মনে আছে বছর ৪-৫ এক আগের মোবাইল ফোন গুলোর কথা — যখন ফোনে রিমুভেবল ব্যাটারি ব্যবহার করা হতো — আর ফোন থেকে ব্যাটারি খুলে নিলে প্রায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফোন সঠিক টাইম ভুলে যেতো! আপনাকে নতুন করে টাইম সেট করে নিতে হতো। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার ডেক্সটপ কম্পিউটার কিভাবে সঠিক সময় মনে করে রাখে? এমনকি পাওয়ার অফ করার পরেও কিংবা ওয়াল সকেট থেকে প্লাগ খুলে নিলেও কম্পিউটার সঠিকভাবে সময় মনে রাখে। কিন্তু কিভাবে?
আমি জানি, অনেকেরই এই ব্যাপারে কোন যায় আসে না! কম্পিউটার টাইম কিভাবে মনে রাখে এতে কারোই মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু আপনি যদি জানার ইচ্ছা পোষণ করেন, তবে এই আর্টিকেল আপনার জন্য!
আপনার কম্পিউটার কিভাবে জানে যে এখন কয়টা বাজে?
আবার কিছুক্ষণের জন্য ফিরে যাওয়া যাক সেই রিমুভেবল ব্যাটারি ওয়ালা ফোনের যুগে। আপনি লক্ষ্য করলে দেখেছেন হয়তো, ব্যাটারি খুললে টাইম নষ্ট হয়ে যেতো, কিন্তু ফোনে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পাওয়ার সাথে সাথেই বা ফোনের ডাটা কানেকশন অন করা মাত্রই সেই টাইম ঠিক হয়ে যেতো! বিশেষ করে রবি বা এয়ারটেল গ্রাহক হয়ে থাকলে, ফোনের টাইম স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঠিক হয়ে যায়।
সহজ ভাষায় বলতে মোবাইল অপারেটরদের সিগন্যালের সাথে ঘড়ির তথ্য সেন্ড করা থাকে। আপনার ফোন টাওয়ার থেকে সিগন্যাল ক্যাচ করতেই ফোনের অপারেটরের ঘড়ির সাথে সিঙ্ক হয়ে যায়। ফোন যখন ইন্টারনেটের সাথে কানেক্টেড হয় তখন ফোনের অপারেটিং সিস্টেমে থাকা বিল্ডইন সার্ভারের সাথে কানেক্ট হয়ে টাইম স্বয়ংক্রিয় সিঙ্ক হয়ে যায়।
মডার্ন কম্পিউটারের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা কিন্তু একেবারেই সেইম! আপনার কম্পিউটার ইন্টারনেটের মাধ্যমে টাইম সার্ভারের সাথে কানেক্ট হয় এবং পিসির টাইম সিঙ্ক করে। আর এভাবেই নিজের টাইমকে সর্বদা আপডেটেড রাখে। এখন অনেকেই বলবেন, আমার কম্পিউটার কিভাবে বোঝে আমি বাংলাদেশে রয়েছি, সেই অনুসারেই কিভাবে অটো টাইম ঠিক হয়ে যায়?
ধরুন আপনি উইন্ডোজ কম্পিউটার ব্যবহার করেন। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে কিন্তু আগে থেকেই আপনি আপনার দেশ এবং টাইম জোন সেট করে রেখেছেন, সেখান থেকে কম্পিউটার সহজেই আপনার এলাকা বুঝে ফেলে। তাছাড়া আপনি ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনার আইপি এড্রেস থেকে অপারেটিং সিস্টেম আপনার লোকেশন এবং টাইম জোন স্বয়ংক্রিয় ডিটেক্ট করে ফেলে।
আমেরিক্যান ইউজারদের কম্পিউটারের ঘড়ি time.gov এর ওয়েবসাইট থেকে আপডেট হয়। ইউএসএর বাইরের দেশ গুলোর ঘড়ি আলাদা সার্ভার থেকে আপডেট হয়ে থাকে। এই সময় সংরক্ষক ওয়েবসাইট সংস্থা গুলো সিজিয়াম অ্যাটোমিক ক্লক ব্যবহার করে সঠিক সময়ের ট্র্যাক রাখে। আর এই সিস্টেম মোস্ট অ্যাকুরেট হয়ে থাকে, কেননা এতে আপনার দেওয়ালে টাঙ্গানো ঘড়ির মতো কোন মুভিং পার্টস থাকে না যে ঘড়ি ধীরে ধীর স্লো হয়ে যাবে। বা ডিজিটাল ডাটাও নয় যে সেটা কোন ভাবে করাপ্টেড হয়ে যাবে।
আপনার কম্পিউটার কিভাবে সঠিক সময় মনে রাখে?
তো কি বুঝলেন? আপনার পিসিতে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে, ব্যাস চিন্তার কোনও কারণই নেই, অটো টাইম ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন আলাদা দৃশ্যকল্পের কথা, ধরুন আপনার পিসিতে ইন্টারনেট সংযোগ নেই এর মানে কম্পিউটার আর ইন্টারনেট থেকে নিজের টাইম নিজেই ঠিক করতে সক্ষম হবে না। তো ইন্টারনেট ছাড়া পিসিতে বসে আর কি করবেন? পিসি বন্ধ করে আপনি শুয়ে পরলেন।
যে সময় এই আর্টিকেলটি লিখছি, এখন আবার ঝড় বাদলের দিন। মনে করেন রাতে ঝড় শুরু হলো আর সারারাত কারেন্ট আসলো না। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখলেন এখনো ইন্টারনেট নেই, কিন্তু কম্পিউটার এখনো নিজের টাইম ঠিক মতোই মনে রেখেছে, কিন্তু কিভাবে?
এর কারণ হচ্ছে, ইন্টারনেট ছাড়াও আপনার কম্পিউটারের নিজে থেকেই টাইম মনে রাখার এক বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, এমন কি পাওয়ার না থাকলেও! আপনার কম্পিউটারের মাদারবোর্ড এই টাইম মনে রাখে, টাইম মনে রাখার জন্য কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেমেরও দরকার পরে না। কম্পিউটারের UEFI/BIOS এ প্রবেশ করলে দেখে থাকবেন সেখানে সময় চলমান থাকে, আপনি কিন্তু এখনো অপারেটিং সিস্টেমে বুটই করেননি তাতেই আপনার কম্পিউটার সময় প্রদর্শন করছে!
আপনার কম্পিউটার বন্ধ করার পরেও এর মধ্যে কেটি ঘড়ি সর্বদা চালু থাকে। কম্পিউটার মাদারবোর্ডে একটি Complementary Metal Oxide Semiconductor বা (CMOS) ব্যাটারি লাগানো থাকে। যেটা পাওয়ার না থাকেও মাদারবোর্ডের টাইম ধরে রাখতে সাহায্য করে। সিমস ব্যাটারি গুলো ৫-১০ বছর লাস্টিং করার জন্য তৈরি হয়ে থাকে, কিন্তু এর পূর্বেই নষ্ট হতে পারে। এই ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেলে পিসির টাইম আর ঠিক থাকে না। সাথে UEFI/BIOS সেটিংস ও রিসেট হয়ে যেতে পারে বারবার।
আপনার পিসি বুত হওয়ার পরে যদি নিজে থেকে টাইম ভুলে যায়, তবে বুঝবেন মাদারবোর্ড এর সিমস ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া অনেক কম্পিউটার নিজে থেকে জানিয়ে দেয় সিমস এরর এর কথা।
তো এই ছিল টোটাল রহস্য, হ্যাঁ এতে কোন রকেট সায়েন্স নেই, কিন্তু হ্যালো, আপনি ওয়্যারবিডির পাঠক রাইট? আর আপনাকে সবকিছু জানতে হবে! তাই ছোট্ট এই ব্যাপারটা যারা জানতেন না তারা আজ জেনে নিলেন। একবার সিমস ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমাকে পিসি ঘাড়ে করে সার্ভিসিং সেন্টারে যেতে হয়েছিলো। তারপরে জানতে পারি সামান্য এক ব্যাটারির সমস্যা। সিমস ব্যাটারি নিয়ে আপনারও কি কোন অভিজ্ঞতা রয়েছে? আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না!
Images: Shutterstock.com