটি বেটার চয়েজ হতে পারে।
এই আর্টিকেলে বিশেষ করে WordPress.org বা সেলফ হোস্টেড ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অনেকেই WordPress.com এবং WordPress.org এর মধ্যে ঝামেলা পাকীয়ে ফেলেন। তারা পূর্বে আমাদের ওয়ার্ডপ্রেস পরিচিতি আর্টিকেলটি পড়ে নিতে পারেন। অনেকেই মনে করেন ওয়ার্ডপ্রেস জাস্ট একটি ব্লগিং টুল, হ্যাঁ ওয়ার্ডপ্রেস একটি ব্লগিং টুল কিন্তু ওয়ার্ডপ্রেস শুধু মাত্র ব্লগিং টুল নয়, আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করে যেকোনো টাইপের ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন।
ওয়ার্ডপ্রেস ক্লিন, ফাস্ট, সিকিউর, এবং এতোই বেশি জনপ্রিয় যে রিসেন্ট এক সার্ভে অনুসারে দুনিয়ার প্রায় ৩২.৩% ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেসে তৈরি করা। তাহলে এখন নিজের ভেবেই দেখুন, আর্টিকেলের মূল বক্তব্যে যাওয়ার পূর্বেই এটাও একটি ভালো কারণ হতে পারে ওয়ার্ডপ্রেসে মুভ করার।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
ওয়ার্ডপ্রেস মানেই স্বাধীনতা
ওয়ার্ডপ্রেস একটি ফ্রি সফটওয়্যার, আপনি ফ্রিতে ডাউনলোড করে হোস্টিং এ আপলোড করতে পারবেন। আপনি ইচ্ছা মতো এডিট করেন, রিমুভ করেন, কপি করেন, আপনার যা ইচ্ছা, আপনি যেমন করে সাজিয়ে নিতে চান পারবেন। ভার্চুয়ালভাবে ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করে যেকোনো টাইপের সাইট তৈরি করা যায়, কেনোনা ওয়ার্ডপ্রেস স্বাধীন একটি প্ল্যাটফর্ম, আপনি যা ইচ্ছা তা করতে পারবেন ওয়ার্ডপ্রেসের সাথে।
ওয়ার্ডপ্রেস ফ্রি, কিন্তু আপনাকে একটি ডোমেইন নেম এবং হোস্টিং কিনতে হবে ওয়েবসাইট ইন্সটল করার জন্য। ডোমেইন নেম হচ্ছে সাইটের অ্যাড্রেস যেমন- Wirebd.com — আর ওয়েবসাইট হোস্টিং হচ্ছে স্টোর হাউজের মতো, যেখানে আপনার ওয়েবসাইটের সকল ফাইল গুলো জমা থাকবে আর সেই জমা থাকা কম্পিউটার থেকে সকলের কাছে আপনার সাইটটি সার্ভ করা হবে।
ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস সার্ভিস গ্রহণ করলে আপনার হোস্টিং কোম্পানিই আপনার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস সাইট ইন্সটল করে দেবে। কিন্তু আপনি সেটা নিজে থেকেও চাইলে করতে পারেন, আমাদের এই টিউটোরিয়ালটি অনুসরণ করার মাধ্যমে।
ওয়ার্ডপ্রেস অনেক জনপ্রিয়, আর সেই জন্য ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করার বড় সুবিধা হচ্ছে যেকোনো সমস্যার সমাধান সাধারণ গুগল সার্চ করেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আপনি যে সমস্যারই সম্মুখীন হোন না কেন, সহজেই তার সমাধান খুঁজে পেতে পারবেন। এক কথায় বলতে একজন বিগেইনার হিসেবে ওয়ার্ডপ্রেসের সাথে যতোটা খেলতে পারবেন এবং স্বাধীনতা অনুভব করতে পারবেন সেটা আর আলাদা কোন প্ল্যাটফর্মে সম্ভব না।
ওয়ার্ডপ্রেস ম্যানেজ করা সহজ
ধরুন আপনি একজন নতুন কম্পিউটার ইউজার, আপনার সামনে দুইটি কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম রাখা হলো, উইন্ডোজ আর লিনাক্সের ফেডোরা, আপনি কোনটি নির্বাচন করবেন? অবশ্যই উইন্ডোজ, রাইট? কেনোনা এটা বেশি সহজ আর বিগেইনার ফ্রেন্ডলি সাথে এটা সবাই ইউজ করে বেশি। — অপরদিকে ওয়ার্ডপ্রেসের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই। ওয়ার্ডপ্রেসের সাথেই ডিফল্টভাবে অনেক ফিচার যুক্ত করা রয়েছে, যেমন- সবকিছুর আপডেট রাখার সিস্টেম, জাস্ট এক দুই ক্লিক করেই আপনি সবকিছু আপডেট করে ফেলতে পারবেন।
