নোড কি? নেটওয়ার্কিং এ কম্পিউটার নোডের গুরুত্ব কি? [বিস্তারিত!]

নোড বলতে কোন ফিজিক্যাল ডিভাইজকে বুঝানো হয়, কোন ফিজিক্যাল ডিভাইজ নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে অন্য ডিভাইজের সাথে তথ্য আদান প্রদান করার ক্ষমতা রাখে বা কোন ভাবে ডাটা ফরওয়ার্ড করতে পারে তাকে নোড বলা হয়। আর ভালো করেই জানেন, কম্পিউটারই হচ্ছে একটি সাধারণ নোড তবে অনেক সময় একে কম্পিউটার নোড (Computer Node) বা ইন্টারনেট নোড (Internet Node) বলা হয়।

শুধু যে কম্পিউটার একটি নোড তা কিন্তু নয়, নেটওয়ার্কিং সম্পূর্ণ করতে যে রাউটার, হাব, সুইচ, সার্ভার, প্রিন্টার — ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় তারা প্রত্যেকেই নোড। নেটওয়ার্কে কোন ডিভাইজ ওয়্যারলেস ভাবে বা তারের সাথে যেভাবেই যুক্ত থাকুক না কেন প্রত্যেককেই নোড বলা হবে। ধরুন আপনার বাড়িতে নেটওয়ার্কের সাথে আপনার পিসি, এবং স্মার্ট টিভি ইথারনেট ক্যাবলে যুক্ত রয়েছে এবং স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট ওয়াইফাই এর সাথে যুক্ত রয়েছে — এর মানে এতে মোট ৪টি নোড রয়েছে।

কোন নোডকে নেটওয়ার্কে খুঁজে পাওয়ার জন্য অবশ্যই আইপি অ্যাড্রেস বা ম্যাক অ্যাড্রেস থাকতে হবে। যদি কোন ডিভাইজের আইপি না থাকে বা ডিভাইজটি অফলাইন হয়ে যায়, অবশ্যই সেটাকে আর নোড বলা যাবে না।


নেটওয়ার্ক নোড এর কাজ

একটি নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ করতে অনেক টাইপের ডিভাইজ প্রয়োজনীয় হয়। তাই নেটওয়ার্ক নোডের ও অনেক টাইপ রয়েছে। নেটওয়ার্ক নোড গুলো অবশ্যই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত থেকে ডাটা আদান প্রদান করতে থাকে তবে শুধু যে ঐ লোকাল নেটওয়ার্কের মধ্যেই ডাটা আদান প্রদান করবে এরকমটা নয়। রিমোট সার্ভারের ফাইল ফেচ করতে পারে, ডাটা নিজে থেকে ক্রিয়েট করে সেই ডাটা সেন্ড করতে পারে।

যেমন একটি কম্পিউটার নোড ব্যাকআপ ফাইল সেন্ড করতে পারে বা ইমেইল সেন্ড করতে পারে। অপরদিকে এটি ভিডিও স্ট্রিম ও করতে পারে বা যেকোনো ফাইল ডাউনলোড ও করতে পারে। একটি প্রিন্টার নেটওয়ার্কে কানেক্টেড থাকা যেকোনো কম্পিউটার নোড থেকে রিকোয়েস্ট নিয়ে প্রিন্ট করতে পারে, কিন্তু স্ক্যানার শুধু ছবি কম্পিউটার নোডে পাঠানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনা। আরেকদিকে রাউটার কোন ডিভাইজ থেকে কোন রিকোয়েস্ট আসছে সেগুলো চিহ্নিত করতে পারে এবং লোকাল নেটওয়ার্ক থেকে রিকোয়েস্ট পাবলিক নেটওয়ার্কে সেন্ড করে দিতে পারে আবার রিসিভ ও করতে পারে।

ফাইবার অপটিক টিভি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে রিসিভারের সাথে কানেক্টেড থাকা ডিভাইজ গুলোকে নোড বলা যাবে। সেলফোন নেটওয়ার্ক ইউজ করে অনেক টাইপের ডিভাইজ কানেক্টেড করানো থাকতে পারে এগুলো ও এক আলাদা টাইপের নোড। তাছাড়া সুপার নোড বলে ও একটি টার্ম রয়েছে। সুপার নোড বিশেষ করে পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্ক হয়ে থাকে, এরা নিজেরাও নোড হয়ে থাকে এবং আলাদা নেটওয়ার্কের প্রক্সি সার্ভার হিসেবেও কাজ করে। এজন্য সুপার নোড সাধারণ নোডের তুলনায় অনেক বেশি সিপিইউ পাওয়ার এবং বেশি ব্যান্ডউইথ কনজিউম করে।

এন্ড-নোড প্রবলেম

এন্ড নোড প্রবলেম বলে একটি টার্ম রয়েছে, যেটা আমি এই আর্টিকেলে যুক্ত করা উপযুক্ত মনে করলাম। জটিল কাহিনীতে না পেছিয়ে সহজ করে ব্যাপারটি তুলে ধরার চেষ্টা করি। এন্ড-নোড প্রবলেম বিশেষ করে নেটওয়ার্কে সিকিউরিটি রিলেটেড সমস্যার সাথে সম্পর্ক যুক্ত। ধরুন, আপনার অফিসের ল্যাপটপ যেটা শুধু অফিসের প্রাইভেট নেটওয়ার্কের সাথেই কানেক্টেড করানো হয়, আপনি হয়তো কাজ করার জন্য সে ল্যাপটপটি বাসায় নিয়ে আসলেন। হতে পারে মাঝ পথে আপনি কোন কফি শপে গেলেন এবং সেখানের পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে ল্যাপটপে মেইল চেক করলেন।

এখন অবশ্যই আপনার অফিস ল্যাপটপে সেন্সিটিভ ডাটা থাকতে পারে, যেটা পাবলিক নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্ট করা মোটেও উপযুক্ত ব্যাপার হবে না। যে কেউই আপনার প্রাইভেট ডাটা গুলোকে আক্সেস করে নিতে পারে। আবার আপনি যদি সিকিউর অফিস নেটওয়ার্কে আপনার পার্সোনাল ডিভাইজ কানেক্টেড করেন সেক্ষেত্রে আপনার ডিভাইজটি যদি কোনভাবে ইনফেক্টেড হয় তাহলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কে থাকা নোড গুলো সিকিউরিটি রিস্কে পরে যেতে পারে।

যাইহোক, ভিপিএন ইউজ করে বা টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ইউজ করে অথবা স্পেশাল বুটেবল সফটওয়্যার ব্যবহার করার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে বাঁচা যেতে পারে। অথবা অফিসের কর্মচারীদের ট্রেইন করতে হবে যাতে তারা সিকিউরিটি সম্পর্কে জ্ঞান রাখে।

নোডের আলাদা অর্থ ও রয়েছে

কম্পিউটার ফাইলের ট্রি ডাটা স্ট্র্যাকাচার বর্ণনা করতেও “নোড” টার্মটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আসল গাছে কি হয়ে থাকে, গাছের ডালপালা গাছের পাতা ধারন করে ঠিক তেমনই ডাটা স্ট্র্যাকচারে ফোল্ডার, ফাইল ধারন করে। আর ফোল্ডারে থাকা ফাইল গুলোকে লিফ নোড বলা হয়।

যারা প্রোগ্রামিং এবং ডেভেলপমেন্ট এর সাথে যুক্ত রয়েছেন, তারা অবশ্যই Node.Js এর সম্পর্কে জানেন। সার্ভার সাইড জাভা স্ক্রিপ্ট কোড এক্সিকিউট করার জন্য এই বিশেষ টুলসটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এখানে .JS বলতে কিন্তু জাভা স্ক্রিপ্ট এক্সটেনশন বুঝানো হয় না, জাস্ট এটা একটা নাম মাত্র।

/Image Credit: Shutterstock

About the author

তাহমিদ বোরহান

আমি তাহমিদ বোরহান, বেশিরভাগ মানুষের কাছে একজন প্রযুক্তি ব্লগার হিসেবে পরিচিত। ইন্টারনেটে বাংলায় টেক কন্টেন্ট এর বিশেষ অভাব রয়েছে, তাছাড়া উইকিপিডিয়ার কন্টেন্ট বেশিরভাগ মানুষের মাথার উপর দিয়েই যায়। ২০১৪ সালে প্রযুক্তি সহজ ভাষায় প্রকাশিত করার লক্ষ্য রেখেই ওয়্যারবিডি (পূর্বের নাম টেকহাবস) ব্লগের জন্ম হয়! আর এই পর্যন্ত কয়েক হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশিত করে বাঙ্গালীদের টেক লাইফ আরো সহজ করার ঠেকা নিয়ে রেখেছি!

সারাদিন প্রচুর পরিমাণে গান শুনি আর ইউটিউবে র‍্যান্ডম ভিডিও দেখি। ওয়ার্ডপ্রেস, ক্লাউড কম্পিউটিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং ইউআই/ইউএক্স ডিজাইনের উপরে বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। নিজের গল্প, মানুষের গল্প, আর এলোমেলো টপিক নিয়ে ব্যাক্তিগত ব্লগে লিখি। খাওয়া আর ঘুম আমার আরেক প্যাশন!

Add comment

Categories