আমার পুরো বিশ্বাস যে আপনি কখনো না কখনো একটি মেমোরি কার্ড অবশ্যই কিনেছেন। সেটা হয়তো কিনেছেন আপনার ক্যামেরার জন্য আবার কখনো হয়তো আপনার স্মার্টফোনটির জন্য। কিন্তু মেমোরি কার্ড কেনার সময় আপনি হয়তো প্রায়ই দ্বিধার মধ্যে পরে যান। কেনোনা একই কার্ডের দাম ৫০০ টাকাও হয় আবার ২,০০০ টাকাও হতে পারে। আজকের এই পোস্ট এ আমি জানাবো যে এই দামের পার্থক্য কেন ঘটে এবং আপনার ডিভাইজটির জন্য কোন কার্ডটি সবচেয়ে সঠিক হবে।
মেমোরি কার্ড এর সাইজ এবং বিভিন্ন ক্লাস
দেখুন আমরা যেটাকে এসডি কার্ড বা মাইক্রো এসডি বলে চিনি এটি সাধারণত ৩ টি সাইজে পাওয়া যায়। একটি হলো ফুল সাইজের বড় এসডি কার্ড। একটি হলো ছোট এসডি কার্ড, যেটা আমরা আমাদের স্মার্টফোনে ব্যবহার করি এবং আরেকটি হলো মিনি এসডি কার্ড যেটি ২-৩ বছর আগে আমরা ব্যবহার করতাম। এখন এই কার্ড গুলো মোট তিন ক্যাটাগরিতে আসে। একটি হলো “এসডি” একটি হলো “এসডি এইচসি” এবং আরেকটি হলো “এসডি এক্সসি”। একটি সাধারন মেমোরি কার্ড যেটিকে আমরা মাইক্রো এসডি বলি এটি সাধারনত ৪ জিবি পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৪ জিবির উপরে মাইক্রো এসডি হওয়া সম্ভব ছিল না। তাই একটি নতুন প্রযুক্তি আনা হয়, যার নাম দেওয়া হয় এসডি এইচসি। পূর্ণ অর্থে যাকে বলা হয় এসডি হাই-ক্যাপাসিটি। এখন এই এসডি এইচসি প্রযুক্তির সাহায্যে ৪ জিবি থেকে ৩২ জিবি পর্যন্ত কার্ড বানানো সম্ভব ছিল। কিন্তু ৩২ জিবি এর পরে আমাদের যখন আরো বড় কার্ড বানানোর প্রয়োজন পড়লো তখন আরো নতুন এক প্রযুক্তির উদ্ভবন হলো, তা হলো এসডি এক্সসি। মাইক্রো এসডি এক্সসি এর সাহায্যে আমরা বর্তমানে ৩২ জিবি থেকে শুরু করে ২ টিবি পর্যন্ত মেমোরি কার্ড বানাতে পারি। যদিও এখনো পর্যন্ত ২ টিবি কার্ড পাওয়া যায় না।
- কি কারনে স্মার্টফোন অত্যাধিক গরম হয়? এটা কি স্বাভাবিক?
তো এতো ছিল সাইজ অনুসারে এদের বিভিন্ন ক্যাটাগরির কথা। কিন্তু আপনার জন্য কোন কার্ডটি সর্ব উত্তম হবে তা জানার জন্য আপনাকে এর স্পীড এর ক্যাটাগরি সম্পর্কেও জানতে হবে। স্পীড এর দিক থেকে মেমোরি কার্ড গুলোকে মোট ৬ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরা যথাক্রমে ক্লাস ২, ক্লাস ৪, ক্লাস ৬, ক্লাস ১০, ইউএইচএস ১ এবং ইউএইচএস ৩। এখন চলুন এসব নিয়ে হালকা আলোচনা করা যাক। এসডি কার্ডে এর ক্লাস স্পীড রেট গোল করে নাম্বারিং করা থাকে। কার্ড স্পীড রেটিং যতো বেশি থাকে এর মানে হলো কার্ডটি ততো স্পীডে কোন ফাইল রাইট করতে পারে। যেমন একটি ক্লাস ৬ এর কার্ড ৬ মেগাবাইটস পার সেকেন্ড স্পীড সমর্থন করতে পারে, যদি আপনি সেখানে কোন ফাইল ঢোকান তখন। এমনিভাবে ক্লাস ১০ মেমোরি কার্ড ১০ মেগাবাইটস পার সেকেন্ড স্পীড সমর্থন করতে পারে। কিন্তু একটি ইউএইচএস মানের কার্ডে যাকে আমরা আলট্রা হাই স্পীড ও বলে থাকি এতে যে ইউএইচএস ১ এবং ইউএইচএস ৩ থাকে এর স্পীড ৩২০ মেগাবাইটস পার সেকেন্ড পর্যন্ত যেতে পারে।
কোন মেমোরি কার্ডটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে?
দেখুন মেমোরি কার্ড নির্বাচন করা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার ব্যাবহারের উপর। এখানে আমি বিভিন্ন ব্যবহার অনুসারে বিভিন্ন কার্ড কেনার উপদেশ দেবো। আশা করি আপনার চাহিদা মেটাতে পারবো। এখন চলুন আলোচনা করি কোন কার্ডটি আপনার কেনা উচিৎ এবং কোনটি কেনার প্রয়োজন নেই। দেখুন আপনি যদি একটি কার্ড ব্যবহার করতে চান কেবল ডাটা স্টোর করার জন্য। যেমন ধরুন মুভিজ, সং বা ফটোস স্টোর করার জন্য। তবে আপনি ক্লাস ৪ থেকে এর উপরের যেকোনো কার্ড কিনতে পারেন। এতে আপনার কোন অসুবিধা হবে না। আমি বলবো ডাটা স্টোর করার জন্য ক্লাস ৪ কার্ড নিয়ে নিন এবং মুভি বা সং স্টোর করুন এতে প্লে করতে বিন্দু মাত্র সমস্যা হবে না। এবং অনেক কমদামে অনেক বেশি স্টোরেজ পেয়ে যেতে পারেন, ডাটা স্টোর করার জন্য।
- কীভাবে স্মার্টফোন ব্যাটারি এর সঠিক যত্ন নেবেন? বিস্তারিত
এখন যদি আপনার ফোনে আপনি এইচডি রেকর্ডিং করতে চান এবং সেই রেকর্ডিং কার্ডে সেভ করতে চান তবে আমার মতে আপনার কমপক্ষে একটি ক্লাস ৬ এর মেমোরি কার্ড কেনা উচিৎ। এইচডি রেকর্ডিং যদি আপনি একটি ক্লাস ৪ এর কার্ডে করেন তবে আপনার কার্ড আপনার করা ভিডিও রেকর্ডিং এর সেভিং স্পীডকে সমর্থন করতে পারবেনা। ফলে রেকর্ডিং করার সময় অনেক ফ্রেম সেভ হওয়া থেকে মিস হয়ে যেতে পারে। ফলে ভিডিওটি প্লে করার সময় আটকে আটকে যেতে পারে বা ভিডিও এবং সাউন্ড আগে পিছে হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় হয়তো এরকম সমস্যাই অনেকেই পরে থাকেন। তাই আমি বলবো এইচডি মানের ভিডিও রেকর্ডিং করার জন্য সর্বনিম্ন ক্লাস ৬ কার্ড ব্যবহার করা উচিৎ।
- প্রযুক্তি নিয়ে ৫ টি ভুল ধারণা যা আপনার এক্ষুনি শুধরিয়ে নেওয়া উচিৎ
এখন যদি আপনি ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং করতে চান এবং সাথে সাথে আপনি যদি ফটোও ক্যাপচার করতে চান তবে আমার উপদেশ অনুসারে আপনার কমপক্ষে একটি ইউএইচএস ১ মেমোরি কার্ড কেনা উচিৎ। আপনি যদি ক্লাস ১০ বা ক্লাস ৬ দিয়ে ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং করতে চান তবে তা ভালো হবে না এবং পরে আপনি বলবেন যে আপনার ফোনে ভালো ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং হয় না। আসলে এতে আপনার ফোনের কোন সমস্যা নাই। বরং ইউএইচএস কার্ড না থাকায় রেকর্ডিং সমস্যা হতে পারে।
স্মার্টফোনের পাশাপাশি ক্যামেরাতে যদি আপনি এসডি কার্ড ব্যবহার করতে চান তবে এখানে একই নিয়ম। আপনি যদি আপনার ডিএসএলআর দিয়ে বা আপনার সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে সাধারন ছবি ক্যাপচার করতে চান তবে ক্লাস ৬ অথবা ক্লাস ১০ এসডি কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আপনি যদি রও ইমেজ তোলার কথা ভাবেন কিংবা ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং করার কথা ভাবেন তবে কমপক্ষে ইউএইচএস ১ কার্ড হওয়া খুব জরুরী। যদি কিনতে পারেন তবে ইউএইচএস ৩ কিনলে সর্বউত্তম হবে। তাছাড়া আপনার ক্যামেরা ভালো ভিডিও রেকর্ডিং করতে পারবেনা এবং বেশি ফ্রেম ক্যাপচার হবে না।
- অ্যান্ড্রয়েড এন বা অ্যান্ড্রয়েড ৭.০ এর সব নতুন ফিচার
আবার অনেকে তাদের ফোনের সকল অ্যাপস মেমোরি কার্ডে মুভ করে ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে কমপক্ষে একটি ক্লাস ১০ মেমোরি কার্ড হওয়া খুব প্রয়োজনীয়। কেনোনা আপনি যদি আপনার অ্যাপস এর ডাটা গুলো এসডি কার্ডে মুভ করে দেন কিন্তু আপনার কার্ডের স্পীড স্লো হয় তবে অ্যাপ রান করার সময় অনেক বেশি লোডিং টাইম নেবে এবং অ্যাপ হাংগ করতে পারে। আর পরে আপনি আপনার ফোনের দোষ দিয়ে বলবেন যে আমার ফোনে এই গেম চলে না, বার বার ক্রাস করে ইত্যাদি। কিন্তু এটি আপনার ফোনের সমস্যা মোটেও নয়। এর মানে আপনি যে মেমোরি কার্ড ব্যবহার করেছেন তার স্পীড অনেক কম।
শেষ কথা
এতক্ষণে আপনি নিশ্চয় জেনে গেছেন যে কোন মেমোরি কার্ডটি আপনার জন্য প্রযোজ্য। এখন আপনি নিজেই চিন্তা করুন যে আপনি শুধু ডাটা স্টোর করবেন না এইচডি ভিডিও রেকর্ডিং করবেন না ৪কে ভিডিও রেকর্ডিং করবেন। এবং সেই অনুসারে আপনার কার্ডটি পছন্দ করুন। দেখুন প্রয়োজন ছাড়া অঝথা ক্লাস ১০ বা ইউএইচএস মানের এসডি কার্ড কেনার কোন প্রয়োজন নেই। এতে আপনার অঝথা টাকা নষ্ট হবে। আশা করি আজকের এই পোস্ট টির মাধ্যমে আপনি অনেক উপকৃত হবেন এবং এসডি কার্ড কেনার সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। শুধু নিজে একাএকা জানলে তো আর হবে না, তাই যতো বেশি পারেন বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন। আপনার বিশেষ কোন প্রশ্ন বা মতামত জানাতে আমাকে নিচে কমেন্ট করতে পারেন। তো… আপনি কোন মেমোরি কার্ডটি কিনবেন বলে ঠিক করলেন?
Images: Shutterstock.com