ওয়ার্ডপ্রেসের নতুন কোর আপডেট আসলে আপনাকে নোটিফিকেশন দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, এক্ষেত্রে আপনি সহজেই ওয়ার্ডপ্রেস আপগ্রেড করে নিতে পারেন। একবার ওয়ার্ডপ্রেস ইন্সটল করার পরে বাকি প্রায় সব কাজই ওয়ার্ডপ্রেস ড্যাশবোর্ড থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, আর বিশ্বাস করুন এর জন্য আপনাকে সুপার টেকি কোন পারসন হওয়ার মোটেও দরকার নেই।
এমনকি আপনার সাইট ব্যাকআপ করার জন্যও আপনাকে হোস্টিং কোম্পানির উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে না। আপনি ওয়ার্ডপ্রেসে ব্যাকআপ প্লাগইন ইউজ করে সহজেই সাইটের ব্যাকআপ নিতে পারবেন। অন্য ক্ষেত্রে আপনার হোস্টিং কে জিজ্ঞাস করতে হতো ব্যাকআপের জন্য বা ব্যাকআপের জন্য আলাদা প্ল্যান গ্রহণ করতে হতো। ওয়ার্ডপ্রেসে তা ফ্রিতেই করতে পারবেন। আপনার সাইটের ব্যাকআপ কোন রিমোট সার্ভারে সিউকিউরভাবে স্টোর রাখতে পারবেন।
ওয়ার্ডপ্রেসের মোবাইল অ্যাপ ও রয়েছে, যেখানে আপনি সহজেই আপনার সাইট ম্যানেজ করতে পারবেন, নতুন পোস্ট তৈরি করা থেকে শুরু করে সকল বেসিক ওয়ার্ডপ্রেস ফাংশন কন্ট্রোল পেয়ে যাবেন মোবাইল অ্যাপ থেকে!
ইচ্ছা মতো ডিজাইন আর ফাংশন যুক্ত করুন, এক সিঙ্গেল কোড টাইপ না করেই!
অনেকেই মনে করেন ইচ্ছা মতো ওয়েবসাইট বানাতে অনেক কোডিং আর প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানতে হবে, আর ডেভেলপার থেকে সাইট বানিয়ে নিতে খরচ আসবে লাখো টাকা। ওয়ার্ডপ্রেস এই ধারণাকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে। ওয়ার্ডপ্রেস সাইটকে ইউনিক লুক দেওয়ার জন্য রয়েছে অনেক থিম স্টোর, আপনি মাত্র কয়েক টাকায় একটি ভালো থিম কিনতে পারবেন। যদি কিনতে চান, ওয়ার্ডপ্রেসের ফ্রি থিমের হিউজ লাইব্রেরি রয়েছে, যা আপনার কল্পনার চেয়েও বড়! জাস্ট থিম কিনে বা ফ্রিতে ডাউনলোড করে সাইটে আপলোড করে দিলেন, আর হয়ে গেলো নতুন এক ডিভাইজ। অনেকটা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের লঞ্চার পরিবর্তন করার মতো, নতুন লঞ্চার ইন্সটল করলে যেমন ফোনের লুক পরিবর্তন হয়ে যায় আর কি!
অপরদিকে আপনি সাইটে কোন ইউনিক ফাংশন অ্যাড করতে চাইলে ওয়ার্ডপ্রেসের রয়েছে হিউজ প্লাগইন লাইব্রেরি। প্লাগইন হচ্ছে আপনার ফোনের অ্যাপের মতো। আপনার ফোনে ডিফল্টভাবে যদি ভিডিও এডিট না করা যায় সেক্ষেত্রে কি করবেন? সিম্পল, জাস্ট একটি ভিডিও এডিটর অ্যাপড ডাউনলোড করলেই কাজ শেষ রাইট? ঠিক এমনি, কিছু একটা যুক্ত করতে চাইলে জাস্ট তার প্লাগইন ইন্সটল করলেই ফাংশনটি সাইটে যুক্ত হয়ে যাবে। ধরুন, আপনার সাইটে নোটিফিকেশন সিস্টেম এনাবল করতে চান, সেক্ষেত্রে সিম্পলভাবে ওয়ানসিগন্যাল প্লাগইনটি ইন্সটল করে নিলেই কাজ শেষ। আপনাকে ১ লাইন ও কোন কোড লিখতে বা জানতে হবে না।
সাইটে আরো কিছু অ্যাড করতে চান; কাস্টমার এরিয়া, কন্টাক্ট ফর্ম, অ্যানালাইটিক্স — আপনি যে ফিচারই যুক্ত করতে চান না কেন, সবকিছুরই প্লাগইন রয়েছে ওয়ার্ডপ্রেসের জন্য!
