কিভাবে বুঝবেন আপনার স্মার্টফোনটি আসল না নকল?

আপনি যেনে বুঝে ফেক ফোন কিনলে সেটা আলাদা কথা, যেমন ফেসবুকে এমন অনেক বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া যায় তারা আইফোন ১১ মাত্র ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে! আপনি সেই ফোন কেনার আগে থেকেই নিশ্চয় জানেন এগুলো নকল ফোন। আজকের আর্টিকেল তাদের জন্য যারা হয়তো কয়েক টাকা বাঁচানোর জন্য আনঅফিসিয়াল স্টোর থেকে ফোন কেনেন বা লভনীয় কোন অনলাইন সাইট থেকে ফোন কেনেন, যারা ফোনটি আসল হিসেবে দাবী করে আর কেনার পরে আপনি কোনভাবে বুঝতে পারেন সেটা ফেক ফোন!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে দুইটা, কিভাবেই বা বুঝা যাবে আমার স্মার্টফোনটি আসল নাকি নকল? আর কিভাবে নকল ফোন কেনা থেকে বিরত থাকতে পারেন? তো আর বেশি সূচনা লম্বা না করে মূল কাহিনীতে ঝাঁপিয়ে পরা যাক!


নকল ফোন

মার্কেটে চাইনিজ নকল ফোনে পরিপূর্ণ, কেউ বা নকলবা ক্লোন ফোন গুলো নকল ফোন বলেই বিক্রি করে আবার কেউ আসল ফোন বলে লোভ লাগিয়ে নকল ফোন হাতে গছিয়ে দেয়! জনপ্রিয় ব্র্যান্ড গুলো যেমন- স্যামসাং, আইফোন, শাওমি, রেডমি, হুয়াওয়ে, ইত্যাদি সব গুলোই নকল বা ক্লোন ফোন দেখতে পাওয়া যায়! প্রথম, নকল ফোন কেনা থেকে বাঁচতে সর্বউত্তম পন্থা হচ্ছে অফিশিয়াল অফলাইন/অনলাইন স্টোর থেকে ফোনটি কেনা। কিন্তু অনেকেই কিছু টাকা কমে ফোন কেনার জন্য বাইরে যান, আর অনেকেই ধরাও খেয়ে যান!

সৌভাগ্যবশত ওয়্যারবিডি থেকে আপনি এমন কিছু ট্রিক্স পেয়ে যাচ্ছেন, সেগুলো জানা থাকলে নকল ফোন কিনে ঠকা থেকে বিরত থাকতে পারবেন! তো স্টেপ গুলো ভালোভাবে অনুসরণ করুন;

ভালো করে পরীক্ষা করুন

যেকোনো লোকাল স্টোর বা ছোট স্টোর থেকে ফোন কেনার আগে বেস্ট স্টেপটি হচ্ছে ফোনটির অফিশিয়াল ব্র্যান্ড স্টোর ভিজিট করুন তারপরে ফোনটি হাতে নিয়ে লাইভ এক্সপেরিয়েন্স করুন। ফোনটি হাতে নিয়ে দেখুন সেটা কেমন ফিলিং প্রদান করছে, স্ক্রীনের দিকে ভালো করে দেখুন আর কোয়ালিটি মনে রাখুন, ক্যামেরা পজিশন দেখে রাখুন, যতোটা সম্ভব হয় ফোনের ফিজিক্যাল ডিটেইলস গুলোর দিকে ধ্যান দিন, বিল্ড কোয়ালিটি চেক করুন!

আসল ফোনটির লোগোটি ছুঁয়ে দেখুন, সেটা বেশি প্রিমিয়াম ফিল হবে। নকল ফোন গুলোর লোগো সস্তা প্রিন্ট হয়ে থাকে আর ছুঁয়ে দেখতে গেলেই অনুভব করা যায়। এখন বুঝলাম হয়তো আপনি অফিশিয়াল স্টোর থেকে ফোনটির ওভারভিউ দেখে এবং ফিল করেই এবার কিনতে এসেছেন, কিন্তু এক নজরে আর কতকিছুই মনে রাখা সম্ভব তাই না? এবার ফোনটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট চেক করুন এবং ফিজিক্যাল বিল্ড নিয়ে যা যা তথ্য লেখা আছে অনুসরণ করুন।

ওয়েবসাইটে দেখুন ফোনটি কোন কোন ম্যাটেরিয়াল দ্বারা তৈরি, দেখুন সেটা গ্লাস বা মেটাল ফ্রেমের তৈরি কিনা। ফেক ফোন গুলোর বিল্ড কোয়ালিটি তেমন উন্নত হয় না, আসল ফোনে যেখানে গ্লাস বিল্ড থাকে নকল ফোন গুলোতে প্ল্যাস্টিক বিল্ড থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া ওয়েবসাইটে চেক করে দেখুন ফোনটির ডিসপ্লে প্যানেলটি কি দেওয়া আছে। ফোনে যদি অ্যামোলেড প্যানেল থাকে সেটা নকল ফোনে সহজেই ধরতে পারবেন। ক্লোন ফোনে সস্তা টিএন প্যানেল বা এলসিডি প্যানেল দেখতে পাওয়া যায়! আর সেক্ষেত্রে ফোনটি নকল হওয়ার সুযোগ বেড়ে যায়!

ওয়েবসাইটে চেক করুন দেখুন ডিভাইজটি কি কি কালারে পাওয়া যাচ্ছে। যদি শপে এসে দেখেন পিঙ্ক কালারের ফোন, কিন্তু কোম্পানি সেই কালার আদৌও তৈরি করেনি, তাহলে সেটা মাস্ট নকল ফোনই হবে! তো মেয়েরা, সাবধানে ফোন কিনবেন কেমন?

আরো ভালো করে বাহ্যিক ডিজাইন যাচাই করুন

ক্লোন ফোন বা নকল ফোন গুলো বিশেষ করে বাহ্যিক ডিজাইনের জন্যই ধরা খেয়ে যায়। আসল মডেলের মতো ক্লোন মডেলে এতো সলিড এবং ক্লিকি বাটন দেখতে পাওয়া যায় না। বাটন গুলো সাধারণত ভুল জায়গায় লাগানো থাকে, স্ক্রীনের বেজেল বেশি মনে হয়, অথবা ক্যামেরা হাউজিং দেখেই মনের মধ্যে সন্দেহ জেগে যায়! কিন্তু অনেক ডিভাইজ রয়েছে যেগুলোকে মাস্টার কপি বা মাস্টার ক্লোন বলা হয়, এই ফোন গুলোর বাহ্যিক ডিজাইন দেখে নকল বলে ঘোষণা করা অনেকটা অসম্ভব, শুধু সেগুলো তখনই বুঝা যায় যখন ব্যবহার করতে শুরু করবেন।

আনঅফিশিয়াল শপ থেকে ফোন কেনার সময় অবশ্যই ফোনটি অন করে দেখে নেবেন পূর্বে, ভালো করে যাচাই করে দেখুন স্ক্রীন কোয়ালিটি, স্ক্রীন কোয়ালিটি থেকে অনেক কিছু বুঝা যায়। তারপরে ফোনটির ইউআই ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিন। ফোনটির অফিশিয়াল আইকন কিরকম সেটা চেক করে দেখুন, প্রয়োজনে ইউটিউব থেকে দেখে নিন ফোনটি আসল ইউআই। ফোনের মধ্যে প্রি-ইন্সটল থাকা অ্যাপ গুলোর দিকে লক্ষ্য দিন, যদি দেখেন একে বারেই উদ্ভট অ্যাপ ইন্সটল করা রয়েছে সেক্ষেত্রে ফোনটি নকল হতে পারে।

ফোনটি ব্যবহার করে পারফর্মেন্স চেক করুন। ক্লোন ফোন গুলোতে পুরাতন আর দুর্বল প্রসেসর লাগানো থাকে সাথে ব্যাড অপটিমাইজেশনের ফলে ফোন প্রচুর ল্যাগ করে, স্লো এবং গরম হয়ে যায়। এমন কিছু এক্সপেরিয়েন্স করলে ফোনটি কেনা থেকে বিরত থাকুন!

IMEI চেক করুন

আপনার ফোন টি আসল নাকি নকল সেটা বোঝার জন্য আপনার ফোনের IMEI নাম্বার চেক করতে পারেন। যদিও এতে ১০০% নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয় যে আপনার ফোনটি আসল হবেই, অ্যান্ড্রয়েড ফোন গুলোতে IMEI নাম্বারও ক্লোন করা যায়, তো হতেই পারে নকল ফোনটির IMEI নাম্বারটিও নকল। কিন্তু তারপরেও চেক না করার কোন কারণ নেই!

বেশিরভাগ ফোনের বাক্সের স্টিকারে আইএমইআই নাম্বার লেখা থাকে বা ফোনটি অন করে *#06# কোডটি চাপলে সেই ফোনের IMEI নাম্বার বেরিয়ে আসবে। এবার এই নাম্বারটি imei.info ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রবেশ করান, তারপরে ঐ IMEI নাম্বারটির সাহায্যে ফোন মডেল নামটি শো করবে, যদি ফোনের মডেল আপনার ফোনটির সাথে ম্যাচ না করে, তবে ফোনটি ক্লোন বা নকল ফোন হতে পারে। তবে আবারো বলছি, এটা ১০০% নিশ্চিত পদ্ধতি নয়!

অ্যাপ স্টোর ওপেন করুন

বাজারে নকল আইফোনের কোন কমতি নেই, চাইনিজ নকল আইফোনে অফলাইন আর অনলাইন দুই বাজারই পরিপূর্ণ। দেখতে হুবহু আইফোনের খোলসে লুকিয়ে থাকতে পারে অ্যান্ড্রয়েড কিটকাট ডিভাইজ। আর কিছু চাইনিজ ফ্রড কোম্পানি তো এতোই বেশি ওস্তাদ যে আইওএস এর ইউআই টাও মারাত্মকভাবে কপি করে ফেলে!

যদি আইফোন কিনতে যান, সেক্ষেত্রে প্রথমেই অ্যাপ স্টোর ওপেন করে দেখুন, যদি জেনুইন ফোন হয় অবশ্যই অ্যাপেল অ্যাপ স্টোরে নিয়ে যাবে আর না হলে গুগল প্লে স্টোর ওপেন হবে। মানে বুঝতেই পারছেন সেটা কি ডিভাইজ! আপনার কি মনে হয়, অ্যাপেল তাদের আইফোনে গুগল প্লে স্টোর ইন্সটল করে রাখবে?

তাছাড়া আপনার আইফোন ডিভাইজটি পিসিতে আইটিউনের সাথে কানেক্ট করানোর চেষ্টা করুন, যদি আইটিউনের সাথে কানেক্ট হয় তাহলে সেটা আসল অ্যাপেল ডিভাইজ, যদি ডিভাইজটি কানেক্ট না হয়, তাহলে আমাকে আর নিশ্চয় বলে দিতে হবে না, রাইট?

স্যামসাং ফোন কিনছেন?

মার্কেটে স্যামসাং ফ্ল্যাগশিপ থেকে শুরু করে মিড বাজেটের ফোন গুলোরও নকল ফোন দেখতে পাওয়া যায়। তবে স্যামসাং কিছু স্পেশাল সার্ভিস কোড রয়েছে যেগুলো অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম থেকে মিসিং রয়েছে আর শুধু স্যামসাং ইঞ্জিনিয়াররাই তাদের ফোনে সেগুলো যুক্ত করে রেখেছে। যদি এই সার্ভিস কোড ফোনে কাজ না করে তাহলে ফোনটি অবশ্যই একটি ক্লোন ফোন!

ফোন আইকনে ক্লিক করে *#7353# ডায়াল করুন, এতে একটি মেন্যু বের হয়ে আসবে যেখানে আপনি চেক করতে পারবেন ফোনটির কোন কোন ফাংশন কাজ করছে নাকি করছে না। অরিজিনাল ফোন হলে এই কোডটি কাজ করতেই হবে! ফেক ফোন নির্মাতারা এই কোড গুলো তাদের নকল ফোনে কাজ করাতে পারবে না।

ক্যামেরা চেক করুন

নকল ফোনের আরেকটি বড় দুর্বল পয়েন্ট হচ্ছে ক্যামেরা সেকশন। ক্লোন ফোন গুলোর ক্যমেরা একেবারেই গারবেজ কোয়ালিটির হয়ে থাকে, যদি ফটো কোয়ালিটি একেবারেই বাজে হয় তাহলে আর বলার অপেক্ষা রাখবে না সেটা নকল ফোন।

আসল ওয়েবসাইট চেক করুন, সেখানে দেখুন ফোনটির ক্যামেরা কতো মেগাপিক্সেল বা কতো গুলো ক্যামেরা সেন্সর রয়েছে সেই ফোনে। তারপরে একটু অনলাইন ঘেঁটে দেখুন ফোনটির আসল ক্যামেরার ফটো স্যাম্পল গুলো কেমন, তারপরে আপনার ফোনের সাথে সেগুলোকে তুলনা করুন। যদি দেখেন যে অনলাইন ফটো গুলোর থেকে আপনার ফোনের ক্যাপচার করা ফটো ডিটেইলস অর্ধেকের চেয়েও খারাপ, তাহলে নিশ্চয় আর বাকিটা বুঝতে দেরি হওয়ার কথা না।


ধরুন আপনি উপরের সব কয়েকটি স্টেপই অনুসরণ করেছেন, তারপরেও এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে আপনার ফোনটি ১০০% অরিজিনাল। কেননা সাইবার ক্রিমিন্যাল রা এখন অনেক বেশি স্মার্ট। এমনকি ফোনে সিপিইউ জি টাইপের অ্যাপ গুলো থেকেও আসল তথ্য খুঁজে বের করতে পরবেন না। তারা সহজেই নকল ফোন প্রসেসর মডেল বা সঠিক র‍্যাম পরিমাণ বসিয়ে রাখতে পারে ফোনে যেটা আসলে ভুয়া।

এই ক্ষেত্রে AnTuTu Officer নামক একটি অ্যাপ আপনাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। প্রথমে আপনার এক্সিস্টিং ফোনের ডাটা অন করে (অবশ্যই ডাটা প্যাক অ্যাক্টিভ থাকতে হবে) ওয়াইফাই হটস্পট চালু করুন, এবার যে ফোনটি কিনতে চাচ্ছেন সেটাকে হটস্পটের সাথে কানেক্ট করুন। নতুন ফোনে প্লে স্টোর থেকে AnTuTu Officer ডাউনলোড করে নিন এবং ইন্সটল করুন, তারপরে আপনার পুরাতন ফোনের ব্রাউজারে গিয়ে y.antutu.com লিঙ্কটি ওপেন করুন, সেখানে একটি কিউআর কোড দেখতে পাবেন যেটা নতুন ফোনের AnTuTu Officer অ্যাপটি ওপেন করে স্ক্যান করুন।

কিউআর কোডটি স্ক্যান করা হয়ে গেছে আপনার পুরাতন ফোনে জানিয়ে দেওয়া হবে আপনার ফোনটি আসল নাকি নকল। যদি সবুজ সিগন্যাল দেখানো হয় তাহলে বুঝবেন আপনার ফোনটি আসল যদি লাল সিগন্যাল দেখানো হয় সেক্ষেত্রে আপনার ফোনটি ফেক!


তো এই ছিল কিছু পদ্ধতি তার মাধ্যমে আপনার ফোনটি আসল না নকল সেটা বুঝতে পারবেন। আশা করা যায় আর্টিকেলটি আপনার জন্য বেশ কাজের ছিল। আর হ্যাঁ, আপনার কাছে যদি আরো কিছু টিপস থাকে আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না!

Image: Shutterstock.Com

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories