আনলিমিটেড ইন্টারনেট : সত্যিই কি আনলিমিটেড ইন্টারনেট সম্ভব?

আজকের দিনে ইন্টারনেট ঠিক কতটা বেশি জরুরি সে বিষয়ে এক লাইনও আর বেশি লিখব না। কেননা আপনারা অলরেডি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন আর খুব ভাল করেই জানেন এর প্রয়োজনীয়তা কতটা বেশি! এখন প্রশ্ন হচ্ছে আনলিমিটেড ইন্টারনেট অ্যাক্সেস নিয়ে। আমাদের দেশে মূলত দুইভাবে মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। বিশাল বড় এক জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণ মোবাইল নেটওয়ার্ক এর উপরে নির্ভরশীল। আর শহরে বসবাস করা মানুষরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন।

বিশেষ করে ব্রডব্যান্ড ইউজাররা দাবি করেন তাদের ইন্টারনেট সম্পূর্ণ আনলিমিটেড। অপরদিকে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করা ব্যক্তিরা প্রশ্ন করেন তাদের অপারেটরগুলো কেন আনলিমিটেড প্ল্যান প্রদান করছে না। কিন্তু সত্যিই কি আনলিমিটেড ইন্টারনেট বলে জিনিস রয়েছে? আর মোবাইল অপারেটররা কেনইবা আনলিমিটেড ইন্টারনেট প্ল্যান বের করে না? চলুন আজকের এই আর্টিকেলে সবকিছু নিয়ে আলোচনা করা যাক…


আনলিমিটেড ইন্টারনেট

এই আর্টিকেলের টাইটেলে করা প্রশ্নটির উত্তরটি হচ্ছে, “না”! টেকনিক্যালি, আপনি ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করার পরেও আপনার ইন্টারনেট আনলিমিটেড হয়না। এখন এই কথা শোনার পরে অনেকেই বলবেন, “এ কেমন কথা আমার তো কোন ডাটা লিমিট নেই, তাহলে আপনি একে আনলিমিটেড কেন বলবেন না?” ওয়েল, আমি অংকে খুব একটা পাকা নই, কিন্তু এই অংকটা এতটা সহজে যে, সহজে আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হতে পারব।

দেখুন ইন্টারনেট মূলত তিন দিক থেকে লিমিট করা যেতে পারে। প্রথমত: আপনার ডাটা স্পিড এর উপরে লিমিট বসিয়ে, দ্বিতীয়ত: আপনার ব্যান্ডউইথ ইউজেসের ওপরে লিমিট বসিয়ে এবং তৃতীয়ত: সময়ের উপরে লিমিট বসিয়ে। ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডার রা কি করে থাকে, তারা আপনার ইন্টারনেট স্পীডের উপরে লিমিটেশন বসিয়ে দেয়। আপনার ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্ল্যানটি হয়তো 10mbps বা 20 mbps বা 30 mbps পর্যন্ত লিমিটেড হয়।

এখন আপনি এই লিমিটেড স্পিড নিয়ে সারা মাস ধরে টেনে দিনে ২৪ ঘন্টা সপ্তাহে ৭ দিন ডাউনলোড লাগিয়ে রাখলেও এক নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্তই ইন্টারনেট ডাটা কনজিউম করতে পারবেন। এখন সেই পরিমাণ হতে পারে কয়েক শত গিগাবাইট বা কয়েক টেরাবাইট, আর এটা লিমিটেড-ই, আনলিমিটেড কিন্তু হলো না, রাইট?

এখন এটা আপনার কাছে এই জন্য আনলিমিটেড মনে হতে পারে, কেননা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথ ইউজেসেজের কোন ক্যাপ থাকেনা। টেকনিক্যালি আপনি এক নির্দিষ্ট পরিমাণ ডাটা ডাউনলোড বা আপলোড করতে পারেন সারা মাস জুড়ে কিন্তু সেটা আপনার ইউজেসের তুলনায় লিমিট অনেক বেশি থাকে। তাই আপনার কাছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট আনলিমিটেড মনে হয় কিন্তু এখন আপনি জানলেন এটা আনলিমিটেড নয়।

মোবাইল ইন্টারনেট কেন আনলিমিটেড হয়না?

ওয়েল, যখন কথা বলছি আনলিমিটেড ইন্টারনেট নিয়ে তো এখানে মোবাইল ইন্টারনেট সম্পর্কে কথা না বললেই নয়। কেননা সারাদেশে ব্রডব্যান্ড ইউজার খুবই কমসংখ্যক যেখানে বেশিরভাগ মানুষই মোবাইল ইন্টারনেটের উপরে নির্ভরশীল।

অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে বা বিভিন্ন জায়গায় প্রশ্ন উঠান যে, মোবাইল অপারেটরগুলো কেন আনলিমিটেড ইন্টারনেট প্রোভাইড করছে না। আমাকে অনেকে ডাইরেক্ট মেসেজ করে বা ইমেইল করে এটা জিজ্ঞেস করেন যে কেন মোবাইল অপারেটররা আনলিমিটেড ইন্টারনেট দেয়না?

দেখুন, মোবাইল অপারেটর এবং ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডার এই দুইজনের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে টেকনোলজিতে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সাধারণত তারের মাধ্যমে আপনার ঘর পর্যন্ত পৌঁছানো হয়।

আর মোবাইল ইন্টারনেট তার ছাড়াই আপনার ঘরে বা বাইরে পৌঁছানো হয়। ওয়্যারলেস টেকনোলজি তারের ব্যাবহারের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল। এখানে অনেকগুলো কারণ হয়েছে যার জন্য মোবাইল অপারেটররা আনলিমিটেড ইন্টারনেট দেয় না বা দিতে পারেনা। নিচে আমি বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করার চেষ্টা করলাম যাতে আপনার সম্পূর্ণ বিষয়টি বুঝতে অনেক সুবিধা হয়।

মোবাইল ইন্টারনেট ব্যয়বহুল

মোবাইল ইন্টারনেটের তুলনায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অনেক সস্তা হয়ে থাকে। কেননা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের অবকাঠামো নির্মাণ করা সস্তা, মোবাইল ইন্টারনেটের তুলনায়। কোনভাবে জাস্ট আপনার বাড়ি পর্যন্ত একটা ব্রডব্যান্ডের তার ঢুকিয়ে দিয়ে গেলেই কাহিনী শেষ। আপনি যদি পরবর্তীতে আপনার স্পিড বাড়াতে চান তো সেটা ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডার রা তাদের এন্ড থেকেই করে দিতে পারবে, এর জন্য তার পরিবর্তন বা কোনো অবকাঠামো পরিবর্তন করার দরকার পরবে না।

অপরদিকে মোবাইল অপারেটররা যদি তাদের নেটওয়ার্ক আপগ্রেড করার চিন্তা করে, সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ টাওয়ারই আপগ্রেড করার দরকার পড়ে। ধরুন, আপনার মোবাইল অপারেটর আপনার এলাকায় থ্রিজি সেবা প্রদান করছে, এখন তারা যদি ফোরজি সেবা প্রদান করতে চায়, সেক্ষেত্রে তাদের টাওয়ার আপগ্রেড করার প্রয়োজন পড়বে, ফোরজির জন্য নতুন রেডিও এন্টেনা ট্রান্সমিটার ইত্যাদি সরঞ্জাম ইন্সটল করার প্রয়োজন পড়বে। এভাবে যতবার টেকনোলজি পরিবর্তন হবে সম্পূর্ণ অবকাঠামোই বারবার পরিবর্তন করার দরকার পড়ে এই মোবাইল ইন্টারনেট ক্ষেত্রে।

আর এই টাওয়ার আপগ্রেশন অনেক ব্যয়বহুল জিনিস। মোবাইল অপারেটরদের এর পেছনে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করার প্রয়োজন পড়ে। আর এই টাকাগুলো গ্রাহক থেকেই তারা উত্তোলন করে। তাছাড়া কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় ঠিকঠাকমতো সিগন্যাল পৌঁছাতে অপারেটরদের একাধিক টাওয়ার ইনস্টল করার প্রয়োজন পড়ে। শুধু টাওয়ার ইনস্টল করেই তো কাজ শেষ নয়, নিয়মিত টাওয়ার গুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়, আর এগুলোর জন্য প্রত্যেক মাসে অনেক খরচা হয় অপারেটরদের। বাড়ির সমস্ত টাকাগুলো গ্রাহক থেকেই উঠাতে হয়, এইজন্য মোবাইল সার্ভিস গুলো ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।

মোবাইল ইন্টারনেট টেকনোলজিতে সীমাবদ্ধতা

মোবাইল দিয়ে যখন ইন্টারনেট ব্যবহার করেন বা মোবাইল অপারেটর (সিম কোম্পানিরা) যে টেকনোলোজি ব্যবহার করে আপনার পর্যন্ত ইন্টারনেট পৌছিয়ে দেয় সেখানে দুইটি টার্ম থাকে। প্রথম টার্মটি হচ্ছে ওয়্যারলেস টেকনোলোজি, এবং দ্বিতীয় টার্মটি হচ্ছে ব্যান্ডউইথ কানেকশন। যদি আমরা ওয়াইফাই হটস্পট নিয়ে আলোচনা করি, তাহলে ফোনে হটস্পট ইউজ করে পিসিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে কি প্রয়োজন হয়? অবশ্যই ফোনে ওয়াইফাই থাকতে হয় এবং ফোনের ডাটা কানেকশন অন রাখতে হয়, রাইট? কিন্তু যদি ফোনের ডাটা কানেকশন অন না রেখে ওয়াইফাই হটস্পট চালান সেক্ষেত্রে কি হবে? সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি ইন্টারনেট কানেকশন পাবেন না, যদিও আপনার পিসিতে ওয়াইফাই কানেকশন থাকবে।

এর অর্থ কি দাঁড়ালো? শুধু ওয়াইফাই নয়, আপনার অ্যাক্টিভ ইন্টারনেট কানেকশনও লাগবে, তবেই আপনি ওয়াইফাই এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রডকাস্ট করতে পাড়বেন। মোবাইল অপারেটর’রাও একই প্রিন্সিপ্যাল ইউজ করে থাকে। ২জি, ৩জি, ৪জি — এগুলো জাস্ট ওয়াইফাই এর মতোই ওয়্যারলেস টেকনোলোজি, কিন্তু এগুলো ব্যবহার করে ইন্টারনেট আক্সেস প্রদান করার জন্য অবশ্যই সেল টাওয়ারে ব্রডব্যান্ড কানেকশন যুক্ত করে রাখতে হয়। সেই ব্রডব্যান্ড কানেকশন থেকেই ইন্টারনেট ২জি, ৩জি, ৪জি ওয়্যারলেস টেকনোলোজির মাধ্যমে হটস্পট তৈরি করে আপনার ফোনে সেন্ড করা হয়। এখন মোবাইল টাওয়ারে অবশ্যই টি১, টি৩ টাইপের লাইন কানেক্টেড থাকে যেগুলোর অনেক হাই ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি রয়েছে।

তাহলে এখন আপনার মোবাইল ইন্টারনেট স্পীড নির্ভর করে দুইটি ফ্যাক্টেরের উপর, প্রথমত, আপনার টাওয়ারের সাথে যে ব্রডব্যান্ড কানেক্টেড রয়েছে তার কতোটুকু ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রয়েছে এবং আপনি যে ওয়্যারলেস টেকনোলোজি (২জি, ৩জি, ৪জি) ব্যবহার করে ইন্টারনেট কানেক্টেড করেছেন সেই টেকনোলজির নিজের কতোটুকু ব্যান্ডউইথ সাপ্লাই করার ক্ষমতা রয়েছে।

উদাহরণ নেওয়ার জন্য মনে করুণ, আপনার বাসাতে তিনটি ওয়্যারলেস রাউটার রয়েছে এবং ২০০ মেগাবিট/সেকেন্ডের একটি ব্রডব্যান্ড কানেকশন রয়েছে। তিনটি রাউটার যথাক্রমে ৩টি ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ড 802.11a, 802.11n, এবং 802.11ac (এগুলোকে যথাক্রমে ২জি, ৩জি, ৪জি সাথে তুলনার করার জন্য বুঝানো হয়েছে) ব্যবহার করে কাজ করে। এখানে 802.11a স্ট্যান্ডার্ড এর সর্বচ্চ ব্যান্ডউইথ স্পীড ৫৪ মেগাবিট/সেকেন্ড, 802.11n এর সর্বচ্চ ব্যান্ডউইথ স্পীড ৩০০ মেগাবিট/সেকেন্ড এবং 802.11ac এর সর্বচ্চ ব্যান্ডউইথ স্পীড ১৩০০ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্ত হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রয়েছে।

