৩৬০ ডিগ্রি ফটোগ্রাফি কীভাবে কাজ করে? — ওয়্যারবিডি ব্যাখ্যা!

বিগত কয়েক বছরে ফটোগ্রাফি মানুষের ভেতর ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে; পাশাপাশি ফটোগ্রাফির প্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছে আরও হাজারো নতুনত্ব। অন্যান্য সব প্রযুক্তির মতই ফটোগ্রাফিতেও নানারকম উন্নত সুবিধা এবং উদ্ভাবন যুক্ত হচ্ছে। ৩৬০ ডিগ্রী ফটো এবং ভিডিওগ্রাফী এরকমই ফটোগ্রাফির সবচাইতে বড় একটি সংযোজন। আজকের আর্টিকেলে আমি এই ৩৬০ ফটোগ্রাফি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

৩৬০ ডিগ্রি ফটোগ্রাফি হল আধুনিক ফটোগ্রাফির সবচাইতে উদ্ভাবনী এবং এইপর্যন্ত সবচেয়ে সেরা সংযোজন। ছবি তোলার ক্ষেত্রে সবসময় ভালো হয় সবকিছুই যেন ক্যামেরা বন্দি হোক। তবে সাধারন ফটোগ্রাফিতে হয়ত সবকিছু ক্যামেরার ফ্রেমে আনা সম্বব হয় না। এমন কিছু যদি হত যা দৃষ্টির বাইরেও আরও কিছু ক্যাপচার করে এক দৃশ্যে বন্দি করত- সেরকমই একটি বিষয় হল ৩৬০ ফটো/ ভিডিওগ্রাফি।

সাধারনত দুটি উপায়ে ৩৬০ ডিগ্রী ফুটেজ ক্যাপচার করা হয়-

  • প্রথমত,একটি সিঙ্গেল ক্যামেরার সাথে খুবই বড় একটি ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স যুক্ত করে বা একটি সিঙ্গেল ক্যামেরার সাথে একাধিক লেন্স ব্যবহার করে।
  • দ্বিতীয়ত, অনেকগুলো ছবিকে একসাথে যুক্ত করে।

যেখানে মানুষের চোখ এক দৃষ্টিতে কেবল ১৬০-১৭০ ডিগ্রী পর্যন্ত দেখতে পারে; সেখানে বর্তমান সময়ে বাজারে অনেক ক্যামেরা খুঁজে পাবেন যা এর এক্সট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স থাকার সু-বাদে ১৮০ ডিগ্রী বা তার থেকেও কিছু বেশি ডিগ্রী অ্যাঙ্গেলে ছবি তুলতে সক্ষম। আর এসব ক্যামেরা ছবির পাশাপাশি একই ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে ভিডিও রেকর্ড করতে সক্ষম। Kodak SP360 এর মত ডিভাইসের ক্যামেরার ওপর লাগানো এক্সট্রা ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স কারনে উলম্বভাবে ২১৪ ডিগ্রী এবং অানুভূমিকভাবে মিলে একদম ৩৬০ ডিগ্রী ছবি এবং ফুটেজ ক্যাপচার করতে পারে। তবে এখানে শুধু ক্যামেরাটা যে স্থানে অবস্থিত রয়েছে সে অংশটুকু ছবিএবং তে পাওয়া যায়

আর এরকম ৩৬০ ডিগ্রী ফুটেজ ধারন করার জন্য যতটা না কাজ করে এর ক্যামেরা, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে এর লেন্স। সাধারনত ৩৬০ ডিগ্রী ফুটেজ নিতে সক্ষম ক্যামেরায় একটি বড়সড় ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স দেখা যায়। এখানে পরপর ক্যামেরার প্রাইমারি লেন্স এবং পাশাপাশি এর ওপরে একটি ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স অবস্থান করে। আর এসব ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স আসেপাশের এমন অনেক দৃশ্য ক্যামেরার চোখে নিয়ে আসে যা প্রাইমারি লেন্স দিয়ে দেখা সম্ভব ছিল না। স্যামসাং গিয়ার ৩৬০ এর মত ডিভাইসে একই প্রক্রিয়ায় দুইটি ক্যামেরার সাহায্যে এভাবে ৩৬০ ডিগ্রি ইমেজ এবং ভিডিও ক্যাপচার করা যায়। আর স্যামসাং গিয়ার ৩৬০ ক্যামেরার ক্ষেত্রে যে ব্যাক্তিটি ক্যামেরা বা ক্যামেরার ট্রাইপড ধরে থাকে তাকে সহ ৩৬০ ডিগ্রী ছবি এবং ফুটেজ এর ভেতর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। স্যামসাং গিয়ার ৩৬০ এর মত ডিভাইস যেখানে দুটি ক্যামেরা এবং ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স ব্যবহার করা হয়, এদেরকে বলা হয় টু-লেন্স ক্যামেরা। অন্যদিকে কোডাক এসপি৩৬০ এর মত ডিভাইসকে বলা হয় সিঙ্গেল-লেন্স ক্যামেরা

স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারে খুবই সহজে ৩৬০ ডিগ্রী ইমেজ-ভিডিও ভিউয়ার সফটওয়্যারের সাহায্যে এসব স্টিল ইমেজ এবং ভিডিও খুবই ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। স্যামসাং ,হুয়াওয়ে তাদের ৩৬০ ডিগ্রী ক্যামেরার পাশাপাশি বিশেষায়িত নানা ভিউইং সফটওয়্যারও রিলিজ করেছে ; যা আপনাকে ৩৬০ ছবি এবং ভিডিও উপভোগ করতে সহযোগিতা করবে। আর এসব অ্যাপলিকেশনে স্মার্টফোনের অ্যাক্সেলেরোমিটার সেন্সর এর কারনে আরও বাস্তবিক ভাবে কেবল স্মার্টফোন এর মুভমেন্ট করিয়ে ৩৬০ ইমেজ এবং ভিডিও উপভোগ করা যায় ; আর সাধারনত এই ফিচারটিকে বলা হয় ‘ লুক এরাউন্ড’। আর ‘লুক এরাউন্ড ৩৬০’ এর আরও বাস্তবিক এবং মজাদার অভিজ্ঞতা নেয়া সম্ভব হয় ভি-আর হেডসেট ব্যবহার করে।

সিঙ্গেল ক্যামেরা এবং একাধিক ছবি

এখানে সাধারনত একটি ক্যামেরা অনেকগুলো ছবি তোলে এবং পরে সেই সকল ছবিকে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে এক করে একটি ৩৬০ ডিগ্রী ছবি তৈরি করে ফেলে। সাধারনত আধুনিক স্মার্টফোন এর জন্য এরকম অনেক সফটওয়্যার রয়েছে যা আপনাকে আপনার স্মার্টফোন নানাদিকে ঘুরিয়ে একটি ৩৬০ ডিগ্রি ছবি ধারন করতে সহযোগিতা করবে। ৩৬০ ইমেজ ধারনের জন্য এক্ষেত্রে স্মার্টফোন হোক বা অন্য কোন ফিজিক্যাল ক্যামেরা; ক্যামেরাটিকে চতুর্দিক একটি সার্কুলার বা বৃত্তাকার পথে ঘুরে অনেকগুলো স্টিল ইমেজ ধারন করে তা আবার সফটওয়্যার ব্যবহার করে এক করতে হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি অনেক সময়সাপেক্ষ এবং ঝামেলাপূর্ন ব্যাপার।

মাল্টিপল ক্যামেরা সিঙ্গেল ইমেজ

৩৬০ ফটোগ্রাফির এর ক্ষেত্রে সবচাইতে এডভান্সড টেকনোলজি বলা যেতে পারে এই মাল্টিপল ক্যামেরা সিঙ্গেল ৩৬০ ফুটেজ পদ্ধতিকে। আর এটি খুবই সহজ উপায়ে খুবই উচ্চ মানের ৩৬০ ফুটেজ ধারন করতে সক্ষম। আর স্যামসাং গিয়ার ৩৬০ এর সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি উদাহরন। এই স্যামসাং গিয়ার ৩৬০ ব্যবহার করে খুবই সহজেই ভালো মানের ভিআর তথা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গ্রেড ৩৬০ ফুটেজ ধারন করা যায়। এখানে যা হয় তা হল একটি কাঠামোর ওপরে ফিট করা একাধিক ক্যামেরা একেক অ্যাঙ্গেলে একটি স্থানের অনেকগুলো ছবি ক্যাপচার করে অতঃপর তা একই সময়ে বা রিয়েল টাইম ভাবে ছবি বা ফুটেজ গুলোকে একিভূত করে তা ৩৬০ ছবি বা ৩৬০ ভিডিওতে রূপান্তরিত করে। আর এখানে একইসময়ে সকল ক্যামেরাগুলো ছবি একসাথে খুবই তাড়াতাড়ি প্রোসেসিং করে ৩৬০ তে রূপান্তরিত করা হয় বলে এখানে সময় অনেক কম লাগে। আর এখানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স গ্রেড এর খুবই স্পেশাল সফটওয়্যার কাজ করে।

সাধারন হাই রেজুলেশন ভি আর ভিডিও বা ফুটেজ ধারন করার জন্য এরকম মাল্টিপল ক্যামেরা ৩৬০ ক্যাপচারিং বা ইমেজিং ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। গুগল ম্যাপ এর স্ট্রিট ভিউয়ে আমরা রাস্তার যে ৩৬০ ডিগ্রী বাস্তব প্রতিরূপ দেখতে পাই, তা সংগ্রহ করার জন্যেও এরকম পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

একটি ৩৬০ ভিডিও

৩৬০ ফটোগ্রাফি আধুনিক সময়ের একটি নেতৃত্বস্থানীয় ইমেজিং প্রযুক্তি; তবে সত্য কথা বলতে এই প্রযুক্তিটি এখনও পূর্নাঙ্গ পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনি এবং এখনও এটি ডেভেলপ এর পর্যায়েই রয়েছে। ৩৬০ ডিগ্রি ফটোগ্রাফি করার জন্য এখন যেমন নতুন নতুন ক্যামেরা ডিভাইস এর উদ্ভাবন হচ্ছে; তেমনই বিশেষ কিছু সফটওয়্যার আপনার সাধারন ক্যামেরা দিয়েই ৩৬০ ডিগ্রী দৃশ্য ক্যাপচার করার সুযোগ করে দিচ্ছে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে এবং ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান  মতামত অবশ্যই কাম্য।

Images: Shutterstock.com

About the author

তৌহিদুর রহমান মাহিন

Add comment

Categories