কোন অনুষ্ঠানে বা অন্য কোথাও হঠাৎ করে আপনি কোন গান শুনলেন, আপনার ভালো লেগে গেল। তবে কষ্টের ব্যাপার হল আপনি গানের নামটি জানেন না, এমতাবস্থায় আপনি খুব সহজেই আপনার স্মার্টফোনটি থেকে একটি মিউজিক আইডেন্টিফিকেসন অ্যাপ বের করে গানটির নাম জেনে নিলেন ,ব্যাপারটি দারুন! তবে কথা হল এসব মিউজিক আইডেন্টিফিকেসন অ্যাপ বা সফটওয়্যার কাজ করেটা কীভাবে?
সাজাম, সাউন্ডহাউন্ড, মিউজিক-আইডি ইত্যাদি হল এমনি কিছু মিউজিক তথা সাউন্ড আইডেন্টিফিকেশন অ্যাপ। সাজামকে এই তালিকার রাজা বলা যায় , কারন এর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা এবং সিরি ও ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম এর সাথে এর ইন্টিগ্রেশন এর কারনে।
মিউজিক আইডেন্টিফিকেসন অ্যাপ বা সফটওয়্যার কীভাবে কাজ করে তা জানার পূর্বে চলুন সাজাম অ্যাপটি সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া যাক। আমরা যারা মিউজিক লাভার তাদের কম বেশি সবার স্মার্টফোনে এই সাজাম অ্যাপলিকেশনটি ইন্সটলকৃত অবস্থায় পাওয়া যাবে। এই সাজাম অ্যাপলিকেশনটি কেবল মিউজিক নয় ,ডিভাইস এর মাইক্রোফোন থেকে আগত সাউন্ড থেকে মুভি এর নাম এমনকি বিজ্ঞাপন পর্যন্ত সনাক্ত করতে পারে।
সাজাম অ্যাপলিকেশনটি ১৯৯৯ সালে চারজন প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকগন দ্বারা তৈরি করার পর থেকে অ্যাপলিকেশনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে অ্যাপেল ইন-কর্পোরেট সাজাম এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডকে কিনে নেয়। অ্যাপ চালু করে একটি বাটন প্রেস করে কেবল মাত্র বসে থাকা ,তারপর অ্যাপটি একা একা গান শুনে আপনাকে বলে দিবে আসলে সেই গান বা মিউজিকটির নামকি ! ব্যাপারটা এসব অ্যাপ এর ক্ষেত্রে অনেকটা ম্যাজিক এর মত মনে হলেও এসব অ্যাপ বা সফটওয়্যারও কাজ করে একটা অলগরিদম এর সাহায্যে। আর এই অলগরিদম হল ফিঙ্গারপ্রিন্ট, হমম মিউজিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট!
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে অ্যাপ মিউজিক আইডেন্টিফাই
- মূলত এসব অ্যাপলিকেশন কাজ করে তাদের ডাটাবেজে সেইভ অবস্থায় থাকা বিশাল সংখ্যক গানের ফিঙ্গারপ্রিন্ট থেকে। আর এসব ফিঙ্গারপ্রিন্ট হল মূলত প্রতিটি গানের ইউনিক শব্দ এর প্যাটার্ন যা ডিজিটালি ডাটা আকারে মিউজিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট হিসেবে সেভ হয়ে আছে।
- যখন আপনি অ্যাপ টি চালু করে রেকর্ড বাটনে প্রেস করেন তখন এই অ্যাপটি মিউজিক টির কয়েক সেকেন্ড এর একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি করে এবং পরবর্তীতে সেই ফিঙ্গারপ্রিন্টকে অ্যাপটি ডাটাবেজে সেইভ থাকা অন্যসব ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর সাথে ম্যাচ করে দেখে ; এতে করে ডাটাবেজে সেইভ থাকা যেই ফিঙ্গারপ্রিন্টটির সাথে মিলে যায় সেই হিসেবে অ্যাপটি একটি কারেক্ট ফলাফল প্রদান করে।
মিউজিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট
এসব অ্যাপ্লিকেশানে আপনি যে মিউজিকটা মাইক্রোফোন দিয়ে রেকর্ড করেন তাকে বলা হয় ‘অডিও ট্যাগিং’ । আর এই ট্যাগ হয়ে থাকা হয়ে থাকা সাউন্ডকে অ্যাপটি এর ডাটাবেজ এর নানাপ্রান্তে খোঁজাখুঁজি করে থাকে। ডাটাবেজ এর ভেতর থাকা এক একটি মিউজিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট বলতে গেলে আপনারা গনিতে যে গ্রাফ তথা রেখা চিত্র আঁকিয়েছেন ঠিক তার মত। এখানে গ্রাফ এর মত এক্স এবং ওয়াই দুটি অক্ষ থাকে । আর এই দুই অক্ষ বরাবর একেক গানের একেক ফ্রিকুয়েন্সি এবং লেন্থ বর্ণালির আলোক চিত্র বা রেখা চিত্র হিসেবে ডিজিটাল ডাটা আকারে সংরক্ষিত হয়ে থাকে; আর যাকে এখানে আমরা বলছি ‘মিউজিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট’।
সাউন্ডহাউন্ড
আরেকটি অন্যতম জনপ্রিয় একটি মিউজিক আইডেন্টিফিকেশন অ্যাপ বা সফটওয়্যার এর নাম হল সাউন্ডহাউন্ড। সাউন্ডহাউন্ড ইন-কর্পোরেট এর সাউন্ডহাউন্ড হল একটি ভয়েজ রিকগনিশন, সাউন্ড রিকগনিশন এবং ন্যাচারাল ভয়েজ আন্ডার স্ট্যান্ডিং সফটওয়্যার। সাউন্ডহাউন্ডকে সম্ভবত বলা যায় সাজাম এর সবচাইতে বড় প্রতিযোগী । এর মুল ফিচারগুলি সাজাম এর মতনই তবে এর বিশেষ কিছু ফিচার একে একটি ফুল ফিচারড মিউজিক আইডেন্টিফিকেশন অ্যাপে পরিণত করেছে।
গান বা মিউজিককে রিকগনিশন করার জন্য অ্যাপটি চালু করার পর পরই একটি কমলা রঙের বাটন দেখা যাবে, যা চাপলে পরেই মিউজিক ট্যাগিং হওয়া শুরু হয়ে যাবে। তবে সাউন্ডহাউন্ড এই বাটন কমান্ড ছাড়াও ভয়েজ কমান্ডেও কাজ করে। ব্যাপারটি অনেকটা আশ্চর্যময়, তবে সত্য! কেবল মাত্র OK, Hound এই শব্দটা মুখ দিয়ে উচ্চারন করলেই অ্যাপটি মিউজিক ট্যাগিং করা শুরু করে দিবে। আর পাশাপাশি এটি গানের ইনফর্মেশন থেকে শুরু করে শিল্পীর নাম পর্যন্ত বের করে দিতে পারে।
সাউন্ডহাউন্ডে আপনি অবশ্য বিল্টইন মিউজিক প্লেয়ার পাবেন; যেখানে আপনি ডাটা অন করা থাকলে যেসব মিউজিক ট্যাগ করা হয়েছে, সেসব পাবেন; পাশাপাশি টপ চার্ট মিউজিক অডিওগুলিও আপনি এখান থেকে হয়ত কিনে থাকবেন। এই অ্যাপটিতে আপনি নিজেও গান গেয়ে এই মেশিনটির গুনগত পরিক্ষা নিরিক্ষা করতে নিতে পারেন ।
ট্র্যাকআইডি
সনির ‘TrackID মিউজিক আইডেন্টিফিকেশন অ্যাপটি’ সাজাম বা সাউন্ডহাউন্ড এর মত এতটা উন্নত এবং জনপ্রিয় নয়। তবে সবগুলোর চাইতে এর আকার বা ফাইল সাইজ একটু ছোট। অ্যাপটিতে প্রধানত ৩টি মেইন ট্যাবকে ফিচার করা হয়েছে। Discover ট্যাবটি বর্তমান সময়ের যে যে মিউজিক বা গানগুলি বেশি জনপ্রিয় সেগুলোকে দেখাবে। এর একটি অসাধারন ফিচার হচ্ছে হল Live Map যেখান থেকে পৃথিবীর কোথায় কে কখন ট্র্যাকআইডি দিয়ে কোন মিউজিকটি ট্যাগিং করছে তা দেখা যায়। মিউজিক ট্যাগিং এর ক্ষেত্রে এই অ্যাপটি আপনাকে কেবল সামান্য কিছু ফিচার দেয়। কোন মিউজিক এর ডাইরেক্ট লিঙ্ক দেয়ার পরিবর্তে এটি আপনাকে সরাসরি ইউটিউবে নিয়ে যাবে আর যা এই অ্যাপটির একটি খারাপ দিক।
এসব অ্যাপলিকেশন যে কেবল শুধু মিউজিকই রিকগনিশন করে তা কিন্তু নয়; সাজাম, সাউন্ডহাউন্ড এর মত অ্যাপ্লিকেশান গুলো সিনেমা এমনকি টেলিভিশন কমার্শিয়াল গুলোকেও খুব ভালভাবে সনাক্ত করে নিতে পারে। গুগলও এইদিক দিয়ে কিন্তু পিছিয়ে নেই, আপনি ভয়েজ সার্চ ব্যাবহার করে একি কাজটি করতে পারবেন যেমনটি করছেন এসব মিউজিক আইডেন্টিফিকেশন অ্যাপে। আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত নিচে মতামত সেকশনে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু।
Image: Shutterstock.com