ইউটিউবে আপনি বেশ কিছু জায়গায় VEVO লেখাটি হয়ত দেখেছেন। অনেক জনপ্রিয় শিল্পীর জনপ্রিয় চ্যানেল এর নামের সাথে এই VEVO লেখা থাকে। উদাহরন হিসেবে বলতে গেলে, জাস্টিন বিবার,রিহানা,টেইলস সুইফট, এমিনেম এদের চ্যানেল এর নামের সাথে VEVO ওয়ার্ডটি লাগানো দেখতে পারব। বর্তমান সময়ের সবচাইতে বেশি দেখা ইউটিউব মিউজিক ভিডিও তথা ডেপাসিতো এর গায়ক লুইস ফনসি এর ইউটিউব চ্যানেল এর সাথেও VEVO ট্যাগ লাগানো। আবার এদের অনেক মিউজিক ভিডিও এর থাম্বনেইলেও আমরা VEVO এর লোগো দেখতে পারব। এমনকি ইউটিউবের ১০ টি সেরা জনপ্রিয় মিউজিক ভিডিও এর ভেতর ৬ টি ভিডিওই দেখা যায় VEVO সার্টিফাইড। আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে যে, VEVO এর মাধ্যমে কি শিল্পীরা কোনো সুবিধা পায়? VEVO বলতে আসলে কী বুঝাচ্ছে? আজকের আর্টিকেলে আমি VEVO সম্পর্কে জানাব।
VEVO এর পূর্নরূপ হলো VIDEO EVOLUTION। এটি কয়েকটি মিউজিক কোম্পানি পরিচালিত একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। মূলত VEVO হলো একটি মিউজিক হোস্টিং কোম্পানি। এটি অামেরিকা ভিত্তিক একটি মাল্টিন্যাশনাল ভিডিও হোস্টিং কোম্পানি। বর্তমানে VEVO ইউনিভার্সাল মিউজিক গ্রুপ,সনি মিউজিক কোম্পানি এবং ওয়ারনার মিউজিক গ্রুপ পরিচালিত একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর সনি ও ইউনিভার্সাল মিলে VEVO প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে ওয়ারনার মিউজিক গ্রুপ VEVO এর সাথে যুক্ত হয়। তবে পরবর্তীতে গুগল এবং আবু ধাবি মিডিয়া VEVO থেকে ইনভেস্ট করে VEVO এর অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয়। VEVO যেনো ফেসবুকের সাথে ডিল না করে ইউটিউবের সাথে করে সেজন্য গুগল VEVO এর পার্টনার হিসেবে অর্থ এবং বিশ্বাস ইনভেস্ট করেছিল। VEVO ইউটিউব এর গুগল অ্যাডসেন্স, VEVO অ্যাডভার্টাইজমেন্ট, অ্যামাজন মিউজিক এবং আইটিউনস রেফারেল থেকে টাকা আয় করে থাকে।
ইউটিউব একটু অ্যানালাইসিস করলে দেখা যাবে, ইউটিউবে সবচাইতে বেশি যেসব ভিডিও দেখা হয়, তা হলো মিউজিক ভিডিও। ইউটিউবের ১০০ টি মোস্ট ভিউয়েড ভিডিও এর ভেতর দেখা যায় যে ৯৫ টিই মিউজিক ভিডিও। আর VEVO এইসব মিউজিক ভিডিও কে টার্গেট করেই কাজ করছে। আবার মোস্ট সাবস্ক্রাইবড ইউটিউব চ্যানেল এর কথা বলতে গেলে, টপ ৫০ টি মোস্ট সাবস্ক্রাইবড চ্যানেল এর মধ্যে ৪০ টিই VEVO অ্যাসোসিয়েটেড চ্যানেল।
২০১৩ সালে VEVO TV নামে একটা ডেডিকেটেড মিউজিক চ্যানেল উত্তর আমেরিকা এবং জার্মানিতে লঞ্চ হয়। তবে কয়েক বছরের মাথাতেই এই টেলিভিশন চ্যানেলটি বন্ধ হয়ে যায়। VEVO এর নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে। তবে তারা এতে কোনোরকম মিউজিক ভিডিও আপলোড না করে, বিহাইন্ড দ্যা সিন এবং ইন্টারভিউ ভিডিও আপলোড করে।
VEVO ইউটিউবে কোনো একক মিউজিক চ্যানেল না খুলে একটি মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। VEVO কিন্তু কেবল ইউটিউবেই নয়, এদের একটি নিজস্ব হোস্টেড ওয়েবসাইটও রয়েছে। এখানে তারা সকল VEVO সার্টিফাইড ভিডিও গুলো আপলোড করে রাখে। তবে www.vevo.com নামক এই ওয়েবসাইটটি কেবল কয়েকটি দেশে অ্যাভেইলেবল। VEVO যেসব দেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেসব দেশের জন্য এই এই ওয়েবসাইটি উন্মুক্ত। VEVO এর মিউজিক স্ট্রিমিং এই ওয়েবসাইট অস্ট্রেলিয়া,আমেরিকা,কানাডা,চীন,ব্রাজিল এর মত দেশে উন্মুক্ত। VEVO তাদের ওয়েবসাইটে মিউজিক ভিডিও, লাইভ পারর্ফমেন্স,ইন্টারভিউ,বিহাইন্ড দ্যা সিন এসব আপলোড করে থাকে। VEVO মূলত একটি মিউজিক ভিডিও সমষ্ঠির সিন্ডিকেট তৈরি করে তা শেয়ার, প্রোমোট এবং পাবলিসিটি করে থাকে।
তবে জাস্টিন বিবার,টেইলর,সুইফট অথবা রিহানা এরা নিজেরাই অনেক সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় শিল্পী। এরা কেনইবা VEVO এর সাথে যুক্ত হয়ে এদের ভরসায় চলছে? আসলে শিল্পীরা চান তাদের প্রত্যেক মিউজিক ভিডিও যেন অনেক বেশি ভাইরাল হয় এবং তারা যেন আরো বেশি টাকা আয় করতে পারেন। আর VEVO তাদের মিউজিক স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট, চ্যানেল নেটওয়ার্ক, ভিডিও প্রোটেকশন নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিল্পীদের এই লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করে থাকে।
মিউজিক ভিডিও এর পাইরেসি, কপিরাইট রক্ষা অনেক বড় একটি কাজ। VEVO এখানে শিল্পীদের ভিডিওর রয়্যালিটি, কপিরাইট ক্লেইম ইত্যাদি বিষয়াবলী রক্ষা করে থাকে। ইউটিউবে যদি কোনো ক্রিয়েটর কোনো ভিডিও চুরি করে আপলোড করে তবে তার আয়ের টাকা কেটে আসল কপিরাইট মালিককে দেয়া হয়।আর এখানে VEVO এর ভিডিও কেও কপি করলে VEVO এখানে কপিরাইট ক্লেইম থেকে টাকা আয় করে। আর এটি সংগীত শিল্পীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ও বটে। তবে বেশির ভাগ জনপ্রিয় সংগীত শিল্পীদের এত সময় নেই যে, তারা এই পাইরেসি এবং কপিরাইট সম্বলিত ইস্যুগুলো সলভ করবে। আর তাদের জন্য এই কাজটি করে দেয় VEVO। VEVO এখানে তাদের ওয়েবসাইটে ৫২ মিলিয়ন ইউনিক ভিউয়ারসদের দ্বারা বিজ্ঞাপন দাতাদেরকে আকৃষ্ঠ করে থাকে। VEVO তাদের এই অত্যাধিক ভিউয়ারস সম্বলিত ওয়েবসাইট ব্যবহার করে একটি নতুন ভিডিওকে আরও অনেক মানুষ এর নিকট পৌছে দিতে সহায়তা করে। আর এভাবে একজন মানসম্মত শিল্পী তার মিউজিক ভিডিও থেকে সর্বোচ্চ অর্থ আয় করতে পারে।
একটি জিনিস জেনে অবাক হবে যে, যেসব ইউটিউব চ্যানেল VEVO সার্টিফাইড সেই চ্যানেলগুলো VEVO অ্যাডমিনই কনট্রোল করে থাকে। শিল্পী এখানে তার বিশেষ লোককেও সাজেস্ট করতে পারেন। VEVO রয়্যালিটি তথা ভিডিও এর কপিরাইট ক্লেইম থেকে টাকা আয় করে থাকে, আবার ইউটিউব এর অ্যাডসেন্স সার্ভিস থেকেও এটি টাকা আয় করে। তারওপর তাদের ওয়েবসাইটের VEVO অ্যাড এবং আইটিউনস,অ্যামাজন রেফারেল থেকে টাকা আয় করে VEVO শিল্পীকে মোটা অংকের টাকা প্রদান করে থাকে। VEVO মূলত এভাবেই কাজ করে থাকে।
কোনো শিল্পী চাইলেই VEVO এর সার্টিফাইড হতে পারবে না। প্রথমত সেই শিল্পীকে অবশ্যই VEVO সিলেক্টেড রিজিওন এর হতে হবে। তারওপর সেই শিল্পীকে অবশ্যই একজন একক শিল্পী হতে হবে, যেমনঃ তাহসান,মিনার,আরিজিত সিং এরা। VEVO এর সার্ভিস রিজিওন এর শিল্পীরা এসব শর্ত মেনে VEVO সার্টিফাইড শিল্পী হতে পারবেন। VEVO মূলত কোয়ালিটি শিল্পীদের তাদের কনটেন্ট এর লিগ্যাল, ভার্চুয়াল এবং ফিন্যান্সিয়াল ব্যবস্হাপনা করতে সহায়তা করে।
তবে কিছু এজেন্সী রয়েছে যারা কিনা যেকোন দেশের শিল্পীদের জন্য VEVO সার্টিফিকেশন এর ব্যবস্হা করে। তবে অবশ্যই শিল্পীকে জনপ্রিয় হতে হবে। জেনে খুশি হবেন যে বাংলাদেশেও একটি VEVO চ্যানেল রয়েছে। বাংলা মেনটালয এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল এর নাম BanglaMentalzVEVO। একসময় চ্যানেলটি অনেক সক্রিয় থাকলেও এখন মিউজিক চ্যানেলটি সক্রিয় নয়।
Images: Shutterstock.com