ধরুণ একটি কামানের গোলাকে এক পাহাড়ের চুড়ার উপর নিয়ে গিয়ে অনুভূমিকভাবে ফায়ার করা হলো — গোলাটি কিছুক্ষণ সমান্তরালভাবে পৃথিবীর উপর দিয়ে গমন করবে এবং পৃথিবীর গ্রাভিটি শক্তির টানে এক সময় গোলাটি এসে ভূপৃষ্টে পতিত হবে। কিন্তু মনে করুণ, গোলাটির গমনকালে আরো বারুদ এবং বিস্ফোরকের ব্যবস্থা করা হলো, তাহলে কি হবে? তাহলে গোলাটি সম্পূর্ণ পৃথিবীর বৃত্তাকার চক্কর লাগিয়ে ফেলবে আর যদি অফুরন্ত শক্তির সঞ্চার করানো যায় তাহলে গোলাটি এভাবেই পৃথিবীর চক্কর কাটতে থাকবে, কিন্তু ভূপৃষ্ঠে পতিত হবে না।
মানুষের পাঠানো আর্টিফিশিয়াল স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ গুলো একই রুল অনুসরণ করে পৃথিবী বা সৌরজগতের আলাদা গ্রহ-উপগ্রহ গুলোর উপর বৃত্তাকার পথে গমন করে। যেহেতু স্যাটেলাইট গুলো স্পেসে থাকে, মানে সেখানে কোন গ্রাভিটি থাকে না, তাই স্যাটেলাইট গুলো নিজের পথে নিজের গতিতে সর্বদা অটুট থাকে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের উপরে অবস্থিত এই স্যাটেলাইট গুলোকে আকাশের এক বিরাট আর্টিফিশিয়াল চক্ষু ও বলতে পারেন। — খালি চোখে এই ইঞ্জিনিয়ারিং যন্ত্র গুলোকে দেখতে না পেলেও এদের কাজ করাকে প্রতিদিনের আবহাওয়া রিপোর্ট, ডিশ টিভি, বা স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ট্রান্সমিশন, কিংবা প্রতিদিনের টেলিফোন কলের মাধ্যমে সহজেই অনুধাবন করতে পারি।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, অ্যামেরিকা, চায়না, রাশিয়া থেকে প্রায় ২,৫০০টি স্যাটেলাইট স্পেসের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। আর আজকে গর্বের সাথে আমরাও বলতে পারি, এই ২,৫০০টি পাঠানো মানুষের তৈরি অবজেক্টের মধ্যে আমাদের দেশের বঙ্গবন্ধু-১ (Bangabandhu-1) বা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ও একটি স্থান দখল করে নিয়েছে!
এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, আসলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কিভাবে কাজ করে। মূলত আর্টিকেলটিতে একটি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট (যোগাযোগ উপগ্রহ) কিভাবে কাজ তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেহেতু বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহটি একটি যোগাযোগ উপগ্রহ, তাই এর কাজ করার ধরণ অবশ্যই বাকী যোগাযোগ উপগ্রহ গুলো মতোই!
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
স্যাটেলাইট কি?
স্যাটেলাইট বলতে আসলে সেটা যেকোনো অবজেক্ট হতে পারে, যদি সেটা পৃথিবীর চারপাশে একটি বৃত্তাকার বা বাঁকানো পথে ভ্রমন করতে থাকে, সেটাকেই উপগ্রহ বলা চলবে। চাঁদ পৃথিবীর এক মাত্র প্রাকৃতিক স্যাটেলাইট, কিন্তু মহাকাশে মানুষের তৈরি অনেক স্যাটেলাইট রয়েছে যেগুলোকে আর্টিফিশিয়াল স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ বলা হয়। উপগ্রহ ভ্রমনের পথ সবসময়ই একটি কক্ষপথ কে অনুসরণ করে, আর এই কক্ষপথ বেশিরভাগ সময়ই বৃত্তাকার পথ হয়ে থাকে। তবে অনেক উপগ্রহ রয়েছে, যেগুলোর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হয়ে থাকে।
তো সংজ্ঞা থেকে বুঝতেই পারছেন, পৃথিবীর চারিদিকে কক্ষপথে ঘুরতে থাকা একটি মুড়ির টিনকেও স্যাটেলাইট বলা যেতে পারে। বিশেষ করে একটি ছোট অবজেক্ট যখন একটি বড় অবজেক্টকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে সেটাকেই উপগ্রহ বলা হয়। কিন্তু এখানেও কিছু কনফিউশন রয়েছে, পৃথিবী থেকে যখন স্পেসে মানুষের তৈরি উপগ্রহ পাঠানো হয় তখন অনেক আরো অনেক বস্তুর টুকরা স্পেসে চলে যায়, যেমন এক্সপ্লোডিং রকেট, রকেট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া নানান অংশ ইত্যাদি, এগুলোও কিন্তু বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে, তাহলে এগুলোও কি উপগ্রহ? — টেকনিক্যালভাবে বলতে গেলে এগুলোও উপগ্রহের মতোই আচরন করে, কিন্তু ন্যাসা এগুলোর নাম দিয়েছে স্পেস জাস্ক বা মহাকাশের আবর্জনা!