ওয়ার্ডপ্রেস বেশি এসইও ফ্রেন্ডলি
আপনার ওয়েবসাইট যদি কেউ খুঁজেই না পায় বা ওয়েবসাইটে যদি ট্র্যাফিক না আসে, যতো ভালোই ওয়েবসাইট বানান না কেন, সেটার কোন দাম থাকবে না। আলাদা প্ল্যাটফর্ম গুলো থেকে ওয়ার্ডপ্রেস অনেক বেশি ওসইও ফ্রেন্ডলি। ওয়ার্ডপ্রেস অনেক হাই কোয়ালিটি কোড দিয়ে তৈরি, তাই ইউজারদের টেকি হতে হয় না, গুগল জাস্ট সহজেই ওয়ার্ডপ্রেস সাইট ইন্ডেক্স করতে পারে আর সার্চ এ সহজেই ওয়ার্ডপ্রেস সাইট গুলো শো করে।
ডিজাইনের দিক থেকেই ওয়ার্ডপ্রেস অনেক বেশি ইউজার ফ্রেন্ডলি, সহজেই সবকিছু বুঝতে পারবেন। এসইও এর জন্য ওয়ার্ডপ্রেসে বেশ কিছু ভালো প্লাগইন রয়েছে যেগুলো আপনার হয়ে এসইও করে দেবে আপনাকে কি করতে হবে নির্দেশনা প্রদান করবে। এই জন্যই দেখবেন বেশিরভাগ ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট হাই র্যাকিং পজিশনে থাকে। কেনোনা ওয়ার্ডপ্রেস নিজে থেকেই অনেক বেশি এসইও ফেন্ডলি!
ওয়ার্ডপ্রেস নিরাপদ এবং সিকিউর
ওয়ার্ডপ্রেসকে বিশেষ করে সিকিউরিটির কথা চিন্তা করে ডেভেলপ করা হয়েছে। ওয়ার্ডপ্রেস নিজে থেকেই অনেক বেশি সিকিউর, সাথে ওয়ার্ডপ্রেস অনেক দ্রুত এবং বারবার আপডেট প্রদান করে। নতুন কোন ত্রুটি বের হওয়ার সাথেই সাথেই সেগুলো ফিক্স করা হয়। তবে ইন্টারনেট সিকিউরিটি নিয়ে যখন কথা বলা হবে, কোন কিছু ১০০% হ্যাকার প্রুফ নয়। প্রতিনিয়ত অনেক ওয়ার্ডপ্রেস সাইট হ্যাক হচ্ছে, আমরা দ্রুতই ওয়ার্ডপ্রেস সিকিউরিটি নিয়ে সিরিজ আর্টিকেল পাবলিশ করবো, যেখানে আপনি সহজেই ওয়ার্ডপ্রেস সিকিউরিটি নিয়ে বুঝতে পারবেন।
আমরা ওয়্যারবিডি সিকিউর করার জন্য ওয়ার্ডফেন্স ফায়ারওয়াল ও ব্রু ফোর্স অ্যাটাক থেকে বাঁচার জন্য ক্লাউডফ্লেয়ার সিকিউরিটি ইউজ করি। তাছাড়া আমরা সাইট সিকিউর রাখার জন্য আরো কিছু অ্যাডভান্সড টেক ইউজ করি। আমাদের ওয়ার্ডপ্রেস সিকিউরিটি ফ্রী কোর্সে সবকিছু নিয়েই আলোচনা করা হবে।
আশা করা যায়, এই আর্টিকেল থেকে আপনার অনেক প্রশ্নের উত্তরই খোলাসা হয়ে গেছে। যেকোনো টাইপের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্যই ওয়ার্ডপ্রেস ইউজ করা যেতে পারে। এটা মানতেই হবে যে ওয়ার্ডপ্রেস একটি ইউনিভার্সাল টুল। তো এখনো যদি আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ট্রায় না করে থাকেন, অন্তত ট্রায় করে দেখতে পারেন। যদি আলাদা কোন প্রশ্ন থাকে, আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সর্বদায় প্রস্তুত রয়েছি!
Image: Shutterstock.com