আমার কাছে ডেইলি প্রায় ১০০টার মতো প্রশ্ন আসে “ভাই অমুক কাজের জন্য পিসি বিল্ড করতে চাই কতো জিবি র্যাম লাগাবো?”। আমি জানি, আপনারা যারা নতুন পিসি তৈরি করার কথা ভাবেন কিংবা নতুন ল্যাপটপ কেনার কথা ভাবেন, সবচেয়ে প্রথমে মাথায় প্রশ্ন আসে—র্যাম কতোটুকু লাগবে? অনেকের পিসি স্লো হয়ে গেলে র্যাম আপগ্রেড করার কথা ভেবে থাকেন, কেনোনা আমরা প্রায় সবাই জানি যে, যতোবেশি র্যাম হবে ততোই বেশি ফাস্ট হবে কম্পিউটার! সত্যিই? আজকের পোস্টে র্যাম নিয়ে সবচাইতে আলোচিত বিষয় গুলোর উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করবো, যেমন- আপনার নির্দিষ্ট কাজের জন্য আপনার পিসিতে কতোটা র্যাম থাকা জরুরী, র্যাম আপগ্রেড করবেন নাকি বেশি র্যাম যুক্ত করবেন, বেশি র্যাম পিসি ফাস্ট করতে কতটা ভূমিকা পালন করে? -ইত্যাদি। তো চলুন আরেকটি অসাধারণ আর্টিকেল পড়া শুরু করা যাক…
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
র্যাম
র্যাম কি, কীভাবে কাজ করে ইত্যাদি বিষয়ের উপর আগে থেকেই কিছু আর্টিকেল লিখেছি (চাইলে চেক করে নিতে পারেন)। তারপরেও আজকের পোস্টকে হট করে তোলার জন্য র্যামের কাজ সম্পর্কে হালকা আলোচনা করে নিচ্ছি। দেখুন র্যাম হলো আপনার কম্পিউটার বা আপনার কম্পিউটিং ডিভাইজের এমন একটি মেমোরি যা অনেক ফাস্ট হয়ে থাকে এবং এর কাজ হলো সকল কাজের ফাইল গুলোকে প্রসেসর পর্যন্ত খুবই দ্রুত সার্ভ করা। এখন নিশ্চয় প্রশ্ন করবেন, “তাইলে হার্ডড্রাইভ কি মুখ দেখতে আছে?” —ব্যস্তবিকভাবে হার্ডড্রাইভ কখনোই র্যামের গতির সাথে পাল্লা দিতে পারে না। আপনি যখন কম্পিউটারে কোন টাস্ক করতে আরম্ভ করেন, আপনার প্রসেসর সর্বদা একের পর এক ডাটা রিকোয়েস্ট করতেই থাকে, আর এই ডাটা গুলো যতো দ্রুত প্রসেসরে পাঠানো সম্ভব ততোই ভালো। বর্তমানের আধুনিক র্যাম ১২,৮০০ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড সমর্থন করতে পারে, যেখানে আজকের সর্বাধুনিক হার্ডড্রাইভ থেকে কেবল ১৫০ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড স্পীড পাওয়া যায়। তো গতির পার্থক্যটা বুঝতে পারলেন? সুতরাং র্যাম বাদে যদি হার্ডড্রাইভ কাজে লাগিয়ে প্রসেসরে ডাটা পাঠানো হয় তবে কচ্ছপ গতিতে প্রসেসরে ফাইল ট্র্যান্সফার হবে এবং সর্বোপরি আপনার সম্পূর্ণ সিস্টেম কচ্ছপ হয়ে যাবে (মনে রাখবেন, শুধু গল্পেই কচ্ছপ জেতে, আসল জীবনে নয়!)। যাইহোক, র্যাম বা কম্পিউটার মেমোরি নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ে ফেলতে পারেন।
তো এতক্ষণে নিশ্চয় টের পেয়ে গেছেন যে কেন আপনার সিস্টেমে র্যাম থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যারা বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে পেনড্রাইভকে র্যাম হিসেবে ব্যবহার করতে চান কিংবা ফোনের মেমোরি কার্ডকে র্যাম হিসেবে ব্যবহার করতে চান তারা সব সময়ই একটি কথা মনে রাখবেন, “আপনার পেনড্রাইভ বা যেকোনো ফ্ল্যাশ ড্রাইভ কখনোয় অ্যাকচুয়াল র্যামের স্পীড দিতে পারবে না”। তো “How To Increase My RAM Using Pen Drive” বা “How To Increase Phone RAM Using SD Card” লিখে গুগল আর ইউটিউব সার্চ করা বন্ধ করুন।
আপনি যখন সর্বপ্রথম আপনার কম্পিউটার অন করেন—আপনার পিসি তার অপারেটিং সিস্টেম লোড করতে কিছু র্যাম দখল করে নেয়। অপারেটিং সিস্টেমের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে বাকি র্যাম টুকু জমা থাকে আপনার পিসিতে ইন্সটল থাকা অন্যান্য সফটওয়্যার গুলোর জন্য।
কতটুকু র্যাম প্রয়োজনীয়?
দেখুন এটি এমন একটি প্রশ্ন যার কমন উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। এটি সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করে আপনার ব্যাবহারের উপর। তবে আমাকে কেউ বেসিক পিসি বিল্ড করার প্রশ্ন করলে আমি সর্বনিম্ন ৮ জিবি র্যামের আবশ্যকতা ব্যক্ত করি। কারণ আমি জানি, আপনি যতোই বেসিক কাজের জন্য পিসি কিনে থাকুন না কেন—হালকা পাতলা ফটোশপ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, দুই একটা ভিডিও এডিট করার প্রয়োজন পড়বেই। আর নতুন ব্রাউজার, সাথে ক্রোম বা ফায়ারফক্স নিজেরায় র্যাম খাওয়ার ওস্তাদ। সাধারন ইন্টারনেট ব্রাউজিং এ সাথে ৫-৬ ট্যাব ওপেন থাকতেই ব্রাউজার গুলো ৫০০ এম্বি+ (কখনো ১ জিবি পর্যন্ত) র্যাম গিলে ফেলে। আর ফটোশপ বা ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার গুলো তো একেক জনেই ২ জিবি করে র্যাম খেতে পছন্দ করে। সুতরাং আপনি যতোই বেসিক পিসি বিল্ড করুন না কেন অবশ্যই আপনার সর্বনিম্ন ৮ জিবি র্যাম লাগবেই। ওহ… বলতে তো ভুলেই গেছিলাম… আপনার অপারেটিং সিস্টেম নিজেই মোটামুটি ২ জিবির মতো র্যাম বুক করে রাখে।
এখন আসি ব্যবহার অনুসারে সাজেশনে। দেখুন বেসিক পিসির কথা তো উপরেই উল্লেখ্য করলাম। তবে এখানে আরেকটি বিষয়—অনেকে আমার কাছে কোন নির্দিষ্ট ল্যাপটপের মডেল জানিয়ে জিজ্ঞেস করে, “ভাই এটা কেনা যায় কিনা?”। আমি তদন্ত করে দেখি, ঠিক আছে, বাজেট অনুসারে সবকিছুই ঠিক ঠাক, ব্যাট র্যাম ৪ জিবি! হ্যাঁ, এখনকার মিড বাজেটের প্রায় সকল ল্যাপটপ গুলোতে ৪ জিবিই র্যাম দেখতে পাওয়া যায় (জানিনা প্রস্তুতকারী কোম্পানিরা কি ভেবে তৈরি করে!)। এই অবস্থায় বলতে গেলে, “হ্যাঁ ভাই আজ থেকে ২-৩ বছর আগে ৪ জিবি ঠিকঠাক ছিল” কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সকল সফটওয়্যার গুলো আপডেট হচ্ছে এবং আগের চেয়ে সবসময়ই বেশি খুদার্ত পেটে হাজির হচ্ছে। আচ্ছা ভাবুন, আপনি ৪ জিবি র্যাম ওয়ালা একটি ল্যাপটপ কিনলেন। আজকের দিনে অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে অবশ্যই উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করবেন আর না হলে নিশ্চয় উইন্ডোজ ৭। এখন ধরুন আপনার পিসি অন হওয়ার সাথেই ১.৫ জিবি র্যাম অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে নিল আর বাকি থাকলো ২.৫ জিবি র্যাম। এতোটুকু র্যামে ইন্টারনেট ব্রাউজারে কয়েকটি ট্যাব ওপেন রাখলে আর সাথে কিছু মিডিয়া প্লে করার জন্য উপযোগী হতে পারে। কিন্তু ধরুন ফটোশপ ওপেন করতে হলো কোন কাজে, তখন? হ্যাঁ, তখনও চলবে কিন্তু চলতে চলতে উইন্ডোজ থেকে ম্যাসেজ আসবে “আপনার সিস্টেমের মেমোরি লো, দয়াকরে ফটোশপ ক্লোজ করে দিন” (ব্যস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বললাম)। তো এখন কি করবেন? ১) আগে আরেকবার চেক করে দেখুন আপনার বাজেটের মধ্যে ৮ জিবি র্যামের ল্যাপটপ হচ্ছে কিনা। ২) যদি না হয়, তবে যে মডেলটি কিনতে চাচ্ছেন সেটাতে ৮ জিবি র্যাম লাগানো যাবে কিনা দেখে নিন (বেশিরভাগ সময়ই লাগানো যায়)। আশা করি উত্তরটি পেয়ে গেছেন।
এখন আসি প্রফেশনাল পিসি বিল্ড করার কথায়। আপনি যদি হেভি টাস্ক করার জন্য পিসি বিল্ড করতে চান তবে অবশ্যই ১৬ জিবি থেকে ৩২,৬৪ জিবি যতোবেশি র্যাম লাগাতে পারেন ততোই ভালো। কেনোনা ফটোশপ, ভিডিও এডিটিং প্রোগ্রাম, আফটার ইফেক্টস, ভার্চুয়াল মেশিন ইত্যাদি আপনার র্যাম খেয়েই বেঁচে থাকে। যতোবেশি র্যাম হবে ততোই স্মুথ কাজ করা যাবে। আবার শুধু যে ক্যাপাসিটির কথা ভেবে যেকোনো র্যাম লাগিয়ে নেবেন সেটা কিন্তু নয়। কারণ মার্কেটে বিভিন্ন টাইপের র্যাম রয়েছে, ডিডিআর২, ডিডিআর৩, ডিডিআর৪ ইত্যাদি। এনিয়ে আলাদা একটি আর্টিকেলে আমি বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। তবে এতোটুকু জেনে রাখুন ডিডিআর এর পরের সংখ্যা যতো বেশি হবে র্যাম কোয়ালিটি ততোই বেশি ভালো হবে এবং বেশি স্পীড সমর্থন করবে। সুতরাং এই দিকেও খেয়াল রাখা জরুরী।
র্যাম আপগ্রেড
র্যাম আপগ্রেড করা আর বেশি র্যাম যুক্ত করা কিন্তু এক ব্যাপার নয়। ধরুন আপনার বর্তমান সিস্টেমে ৮ জিবি ১,৩৩৩ মেগাহার্জের ডিডিআর২ র্যাম রয়েছে। এখন যদি আপনার মাদারবোর্ড সমর্থন করে তবে একই স্লটে আপনি ১,৬০০ মেগাহার্জ স্পীডের র্যাম লাগাতে পারেন কিংবা ডিডিআর৩ র্যাম লাগাতে পারেন। এটা হবে র্যাম আপগ্রেড করা-এতে আপনি সেম ক্যাপাসিটির র্যামেই বেশি স্পীড পেটে সক্ষম হবেন। বেশি র্যাম যুক্ত করা আরেকটি ব্যাপার। হতে পারে আপনি আরো ২-৩টা র্যাম স্টিক যুক্ত করলেন। র্যাম লাগানোর ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় আমি সর্বদায় উল্লেখ্য করি যে, ধরুন আপনি ৮ জিবি র্যাম লাগাবেন, এক্ষেত্রে একটি স্লটে ৮ জিবির একটি স্টিক না লাগিয়ে দুইটি স্লটে ৪x২ জিবি করে দুইটি স্টিক লাগানো বেস্ট হবে। একে ডুয়াল চ্যানেল বলে হয়ে থাকে।
যতোবেশি র্যাম = ততো ফাস্ট পিসি?
দেখুন এই প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হচ্ছে, ‘জি না’। পিসি ফাস্ট বা স্লো হওয়া শুধু র্যামের উপর নির্ভর করে না। আপনি কোন প্রসেসর ব্যবহার করছেন, কোন জিপিইউ ব্যবহার করছেন, প্রসেসরে এবং র্যামে ক্যাশ মেমোরি কতটুকু রয়েছে ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর খেয়াল করার পরে একটি পিসির স্লো বা ফাস্ট হওয়া নির্ভর করে। অনেক সময় আপনার পিসির হার্ডড্রাইভ পরিবর্তন করে এসএসডি লাগানোর ফলে আপনার পিসির পারফর্মেন্স এবং স্পীড দুইই বৃদ্ধি পেয়ে যেতে পারে—অবশ্যই সেম র্যাম ব্যবহার করেই। আগেই বলেছি হার্ডড্রাইভ কেবল ১৫০ মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড স্পীড দিতে পারে যেখানে আজকের মর্ডান এসএসডি ৫০০ থেকে কয়েক হাজার মেগাবাইট প্রতি সেকেন্ড পর্যন্ত স্পীড দিতে পারে।
আপনার বেসিক পিসি ব্যাবহারে কখনোই ৮ জিবির বেশি ব্যামের প্রয়োজন পড়বে না। তবে আপনি একই সাইজের র্যামে জাস্ট টাইপ আপগ্রেড করে কিংবা বেশি মেগাহার্জের র্যাম লাগিয়ে বেশি স্পীড পেতে পারেন। তাই বেশি র্যাম থাকলেই যে পিসি বেশি ফাস্ট হবে এটা ভুল ধারণা। তাছাড়া ঠিক কোন আপগ্রেড গুলোর মাধ্যমে আপনি স্লো পিসি ফাস্ট করতে পারবেন —সেই পোস্টটি পড়ে নিতে পারেন।
শেষ কথা
তো এই ছিল আপনাদের সকল প্রশ্নের জবাব। আশা করছি এই আর্টিকেল থেকে আপনারা অনেক উপকৃত হতে পারবেন। র্যাম সম্পর্কিত যতো আলোচনা প্রয়োজনীয় ছিল আমি এই আর্টিকেলে তা ব্যক্ত করবার চেষ্টা করেছি এবং এখন র্যাম আপগ্রেড করার সময় কিংবা বেশি র্যাম লাগানোর সময় আপনার ধারণা থাকবে যে আপনাকে ঠিক কি করা উচিৎ। যদি কিছু ছেঁড়ে থাকি বা আপনার যদি আরো কোন প্রশ্ন থাকে তবে অবশ্যই আমাকে নিচে কমেন্ট করে জানান। সাথে পোস্টটি লাইক করুন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।
Images: Shutterstock.com