মহাকাশে অনেক টাইপের আর্টিফিশিয়াল উপগ্রহ রয়েছে, যেমন- আবহাওয়া উপগ্রহ, স্পেশাল ব্রডকাস্ট উপগ্রহ (এর কাজ যোগাযোগ উপগ্রহের মতোই), যোগাযোগ উপগ্রহ, বৈজ্ঞানিক কাজের উপগ্রহ, ন্যাভিগেশানাল উপগ্রহ, রেসকিউ উপগ্রহ, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ, এবং সামরিক উপগ্রহ।
বঙ্গবন্ধু-১
যদিও আর্টিকেলটি একটি যোগাযোগ উপগ্রহ কিভাবে কাজ করে তার উপরে এবং এটি আমার লেখা আরো পাঁচ দশটি আর্টিকেলের মতোই একটি, কিন্তু যখন কথা আসে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে তখন নিজের আবেগ ধরে রাখা একটু মুশকিল হয়ে দাড়ায়। আপনি যদি একজন বাংলাদেশী হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয় আমার আবেগের কারণ আপনাকে অক্ষরে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। যাই হোক, ফিরে আসা যাক আমাদের মূল আলোচ্য বিষয়ের উপরে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ একটি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, অর্থাৎ এটি পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে রেডিও সিগন্যাল গ্রহণ করতে পারবে এবং আরেক প্রান্তে সেন্ড করতে পারবে। আর এই ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে নানান টাইপের যোগাযোগ ব্যাবস্থা যেমন, ডিশ টিভি, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট ফোন — ইত্যাদি সম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে।
নানান টাইপ কৃত্রিম উপগ্রহ গুলোর কাজ নানান প্রকারের হলেও বিশেষ করে যোগাযোগ উপগ্রহ এক প্রান্ত থেকে সিগন্যাল রিসিভ করে এবং আরেক প্রান্তে সিগন্যাল সেন্ড করে দেয়। আর্টিকেলের টাইটেলে একটি বাক্য ব্যবহার করেছি, “একটি কোটি টাকার স্পেস আয়না” — কেননা একটি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট জাস্ট একটি আয়নার মতোই কাজ করে। বঙ্গবন্ধু-১ কে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে নানান টাইপের যোগাযোগ ব্যাবস্থা সম্পূর্ণ করার লক্ষে। ধরুণ, আপনি এক পাহাড়ি এলাকায় রয়েছেন, সেখানে সেলফোন সিগন্যাল মোটেও পাওয়া যাচ্ছে না আর টেলিফোনের কথা হয়তো কল্পনাও করা যাবে না, সেখানে আপনার কাছে যদি একটি স্যাটেলাইট ফোন থাকে তবে ঐ মুহূর্তে আপনার স্যাটেলাইট ফোন থেকে আসা সিগন্যাল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ রিসিভ করবে এবং আবার ঐ সিগন্যালটি বুস্ট করে আপনার কাঙ্ক্ষিত সেলফোনে ছুঁড়ে মাড়বে যাতে আপনি উপগ্রহ ব্যবহার করে কথা বলতে পারেন।
সকল প্রকারের স্যাটেলাইট মূলত তিনটি ক্যাটেগরির মধ্যে পরে, লো-আর্থ অর্বিট স্যাটেলাইট (Low-Earth orbits) বা লিও স্যাটেলাইট (LEO), জিওসিঙ্ক্রোনাস অর্বিট স্যাটেলাইট (Geosynchronous orbits) বা জিও স্যাটেলাইট (GEO), এবং মিডিয়াম-আর্থ অরবিট স্যাটেলাইট (Medium-Earth orbits) বা মিও স্যাটেলাইট (MEO)।
বঙ্গবন্ধু-১ একটি জিওষ্টেশনারী অরবিট টাইপের স্যাটেলাইট, অর্থাৎ এটির কক্ষপথ পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট অংশের উপরে। সকল জিওসিঙ্ক্রোনাস অর্বিট টাইপ কিন্তু জিওষ্টেশনারী অরবিট হয়না, অনেক টাইপের উপগ্রহ রয়েছে যেগুলো উপবৃত্তাকার কক্ষপথ গমন করে, কিন্তু বিশেষ করে যোগাযোগ উপগ্রহ গুলো জিওষ্টেশনারী অরবিট টাইপের হয়ে থাকে, এতে পৃথিবীর বিশেষ কোন এক পয়েন্টে ভালো সিগন্যাল কভারেজ দেওয়া সম্ভব হয়।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কিভাবে কাজ করে?
বাকী যোগাযোগ উপগ্রহ গুলো যেভাবে কাজ করে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ঠিক একই পদ্ধতিতে কাজ করে। পৃথিবীর এক পয়েন্ট থেকে এটি রেডিও সিগন্যাল গ্রহণ করে, তারপরে স্যাটেলাইটের মধ্যে থাকা অ্যামপ্লিফায়ার সেই সিগন্যালের শক্তি আরো বৃদ্ধি করে দেয়, তারপরে স্যাটেলাইটের মধ্যে থাকা ট্রান্সমিটারের সাহায্যে সেই সিগন্যাল আরেক পৃথিবীর আরেক পেয়েন্টের গন্তব্যে সেন্ড করা হয়ে থাকে। গ্রাউন্ড ষ্টেশন বা ভূকেন্দ্রে কতিপয় স্যাটেলাইট ডিশ এন্টেনা থাকে, যেগুলো থেকেই যোগাযোগ উপগ্রহ সিগন্যাল রিসিভ করে বা বলতে পারেন নানান টাইপের কম্যান্ডও রিসিভ করে।
বঙ্গবন্ধু-১ এর ভূকেন্দ্র গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় অবস্থিত, সেখান থেকেই টিভি চ্যানেল ব্রডকাস্ট সিগন্যাল, ইন্টারনেট কানেকশন সিগন্যাল, আরো নানান টাইপের রেডিও সিগন্যাল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ সেন্ড করা হবে, তারপরে সেই সিগন্যালকে বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি গ্রহণ করবে এবং অ্যামপ্লিফাইং করার মাধ্যমে সিগন্যালের ক্ষমতা আরো বারিয়ে দেবে যাতে ভূপৃষ্ঠে সিগন্যাল আবার ফেরত আসতে পারে। এরপরে আপনার বাড়ির ছাঁদে লাগানো থাকা টিভির ডিশ এন্টেনা ঐ সিগন্যাল রিসিভ করবে এবং আপনি ডিশ টিভি উপভোগ করতে পারবেন।
এখন নিশ্চয় মনে প্রশ্ন জেগেছে, “যদি স্যাটেলাইটের কাজ জাস্ট এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত সিগন্যাল কপি করা হয়ে থাকে, তাহলে গ্রাউন্ড ষ্টেশন থেকে সরাসরি আমার বাড়ির ছাঁদের এন্টেনাতে সিগন্যাল পাঠালে কি হয়? উপগ্রহ দিয়ে কাজ কি?” — ঠিকআছে, আপনার প্রশ্ন মোটেও ফেলে দেওয়ার নয়, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রেডিও ওয়েভ আর আলো আসলে এগুলো একেবারে সরল সোজা পথ দিয়ে গমন করে, আর আমাদের পৃথিবী যেহেতু বাঁকানো তাই রেডিও সিগন্যাল সরাসরি গ্রাউন্ড ষ্টেশন থেকে আপনার বাড়ির ছাঁদের ডিশ এন্টেনাতে ছুড়ে মারা সম্ভব হবে না। কিন্তু কৃত্রিম উপগ্রহ যেহেতু রয়েছে মাথার উপরে, তাই এই কাজটি সহজেই সম্পূর্ণ করতে পারে এটি।
