গ্লোবাল ওয়ার্মিং : জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের করনীয়!

ক্লাস ৫ এর পাঠ্যবই থেকে শুরু করে বড় বড় ডিগ্রি এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং কে নিয়ে করা হচ্ছে। আর এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং কি কেন এবং কিভাবে হয় আর এটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবনে কিভাবে প্রভাব ফেলে থাকে তা নিয়ে আপনি কিছু জানেন কি? না জানলে আজকের পোষ্টটি শুধুমাত্র আপনারই জন্য। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোকে আপনি একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে এগুলো (ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণ, সুনামি, বন্যা ইত্যাদি) আমাদের সাধারণ মানুষের অনেক ক্ষতি করে থাকে।

অন্যদিকে বিশ্বে অহরহ ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলা, নিউক্লিয়াম হামলা এগুলো কিন্তু সবাই একটি দেশকে বা একটি স্থানকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। কখনো কি শুনেছেন পুরো বিশ্ব ব্যাপী ভূমিকম্প হচ্ছে? বা পুরো বিশ্ব ব্যাপী সুনামি হচ্ছে বা পুরো বিশ্ব ব্যাপী সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে? কিন্তু আজ যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি তা হলো গ্লোবাল ওয়ার্মিং।

প্রতিনিয়ত বিশ্বের তাপমাত্র বেড়ে যাচ্ছে, আর এটাকেই ইংরেজিতে গ্লোবাল ওয়ামিং বলা হয়। আর এই গ্লোবাল ওয়ামিং কিন্তু কোনো দেশ কেন্দ্রিক বা কোনো স্থান কেন্দ্রিক হিসেবে হচ্ছে না; এটি পুরো বিশ্বব্যাপী ঘটছে। আর এভাবে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে খুব শীঘ্রই অদূর ভবিষ্যৎতে বিশ্বের জলবায়ু এমন ভাবে পরিবর্তন হয়ে যাবে যার কারণে বিশ্বের বুক থেকে অনেক ধরণের প্রাণী  একদমই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে (যেমন আমাদের বাংলাদেশ) মানুষের বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে।


গ্লোবাল ওয়ার্মিং কি? (সহজ ভাষায় )

ধরুণ আপনি আমেরিকার Alaska অঞ্চলে বসবাস করেন। এই অঞ্চলটি পুরোটাই বরফ দিয়ে ঢাকা থাকে এবং এখানে শীতের পরিমাণ অনেক বেশি। আর এই শীত থেকে বাঁচতে আপনি একটি কাঠ-কুঠোয় আগুন ধরালেন। আগুনের তাপ আপনাকে পরিবেশের ঠান্ডা ভাব থেকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং আপনাকে আরাম দিবে। কিন্তু একসময় আপনার মনে হবে যে এই তাপমাত্রা আপনার জন্য এবং আপনার পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়।

আপনি আগুণকে বাড়ানোর জন্য আরো কাঠ-কুঠো দিয়ে দিলেন। আগুণের মাত্রা বেড়ে গেলো। কিন্তু ধরুণ আপনি এত পরিমাণের আগুণ দিয়ে দিলেন বা আগুণকে বড় করে দিলেন যে এখন আপনার বাসায় আগুণের তাপমাত্রা অনেক বেশি বেড়ে গেছে এবং এটা সহ্য করার বাইরে চলে গিয়েছে। তখন আপনার মনে হবে যে আগুণ ধরানোটাই ভূল হয়েছে। আর তখন এই বড় মাপের আগুনকে নিয়ন্ত্রণে আনা আপনার পক্ষে সম্ভব হবে না। গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিষয়টি অনেকটাই এই ঘটনার মতো।

বিশ্বের মানুষগুলো এমন এমন কিছু কাজ করে থাকে যার কারণে প্রতি বছরে বিশ্বের উষ্ণতা একটু একটু করে বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু এই উষ্ণতা আমাদের চোখে পড়ার মতো না, কারণ প্রতি বছর যে পরিমাণের উষ্ণতা বাড়ছে সেটা অনেক কমই কিন্তু এভাবে বাড়তে থাকলে এক সময় গিয়ে উষ্ণতা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে যে তখন আর উষ্ণতা কমানোর কোনো রাস্তা থাকবে না। ১৯০০ শতকে গ্লোবাল ওয়ামিংয়ের জন্য বিশ্বে তাপমাত্রা বেড়েছিলো ০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে। কিন্তু ২১ শতকের শেষে এসে দেখা গেলো যে এই গ্লোবাল ওয়ার্মি য়ের জন্য বিশ্বের তাপমাত্রা ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমানে ইতিমধ্যেই ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে প্র্রায় ৭৫% এবং ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াম হারে বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা রয়েছে ৫০%। তবে বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে এই হারে চলতে থাকলে এই শতকের শেষের দিকে বিশ্বের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।