তাহলে আপনি যদি রাউটার ১ (802.11a) এর সাথে ওয়াইফাই কানেক্টেড করেন সেক্ষেত্রে আপনি কেবল ৫৪ মেগাবিট/সেকেন্ড পর্যন্তই স্পীড পাবেন, ব্রডব্যান্ড লাইন স্পীড ২০০ মেগাবিট হয়ে কোন লাভ নেই, কেননা আপনার ওয়্যারলেস টেকনোলজির সেই ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা নেই। আবার রাউটার ২ (802.11n), এবং রাউটার ৩ (802.11ac) এর সাথে কানেক্টেড হলে আপনি অনায়াসে ব্রডব্যান্ড লাইনের সম্পূর্ণ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করতে পাড়বেন, কেননা এই দুই টেকনোলোজিতে আপনার লাইনের সমস্থ ব্যান্ডউইথ হ্যান্ডেল করার ক্ষমতা রয়েছে।

ঠিক ২জির কথা চিন্তা করলে এই টেকনোলজির নিজেরই ক্ষমতা নেই আপনাকে বেশি স্পীড দেওয়ার, তাই আপনার অপারেটরের ইন্টারনেট স্পীড ফাস্ট থাকলেও আপনি ২জি ব্যবহার করে ভালো স্পীড পাবেন না, অপরদিকে ৩জি টেকনোলোজিও তেমন একটা উন্নত নয়, ধরুন টাওয়ারে ১০০ মেগাবিট/সেকেন্ডের লাইন লাগানো রয়েছে, কিন্তু ৩জির নিজেরই ক্ষমতা নেই সেই স্পীড গ্রহণ করার, সাথে ইউজার যতো বাড়বে ৩জি টেকনোলজির ব্যান্ডউইথ কমে যাবে, যতোই টাওয়ারে লাগানো নেটের স্পীড বেশি থাক না কেন, ৩জি নিজেই আর ইউজার হ্যান্ডেল করতে পারবে না।

আপনি যখন ২জি নেটওয়ার্ক থেকে ৩জি নেটওয়ার্কে সুইচ করেন বা ৩জি থেকে ৪জিতে সুইচ করেন, এর মানে আপনি ছোট রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি থেকে বড় রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে সুইচ করলেন। আপনার ডাউনলোড এবং আপলোড আরো বেশি পরিমানে এবং দ্রুত সংঘটিত হওয়ার জন্য বড় রাস্তা খুলে যাবে। তাহলে শুধু অপারেটরদের কাছে হাই স্পীড ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই হবে না, সেগুলোকে ইউজারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ওয়্যারলেস টেকনোলোজিও সেরকম হতে হবে।

মোবাইল নেটওয়ার্কে যতো ইউজার বেড়ে যায়, ইন্টারনেট হান্ডেল করা ততোই মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়, তাদের কাছে ব্যান্ডউইথ রয়েছে কিন্তু সেগুলো ইউজারের কাছে পৌঁছে দেয়ার সিস্টেমেই ত্রুটি থাকে। ধরুন ৩জি টেকনোলোজিতে একটি টাওয়ার থেকে ৫০ জন ইউজার ভালো স্পীডে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু সেখানে যদি ইউজার ৫০০ জন হয়ে যায় সেক্ষেত্রে টাওয়ারের কানেকশনে হাই স্পীড ব্যান্ডউইথ থাকা শর্তেও আপনি ভালো স্পীড পাবেন না, কেননা ৩জির নিজেরই ৫০০ ইউজার হান্ডেল করার ব্যান্ডউইথ ক্যাপাসিটি নাই।

মোবাইল অপারেটরদের কাছে বাকী ব্রডব্যান্ড আইএসপি দের মতোই ব্যান্ডউইথের বা ইন্টারনেটের কোন কমতি নেই, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওয়্যারলেস টেকনোলোজিতে, যদি আনলিমিটেড প্ল্যান তারা বের করে, সেক্ষেত্রে ইউজাররা ডাউনলোড/আপলোড অনেক বাড়িয়ে দেবে, এতে ৩জি বা ৪জি টেকনোলজির ব্যান্ডউইথ সমস্যা সৃষ্টি হবে এবং নেটওয়ার্কে নতুন ইউজাররা বা গড়ে সকলেই আর ভালো স্পীড পেতে পারবে না।

আপনাকে যখন ফেয়ার ইউজ পলিসি লাগিয়ে দিয়ে ইন্টারনেট স্লো করিয়ে দেওয়া হয় এর মূল কারণ আপনাকে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না দেওয়া (আপনি কোন প্যাকেজ সাবস্ক্রাইব করেছেন সেই অনুসারে) এবং আরেকটি কারণ হচ্ছে সেই সময়ে আরো ইউজারদের জন্য ভালো স্পীড সরবরাহ করানো। এখন অপারেটর’রা যদি রিয়ালভাবে বেশি ইউজার হান্ডেল করতে চায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের নেটওয়ার্ক ডিভাইজ গুলো আপগ্রেড করতে হবে, আর সেটা বিশাল ব্যয়বহুল, তাই ব্যান্ডউইথ স্পীড কমিয়ে তারা এই বিষয় গুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

মোবাইলে আনলিমিটেড ইন্টারনেট কি কখনো সম্ভব হতে পারে?

ওয়েল, পূর্বেই বলেছি, আনলিমিটেড ইন্টারনেট বলে কোনো জিনিস নেই, সর্বদাই একটা বা একটা লিমিটেশন চলেই আসে। তবে হ্যা, ব্রডব্যান্ড এর মত মোবাইল ইন্টারনেটে ব্যান্ডউইথ লিমিট দূর করে কথার কথা আনলিমিটেড ইন্টারনেট চালু করা যেতে পারে। এতে মোবাইল অপারেটরদের প্রথমত অনেক বেশি ইনভেস্ট করতে হবে তাদের নেটওয়ার্কে।

আর বর্তমান ৩জি বা ৪জি টেকনোলজিতে এরকম আনলিমিটেড ইন্টারনেট প্রোভাইড করা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। তবে ফাইভ-জি টেকনোলজি আসার পরে মোবাইলেও ব্রডব্যান্ডের মত আন-মিটার্ড ইন্টারনেট দেখা যেতে পারে।

যেখানে ৪জি ৬ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সির নিচে কাজ করে সেখানে ৫জি ৩০-৩০০ গিগাহার্জ রেঞ্জের মধ্যে কাজ করতে পারবে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি যতো বাড়ানো হয় ব্যান্ডউইথ স্পীডও ততো বাড়ানো সম্ভব। এই বিশাল রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ সমর্থন করার জন্য ৫জি একে তো হিউজ ডাটা হ্যান্ডেল করতে পারবে এবং দ্বিতীয়ত ৪জি প্রত্যেক মিটারে যতো ডিভাইজ সমর্থন করতে পারবে ৫জি ১,০০০ আরো বেশি ডিভাইজ সমর্থন করতে পারবে।

মানে ৫জি তে একে তো হাই স্পীড নেট পাবেন, সাথে অনেক ইউজার হান্ডেল করার খমতার ফলে মোবাইল অপারেটর’রা তখন আনলিমিটেড প্ল্যান সেল করতে সক্ষম হতে পারে। তবে আগেই জানিয়ে রাখছি, এই ইন্টারনেট মোটেও সস্তা হবে না!

তো আশা করছি, এতক্ষণে বুঝাতে পেরেছি আনলিমিটেড ইন্টারনেট বলে কোন ব্যাপার নেই। ব্রডব্যান্ডে যে কথার কথা আনলিমিটেড টার্মটি ব্যবহার করা হয়, সেটাও এক লিমিটেড ইন্টারনেটই! আর আপনি এটাও জানলেন যে কেন মোবাইল অপারেটররা আনলিমিটেড ইন্টারনেট প্ল্যান প্রদান করেনা।

আসলে ঠিকঠাকমতো মোবাইল ইন্টারনেট প্রোভাইড করার জন্য অপারেটরদের অনেক প্রকারের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সামান্য আকাশ খারাপ হওয়া বা বৃষ্টি হওয়াতে আপনার ইন্টারনেট স্পিড স্লো হয়ে যেতে পারে। যেখানে এগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশের ফলে ব্রডব্যান্ড স্পিড এ কোন পার্থক্যই আসেনা। তো একেক ইন্টারনেট কানেকশনের একেক সুবিধা রয়েছে, তবে আশা করছি আজকে টপিকটি সম্পূর্ণভাবে কভার করতে পেরেছি। তারপরও এই বিষয়ে যদি আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকে নিচে কমেন্ট সেকশন সবসময়ের জন্য খোলা রয়েছে। আমি প্রত্যেকে কমেন্ট চেক করি এবং গুরুত্বপূর্ণ কমেন্টগুলো সর্বদায় রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করি।

Images: Shutterstock.com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories