আপনি যদি স্মার্টফোন সম্পর্কে ভালো খোঁজখবর রাখেন এবং জানেন, তাহলে নিশ্চই আপনি SAR ভ্যালু বা সহজভাবে বাংলায় বললে সার ভ্যালু নামটি অনেকবার শুনেছেন। হয়তো অনেক স্মার্টফোনের রিভিউতে শুনেছেন বা নতুন স্মার্টফোন বক্সের পেছনে লেখা দেখেছেন যে এই স্মার্টফোনটির SAR ভ্যালু এতো বা ওই স্মার্টফোনটির SAR ভ্যালু ওতো অথবা এই ভ্যালুটি বেশি বা আরেকটু কম হওয়া উচিত ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু কখনো কি মনে প্রশ্ন এসেছে যে আসলে এই SAR ভ্যালু জিনিসটিই বা কি বা এর প্রয়োজনীয়তাই বা কি? এটি বেশি হলে কি হবে বা কম হলেই বা কি ভালো হবে? আজকে এই SAR ভ্যালু নিয়েই অল্প কথায় সহজভাবে বিস্তারিত আলোচনা করবো। প্রথমেই জানা যাক,
SAR ভ্যালু কি?
আমরা প্রায় সবাই জানি যে, এখনকার যুগের সব মডার্ন স্মার্টফোন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ব্যাবহার করে। সব স্মার্টফোন বা সাধারণ মোবাইল ফোনেও একটি এন্টেনা থাকে যেটি স্মার্টফোনের সকল ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন কন্ট্রোল করে।
স্মার্টফোনটি আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক এর সাথে কানেক্টেড থাকতে, আপনার ব্লুটুথ ডিভাইসের সাথে কানেক্টেড থাকতে এবং আপনার নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার এর টাওয়ার এর সাথে কানেক্টেড থাকতেও এই এন্টেনা ব্যবহার করে।
আর এর ফলেই প্রত্যেকটি মডার্ন স্মার্টফোন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বিকিরণ করে। কারণ, স্মার্টফোনকে এই এন্টেনা ব্যবহার করে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কগুলোর সাথে কানেকশন রক্ষা করতে হলে রেডিও ওয়েব তরঙ্গই ব্যবহার করতে হয়। আর স্মার্টফোন ওয়ারলেস ডিভাইসে বা ক্যারিয়ারের টাওয়ারে যে রেডিয়েশন প্রেরণ করে, তার ১০০% কখনোই সেখানে পৌঁছায় না।
উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০% সেন্ড করে, হয়তো তার মধ্যে ৮০% সেখানে পৌঁছায় এবং বাকি ২০% স্মর্টফোনের আশেপাশে বিকিরিত হয়। যেমন, আপনি ফোনটি কানে ধরে কথা বলার সময় এই অবশিষ্ট রেডিয়েশন আপনার দেহ শোষণ করে নেয়।
আর এই যে পরিমান রেডিয়েশন আপনার স্মার্টফোনটি বিকিরণ করে তার রেট সবসময় সমান হয়না। যেমন, আপনি যখন স্মার্টফোনে অনেক লাইট টাস্ক করেন বা খুব হালকাভাবে ব্যবহার করেন, তখন স্মার্টফোনটি অনেক কম রেডিয়েশন ছাড়বে এবং অনেক হেভি ইউজ করলে বা খুব ভারী কাজ করলে তুলনামূলকভাবে বেশি রেডিয়েশন ছাড়বে।
এখানেই মূলত চলে আসে SAR ভ্যালুর ব্যাপারটি, যার সম্পূর্ণ রূপ হচ্ছে Specific Absorption Rate বা SAR। এটি হচ্ছে এই অবশিষ্ট রেডিয়েশন যেটি আপনার শরীর শোষণ করছে, তার রেট। এবং এই অবশিষ্ট রেডিয়েশন শোষণ করার রেটটিকেই বলা হচ্ছে SAR ভ্যালু।
স্মার্টফোনে SAR ভ্যালুর কাজ কি?
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, এটি যখন খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার এবং সব ফোনের ক্ষেত্রেই হয়, তাহলে এটাকে স্পেশালি স্মার্টফোন বক্সে লিখে রাখার কারণ কি? এর কারণ হচ্ছে, যে দেশে স্মার্টফোনটি সেল করা হচ্ছে ওই দেশের সরকারের সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার স্মার্টফোন সেল করার ক্ষেত্রে SAR ভ্যালু নিয়ে বিভিন্ন ধরণের নিয়ম করে রেখেছে।
অর্থাৎ, বিভিন্ন দেশের সরকার এমন একটি ভ্যালু নির্ধারণ করে রেখেছে, যে আপনার কোম্পনির স্মার্টফোনটির SAR ভ্যালু যদি ওই নির্ধারিত ভ্যালুটির ওপরে হয়, তাহলে আপনি ওই ফোনটি ওই দেশের কোথাও সেল করতে পারবেন না বা আপনাকে ওই দেশের সরকার ফোনটি সেল করার পারমিশন দেবে না।
যেমন, ইন্ডিয়া এবং আমেরিকার সরকার যে SAR ভ্যালুর লিমিট রেখেছে তা হচ্ছে ১.৬ ওয়াট/কেজি টিস্যু। টিস্যু বলতে এখানে মানুষের দেহের টিস্যুর কথা বোঝানো হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, ইন্ডিয়া এবং আমেরিকার সরকারের মতে, মানবদেহের প্রতি ১০০০ গ্রাম টিস্যু ১.৬ ওয়াট রেডিয়েশন শোষণ করতে পারবে কোনোরকম ক্ষতি ছাড়াই। এই ভ্যালুটি বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয়।
তার মানে, ইন্ডিয়া এবং আমেরিকায় কোনো ফোন সেল করতে হলে ওই ফোনটির SAR ভ্যালু ১.৬ ওয়াট বা তার থেকে কম হতে হবে। কোনো ফোনের SAR ভ্যালু এর থেকে বেশি হলে ফোনটি সেল করা যাবে না।
SAR ভ্যালু কতটা ম্যাটার করে?
এতক্ষনে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন যে এই ভ্যালুর কাজ কি এবং এটি স্মার্টফোনে কেনই বা থাকে। কিন্তু এর থেকেও বড় ব্যাপার হচ্ছে, এই ভ্যালুটা আপনার জন্য বা আপনার প্রত্যেকদিনের জীবনে ওই স্মার্টফোনটি ব্যবহার করার সময় কতটুকু ম্যাটার করে?
প্রথমত, আপনি যদি ভেব থাকেন যে এরপর থেকে কোনো স্মার্টফোন কেনার আগে স্মার্টফোনটির প্যাকেটে সবার আগে খুব কেয়ারফুলি ফোনটির SAR ভ্যালু দেখে নেবেন এবং তারপরেই ফোনটি কিনবেন, তাহলে সত্যি কথা বলতে এটা নিয়ে এতো কেয়ারফুলি ভাবার মতো কিছুই নেই।
কারণ, স্মার্টফোনটির SAR ভ্যালু যদি সরকারের নির্ধারিত রেটের থেকে অল্প পরিমান বেশিও হতো, তাহলে ফোনটি আর বাজারে সেল করা হতো না। ফোনটির SAR ভ্যালু ঠিক আছে এবং নির্ধারিত রেটের কম আছে বলেই স্মার্টফোনটির রিটেইল ইউনিট বাজারে এসেছে এবং স্মার্টফোনটি আপনি কিনতে পারছেন।
এছাড়া স্মার্টফোন থেকে বিকিরিত হওয়া রেডিয়েশন তখনই ম্যাটার করবে যখন আপনি স্মার্টফোনটি কানে ধরে কথা বলছেন কারো সাথে। কারণ, স্মার্টফোনের এই রেডিয়েশন যদি আপনার অল্প পরিমান ক্ষতিও করতে পারে, তবে সেই ক্ষতিটি হওয়ার সবথেকে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে আপনার মাথার বা আপনার ব্রেইনের।
যদিও এখনকার মডার্ন স্মার্টফোনগুলো আপনার কোনো ধরণের শারীরিক ক্ষতি করবে তার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু আমরা কেউই দিনে ২৪ ঘন্টা ফোন কানে দিয়ে কথা বলিনা। আমরা সাধারণ মানুষ খুব বেশি হলে হয়তো দিনে ২ ঘন্টা বা ৩ ঘন্টা ফোনে কথা বলি। সেক্ষেত্রে, আপনাকে ফোনের SAR ভ্যালু নিয়ে কোনো ধরণের চিন্তা করতে হবেনা।
সেক্ষেত্রে আপনি SAR ভ্যালুর ব্যাপারটি একেবারেই ভুলে যেতে পারেন। হ্যা, কোনো ফোন কেনার আগে তার SAR ভ্যালু দেখে নেওয়া অবশ্যই ভালো এবং এই ভ্যালু কম হওয়াও ভালো, তবে একটু বেশি হলেও তেমন কোনো ক্ষতি নেই।
যে পরিমান রেডিয়েশন আপনার স্মার্টফোনটি বিকিরণ করে তার রেট সবসময় সমান হয়না। যেমন, আপনি যখন স্মার্টফোনে অনেক লাইট টাস্ক করেন বা খুব হালকাভাবে ব্যবহার করেন, তখন স্মার্টফোনটি অনেক কম রেডিয়েশন ছাড়বে এবং অনেক হেভি ইউজ করলে বা খুব ভারী কাজ করলে তুলনামূলকভাবে বেশি রেডিয়েশন ছাড়বে।
এখানেই মূলত চলে আসে SAR ভ্যালুর ব্যাপারটি, যার সম্পূর্ণ রূপ হচ্ছে Specific Absorption Rate বা SAR। এটি হচ্ছে এই অবশিষ্ট রেডিয়েশন যেটি আপনার শরীর শোষণ করছে, তার রেট। এবং এই অবশিষ্ট রেডিয়েশন শোষণ করার রেটটিকেই বলা হচ্ছে SAR ভ্যালু।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। কোনো ধরণের প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে জানাবেন।
Images: Shutterstock.com