শুধু ডিশ টিভি নয় বরং এমন এরিয়াতে যেখানে তারের বা বেতার ফোন কল পৌঁছানো সম্ভব নয় কিংবা যে এরিয়াতে ইন্টারনেট কোনোভাবেই নিয়ে যাওয়া যাবে না, যোগাযোগ উপগ্রহ বা এই ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহটি সহজেই এই কাজটি করতে পারবে। সাধারণ সেলফোন ব্যবহার করেও আপনি পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো স্থানে যোগাযোগ করতে পারবেন বা মোবাইল ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করতে পারবেন, কিন্তু কলার এবং কল রিসিভার উভয়কেই সেলফোন টাওয়ারের কাছে থাকতে হবে। যদি আপনি স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে আপনি এভারেস্ট পর্বতের চুড়ায় থাকেন বা ঘন সুন্দরবনের মধ্যে, আপনি কোন প্রকারের মোবাইল টাওয়ারের সাহায্য ছাড়ায় কল বা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
আপলিংক এবং ডাউনলিংক
যদি একটি টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু-১ কৃত্রিম উপগ্রহ এর সাহায্যে তাদের চ্যানেল ব্রডকাস্ট করতে চায়, সেক্ষেত্রে তিনটি স্টেজ কাজ করবে। প্রথমত, একটি আপলিংক কাজ করে, মানে গ্রাউন্ড ষ্টেশন থেকে টিভি ব্রডকাস্ট সিগন্যাল ডাটা স্যাটেলাইটে ছুঁড়ে মারতে হবে। এর পরের কাজ হবে স্যাটেলাইটির, সে ডাটাকে প্রসেস করবে এবং উপরের প্যারাগ্রাফে বর্ণিত করেছি, স্যাটেলাইটে ডাটা গুলোর সিগন্যাল ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেওয়া হবে, স্যাটেলাইটে অনেক টাইপের ট্রান্সপোন্ডার (রেডিও রিসিভার, অ্যামপ্লিফায়ার, এবং ট্রান্সমিটার) লাগানো থাকে।
স্যাটেলাইটে শুধু আপলিংক সিগন্যাল বুস্টই করা হয় না বরং সিগন্যালের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়, যাতে স্যাটেলাইটে আসা সিগন্যাল আর পৃথিবীতে ফিরে যাওয়া সিগন্যালের মধ্যে প্যাঁচ না বেধে যায়। আবার একই স্যাটেলাইটে একাধিক ট্রান্সপোন্ডার লাগানো থাকে, যাতে এটি আলাদা আলাদা টিভি চ্যানেলের সিগন্যাল গুলোকে আলাদা ফ্রিকোয়েন্সিতে বিভক্ত করতে পারে। সিগন্যাল প্রসেসিং শেষে শেষ পর্যায়ে ডাউনলিংকের জন্য সিগন্যাল আবার পৃথিবীতে সেন্ড করা হয়।
সাধারণত ১টি বা আরো আপলিংকের বিপরীতে হাযারো বা লাখো ডাউনলিংক থাকতে পারে। বঙ্গবন্ধু-১ এ দুইটি আপলিংক রয়েছে, আর ডাউনলিংক হচ্ছে আপনার বা আমার বাড়ির ছাঁদে লাগানো ডিশ এন্টেনা। যেকোনো যানবাহনের মতোই স্যাটেলাইটে দুইটি প্রধান অংশ থাকে, প্রথমত, স্যাটেলাইটটির নিজের অংশ, যেটা দ্বারা স্যাটেলাইটটি গঠিত হয়েছে এবং দ্বিতীয়ত সে সকল যন্ত্রপাতি (পেলোড) যেগুলোর সাহায্য উপগ্রহটি নিজের ইউনিক কাজটি সফলভাবে করতে পারে।
বঙ্গবন্ধু-১ এ কি রয়েছে?
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সহ যেকোনো স্যাটেলাইট আসলেই অসাধারণ এক যন্ত্র, যেটা অত্যন্ত দামী আর এর ভেতরে রয়েছে হাযারো ইলেকট্রনিক্স। মূলত বেশিরভাগ আর্টিফিশিয়াল উপগ্রহ গুলো ডিজাইনের দিক থেকে একই রকমের হয়ে থাকে, বা বলতে পারেন একটির ডিজাইন আরেকটির কপি করা।
আমার কাছে কৃত্রিম উপগ্রহের সবচাইতে মজার অংশটি হচ্ছে এর ফোল্ডিং সোলার প্যানেল, যেটা উপগ্রহটি অরবিটে আনার পরে মেলে দেওয়া হয়। মেইন উপগ্রহটির দুই পাশে দুইটি বড় বড় সোলার প্যানেল থাকে, আর এই দুইটি প্যানেলকে দেখতে উপগ্রহটির ডানা বলে মনে হয়। তবে প্যানেল দুইটি ডানার থেকেও বেশি কাজ করে, সূর্য থেকে পাওয়ার নিয়ে স্যাটেলাইটে লাগানো ব্যাটারি রিচার্জ করতে সাহায্য করে যাতে এর মধ্যে ফিট থাকা ইলেকট্রনিক গুলো সর্বদা লাগাতার পাওয়ার পেতে থাকে।
আগেই বলেছি, উপগ্রহে নানান টাইপের এন্টেনা লাগানো থাকে, কোনটা সিগন্যাল রিসিভ করে আবার কোনটা সিগন্যাল সেন্ড করে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে মোটর এবং ইঞ্জিন লাগানো রয়েছে, যেগুলো উপগ্রহটির সবসময় যথাযথভাবে পজিশন ঠিক রাখতে সাহায্য করে, একে প্রধান রকেট মোটর ও বলা হয়ে থাকে। তাছাড়া উপগ্রহটিতে রয়েছে টেলিম্যাট্রি সিস্টেম, যেটার মাধ্যমে উপগ্রহটি পৃথিবীতে উপগ্রহ মনিটর ডাটা সেন্ড করে এবং উপগ্রহটি কম্যান্ড গ্রহণ করে কাজ করতে পারে। তাছাড়া এর মধ্যে হিট পাইপ ও রয়েছে, যা সোলার রেডিয়েশন থেকে ইলেকট্রনিক গুলোকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ পেলোড হিসেবে রয়েছে ট্রান্সপোন্ডার, কম্পিউটার, এবং আটোমিক ক্লক — যেটার মাধ্যমে উপগ্রহটি টাইম সিগন্যাল তৈরি করে এবং জিপিএস উপগ্রহের মতো কাজ করে। স্যাটেলাইটে ক্যামেরা ও লাগানো থাকে, ক্যামেরা ছবি তোলে আর কম্পিউটার সেই ছবিকে ডিজিটাল ডাটাতে পরিণত করতে পারে যাতে তা পৃথিবীতে পাঠানো যায়।
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন স্যাটেলাইটকে কেবল গোপন মিলিটারি মিশনের জন্য ব্যবহার করা হতো, আর এটি ছিল সম্পূর্ণ একটি রহস্যজনক লুকায়িত যন্ত্র। কিন্তু আজকের দিনে এই রহস্যজনক লুকায়িত যন্ত্রটি আমাদের প্রতিদিনের জীবনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর কথা সামনে আসতেই গর্বে বুকটা ভরে যায়।
তো, এই ছিল বঙ্গবন্ধু-১ — একটি কোটি টাকার স্পেস আয়না — এর কাজ করার প্রধান সুত্র গুলো। এই আর্টিকেলে বর্ণিত তথ্য গুলো শুধু আমাদের স্যাটেলাইট নয় বরং সকল যোগাযোগ উপগ্রহ গুলোর কাজ করার সিস্টেমকে চিত্রিত করে। রকেট সায়েন্স আর স্যাটেলাইট মোটেও সহজ কোন ব্যাপার নয়, কিন্তু এই আর্টিকেলে সকল বিষয় গুলোর পানির মতো সহজ করে ফুটিয়ে তোলার আপ্রান চেষ্টা করেছি, তারপরেও যদি কোন বিশেষ প্রশ্ন থাকে, নিচে কমেন্ট সেকশন খোলা রয়েছে!
Images: Shutterstock.com