অনলাইনে নিজের পরিচয় গোপন করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে, অনলাইন প্রাইভেসি নিয়ে আমি অনেক আর্টিকেল ও কভার করেছি ইতিমদ্ধে। ভিপিএন এদের মধ্যে সবচাইতে সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি, জাস্ট কয়েক ক্লিক করার মাধ্যমে আপনার আসল আইপি অ্যাড্রেস হাইড হয়ে যাবে এবং আপনি যেকোনো সার্ভার লোকেশন আক্সেস করতে পারবেন সম্পূর্ণ অ্যানোনিমাস ভাবে। কিন্তু এই ডিএনএস লিক (DNS Leak) টার্মটি আপনার ভিপিএন ব্যাবহার করার মূল উদ্দেশ্যকে ঘেঁটে একেবারে “ঘ” করে দিতে পারে।
তবে, আগেই বলে রাখা ভালো যে, আপনি যদি আপনার অনলাইন প্রাইভেসি নিয়ে মারাত্মক সতর্ক হোন, মানে মোটেও আপনার আইএসপি বা যেকোনো ওয়েবসাইট’কে আপনার অ্যাক্টিভিটি প্রকাশ না করাতে চান — সেক্ষেত্রেই কেবল ডিএনএস লিকস সমস্যা তৈরি করতে পারে। সাধারণ ইউজের ক্ষেত্রে এটা তেমন ব্যাপার রাখে না।
তারপরেও চলুন আলোচনা করা যাক, কিভাবে ডিএনএস লিকস ঘটে এবং কিভাবে এটা ফিক্স করা যেতে পারে।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
ডিএনএস লিক
আপনি যদি ডিএনএস কি বা কিভাবে কাজ করে সেটাই পূর্বে না জানেন, সেক্ষেত্রে সিয়াম একান্ত’র এই আর্টিকেলটি পড়ে ফেলতে পারেন। আপনি জাস্ট আপনার ব্রাউজার ওপেন করেন, যে ওয়েবসাইট প্রবেশ করতে চান তার ঠিকানা লিখেন এবং এন্টার প্রেস করে ওয়েবসাইট’টি আক্সেস করেন, রাইট? হ্যাঁ, ইন্টারনেটে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করা এতোটাই সহজ ব্যাপার। কিন্তু, এর পেছনে বিশেষ কয়েক ধাপ সম্পূর্ণ করতে হয় আপনার কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্কিং সিস্টেমকে।
যখন আপনি কোন ওয়েবপেজ লোড করার জন্য রিকোয়েস্ট সেন্ড করেন, আপনার কম্পিউটার প্রথমে ডোমেইন নেম থেকে সার্ভার আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে। আর এই আইপি অ্যাড্রেসটি খুঁজে পেতে আপনার কম্পিউটারকে ডিএনএস সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। সাধারণত, আপনার কম্পিউটার আইএসপির ডিফল্ট ডিএনএস সার্ভার থেকে আইপি খুঁজে পেতে চেষ্টা করে। তবে যদি আপনি ভিপিএন ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে ভিপিএন ডিএনএস সার্ভার থেকে আইপি খুঁজে বের করবে আপনার কম্পিউটার।
এখন যদি আপনার রিকোয়েস্ট গুলো ভিপিএন সার্ভার দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেক্ষেত্রে এই ডাটা গুলো আপনার আইএসপি ট্র্যাক করতে পারবে না। কিন্তু কোন কারণে যদি এমন হয়, কিছু ডাটা ভিপিএন সার্ভারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আর কিছু ডাটা ডিফল্ট ডিএনএস দিয়ে সল্ভ হচ্ছে, সেক্ষেত্রে আপনার প্রাইভেসি রিস্কে পরে যাবে বা একেই ডিএনএস লিক ও বলা হয়।
ডিএনএস লিক হলে দুই দিক থেকেই আপনার প্রাইভেসি নষ্ট হতে পারে। প্রথমত, আপনার ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিটি সম্পর্কে আপনার আইএসপি সবকিছু জেনে যাবে এবং আপনার ডাটা তারা সেল করবে। দ্বিতীয়ত, আপনি যে ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করবেন, তারাও আপনার আইএসপি, আপনার আসল আইপি অ্যাড্রেস, আপনার আইপি লোকেশন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারবে।
কেন ডিএনএস লিকস ঘটে?
বেশিরভাগ সময় ভিপিএন ক্লায়েন্টের সমস্যার জন্যই ডিএনএস লিক ঘটতে পারে। যে ভিপিএন সফটওয়্যার গুলোকে ম্যানুয়াল কনফিগার করতে হয়, সেক্ষেত্রে কনফিগারেশন প্রবলেম থেকেও ডিএনএস লিক ঘটতে পারে। তবে বেশিরভাগ ভিপিএন সফটওয়্যার গুলো রেডিমেড কনফিগারেশনের সাথেই আসে। অনেক সময় ভিপিএন প্রভাইডারদের সিস্টেমের জন্যও এই লিক ঘটতে পারে।
যাই হোক, আপনি উইন্ডোজ, ম্যাক, অ্যান্ড্রয়েড, লিনাক্স — ইত্যাদি প্রায় সকল অপারেটিং সিস্টেমেই ডিএনএস লিক চেকিং চালাতে পারেন।
প্রথমত, আপনি যখন কোন ভিপিএন সার্ভারের সাথে আপনার কম্পিউটারকে কানেক্ট করেন, ভিপিএন কানেক্ট হতে আপনার আইএসপি এবং ডিফল্ট ডিএনএস ব্যবহৃত হয়। মানে আপনার আইএসপি বুঝতেই পারছে আপনি ভিপিএন কানেক্ট করলেন। কিন্তু একবার ভিপিএন কানেক্ট হয়ে যাওয়ার পরে আপনার কম্পিউটারের সকল নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক গুলো ভিপিএন সার্ভারের মধ্যদিয়েই ট্র্যান্সফার করানো হয়। এই পদ্ধতিতে আপনার ডিএনএস লিক এর কোনই আসঙ্খা থাকে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার ভিপিএন ক্লায়েন্ট ঠিকঠাক মতো কনফিগার্ড হয়ে থাকে।
কিন্তু অনেক সময় কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে আপনার কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিক আর উপরের প্যাটার্ন অনুসরণ করে না। ট্র্যাফিক ভিপিএন ট্যানেল থেকে বের হয়ে ডিফল্ট ডিএনএস সার্ভার ব্যবহার করে প্রবাহিত হতে পারে, এতেই ডিএনএস লিক সমস্যা ঘটে এবং আপনার প্রাইভেসি নষ্ট হয়ে যায়। ডিফল্ট ডিএনএস সার্ভার এনক্রিপশন করানো থাকে না, ফলে আপনার নেটওয়ার্ক ট্র্যাফিকের উপর অন্য কেউ সহজেই নজর রাখতে সক্ষম হতে পারে।
তবে কিছু জানা কারণ রয়েছে, যেগুলোর জন্য ডিএনএস লিক ঘটতে পারে। যেমন- আপনার ভিপিএন তো অবশ্যই একবার কানেক্ট হয়ে যাওয়ার পরে নির্দিষ্ট কোন ডিএনএস সার্ভার ব্যবহার করে। কিন্তু যদি কোন কারণে ঐ ডিএনএস সার্ভার ডাউন থাকে বা ওভার ট্রাফিকের জন্য ডিএনএস সার্ভার আক্সেস না করা যায়, সেক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার ট্র্যাফিক ডিফল্ট ডিএনএস ব্যবহার করতে পারে, এতে সহজেই ডিএনএস লিক হয়ে যেতে পারে।
ব্রাউজার থেকে কিভাবে ডিএনএস লিক চেক করবেন?
আপনার কম্পিউটার ডিএনএস লিক করছে কিনা তা অনেক সহজেই আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে চেক করা সম্ভব। এটি চেক করার জন্য অনেক পদ্ধতিও রয়েছে তবে সবচাইতে সহজ অনেক কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে, dnsleaktest.com ব্যবহার করা। এটি টুলটি ইউজ করা অত্যন্ত সহজ, এটা কতিপয় টেস্ট চালায় এবং আপনার আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
প্রথমে আপনার কম্পিউটারে বা ফোনে ভিপিএন কানেক্ট করে নিন, এরপরে, dnsleaktest.com ওয়েবসাইট’টিতে প্রবেশ করুণ। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার সাথে সাথে দুই টাইপের টেস্টের কথা বলা হবে। স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট এবং এক্সটেন্ডেড টেস্ট — এখানে এক্সটেন্ডেড টেস্ট রেকোমেন্ডেড!
এখন কতিপয় টেস্ট চালানো হবে এবং এই অনলাইন টুলটি ভিপিএন বাদে আপনার আসল আইপি অ্যাড্রেসটিকেও খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবে। যদি রেজাল্টে আপনার ভিপিএন আইপি ব্যাতিত আর কোন আইপি খুঁজে না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে আপনি সিকিউর। কিন্তু যদি রেজাল্টে আলাদা আলাদা আইপি দেখতে পাওয়া যায় এবং আপনার আসল আইপিও দেখা যায় — সেক্ষেত্রে আপনার ডিএনএস লিক হচ্ছে।
তবে আলাদা আলাদা আইপি দেখা গেলেই যে আপনার ডিএনএস লিক হচ্ছে এমনটা নাও হতে পারে। অনেক ভিপিএন প্রভাইডার সার্ভার প্রভাইড করার জন্য আলাদা আলাদা সার্ভার ব্যবহার করে থাকে। এগুলো সেই সার্ভার আইপি ও হতে পারে। তবে হুবহু আপনার পাবলিক আইপি শো করলে অবশ্যই সমস্যা রয়েছে। এখন আপনি যদি নিশ্চিত হন যে আপনার ডিএনএস লিক হচ্ছে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই নিচের ফিক্স গুলো ট্রায় করতে পারেন।
ডিএনএস লিকস ফিক্স!
দুইটি আসল স্টেপে আপনি ডিএনএস লিক হওয়াকে ফিক্স করতে পারেন। অবশ্যই আপনাকে চেক করতে হবে আপনার ভিপিএন কনফিগারেশন ঠিকঠাক রয়েছে কিনা। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ ভিপিএন ক্লায়েন্ট ম্যানুয়াল কনফিগ করতে হয় না, সেক্ষেত্রে এখানে আপনার তেমন কিছুই করার থাকে না। তবে আমি রেকমেন্ড করবো, আপনি যে ভিপিএন ক্লায়েন্টই ব্যবহার করুণ না কেন, অবশ্যই ক্লায়েন্ট সফটওয়্যারটিকে আপ-টু-ডেটেড রাখার চেষ্টা করবেন। যদি সফটওয়্যারে কোন আলাদা অপশন থাকে সেগুলো ঠিকঠাক কনফিগ করা রয়েছে কিনা চেক করতে হবে।
অনেক ভিপিএন প্রভাইডার তাদের সফটওয়্যারের জন্য কাস্টম সেটিংস ডাউনলোড করার অপশন দিয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে লেটেস্ট সেটিং ব্যবহার করা বেস্ট হবে।
আরেকটি বেস্ট অপশন হচ্ছে কিল সুইচ ব্যবহার করা। অনেক ভিপিএন সফটওয়্যারের সাথে বর্তমানে কিল সুইচ অপশনটি ইঙ্কলুড করা থাকে। যদি ভিপিএন কানেক্ট না থাকে সেক্ষেত্রে আপনার ডিভাইজে আর ইন্টারনেট আক্সেসই থাকবে না। সিকিউরিটি নিয়ে অনেক সিরিয়াস হয়ে থাকলে অবশ্যই কিল সুইচ ইউজ করতে পারেন। তবে ফায়ারওয়াল কেও কিল সুইচের মতো আচরণ করানো যেতে পারে। যদিও এটাকে কনফিগার করানো একটু টেকনিক্যাল হয়ে যায়, তারপরেও এটা বেশ কাজ করে।
আমি নিশ্চিত, এতক্ষণে আপনি বেশ বুঝতে পারছেন ডিএনএস লিক কিভাবে আপনার প্রাইভেসি নষ্ট করতে পারে। আপনার কানেকশন থেকে ডিএনএস লিক হচ্ছে কিনা তা টেস্ট করতে পারেন এবং আমাদের নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
Image Credit: Shutterstock
খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল ছিল। আমার খুব ভালো লেগেছে। উপকারী আর্টিকেল উপহার দেওয়ার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।