যদিও ইন্টারনেট আর ওয়েব আলাদা জিনিষ—তারপরেও ইন্টারনেটে আমরা বেশিরভাগ সময় ওয়েবেই কাটিয়ে থাকি। নানান কাজের জন্য রয়েছে নানান ওয়েবসাইট গুলো। দুনিয়ার এমন কিছু কিছু ওয়েব সাইট রয়েছে যেগুলো আপনি হয়তো কখনো কল্পনা পর্যন্ত করেন নি। যাই হোক, আজকের আর্টিকেলে এমন কিছু বেস্ট ওয়েবসাইট নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো আজব তো নয়, কিন্তু অনেক কাজের, প্রায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজে আমি এই সাইট গুলোকে ব্যবহার করে থাকি।
আজকে কয়েকটি ভালো ওয়েবসাইট সম্পর্কে আলোচনা করবো যেগুলো আপনার কাজে আসতে পারে। এই লিস্টের মধ্যে খুবই দরকারি ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে শুধুমাত্র মজার জন্য তৈরী ওয়েবসাইট পর্যন্তও আছে. হতে পারে আপনাদের মধ্যে অনেকেই এই ওয়েবসাইটগুলোর ব্যাপারে আগে থেকেই জানেন এবং আগে থেকে ব্যাবহারও করে আসছেন। নিচে বলা ওয়েবসাইট গুলোর নাম যদি আপনি আগে থেকেই জেনে থাকেন বা আগেই ব্যাবহার করা থাকেন, তাহলে আপনি লেখাটি এড়িয়ে যেতে পারেন। আর যদি না জেনে থাকেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি আজকের আর্টিকেল থেকে আপনি অন্তত ভালো কয়েকটি ওয়েবসাইটের নাম জানতে পারবেন যেগুলো আপনার ভবিষ্যতে দরকার হতে পারে।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
১. Have I been Pwned
আপনি নিশ্চই ডেটা ব্রিচ টার্মটি অনেকবার শুনেছেন যদি আপনি ইন্টারনেট নিয়ে অনেক বেশি ঘাটাঘাটি করেন। যদি না জেনে থাকেন, তাহলে ডেটা ব্রিচ নিয়ে আমাদের লেখা এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। কিন্তু আপনি বুঝবেন যে আপনি ডেটা ব্রিচের শিকার হয়েছেন কিনা এবং হলেও কিভাবে হয়েছেন বা কোথায় কোথায় আপনার পার্সোনাল ডেটা লিক হয়েছে? উত্তরটি হচ্ছে এই ওয়েবসাইট যার নাম Have I been Pwaned। এই ওয়েবসাইটটি মূলত আইডেন্টিফাই করবে যে আপনার পার্সোনাল ইনফো যেমন আপনার ইমেইল এড্রেস আপনার পারমিশন ছাড়া ওদের ডেটাবেস এর মধ্যে অন্য কোনো ওয়েবসাইটে বা ওয়েব সার্ভারে লিক হয়েছে কিনা। এই ওয়েবসাইটটিতে মূলত আপনি একটি সার্চ বার পাবেন যেখানে আপনাকে আপনার প্রাইমারি ইমেইল এড্রেস বা পার্সোনাল ইমেইল এড্রেসটি ইন্টার করতে হবে। তাহলে এই ওয়েবসাইটটি তাদের ডেটাবেসে থাকা ব্রিচগুলোর তথ্য অনুযায়ী খুঁজে বের করবে যে আপনার ইমেইল এড্রেস আপনার পারমিশন ছাড়া অন্য কোথাও লিক হয়েছে কিনা। যদি আপনার ইমেইল এড্রেস এর কোনো ব্রিচ তারা খুঁজে পায় তাহলে তারা আপনাকে জানাবে যে ঠিক কোন ওয়েবসাইট থেকে আপনার ডেটাটি ব্রিচ হয়েছে। তখন আপনার সাথে সাথে ওই সাইটটিতে আপনার ইউজার একাউন্ট এ লগইন করে আপনার ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করা উচিত হবে যাতে আপনি ভবিষ্যতে আবারো ডেটা ব্রিচের শিকার এবং কোনো হ্যাকারের এট্যাকের শিকার না হন
২. Google Quick Draw
নাম শুনেই নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন যে একটি একটি পেইন্টিং ওয়েবসাইট। অর্থাৎ, ছবি আঁকা বা ছবিতে রং করা এই ধরণের কোনোকিছু সম্পর্কিত ওয়েবসাইট। হ্যা, আপনার ধারণা সঠিক। তবে ইটা আরো ৫ টি সাধারণ পেইন্টিং টুলের মতো না। এটিকে বলতে পারেন একটি রিভার্স পেইন্টিং টুল। আর হ্যা, ঠিক ধরেছেন, এই ওয়েবসাইটটি বা এই টুলটিগুগলের একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস। এই ওয়েবসাইট মূলত গুগল তৈরী করেছে তাদের অবজেক্ট রিকগনিশন এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে আরো বেটার ট্রেইন করার জন্য। এখানে পেইন্টিং স্টার্ট করার পরে ওয়েবসাইটটিই আপনাকে প্রত্যেকটি লেভেলে বলে দেবে যে আপনাকে কি আঁকতে হবে। এরপর আপনাকে আঁকার জন্য একটি নির্দিষ্ট টাইম লিমিট দেওয়া হবে। প্রত্যেকটি লেভেলে আপনাকে মাউস কার্সর ইউজ করে এবং স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে হাতের আঙ্গুল দিয়ে সোয়াইপ করে করে ওই নির্দিষ্ট অবজেক্টটির একটি শেপ আঁকতে হবে। অবজেক্টটি কখনোই ১০০% একিউরেট হতে হবেনা, তবে এমনভাবে আঁকতে হবে যাতে দেখে বোঝা যায় যে আপনি ঠিক কি আঁকতে চেয়েছেন। এবং আপনার প্রত্যেকটি সোয়াইপের সাথে সাথে ওয়েবসাইটটির আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ধারণা করার চেষ্টা করবে যে আপনি কি এঁকেছেন। এরপর একেবারে ফাইনাল রেজাল্ট পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকবে। ছবি আঁকার জন্য এটি কখনোই পারফেক্ট টুল নয়, তবে বেশ মজার। কিছুটা অবসর সময় কাটানোর জন্য অন্যতম ওয়েবসাইট এটি।
৩. Down For Everyone Or Just Me
এটি আমার মতে মোটামোটি প্রয়োজনীয় একটি ওয়েবসাইট। অনেকসময় আমরা অনেক ওয়েবসাইট ভিজিট করতে গিয়ে দেখি যে ওয়েবসাইটটি লোড হচ্ছেনা বা ওয়েবসাইটটি ডাউন। তখন স্বভাবতই মাথায় একটি প্রশ্ন আসে যে সমস্যাটি কি ওয়েবসাইটের সার্ভারের নাকি আমার নিজের ইন্টারনেটের? অর্থাৎ এই ওয়েবসাইটটি কি শুধুমাত্র আমার কাছেই ডাউন নাকি সবার জন্যই ডাউন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আপনার দরকার হবে এই ওয়েবসাইটটি। এই ওয়েবসাইটটিতে ঢুকলে আপনি ছোট্ট একটি সার্চ বার পাবেন। ওই সার্চ বাড়ে আপনাকে শুধুমাত্র আপনার কাঙ্খিত সাইটের এড্রেসটি ইন্টার করতে হবে। তাহলেই পরবর্তী সার্চ রেজাল্টে আপনাকে জানানো হবে যে সাইটটি কি আসলে সবার জন্যই ডাউন নাকি সমস্যাটি শুধুমাত্র আপনার একার। এই সাইটটির আর তেমন কোনোই কাজ নেই। তবে কোনো কোনো সময় এই ওয়েবসাইটটি কাজে আসতে পারে
৪. WINDOWS 93
এটি বেশ মজার একটি ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটটি আপনাকে ওয়েব ব্রাউজারের ভেতরে উইন্ডোজ ৯৩ অর্থাৎ এখন থেকে ২৫ বছর আগের উইন্ডোজ ব্যবহার করার এক্সপেরিয়েন্স দেবে। হ্যা, এটি অবশ্যই ১০০% রিয়্যাল উইন্ডোজ ৯৩ এর মতো হবেনা, তবে উইন্ডোজ ৯৩ এর ইউজার ইন্টারফেস, ডায়লগ বক্স, টাস্কবার ইত্যাদি বেশ ভালোভাবেই সিমুলেট করতে পারে এই ওয়েবসাইটটি। এছাড়া এই ওয়েবসাইটটি পিসিতে গুগল ক্রোম ব্রাউজারে লোড করে আমার কাছে সাধারণের থেকে অনেক বেশি স্মুথ এবং ফাস্ট মনে হয়েছে যেকোনো উইন্ডোজ এক্সপি বা অন্যান্য ওল্ডার ভার্সন উইন্ডোজ পিসির থেকে। এর কারণ অবশ্যই হচ্ছে যে, এটি রিয়্যাল উইন্ডোজ ওএস নয়, এটি শুধুমাত্র একটি মজার উদ্দেশ্যে তৈরী সিমুলেশন বলতে পারেন। মজার উদ্দেশ্যে বললাম কারণ, এই উইন্ডোজ ৯৩ তে অনেক ধরণের মজার মজার প্রোগ্রামস এবং এপ্লিকেশন ইনস্টল করা আছে যেগুলো কোনোদিনই উইন্ডোজ ৯৩ তে ছিলোনা। যেমন, একটি বেসিক ফার্স পার্সন শুটার গেম, কার্ড গেম, স্কাইপ এপ্লিকেশন এর একটি হাস্যকর মকআপ, হাফ লাইফ থ্রি গেম যেটি কখনোই লোড হয়না এবং এই ধরণের আরো অনেক কিছু যেগুলো আপনি নিজে এক্সপ্লোর করলেই বুঝবেন। এটি একেবারেই ইউজফুল কিছুনা তবে ওয়েবসাইটটি দেখলেই বুঝবেন এটি শুধুমাত্র মজার উদ্দেশ্যেই তৈরী করা হয়েছে।
৫. Pixabay
এই ওয়েবসাইটটি বেশ জনপ্রিয়। আপনি হয়তো আগেও শুনেছেন এই ওয়েবসাইটটির ব্যাপারে এবং হয়তো ব্যবহারও করেছেন অনেক কাজে। কিন্তু যদি না জেনে থাকেন, তাহলে বলি, এটি একটি ইমেজ লাইব্রেরি। অর্থাৎ এই ওয়েবসাইটে আপনি শুধুমাত্র পিকচার বা ছবি বা ইমেজ পাবেন। তবে ওয়েবসাইটটির মেইন পয়েন্ট হচ্ছে, এখানে যত ইমেজ আপনি পাবেন বা যত ইমেজ আপনি ফ্রি ডাউনলোড করতে পারবেন, সেই প্রত্যেকটি ইমেজ ১০০% কপিরাইট ফ্রি। আপনি এই ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যেকোনো ইমেজ আপনার যেকোনো কন্টেন্ট যেমন ব্লগ পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও এবং আক্ষরিক অর্থেই যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন কোনোরকম কপিরাইট নিয়ে চিন্তা না করেই। আমরা ওয়্যারবিডিের অনেক আর্টিকেলেও এই ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা ইমেজ ব্যবহার করে থাকি। হ্যা, এখানে আপনি পেইড স্টক ফটো ওয়েবসাইটগুলোর মতো হয়তো ১০০ মিলিয়ন রয়েলটি ফ্রি ইমেজ পাবেন না, তবে ব্যবহার করার জন্য মোটামোটি প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি ইমেজ এখান থেকে পেয়ে যেতে পারেন। এখানে এখন পর্যন্ত ১ মিলিয়নের বেশি স্টক ফটো আছে। এখান থেকে ইমেজ ডাউনলোড করতে এবং ব্যবহার করতে আপনাকে কোনো ধরণের টাকা খরচ করতে হচ্ছেনা। এই বিষয়টি কনসিডার করল ১ মিলিয়ন ইমেজ অনেক বেশি।
তো এই ছিল আরো পাঁচটি ইউজফুল এবং মজার ওয়েবসাইট। বেস্ট ওয়েবসাইট সিরিজের পরবর্তী আর্টিকেলে আরো এমন পাঁচটি ওয়েবসাইট নিয়ে আলোচনা করবো আশা করি। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো ধরণের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
Images: Shutterstock.com