এখন আপনার মনে হতে পারে যে এই ৩ বা ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লে এ আর এমন কি? কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখবেন যে Ice Age বা বরফের যুগে এই ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়তে সময় লেগেছিলো প্রায় ৫০০০ বছর। আর বর্তমানে আমরা মাত্র ১০০ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়িয়ে নিচ্ছি। আর একবার বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এটাকে কমিয়ে আনা অনেক কঠিন একটি কাজ এবং সম্পূর্ণ রূপে কমিয়ে আনা একদমই অসম্ভব একটি কাজ।

মানে হচ্ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং একটি আতঙ্কের নাম। ধরূণ ধরে নিলাম ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হারে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। এখন বর্তমানে বাংলাদেশের জৈষ্ঠ্য কালের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা গিয়ে দাড়ায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন ৩০০০ বা ৩০১০ সালে গিয়ে বাংলাদেশের এই তাপমাত্রা গিয়ে দাঁড়াবে (৩৮+৩) ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেই বাংলাদেশে গরমের জন্য বসবাস করা যায় না আবার ৪১ ডিগি হয়ে গেলে যে কি হবে আপনারাই কল্পনা করেন।

কি কারণে গ্লোবাল ওয়ার্মিং হচ্ছে?

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণ হিসেবে দোষারোপ করা হয় গ্রীণ হাউজ ইফেক্ট নামের একটি ঘটনা কে। একটি গ্রীণহাউজ (বা গ্লাসহাউজ) য়ে কোনো কিছু উৎপাদন করা বেশ সহজ কাজ কারণ গ্রীণহাউজ তার তাপমাত্রাকে হাউজের ভিতরে বন্দি করে রাখে এবং হাউজের চারিপাশের আবহাওয়ার থেকে বেশ গরম হয়ে থাকে। যেমন ধরুণ চুলায় পাতিলে ভাত রান্নার করার থেকে একটি প্রেসার কুকারে তুলনামূলক ভাবে বেশ দ্রুতই ভাত সিদ্ধ হয়ে যায়। এই গ্রীণ হাউজ ইফেক্টকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো নিচে আমি দিয়ে দিচ্ছি:

(ক) প্রাকৃতিক গ্রীণহাউজ ইফেক্ট

গ্রীণহাউজ ইফেক্ট সম্পর্কে আশা করবো বেসিক ধারণা পেয়েছেন। বিশ্বের বায়ুমন্ডলটা এই গ্রীণহাউজের মতোই চলতে থাকে। বিশ্বের বায়ুমন্ডলটাকে একটি বড়সড় গ্রীণহাউজ হিসেবে ধরে নিন, তাহলে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে। এই বিশ্বের বায়ুমন্ডলটা তাপমাত্রাকে বিভিন্ন উপায়ে ধরে রাখে। বিশ্বের বায়ুমন্ডলে প্রাকৃতিক গ্যাসের হার অনেক বেশি, এদের মধ্যে রয়েছে মিথেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড। এই প্রাকৃতিক গ্যাসগুলো পৃথিবীর চারিপাশে গ্লাসের মতো করে ঘিরে থাকে। আর যখন সূর্যের আলো এই গ্যাসগুলোর ভিতর দিয়ে পৃথিবীতে প্রবেশ করে তখনই পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়তে থাকে।

উষ্ণতা বাড়তে থাকায় পৃথিবী তার কিছু হিট এনার্জিকে মহাকাশের দিকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু অনেক সময় মহাকাশের দিকে ছেড়ে দেওয়া এই উষ্ণতা গুলো বায়ুমন্ডল ভেদ করতে পারে না এবং তারকারণে উষ্ণতাগুলো আবারো পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই কারণেই পৃথিবী তার গড় মাত্রায় (৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ক্রমান্নয়ে ঘুরতে থাকে। এটাকেই বলা হয় প্রাকৃতিক গ্রীণহাউজ ইফেক্ট। আর এই প্রাকৃতিক গ্রীণহাউজ ইফেক্ট একটি ভালো জিনিস। কারণ এটি না থাকলে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনেক ঠান্ডা থাকতো এবং এখানে মানুষের বসবাস করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াতো।

(খ) কৃত্রিম গ্রীণহাউজ ইফেক্ট

প্রাকৃতিক গ্রীণহাউজ ইফেক্টে মানুষের প্রত্যক্ষ হাত না থাকলেও কৃত্রিম গ্রীণহাউজ ইফেক্ট মানুষের জন্যই হচ্ছে। ১৮ এবং ১৯ শতকের শিল্প বিপ্লবের পরেই কৃত্রিম গ্রীণহাউজের ইফেক্ট ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তখন প্রথমে কয়লা পুড়িয়ে স্ট্রিম ইঞ্জিণের ব্যবহার ব্যাপক ভাব শুরু হয়। আর তখন থেকেই মানুষ বিভিন্ন এনার্জিকে বেশি করে ব্যবহার করা শুরু করে দেয়। যেমন ১৯০০ শতকের মাঝামাঝিতে গাড়ির ইঞ্জিণ আবিস্কার হওয়ার পর সেটাকে চলানোর জন্য পেট্রোলের ব্যবহার শুরু হয়। আর গাড়ি থেকে বের হওয়া ক্যামিক্যাল হিট পৃথিবীর আবহাওয়াকে ধীরে ধীরে গরম করা শুরু করতে থাকে।

এছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্রগুলোতে এই কয়েল, গ্যাস এবং তেল জ্বালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এই জ্বালিয়ে দেওয়া উপাদানগুলোকে বলা হয় Fossil Fuels বা জীবাশ্ম জ্বালানী। এই Fossil Fuels পরিবেশে অনেক বড় পরিমাণের কাবর্ন ডাই অক্সাইডের মেঘ তৈরি করে থাকে যাকে বলা হয় carbon dioxide emissions । আর যার কারণে পৃথিবীর কার্বন ডাই অক্সাইডের গ্যাসের ঘনত্ব বছর প্রতি বাড়তে থাকে আর তাই পৃথিবী থেকে মহাকাশে দিকে নির্গত তাপমাত্রা পৃথিবীতে আরো বেশি পরিমাণে বদ্ধ হয়ে যায়; যার ফলাফল বছর প্রতি বিশ্বের তাপমাত্রা আরো দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। একে বলা হয় কৃত্রিম গ্রীণহাউজ ইফেক্ট।

গ্লোবাল ওয়ামিং কি দিন দিন খারাপ হচ্ছে?

হ্যাঁ অবশ্যই। আমরা প্রতিনিয়ত যে পরিমাণের fossil fuels জ্বালাচ্ছি তার কারণে গত ৪ লক্ষ ২০ হাজার বছরের মধ্যে বর্তমানেই সবথেকে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে জমা রয়েছে। শিল্প বিপ্লবের আগে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ছিলো প্রতি মিলিয়নে 280 parts । আর বর্তমানে এর পরিমাণ গিয়ে দাড়িয়েছে 380 parts প্রতি মিলিয়নে। এখন চিন্তার বিষয় হচ্ছে মাত্র ১৫০ বছরেই পৃথিবীর কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ এতো বেশি মাত্রায় বেড়ে গেলো যে তা এখন বর্তমানে পরিবেশবাদীদের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে।

এক গবেষণায় জানা গিয়েছে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই প্রতি জন প্রতি বছরে গড়ে ২০ টনের মতো কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদন করছেন। বর্তমানে আমাদের ব্যবহৃত সকল এনার্জির ৮০ শতাংশ আসে এই Fossil Fuels থেকে। ২০১৭ সালের US Energy Information Administrations বলেছেন যে ২০১৫ সাল থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের এনার্জি ব্যবহারের পরিমাণ ২৮% বেড়ে যাবে। কারণ এখন ইন্ডিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলো আরো উন্নত হচ্ছে এবং fossil fuels এর ব্যবহারের মাত্রা দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। মূল কথা হচ্ছে দিন দিন পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা আগের শতকের থেকেও ভয়াবহ।

জলবায়ু পরিবর্তন কি আসলেই হচ্ছে?

একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের আবহাওয়ার প্যার্টান কে জলবায়ু বা Climate বলা হয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে কতটুকু সূর্যের আলো পৌছাবে, কতটুকু বৃষ্টিপাত হবে, বাতসের আদ্রতা কতটুকু হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো উক্ত অঞ্চলের জলবায়ুর উপর নির্ভর করে থাকে। আর বইতে আপনারা পড়ে থাকবেন যে আবহাওয়ার পরিবর্তন দ্রুত হলেও এই জলবায়ুর পরিবর্তন বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে যত বেশি কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা যত বেশি বৃদ্ধি পাবে; পৃথিবীর জলবায়ু ঠিক ততপরিমাণেই দ্রুত বদলাতে থাকবে। যেমন কিছুদিন আগে বাংলাদেশে হঠাৎ শীতের মাত্রা বেড়ে যায় আবার এ বছরের কয়েকটি হঠাৎ করেই বাংলাদেশের তাপমাত্রা গত ৩০ বছরের থেকেও বেশি হয়ে গিয়েছিলো। এগুলো সবই হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফল।

বিজ্ঞানীরা কিভাবে ভবিষ্যৎতের আবহাওয়া বলে দিতে পারেন?

সাধারণত ভাবে বলতে গেলে অতীতে যা হয়েছে সেটার উপর গবেষণা করে ভবিষ্যৎতের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। যেমন আপনি যদি জানেন যে গত ৫ বছর ধরে আপনার এলাকায় প্রতি শুক্রবার বৃষ্টি হয়ে থাকছে তাহলে এক্ষেত্রে আপনি বলতে পারেন যে আগামী শুক্রবারও বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি সঠিকও হয়ে যেতে পারেন। এই ভাবেই অতীতের ডাটাকে বিশ্লেষণ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়ে থাকে। তবে এখানে অতীতের ডাটা বিশ্লেষণ ছাড়াও আরো কয়েকটি জটিল বিষয় রয়েছে।

অন্যদিকে জলবায়ু বা লং টার্ম বিষয়গুলোর উপর ভবিষ্যৎ বাণী করা আরো অনকে জটিল একটি বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের উপর বিজ্ঞানীরা কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে থাকে। এবং এটা কোনো সাধারণ কম্পিউটার নয়, পৃথিবীর সবথেকে বড় পাওয়ারফুল কম্পিউটার যাকে Supercomputer বলা হয়; সুপারকম্পিউটারে বিজ্ঞানীরা অনেক বড় এবং জটিল একটি প্রোগ্রাম চালান যেটি অতীত এবং বর্তমানে আবহাওয়ার উপর অনেক বড় বড় ম্যাথমেটিক ক্যালকুলেশন করে বিজ্ঞানীদের জলবায়ু সম্পর্কে রেজাল্ট দিয়ে থাকে। আর এভাবেই কম্পিউটারের থেকে পাওয়া রেজাল্টের উপর নিজে থেকে আবারো গবেষণা করেই তারপর বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণী করে থাকেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

পৃথিবী যত গরম হতে থাকবে, সমুদ্রও একই হারে গরম হতে থাকবে। তবে ধীরে ধীরে। আর পানি গরম হতে থাকলে সেটাও বর্ধিত হতে থাকে। আর এই গরমের জন্যেই সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা দিন দিন বাড়তে থাকে। এছাড়াও ঠান্ডা অঞ্চলের জমে থাকা বরফগুলো ধীরে ধীরে গলে গলে পানির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে, আর পৃথিবী গরম হতে থাকলে জমে থাকা বরফগুলোও দ্রুত গতিতে গলতে শুরু করবে।

আপনি যদি সমুদ্র অঞ্চলের থেকে দূরে বসবাস করে তাহলে এটা আপনার জন্য কোনো ব্যাপার না। কিন্তু যেসকল অঞ্চল বা দেশগুলো সমুদ্রের আশে পাশে রয়েছে (যেমন বাংলাদেশ, আমেরিকার ফ্লোরিডা বা ক্যালিফোর্নিয়া, ইন্ডিয়ান মহাসমুদ্রের Maldives) সেগুলো ধীরে ধীরে সমুদ্রের পানির নিচে তলিয়ে যাবে। তবে এটা খুবই ধীর গতির একটি প্রক্রিয়া। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা গবেষনা করে বের করছেন যে প্রতি দশকে সমুদ্রের পানি ৩ সেন্টিমিটার (১ ইঞ্চির একটু বেশি) হারে বেড়ে চলেছে। তবে ২১০০ সালের মধ্যে এই হার ১০ সেন্টিমিটার থেকৈ ১ মিটার পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে (৪ ইঞ্চি তেকে ৩ ফিট)।

মানুষের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব

মানুষের উপর জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব অবশ্যই রয়েছে। মানুষও কিন্তু একটি প্রাণী যা আমরা অনেক সময়ই ভুলে যাই। জলবায়ু ঘন ঘন পরিবর্তন হলে আপনি যে এলাকায় বাস করছেন যেটা আবহাওয়া একেক দিন একেক রকম হবে। যার কারণে শিশু এবং বৃদ্ধ মানুষ এই আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বৃষ্টির এবং ঝড়ের পরিমাণও বেড়ে যাবে। অতিবৃষ্টির কারণে জমির ফসল নস্ট হতে পারে। আবার অতিবৃষ্টির কারণে বন্যাও হতে পারে। বিজ্ঞানীরা আগামী শতকের মধ্যে বন্যার কারণে ১০০ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষের গৃহহীন হয়ে পড়বে বলে আগাম সর্তকবার্তা দিয়েছেন।

এছাড়াও অনান্য প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতাও ঘটবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। যেমন বিশ্বের এক স্থানে খাদ্য উৎপাদন করা আরো সহজ হয়ে পড়বে আবার অন্যত্র জমি থেকে খাদ্য উৎপাদন করা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিশ্বের দরিদ্র দেশের দরিদ্র মানুষগুলো। পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় যে সকল এলাকায় তাপমাত্রা বেশি যেখানে মশার উপদ্রবও বেড়ে যাবে, কারণ মশা গরম আবহাওয়ায় বেশি প্রজনন করতে পারে। ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২/৩ শতাংশ মানুষ ম্যালেরিয়ার কারণে ঝুঁকিতে থাকবেন বলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। বর্তমানে যা মাত্রা ৪৫% য়ে রয়েছে।

গ্লোবাল ওর্য়ামিং বন্ধে আমাদের করণীয়

এই প্রশ্নের সবথেকে সহজ উত্তর হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর চাপ কমানো। আমাদেরকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাতে হবে, গ্লোবাল ওয়ার্মিং একদম বন্ধ করা কখনোই সম্ভব নয়। তবে আমাদের উচিত যথাসম্ভব কম carbon dioxide emission উৎপাদন করা আর এর মানে হচ্ছে প্রাকৃতিক শক্তির সৎ ব্যবহার করা। এছাড়াও একই কাজ কিভাবে প্রাকৃতিক শক্তির ব্যবহার ছাড়াই করা যায় সেটা নিয়ে অনেক দিন ধরেই উন্নত বিশ্বের বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন।

আমরা নিজেরাই নিজেদের ব্যক্তিগত কার্বন ডাই অক্সাইডের উৎপাদনের পরিমাণ খুব সহজেই কমিয়ে ফেলতে পারি। যেমন তাপ উৎপন্নকারী এবং বেশি বিদ্যুৎ খায় এরকম বাতি ব্যবহার না করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী লাইট ব্যবহার করতে পারি। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বাস, বাইসাইকেল বা হেঁটে যাওয়ার অভ্যেস করতে পারি।

ধরুন আপনার মতো আরো ৪০ জনের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। আপনারা ৪০ জন মিলে প্রতিদিন যে পরিমাণের গাড়ি থেকে ধোঁয়া বের করছেন এখন আপনারা ৪০ জন প্রতিদিন যদি বাসে করে গন্তব্যস্থলে যান তাহলে একটি বাসের নির্গত ধোঁয়া আপনাদের ৪০টি ব্যক্তিগত গাড়ির ধোঁয়ার থেকে অবশ্যই তুলনামূলক ভাবে অনেক কম হবে। বিষয়টি আশা করবো বুঝতে পেরেছেন।

প্রয়োজন ছাড়া এসি ব্যবহার না করে জানালা খুলে দিয়ে প্রাকৃতিক বাতাস আমরা গ্রহণ করতে পারি, আবার তেল, গ্যাস এগুলোর চাইতে ইলেক্ট্রিক গাড়ি ব্যবহার করতে পারি। এভাবে নিজেদের ব্যক্তিগত দিক দেখে আমরা সচেতন হয়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং কে যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে পারি।


Image: Shutterstock

About the author

ফাহাদ

Add comment

Categories