হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া বা বজ্রপাত আপনার পিসির কিভাবে ক্ষতি করতে পারে?

আর্টিকেলটি লেখার সময় যেরকম আবহাওয়া যাচ্ছে, এতে স্বাভাবিকভাবেই ঘনঘন বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে আবার বিকট আওয়াজে বজ্রপাতও পড়তে শোনা যাচ্ছে, আসলে আমাদের দেশে কাল-বৈশাখী সময়টা এভাবেই কাটে। আর বৈশাখ মাস হোক বা না হোক, হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া আমাদের দেশের জন্মগত ব্যাধি। আপনি যদি একজন ডেক্সটপ পিসি ইউজার হয়ে থাকেন, পাওয়ার আউটেজ অনেক সময় আপনার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো ব্যাপার হতে পারে। যদি কোন ইম্পরট্যান্ট প্রজেক্টের উপর কাজ করেন আর হঠাৎ পাওয়ার আউটেজ দেখা দেয়, আকাশে নয় আপনার মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়বে।

পাওয়ার আউটেজ বা পাওয়ার সার্জ যে শুধু প্রজেক্ট ভন্ডুল করতে পারে তা নয়, পিসির ফিজিক্যাল ড্যামেজও হতে পারে, কিন্ত হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া বা বজ্রপাত আপনার পিসির ঠিক কি ধরনের ক্ষতি করতে পারে? কিভাবে যেকোনো ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে? — এই সকল বিষয় লিপিবদ্ধ করেই আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে।


এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ

পাওয়ার আউটেজ

বিদ্যুৎ ছাড়া যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি জাস্ট খেলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। যখন বৈদ্যুতিক গোলযোগ দেখা দেয়, কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ গুলো পাওয়ার পায় না এবং তাদের কাজ করা বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ নানান কারণে চলে যেতে পারে — পাওয়ার স্টেশনে সমস্যা হলে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে, বাড়ির লাইনে সমস্যা হলে বা ফিউজ পুড়ে গেলে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। তবে আমাদের দেশে বিদ্যুতের উৎপাদনে ঘটতি থাকায় এবং সেই অনুসারে ইউজার মেইন্টেইন করার জন্য ইচ্ছা করে কয়েক ঘণ্টা বা মিনিটের জন্য বিদ্যুৎ টেনে নেওয়া হয়।

যাই হোক, বিদ্যুৎ চলে গেলে পিসি অনাকাঙ্ক্ষিত শাটডাউন হয়ে যায়, কিন্তু ম্যানুয়াল শাটডাউন আর হঠাৎ করে শাটডাউন হয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। হঠাৎ করে ঘটা শাটডাউন বিরাট সমস্যার তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে আপনার হার্ড ড্রাইভে ব্যাড সেক্টর তৈরি করতে পারে এবং ফাইল করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে।

আপনি যখন কম্পিউটার ব্যবহার করেন না, সেই সময় ও পর্যন্ত কম্পিউটার নানান ডাটা রীড রাইট করতে থাকে, যখন ডাটা গুলো রীড রাইট করার মাঝখানে হঠাৎ করে কারেন্ট চলে যায় সেক্ষেত্রে ডাটা করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে। এই জন্যই লক্ষ্য করবেন, যখন আপনি ম্যানুয়ালভাবে পিসি শাটডাউন করেন তখন সেটা কিন্তু টিভির মতো ধপ করে বন্ধ হয়ে যায় না, বরং উইন্ডোজ কিছুটা সময় গ্রহণ করে। এই সময়ের মধ্যে উইন্ডোজ প্রথমে নিশ্চিত করে সকল প্রসেস গুলো বন্ধ করা হয়েছে কিনা তারপরে কম্পিউটার অফ করে দেয়।

এখন পাওয়ার আউটেজের ফলে তেমন আর আলাদা কোন ক্ষতি হয় না, তবে ডাটা লস হতে পারে, সাথে হার্ড ড্রাইভও ক্র্যাশ করার ঝুকি থেকে যায়। ফলে অনেক ফাইল হয়তো আপনি আর পড়তে পারবেন না, বা নতুন হার্ড ড্রাইভ লাগাতে হতে পারে। তাছাড়া হঠাৎ করে আপনার প্রজেক্ট সেভ না করতেই কারেন্ট চলে গেলে, কাজের ক্ষতি হতে পারে এবং অনেক সময় সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম পর্যন্ত করাপ্টেড হয়ে যেতে পারে।

সমাধান

দেখুন, আমাদের দেশে পাওয়ার আউটেজ একেবারেই স্বাভাবিক ব্যাপার, এটার কোন সমাধান নেই, তবে এর থেকে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে কম্পিউটারকে রক্ষা করা যেতে পারে। আপনি যদি পিসি ইউজার হোন সেক্ষেত্রে আমি সাজেস্ট করবো একটি ভালো ইউপিএস কিনে ফেলতে, এতে কারেন্ট চলে গেলে ইউপিএস মানে ব্যাটারি ব্যাকআপ থেকে কম্পিউটার চলবে, সাথে কম্পিউটার ম্যানুয়াল শাটডাউন করার মতো সময় হাতে পেয়ে যাবেন, এতে ডাটা করাপ্টেড হওয়া বা প্রজেক্ট নষ্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন। ইউপিএস কেনার আগে, অবশ্যই এই আর্টিকেলটি পড়ে নেবেন!

যদি আপনার এলাকায় বিদ্যুতের সিরিয়াস সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে ল্যাপটপ ব্যবহার করায় বেস্ট হবে, এতে কারেন্ট চলে গেলে ল্যাপটপ জাস্ট ব্যাটারি থেকে পাওয়ার ইউজ করবে, সাথে আপনার প্রজেক্টের মোটেও কোন ক্ষতি হবে না। তাছাড়া ল্যাপটপ ব্যবহার করার ফলে আপনি পোর্টেবল কম্পিউটার ব্যবহার করার সুবিধা তো পাচ্ছেনই! তাই বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার ইউজারদের জন্য আমি ল্যাপটপ কিনতে রেকমেন্ড করবো।

পাওয়ার সার্জ

এবার আলোচনা করা যাক পাওয়ার সার্জ (Power Surge) নিয়ে, দেখুন, পাওয়ার সার্জ মানে হচ্ছে হঠাৎ করে বিদ্যুতের শক্তি বেড়ে যাওয়া। বা বলে পারেন প্রয়োজনের চেয়ে হাই ভোল্টেজ কারেন্ট প্রবাহিত হওয়া। শুধু আপনার কম্পিউটার নয়, প্রত্যেকটি ইলেকট্রিক্যাল জিনিষ পত্র একটি নির্দিষ্ট পরিমানে পাওয়ার নিতে পারবে তার জন্য রেটিং করা থাকে। যদি হঠাৎ করে অনেক হাই চার্জ যুক্ত কারেন্ট চলে আসে সেক্ষেত্রে যেকোনো যন্ত্রপাতিই ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।

নানান কারণে পাওয়ার সার্জ প্রবলেম হতে পারে, পাওয়ার স্টেশনে সমস্যা থাকলে, ট্র্যান্সফর্মারে সমস্যা হলে, বা বজ্রপাত হওয়ার ফলেও পাওয়ার সার্জ প্রবলেম ঘটতে পারে। যেখানে পাওয়ার আউটেজ শুধু মাত্র ডাটা করাপ্টেড করে সেক্ষেত্রে পাওয়ার সার্জ আপনার পিসির মারাত্মক ড্যামেজ করে দিতে পারে। আপনি যদি ভালোমানের পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে হয়তো খুববেশি হলে পাওয়ার সাপ্লাই নষ্ট হতে পারে, কিন্তু যদি একেবারেই নিম্নমানের পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে আপনার পিসির মাদারবোর্ড, র‍্যাম, প্রসেসর — ইত্যাদি যেকোনো হার্ডওয়্যার পুড়ে বাদাম ভাজায় পরিণত হয়ে যেতে পারে। কম্পিউটার পাওয়ার সাপ্লাই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন!

বৈদ্যুতিক লাইনে ছোট খাটো পাওয়ার সার্জ চলতেই থাকে, ছোট পরিমানের পাওয়ার সার্জে ধীরেধীরে পিসির যন্ত্রাংশ গুলোর আয়ুকাল কমতে থাকে আর বড় ধরনের পাওয়ার সার্জের ফলে সরাসরি পুড়ে কাঠ কয়লা। এই জন্যই দামী কম্পিউটার গুলোর ক্ষেত্রে পাওয়ার সার্জ প্রোটেকশন একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। বড় কোন পাওয়ার সার্জ এক সেকেন্ডের মধ্যে সম্পূর্ণ পিসিকে ডেড করে ফেলতে পারে।

সমাধান

বড় ধরনের পাওয়ার সার্জ সাধারণত বজ্রপাতের ফলে ঘটে থাকে, এ ক্ষেত্রে আমার মতে বেস্ট সলিউশন হচ্ছে যখন দেখবেন আকাশ ডাকছে সেই মুহূর্তে ওয়াল সকেট থেকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার ইত্যাদির কানেকশন খুলে নেবেন। ওয়াল সকেটের সাথে প্যাগইন করা না থাকলে বজ্রপাত কখনো উড়ে এসে আপনার কম্পিউটারে ঢুকবে না। ব্যাস এটাই বেস্ট ম্যাথড।

তাছাড়া আপনি সার্জ প্রটেক্টর ব্যবহার করতে পারেন, অনেক ইউপিএস বিল্ডইন সার্জ প্রটেকশন প্রদান করে থাকে, ইউপিএস কেনার সময় ফিচারটি মজুদ রয়েছে কিনা চেক করে নিন। তাছাড়া ডেডিকেটেড সার্জ প্রটেক্টর কিনতে পারেন, সিঙ্গেল প্ল্যাগ, ম্যাল্টি প্ল্যাগ অনেক টাইপের সার্জ প্রটেক্টর রয়েছে। খুব দ্রুত সার্জ প্রটেক্টরের উপর বিস্তারিত আর্টিকেল ওয়্যারবিডিে পাবলিশ করা হবে।


পাওয়ার আউটেজ হোক কিংবা পাওয়ার সার্জ এই দুই টার্মই আপনার কম্পিউটারের নানান ভাবে বারোটা বাজাতে পারে। আর আপনি জানলেন ঠিক কোনটি কোন সমস্যা তৈরি করতে পারে, সাথে সমাধান গুলো তো জানলেনই। তো আপনি কি কখনো বজ্রপাতের শিকার হয়েছেন? আপনার পিসিকি কখনো বাদাম ভাজা হয়েছে আগে? — আপনার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories