আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড ওয়্যারলেস টেকনোলজি কি? — বিস্তারিত ব্যাখ্যা!

আমরা ওয়্যারলেস টেকনোলজি কেন এতো ভালোবাসি বলুন তো? — একে তো বিনা তারে কাজ করে, দ্বিতীয়ত রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে অনেক দূরত্ব পর্যন্ত হাই ব্যান্ডউইথ রেটে ডাটা ট্র্যান্সফার করা যায়, যদিও ক্যাবল দ্বারা ব্যান্ডউইথ রেট আরোবেশি পাওয়া সম্ভব, কিন্তু পোর্টেবিলিটির জন্য ওয়্যারলেস প্রযুক্তি প্রত্যেকের প্রথম পছন্দ। রেডিও তরঙ্গের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যদি ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো হয় ব্যান্ডউইথ রেট বেড়ে যায় মানে হাই স্পীডে ডাটা ট্র্যান্সফার করা সম্ভব হয় কিন্তু অপরদিকে সিগন্যাল রেঞ্জ কমে যায়। আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড (Ultra-Wideband) ওয়্যারলেস টেকনোলজি বা ইউডাবলুবি (UWB) — একটি শর্টরেঞ্জ ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন প্রযুক্তি, যেটার মাধ্যমে অনেক কম পাওয়ার ব্যবহার করে অনেক পরিমানে ডাটা (হাই ব্যান্ডউইথ রেট) অল্প দূরত্বের মধ্যে ট্র্যান্সমিট করা সম্ভব হয়।

যদিও এই টেকনোলজি বিশেষ করে কমার্শিয়াল রাডার এর জন্য উন্নতি করা হয়েছিলো কিন্তু বর্তমানে কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে একে বিশেষভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওয়্যারলেস পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য, আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড টেকনোলজি একেবারে বিশেষ মানান সই। এই আর্টিকেলে আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড টেকনোলজি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে এটি অত্যন্ত হাই ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও তরঙ্গ, যেটার অনেক গিগাহার্জ পর্যন্ত ব্যান্ড রয়েছে এবং যার ফলে এটি কয়েক গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড প্রদান করতে সক্ষম হয়। আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড’কে পালস রেডিও বা ডিজিটাল পালস ওয়্যারলেস বলা হতো, কিন্তু বর্তমানে একে আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড বা আলট্রাব্যান্ড (Ultraband) বা সংক্ষেপে ইউডাবলুবি (UWB) বলা হয়। আলট্রাব্যান্ড টেকনোলজিতে অনেক সর্ট রেডিও সিগন্যাল সেন্ড করা হয় যেগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি অনেক হাই হয়ে থাকে, ফলে অনেক হাই রেট ব্যান্ডউইথ স্পীড পাওয়া সম্ভব হয়। এই ট্র্যান্সমিশন একসাথে অনেকগুলো ফ্রিকোয়েন্সি চ্যানেলের মধ্যদিয়ে সেন্ড করা হয়, ৫০০ মেগাহার্জের উপর যেকোনো চ্যানেলে আলট্রাব্যান্ড ট্র্যান্সমিট করা যেতে পারে। বিশেষ করে, ৫গিগাহার্জ, সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সিতে ৪৮০ মেগাবিট/সেকেন্ড থেকে ১.৬ গিগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত ডাটা ট্র্যান্সমিট করা সম্ভব হয়ে থাকে। যতোকম দূরত্ব ততোবেশি ব্যান্ডউইথ রেট পাওয়া যায় এবং দূরত্ব বাড়ার সাথে সাথে ব্যান্ডউইথ রেট ড্রপ করে।

 

আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড বিশেষ করে প্রশস্ত স্পেকট্রাম ব্যবহার করে, ফলে বিস্তার স্পেকট্রামের সাথে এই সিগন্যাল বাঁধা বা গণ্ডগোল সৃষ্টি করে না। এর মানে এটি একই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে আলাদা ট্র্যান্সমিশনের সাথে গোলযোগ না ঘটিয়েই কাজ করতে পারে। ওয়াইফাই বা সেলফোন টাওয়ার সিগন্যালের সাথে কোনই সমস্যা করে না। ওয়াইফাই যেমন একই ফ্রিকোয়েন্সির আলাদা ট্র্যান্সমিশন, ব্লুটুথ বা মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সাথে পেঁচিয়ে সিগন্যাল খারাপ করে ফেলে, আলট্রাব্যান্ড টেকনোলজিতে এই সমস্যা ঘটে না।

আলট্রাব্যান্ডের সবচাইতে বিস্তর ব্যবহার হয় ওয়্যারলেস ইউএসবি’তে এটি সাধারণ ডেক্সটপ ইউএসব ক্যাবল ইন্টারফেসকে রিপ্লেস করে দিয়েছে। সার্টিফাইড ওয়্যারলেস ইউএসবি মোটামুটি ১১০ মেগাবিট/সেকেন্ড থেকে ৪৮০ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড হ্যান্ডেল করতে সক্ষম, তবে আপনি কতোটা স্পীড পাবেন সেট নির্ভর করবে দূরত্বের উপর, আগেই বলছি দূরত্ব বাড়লে ব্যান্ডউইথ স্পীড কমে যায়। আবার হোম নেটওয়ার্কের মধ্যে ওয়্যারলেস ভিডিও শেয়ার করার জন্য আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড অত্যন্ত আদর্শ, কেনোনা অবশ্যই এতে হাই ব্যান্ডউইথ রেট রয়েছে। যেহেতু এই টেকনোলজি অনেক কম পাওয়ার নিয়ে কাজ করতে পারে, সুতরাং সহজেই ব্লুটুথ ডিভাইজের সাথে এটি তাত্ত্বিকভাবে অনেক ভালো কাজ করতে সক্ষম হয়। আগের দিনের কিছু সেলফোনে পিয়ার টু পিয়ার কানেকশন তৈরি করার জন্য ইউডাবলুবি প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতো। অবশেষে ওয়াইফাই টেকনোলজি আরো বেটার হয়ে যায় এবং বর্তমানে সেলফোন বা কম্পিউটিং ডিভাইজ গুলোতে অত্যন্ত ইউনিভার্সাল হয়ে উঠে, তবে পূর্বের সময় ইউডাবলুবি প্রযুক্তি ওয়াইফাই থেকেও বেশি ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করতে সক্ষম ছিল।

ব্যবহার

উপরের প্যারাগ্রাফ গুলো থেকে এর অনেক ব্যবহার সম্পর্কে ইতিমধ্যেই ধারণা পেয়ে গেছেন নিশ্চয়। কিন্তু তাছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রে এই ইউডাবলুবি প্রযুক্তিকে কাজে নেওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমার্শিয়াল অ্যাপ্লিকেশন গুলোতেই এই আলট্রাব্যান্ড টেক’কে বেশি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এই প্রযুক্তির সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে সিগন্যাল পালস ওয়াইড স্পেকট্রামের মধ্যে ছড়িয়ে পরে, যেটাকে ডিটেক্ট করা অনেক মুশকিল হয়ে যায়। কমার্শিয়াল ভাবে হাই স্পীড লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্কিং এর ক্ষেত্রে একে কাজে নেওয়া হয়, মোটামুটি ২০ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড পাওয়া যেতে পারে (দূরত্ব অনুসারে নির্ভরশীল)। তাছাড়া অদৃশ্য রাডার, বিমানচালনা, উচ্চতা মাপার যন্ত্র, ইনটেলিজেন্ট ট্র্যান্সপোর্ট সিস্টেম, জিওলোকেশন এবং আরো নানান কাজে একে ব্যবহৃত করা হয়। মিলিটারি’তে বিশেষ করে রাডার অপারেট, কমিউনিকেশন কনভার্ট এবং ডাটা লিঙ্কস এর জন্য আলট্রাব্যান্ড টেক ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

দিনের পর দিন ওয়্যারলেস প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলেছে, আর যেহেতু ইউডাবলুবি অনেক হাই ব্যান্ডউইথ প্রদান করতে সক্ষম, সেক্ষেত্রে এই প্রযুক্তিকে কম্পিউটার এবং নানান ওয়্যারলেস ক্ষেত্রে কাজে লাগানো সম্ভব। বিশেষ করে এর আসল আকর্ষণ হচ্ছে লোকাল শেয়ারিং এর ক্ষেত্রে অনেক ব্যান্ডউইথ স্পীড পাওয়া। তবে সামনের দিনে অবশ্যই এই প্রযুক্তির আরো বিস্তার লাভ করবে এবং আরো ব্যবহার দেখতে পাওয়া সম্ভব হবে।


তো বুঝতেই পাড়ছেন, এই আলট্রা-ওয়াইড ব্যান্ড প্রযুক্তি সিমিলার প্রযুক্তি গুলো থেকে অনেক কম পাওয়ার কনকিউম করে কাজ করে এর ভবিষ্যতে এর আরো ব্যবহার আমরা অবশ্যই দেখতে পাবো। এই প্রযুক্তি শুধু মাত্র হাই ব্যান্ডউইথ ডাটা ট্র্যান্সফার নয় বরং সাথে দেয়াল ভেদ করে সিগন্যাল অন্যপ্রান্তে প্রবেশ এবং সিগন্যাল প্রতিফলিত হতে পারে, এজন্যই তো একে রাডারে ব্যবহার করা হয়।

এই প্রযুক্তি নিয়ে বেসিক প্রায় সবকিছুই আলোচনা করেছি, আমার কাছে এই প্রযুক্তির সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য ছিল, যেমনঃ এনার্জি ঘনত্ব, ইউডাবলুবি প্রযুক্তি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কিছু তথ্য — ব্যাট এগুলো অনেকবেশি টেকনিক্যাল তাই এখানে আর আলোচনা করলাম না, যতোটুকু আলোচনা করেছি, আপনার বেসিক জানার জন্য যথেষ্ট ছিল। আর হ্যাঁ, যেকোনো প্রশ্ন বা মতামত প্রকাশে কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু!

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories