এটা আপনাকে মানতেই হবে, শপিং এর নেক্সট লেভেল অবশ্যই অনলাইন শপিং। কিন্তু কোন শব্দের সাথে যখনই “অনলাইন” কথাটি যুক্ত হয়, মনে হাজারো প্রশ্ন গজীয়ে উঠে—বিশেষ করে সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসির কথা। কেনোনা অনলাইনে সবচাইতে বেশি এই দুইটি জিনিষই ধ্বংস হতে পারে। সাথে প্রতারিত হওয়ার কাহিনী তো থাকেই। তাহলে কি করবেন? অনলাইন শপিং বন্ধ করে দেবেন? ধুর, এটা হতে পারে নাকি? এই আর্টিকেলে আপনাকে এমন কিছু নিরাপত্তা টিপস শেয়ার করতে চলেছি, যেগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনি নিরাপদে অনলাইন শপিং করতে পারবেন। আর যারা গুহার মধ্যে ঢুকে থাকার কারণে, এখনো অনলাইন শপিং বা ই-কমার্স সম্পর্কে জানেন না, তারা এই আর্টিকেলটি পড়ে নিন!
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
#বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট
অনলাইনে কেবল বিশ্বস্ত ই-কমার্স সাইট থেকেই কেনাকাটা করা উচিৎ। আপনি ফেসবুকে না যেকোনো স্থানে কোন অবিশ্বাস্য অফার দেখলেন আর দৌড়ে কিনতে চলে গেলেন সেই সাইটে এরকমটা করা চলবে না। অবশ্যই কোন নতুন সাইট থেকে প্রোডাক্ট অর্ডার করার পূর্বে সাইটটি যাচায় করে নিন। মানুষের রেটিং দেখে নিন, কেউ কেনাকাটা করেছে কিনা বা তাদের কেমন এক্সপেরিয়েন্স হয়েছে সেই সাইট থেকে সেটা চেক করে নিন। আপনি হয়তো ভাবছেন, “এতো ঝামেলা কি আর করা যায় ভাই?” —বিশ্বাস করুণ এই সামান্য সতর্কতার পদক্ষেপ আপনাকে পরবর্তী বিশাল হয়রানী থেকে বাঁচিয়ে দেবে।
শুধু ই-কমার্স সাইট নয়, সেখান থেকে যে প্রোডাক্টটি কিনতে চাচ্ছেন, তার সেলারের রেটিং এবং ফিডব্যাক গুলোও আপনার চেক করতে হবে। অনেক সময় অনেক ভালো সাইটেও ফালতু সেলার থাকে, তাদের প্রোডাক্ট কেনার পরে আপনি ঝামেলায় পরে যেতে পারেন, তাই সেটাও যাচায় করে নেওয়া উচিৎ। আপনি সেলারের পাবলিক কমেন্ট গুলো পড়েন, সম্ভব হলে যারা প্রোডাক্ট কিনেছে তাদের সাথে যোগাযোগ করুণ। অথবা স্টার রেটিং দেখে সেলার সম্পর্কে একটি আইডিয়া তৈরি করুণ। যদি ১টি স্টার বা ২স্টার থাকে, তো ঐ সেলারের কাছ থেকে দূরে থাকায় ভালো হবে।
নিজের উপস্থিত বুদ্ধির প্রয়োগ করুণ। অনলাইনে সুরক্ষিত থাকার হাজার পোস্ট পড়েও আপনি সুরক্ষিত থাকতে পারবেন না, যদি নিজের বুদ্ধিকে ব্যবহার না করে থাকেন। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ভাবে চিট করার চেষ্টা করা হচ্ছে অনলাইনে, সব টপিক কোন আর্টিকেল রাইটারই কভার করতে পারবে না, তাই অবশ্যই চোখ কান খোলা রেখে শপিং করুণ। যাচায় করুণ, অন্ধের মতো অর্ডার করবেন না। চেক আউট করার সময় যদি দেখেন, সাইটটি আপনার কাছে অঝথা বেশি পার্সোনাল ডিটেইলস চাচ্ছে, তো সাইটটি বাদ দিয়ে দিন। আমি বলছি না, যে নতুন সাইট গুলো থেকে কিছু কিনবেনই না! অবশ্যই কিনবেন, কিন্তু যাচায় করার পরে। আপনি সচেতন হলে, সাইট গুলোও সচেতন হতে বাধ্য হবে।
#পেমেন্ট সিস্টেম
পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে আমি রেকোমেন্ড করবো, খুব কম সময় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে। তখনোই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করুণ যখন আপনার কাছে আর কোন অপশন নেই। সাথে সাইটটির পেমেন্ট পেজে যদি এসএসএল না থাকে, ভুল করেওকন ক্রেডিট কার্ড বা পার্সোনাল তথ্য সেখানে প্রবেশ করাবেন না। সাইটের অ্যাড্রেসের পূর্বে “https://” লেখা রয়েছে কিনা সেটা চেক করে নেবেন। যদি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতেই হয়, তো ফিজিক্যাল কার্ড ব্যবহার না করে ভার্চুয়াল কার্ড ব্যবহার করুণ। অনেক ক্রেডিট কার্ড প্রভাইডার ওয়ান-টাইম ভার্চুয়াল কার্ড প্রদান করে থাকে, সেগুলোকে ব্যবহার করা সবচাইতে বেশি নিরাপদ হবে।
সাথে অবশ্যই কোন কুপন কোড ওয়েবসাইট থেকে বা সর্ট লিঙ্ক থেকে কোন সাইট ভিজিট করবেন না। কোন প্রোডাক্ট কিনতে অবশ্যই সেই সেলারের অফিশিয়াল সাইট ভিজিট করবেন।
#ডিভাইজ নিরাপত্তা
আজকাল যেহেতু আপনার মোবাইল থেকেই বেশিরভাগ সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করি, তাই মোবাইল ডিভাইজটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও নিরাপদ থাকার আরেকটি উপায়। কম্পিউটার থেকে শপিং করার সময় অবশ্যই কম্পিউটারটিতে জেনো একটি ভালো এন্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ইন্সটল করা থাকে, নানান ভাবে হ্যাকার আপনার ক্রেডিট কার্ড নাম্বার চুরি করার চেষ্টা করবে, তাই খুবই সতর্ক থাকুন এই ব্যাপারে। ব্রাউজারে টাইপ করে ম্যানুয়ালি শপিং সাইট গুলোতে ভিজিট করুণ। কোন সর্ট লিঙ্ক কখনোই ক্লিক করবেন না, যদি ক্লিক করতে হয় তো প্রথমে লিঙ্কটি যাচায় করে নিন।
মোবাইল ডিভাইজের ক্ষেত্রে অবশ্যই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে শপিং করা থেকে বিরত থাকুন। নিজের নেটওয়ার্কেও ভিপিএন ব্যবহার করা একটি ভালো আইডিয়া। যে শপিং অ্যাপ ব্যবহার করে শপিং করছেন সেটা অবশ্যই গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করুণ, অথবা সেই অ্যাপের অফিশিয়াল সাইট থেকে ডাউনলোড করুণ। আপনাকে কেউ বলতে পারে, ভাই এই অ্যাপ থেকে শপিং করলে ২০% ছাড় পাবেন, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে দেখবেন সম্পূর্ণ কার্ডই ফাঁকা হয়ে গেছে। তাই ফেক অ্যাপ থেকে সাবধানে থাকুন।
কোন পাবলিক কম্পিউটার থেকে যখন শপিং করবেন, যেমন আপনার কলেজ ল্যাবের কম্পিউটার বা সাইবার ক্যাফের কম্পিউটার—সেখানে শপিং করার পরে অবশ্যই ব্রাউজারের ক্যাশ, কুকিজ, হিস্ট্রি সবকিছু পরিষ্কার করে দিন। যাতে সেই কম্পিউটারে অন্যকেউ বসে কিছুই উদ্ধার না করতে পারে।
#রিটার্ন পলিসি এবং আফটার সেল সার্ভিস
কোন সাইট থেকে কোন প্রোডাক্ট পারচেজ করার আগে অবশ্যই সাইটটির রিটার্ন পলিসি, ফী, শিপিং চার্জ, শিপিং পলিসি, এক্সচেঞ্জ —ইত্যাদি বিষয় গুলো দেখে নিন এবং কনফার্ম করুণ। প্রয়োজন পড়লে শর্ত গ্রহন করার সময় সেই পেইজটি প্রিন্ট করে রাখুন। হয়তো আপনি একটি ফোন অর্ডার করেছেন, কিন্তু সেটা আপনার কাছে ঠিক অবস্থায় আসলো না, সেখানে অবশ্যই ফেরত নেওয়ার পলিসি থাকতে হবে। সাথে যেকোনো প্রোডাক্টের বক্স খোলের সময় সেটা অবশ্যই রেকর্ড করে রাখুন, যাতে কোন সমস্যা হয়ে গেলে আপনার কাছে ভিডিও প্রমাণ থাকে।
সাথে আপনাকে আরেকটি কাজও করতে হবে সাইট এবং সেলারের প্রাইভেসি পলিসি চেক করতে হবে। আমরা অনেকেই এই ব্যাপারটি নিয়ে ভেবে থাকি না, কিন্তু অনেক সেলার রয়েছে, যারা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গুলোকে বিক্রি করে দেয়। আপনার ফোনে হয়তো আজব আজব কোম্পানি থেকে ম্যাসেজ আসে, তারা আপনার নাম্বার পেলো কোথায়? বা ইমেইল অ্যাড্রেস পেলো কোথায়? এই সেলার’রা আপনার তথ্য গুলোকে কোম্পানির কাছে উঁচু দামে বিক্রি করে দেয়। অবশ্যই চেক করে দেখুন, তারা আপনার তথ্য়ের কতোটুকু সন্মান করছে। অবশ্যই পলিসি গুলো পড়ে ফেলুন। যদি তারা প্রাইভেট রাখার কথা লিখে থাকে, তবে সেখানে শপিং করুণ।
তো বন্ধু, এই ছিল কিছু নিরাপত্তার টিপস, যেগুলো অনলাইন শপিং করার সময় আপনার মাথায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ব্যাপার। এই আর্টিকেলে আমি বেস্ট উপায় গুলো শেয়ার করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু অবশ্যই প্রত্যেকটি বিষয় তুলে ধরা সম্ভব নয়। আমি কোন বিষয় গুলো তুলে ধরতে এই আর্টিকেলে মিস করেছি, সেগুলো আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন।
Images: Shutterstock.com