বট কি? — বিভিন্ন বটের মধ্যের পার্থক্য!

২০০৯ সালের দিকে এক বড় ভাইকে প্রশ্ন করেছিলাম, “আচ্ছা ভাই, ইয়াহু অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে গেলে আমি মানুষ কিনা সেটা প্রমান কেন করতে হয় (মানে ক্যাপচা কেন আসে)?” — তিনি আমাকে উত্তর দিয়েছিলেন, “জ্বীনেরাও (ইসলাম ধর্মের মূল গ্রন্থ কোরআনে বর্ণিত একটি জীব) ইন্টারনেট ইউজ করে তাই ওয়েবসাইট গুলো মানুষ কিনা সেটা পরীক্ষা করে!” যাই হোক, জ্বীনেরা ইন্টারনেট ইউজ করে কিনা সে ব্যাপারে আমরা সঠিক জানি না, কিন্তু নানান বট থেকে বাঁচার জন্য ক্যাপচা ইউজ করা হয় সেটা আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই বট ই বা আসলে কি? — আপনি একজন মোটামুটি অ্যাক্টিভ ইন্টারনেট ইউজার হলে অবশ্যই বট (Bot) শব্দটি শুনে থাকবেন। আর্টিকেলের বিস্তারে প্রবেশের পূর্বেই বলে রাখছি, বট হচ্ছে রোবট শব্দের সংক্ষিপ্ত রুপ।


বট

বট মূলত একটাইপের স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার প্রোগ্রাম যেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করে। কোন বিশেষ কাজ সম্পূর্ণ করানোর জন্য কোন বিশেষ বট প্রোগ্রাম করানো হয়ে থাকে। ইন্টারনেট দুনিয়ায় নানান টাইপের বট রয়েছে, কিন্তু বট নিজে থেকেই কাজ করে আবার কিছু বট শুধু তখন কাজ করে যখন কেউ কোন ইনপুট প্রদান করে। আবার অনেক ম্যালিসিয়াস বট ও রয়েছে যেগুলো আপনার সিস্টেম ধ্বংস করে দিতে পারে।

বর্তমানে ইন্টারনেটের সর্বত্রই বটে ভরপুর। আপনি যখন অনলাইনে কিছু কেনাকাটা করেন আপনার অর্ডার কিন্তু বটই নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে আপনি কোন কোম্পানির ফেসবুক পেজে চ্যাট করতে চাইলে বা তাদের ওয়েবসাইটে কোন টেকনিক্যাল সাপোর্ট পেতে চাইলে চ্যাট বট আপনার সাথে ম্যাসেজ আদান প্রদান করে থাকে। এমনকি আপনার স্মার্টফোনের মধ্যেও নানান টাইপের বট ইন্সটল থাকে যেগুলো আপনাকে বন্ধুর জন্মদিন মনে করিয়ে দেয়, কোন কাপড় কিনবেন তা নির্বাচন করতে সাহায্য করে এমনকি আপনার ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করার ক্ষমতা রাখে।

অনলাইনে অনেক অনেক টাইপের বট রয়েছে, এদের মধ্যে কারো কাজ কাস্টমার সাপোর্ট প্রদান করা, কেউ বিভিন্ন ইনফরমেনশন ডিস্ট্রিবিউট করে, আবার কেউ কেউ নানান প্রোডাক্ট সেলিং করে থাকে।

ইন্টারনেট বট

যেহেতু বট এক প্রকারের কম্পিউটার সফটওয়্যার তাই ইন্টারনেটের নানান অংশে নানান কাজে বট ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে নানান ম্যাসেজিং অ্যাপে বটের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এরা আপনাকে স্বয়ংক্রিয় সাপোর্ট প্রদান করতে সক্ষম আবার অনেক ফেক আইডির পেছনে বট লুকিয়ে থাকে আর মানুষের মতোই আচরণ করে।

আগেই বলেছি অগুনতি টাইপের বট রয়েছে সাড়া ইন্টারনেট জুড়ে, তবে এদের মধ্যে কিছুর সাথে ওয়েবে আপনি প্রতিনিয়তই সময় কাটান। চলুন কিছু উদাহরণ জেনে নেওয়া যাক…

চ্যাট বট

নানান বিজনেস ওয়েবসাইটে বর্তমানে চ্যাট বট ইন্সটল করা থাকে। এরা ভিজিটরদের সাথে মানুষের মতোই চ্যাট করার ক্ষমতা রাখে এবং কমন প্রশ্ন গুলোর উত্তর প্রদান করতে পারে। আপনাকে সার্ভিস লিস্ট প্রদর্শন করা থেকে শুরু করে ব্যাংকের চ্যাট বট আপনার পার্সোনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ম্যানেজ করার সুবিধা পর্যন্ত প্রদান করে থাকে। বর্তমানে জনপ্রিয় ম্যাসেজিং অ্যাপ যেমন- ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ ইত্যাদিতে অনেক চ্যাট বট লক্ষ্য করা যায়।

যখন আপনি কোন প্রশ্ন করবেন আর সেটা যদি চ্যাট বটের প্রোগ্রামে থাকে বটটি আপনাকে ইনস্ট্যান্ট রিপ্লাই প্রদান করবে। যদি আপনার প্রশ্নের উত্তর বটের কাছে না থাকে সেক্ষেত্রে প্রোগ্রাম অনুসারে এটি ঘুরিয়ে উত্তর দেবে বা প্রশ্ন রিলেটেড কোন লিংক শেয়ার করার চেষ্টা করে। চ্যাট বট গুলো সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম নয়, কেবল প্রোগ্রামে থাকা উত্তর গুলোই দিতে সক্ষম হতে পারে।

সোশ্যাল বট

জ্বীনেরা ফেসবুক, টুইটার, বা ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করে কিনা জানিনা, তবে মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন বটদের সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট রয়েছে। শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতে নয়, হতে পারে আপনার পার্সোনাল ব্লগেরও অনেক বট মেম্বার রয়েছে। এই বট গুলোকে নানান কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে, কেউ ভুল তথ্য ছড়ানোর কাজ করে, কেউ মানুষের সাথে চ্যাট করে, কেউ উল্টাপাল্টা কমেন্ট তৈরি করে বেড়ায়, আবার কোন কোন বট ফেইক ভোটিং এর অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগে।

তবে এর ভালো দিক ও রয়েছে, মানে ভালো কাজের জন্য ও অনেক সোশ্যাল বট থাকতে পারে, যেমন- বিভিন্ন কোম্পানিরা তাদের প্রোডাক্ট গুলোর মার্কেটিং করানোর জন্য সোশ্যাল বট তৈরি করে। রাজনৈতিক দল গুলো তাদের ম্যাসেজ লাখো কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই বট গুলো ব্যবহার করে। আবার ফেক ফলোয়ার বা ফেক সাবস্ক্রাইবার প্রদান করার জন্যও এই বট গুলোকে কাজে লাগানো হতে পারে।

গেমিং বট

বর্তমানে অনলাইন গেমিং মানে মাল্টিপ্লেয়ার গেমিং করার যুগ, আর আপনিও যদি এর সাথে তাল মিলিয়ে থাকেন অবশ্যই মাল্টিপ্লেয়ার গেমিং করার সময় কখনো না কখনো বটের সাথে খেলে থাকবেন। এরা মানুষের মতোই খেলে থাকে এবং কমেন্ট্রি প্রদান করে থাকে, এই অভিনেতা গেমার গুলো অনেক সময়ই বট হতে পারে। বিভিন্ন অ্যাকশন গেম, কার্ড প্লে, স্ট্রাটেজি গেম গুলোতে এই ভার্চুয়াল প্লেয়ার গুলোকে দেখতে পাওয়া যায়।

ওয়েব ক্রলারস

হ্যাঁ, আপনি যে প্রতিনিয়ত গুগল সার্চ করেন গুগল আপনার সার্চ রেজাল্ট প্রদর্শন করার পেছনে বিশেষ বটের সাহায্য নিয়ে থাকে যেটাকে ওয়েব ক্রলারস বলা হয়। এই আর্টিকেল থেকে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন কিভাবে সার্চ ইঞ্জিন গুলো কাজ করে। আপনি ওয়েব সার্চ করার সময় মোটেও টের না পেলেও এরাই কিন্তু বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে পেজ খুঁজে বের করতে, তথ্য বিশ্লেষণ করতে এবং সঠিক পেজে নিয়ে যেতে আপনাকে সাহায্য করে থাকে। ওয়েব ক্রলারস না থাকলে হয়তো বা আজকের গুগল এতো বড় হতে পারতো না।

ম্যালিসিয়াস বট

নাম শুনেই হয়তো বুঝতে পারছেন এর কাম কেমন হতে পারে। এরা বিশেষ করে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাক, কম্পিউটার হ্যাক, ওয়েবসাইট হ্যাক, পাসওয়ার্ড ক্র্যাক, ব্রুটফোর্স অ্যাটাক ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। তাছাড়া এর ভালো আর জ্বলন্ত উদাহরণ আপনার কাছেই রয়েছে, আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ রান করেন, সেক্ষেত্রে দেখবেন প্রতিদিনই কিছু স্প্যাম কমেন্ট জমা হচ্ছে, এগুলো কিন্তু ম্যালিসিয়াস বট দ্বারা করানো হয়ে থাকে।

আপনার কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে আপনার কম্পিউটারকেও হ্যাকার ম্যালিসিয়াস বট হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে, এরকমভাবে হ্যাকার বটনেট তৈরি করে আর যেগুলোর সাহায্য নিয়ে এরা ডিডস অ্যাটাক সম্পূর্ণ করতে পারে।

তাছাড়া রয়েছে স্প্যামবট, এরা ওয়েবপেজ থেকে ইমেইল অ্যাড্রেস জোগাড় করে তারপরে একটিই মেইল হাজারো বা লাখো ইমেইল অ্যাড্রেসে পাঠিয়ে দেয়। বিভিন্ন স্ক্র্যাপারস-বট ওয়েবসাইট কন্টেন্ট ফ্রিতে ডাউনলোড করে নিতে পারে এবং অনুমতি ছাড়ায় ব্যবহার করে।


আশা করছি ইন্টারনেট বট সম্পর্কে আপনাকে মোটামুটি বেসিক আইডিয়া প্রদান করতে সক্ষম হয়েছি। আর হ্যাঁ, গুগলে একটু সার্চ করলেই কিভাবে নিজের বট বানিয়ে ফেলতে পারবেন সেটা জানতে পারবেন। যাই হোক, এই ছিল আজকের আর্টিকেলে, আরো কিছু জানার থাকলে এই পোস্টের নিচে কমেন্ট করতে পারেন, আমি আপনার গবেষক হিসেবে কাজ করবো!

/Image Credit: Shutterstock

About the author

stuff03@wirebd

Add comment

Categories