ইউআরএল (URL) — এর সম্পূর্ণ অর্থ হচ্ছে, ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর (Uniform Resource Locator)। বাংলা ভাষায় বলতে গেলে এটা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর নির্দিষ্ট কোন স্থানে বা নির্দিষ্ট কোন রিসোর্স পর্যন্ত পৌছাতে ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
https://facebook.com আর https://fb.me — এই দুইটিই কিন্তু ইউআরএল, এমনকি এই দুইটিই আপনাকে সেম পেজেই নিয়ে যাবে, কিন্তু এরা কিন্তু এক জিনিষ নয়! এদের স্ট্র্যাকচার কিন্তু আলাদা। যদি এরা দুই জনেই একই ওয়েব পেজে নিয়ে যায় তাহলে এদের মধ্যে পার্থক্য কি?
ওয়েল, দেখতেই পাচ্ছেন একটা ইউআরএল আরেকটার শর্ট ভার্সন। আর এভাবে পরিচিতি লাভ করে ইউআরএল শর্টেনার সার্ভিসের! তবে এখানেই কিন্তু গল্পের শেষ হয়। আরো অনেক কিছু জানার রয়েছে, শুধু এই পেজটি নিচের দিকে স্ক্রল করতে বাকি!
ইউআরএল শর্টেনার
ইউআরএল শর্টেনিং বা বাংলায় ইউআরএল সংক্ষিপ্ত করণ — এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমান লম্বা ইউআরএলটিকে ছোট করে লিখা যাতে সেটা বেশি মনে রাখা সম্ভব হয় বা শেয়ার করতে সুবিধা হয় এবং ছোট ভার্সনের ইউআরএল টি সেইম ওয়েব পেজেই নিয়ে যেতে পারে। যতো ইউআরএল শর্টেনার সার্ভিস রয়েছে, যারা কিন্তু একই প্রিন্সিপ্যাল ইউজ করে কাজ করে। ছোট ইউআরএল টিকে বড় ইউআরএল এর কাছে রিডাইরেক্ট করে দেওয়া হয়, যাতে ছোটটিও একই পেজে ভিজিটর নিয়ে যেতে পারে।
উদাহরণ সরূপ; https://www.youtube.com/watch?v=3ql5zKoGlXM এই লম্বা ইউআরএল টিকে কিন্তু ম্যানুয়ালভাবে https://youtu.be/3ql5zKoGlXM ছোট করা যেতে পারে এবং এই দুই ইউআরএল আপনাকে একই ইউটিউব ভিডিও পেজে নিয়ে যাবে। এমনকি ইউটিউব ভিডিও প্লেয়ারের নিচের শেয়ার অপশন থেকে ইউআরএল কপি করতে চাইলে স্বয়ংক্রিয় ছোট ভার্সনটিই কপি হবে।
এটা কিন্তু এমনি এমনি কাজ করে না, অবশ্যই ইউটিউব ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে YouTu.Be ডোমেইনটি সেট করে এবং এটা ইউটিউবের যেকোনো লং লিংকের সাথে রিডাইরেক্ট ম্যাথড ইউজ করে কাজ করে।
তবে অনেক সময় এই পদ্ধতিকে ডোমেইন হ্যাক ও বলা চলে, আলাদা এক্সটেনশন ব্যবহার করে কোন ওয়ার্ড বা ফ্রেজ মেলানো হয়। যেমন ধরুন, ইউটিউবের মেইন ইউআরএল হচ্ছে ইউটিউব ডট কম (YouTube.Com), কিন্তু শর্ট ইউআরএল টি হচ্ছে ইউটিউ ডট বি (YouTu.Be) — এখানে বেলজিয়ামের কান্ট্রি লেভেল ডোমেইন .Be ইউজ করে YouTube ওয়ার্ডটি পরিপূর্ণ করা হয়েছে। আবার Inter.Net — এখানে .Net টপ লেভেল ডোমেইন ইউজ করে Internet (ইন্টারনেট) শব্দটি ম্যাচ করা হয়েছে।
ইউআরএল শর্টেনার সার্ভিস
ইউআরএল শর্টেনিং সিস্টেম পেছনের কয়েক বছরে কিন্তু অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অনেক বড় বড় ব্র্যান্ড এবং কোম্পানি তাদের ফেসবুক বা টুইটার পেজে তাদের মেইন ওয়েবসাইটের লিংক গুলোকে শর্ট করে তারপরে শেয়ার করে। ২০০৯ সালে গুগল ও তাদের নিজস্ব ইউআরএল শর্টেনার সার্ভিস চালু করে, যেটা প্রথমে সবার জন্য উন্মুক্ত না থাকলেও পরে goo.gl নামের একটি ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট তৈরি করে এবং সেখানে সবাই যেকোনো ইউআরএল শর্ট করতে পারতো।
তবে এপ্রিল ১৩, ২০১৮ সাল থেকে কেবল যারা আগে থেকে goo.gl সার্ভিস ইউজ করতো কেবল তারাই ইউআরএল শর্ট করার অপশন পায়। মার্চ ৩০, ২০১৯ সাল থেকে এই সার্ভিসটি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুগল। তবে মার্কেটে এখনো অনেক ইউআরএল শর্টেনার সার্ভিস প্রভাইডার রয়েছে যারা ফ্রি এবং কমার্শিয়াল ইউজের জন্য পেইড সার্ভিস প্রদান করে থাকে, Bit.Ly এদের মধ্যে অন্যতম।
ইউআরএল শর্টেনার সার্ভিস প্রভাইডারদের পাশাপাশি অনেক ওয়েবসাইট তাদের নিজস্ব ইউআরএল শর্টেনিং সিস্টেম ব্যবহার করে এবং সেগুলো শুধু নিজের প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করার জন্য। যেমন- টুইটার, এরা T.Co শর্ট ইউআরএল ব্যবহার করে। টুইটারে শেয়ার করা যেকোনো এক্সটারনাল লিংকের ক্ষেত্রে দেখবেন স্বয়ংক্রিয় T.Co তে শর্ট হয়ে গিয়েছে। ফেসবুকেরও FB.ME রয়েছে — FB.ME এর পরে ফরওয়ার্ড স্ল্যাস দিয়ে যেকোনো ইউজার নেম লিখলে সেই প্রোফাইলে চলে যেতে পারবেন, যেমন আমারটা FB.ME/borhan.azmin।
Bit.Ly এর পাশাপাশি TinyURL কিন্তু বেশ জনপ্রিয় ইউআরএল শর্টেনার সার্ভিস প্রভাইডার। মূলত টাইনি ইউআরএল’ই সর্বপ্রথম ইউআরএল শর্টেনিং সিস্টেম সামনে নিয়ে আসে, যেটা ২০০২ সালে শুরু হয়েছিলো। তারপরে সেটা এতোই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে মোটামুটি ১০০ খানেক সাইট একই টাইপের নামের সাথে বের হয়েছিলো সেই সময়। তারপরে ২০০৯ সালে বিটলি চলে আসে এবং সফলতা অর্জন করে।
বিটলি প্রায় মাসে ৬০০ মিলিয়নেরও অধিক লিংক শর্ট করে এবং প্রিমিয়াম সার্ভিস প্রদান করে থাকে। আপনি নিজের ব্র্যান্ড ডোমেইনের শর্ট ভার্সন কিনে বিটলি টুল ইউজ করে নিজের ব্র্যান্ডেড ইউআরএল শর্টেনার তৈরি করতে পারবেন। তারপরে আপনি সহজেই জানতে পারবেন আপনার শর্ট করা লিংকে কে, কখন, কিভাবে, কোথা থেকে ক্লিক করেছিল। বিটলির মতো আরো অনেক সিমিলার সার্ভিস প্রভাইডার রয়েছে এবং এরাও একই ফিচার প্রদান করে থাকে।
ইউআরএল শর্টেনিং এর গুরুত্ব!
আমি জানি আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান, আর আমি এই পয়েন্ট না লিখলেও আপনি এখন জানেন ইউআরএল শর্টেনিং এর গুরুত্ব। বাট এক প্রকারের তাল বজায় রাখার জন্য এই পয়েন্টে কথা বলা। যাই হোক, মনে করুণ আপনি এসএমএস করে নির্দিষ্ট কোন লিংক আপনার বন্ধুকে সেন্ড করতে চান, কিন্তু এসএমএস এ টেক্সট লিমিট মাত্র ১৬০ ক্যারেক্টার, তবে হ্যাঁ যদিও বর্তমানে অনেক মডার্ন স্মার্টফোন এবং অপারেটর গুলো সর্বচ্চ ১৬০০ ক্যারেক্টার পর্যন্ত টেক্সট সাপোর্ট করে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুন অনেক বড় লিংকের কথা যেটা আপনি এসএমএস এর মাধ্যমে শেয়ার করতে পারবেন না।
আবার টুইটারের ও টুইট টেক্সট লিমিট ২৮০ ক্যারেক্টার, তো আপনি টুইট লিখবেন নাকি লিংক পেস্ট করবেন? — এগুলো ক্ষেত্রে লিংকের শর্ট ভার্সন আপনার জন্য বেশ উপকারি প্রমাণিত হতে পারে। তাছাড়া আরেকটি ফ্যাক্ট ভুলে গেলে চলবে না, তাহলো অবশ্যই লম্বা ইউআরএল থেকে ছোট ইউআরএল দেখতে বেশি সুন্দর ও মার্জিত বলে মনে হয়!
আর হ্যাঁ, শর্ট ইউআরএল মনে রাখাও অনেক সহজ — “এই পয়েন্টে এসে হয়তো বলবেন, ইউআরএল কে মনে রাখে শুনি?” — হ্যাঁ, কেউ না কেউ মনে তো রাখে তাই না? বা আপনারও অজান্তে অনেক সময় মনে রাখার দরকার পড়তে পারে, অ্যাটলিস্ট সেক্ষেত্রে হলেও আপনার কাছে অন্তত অপশন তো থাকছে!
আবার আপনি এটাও বলতে পারেন, শর্ট ইউআরএল নিয়ে কে মাথা ঘামায়? — হ্যাঁ, আপনিই ঘামান, তাই তো এই পোস্ট শেষ পর্যন্ত পড়লেন, আর তার জন্য ধন্যবাদ!