আজকের পিডিএফ ফাইল—সর্বপ্রথম অ্যাডোবি দ্বারা উন্নতি করা হয়েছিলো, তারা সর্বপ্রথম ডট পিডিএফ এক্সটেনশনের ডকুমেন্ট ফাইল সামনে নিয়ে আসে, যেটার সম্পূর্ণ অর্থ হচ্ছে, পোর্টেবল ডকুমেন্ট ফরম্যাট ফাইল। পিডিএফ সত্যিই এক শক্তিশালী ডকুমেন্ট ফাইল ফরম্যাট, যেটা শুধু টেক্সট আর ইমেজ নয় বরং ইন্টারেক্টিভ বাটন, হাইপারলিঙ্ক, এম্বেড করা ফন্ট, ভিডিও, এবং আরো অনেক কিছু ধারণ করতে পারে। আপনি হয়তো প্রায়ই প্রোডাক্ট ডকুমেন্ট, জব লেটার, ই-বুক, স্ক্যান করা ডকুমেন্ট, এবং আরো আলাদা ডকুমেন্ট গুলোকে পিডিএফ ফরম্যাটে থাকতে দেখেন। কেনোনা পিডিএফ বহুল জনপ্রিয় একটি ডকুমেন্ট আর আজও এর বিস্তর ব্যবহার রয়েছে।
এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু সমূহ
পিডিএফ
পিডিএফ বর্তমানে অফলাইন এবং অনলাইন দুই স্থানেই ব্যাপক জনপ্রিয়। যখন এই ফাইল এক্সটেনশনটি প্রথম উদ্ভাবিত হয়, ১৯৯০ সালে, তখন ইন্টারনেট কেবল শিশু পর্যায়ে ছিল। সে সময় বিশেষ করে অফলাইনে এই ফাইল ফরম্যাট অত্যাধিক ব্যবহৃত হতো। অফলাইন ডকুমেন্ট প্রিন্টিং, পোস্টার, বা ডেক্সটপ থেকে যেকোনো ডকুমেন্ট প্রিন্টিং এর ক্ষেত্রে পিডিএফ ব্যবহৃত হতো। তবে আজকের দিনে পিডিএফ যতোটা পাওয়ার ফুল সাথে যতো প্রকারের জিনিষ পিডিএফ এ ধারণ করা যায়, শুরুর দিকে পিডিএফ এ এতোকিছু ধারণ করা যেতো না। সাথে পিডিএফ এর সাথে সমস্যা ছিল, বড় ডকুমেন্ট ফাইল গুলো অনেক বড় সাইজের ছিল সাথে অনেক স্লো ছিল, ফাইল গুলো ওপেন হতে আর পড়তে সিস্টেমের বারোটা বেজে যেতো।
কয়েক বছর পরে অ্যাডোবি, পিডিএফ ফাইলের জন্য ফ্রী পিডিএফ রিডার রিলিজ করে, তারপর থেকে পিডিএফ একটি গুড ডকুমেন্ট ফাইল স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে পরিচতি পায় এবং অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী ফাইল ফরম্যাটকে পেছনে ফেলে দেয়। প্রথমের দিকে পিডিএফ’কে শুধু অ্যাডোবি নিজেই নিয়ন্ত্রন করবে, অর্থাৎ এটি কিভাবে কাজ করবে বা এতে কি ফিচার আনা হবে বা এটা কিভাবে পড়া হবে, সেটা শুধু মাত্র অ্যাডোবি’র হাতে ছিল। কিন্তু পরে অ্যাডোবি পিডিএফকে ওপেন স্ট্যান্ডার্ড করে দেয়, এর জন্য আজ শতশত আলাদা পিডিএফ রিডার দেখতে পাওয়া যায়। আজকের মেজর ইন্টারনেট ব্রাউজার গুলো ডিফল্টভাবে পিডিএফ ডকুমেন্ট রীড করতে পারে। তাই গুগল ক্রোম ইন্সটল থাকলে, আর আলাদা পিডিএফ রিডারের দরকার নেই আপনার।
কিভাবে পিডিএফ ফাইল খুলবেন?
পিডিএফ ফাইল ওপেন করার চিন্তা করতেই অবশ্যই আপনার মাথায় প্রথমে আসে যেকোনো পিডিএফ রিডারের কথা, তাই না? অ্যাডোবি’র নিজস্ব প্রোডাক্ট, পিডিএফ রিডার অনেকটা দক্ষ প্রোগ্রাম, পিডিএফ ফাইল ওপেন করার জন্য। কিন্তু আরো অনেক পিডিএফ রিডার বর্তমান মার্কেটে মজুদ রয়েছে, এদের মধ্যে অনেকেরই অঝথা ফিচারে ভর্তি, যেগুলো সত্যিই আপনার কাজে লাগবে না। আজকের দিনের বেশিরভাগ ওয়েব ব্রাউজার যেমন- ক্রোম, ফায়ারফক্স, মাইক্রোসফট এজ —কোন প্রকারের আলাদা এক্সটেনশন ব্যাতিত পিডিএফ ফাইল ওপেন করতে পারে। আপনি অনলাইন থেকে কোন পিডিএফ ডাউনলোড করতে গেলে লক্ষ্য করে থাকবেন হয়তো, সেগুলো সরাসরি ওপেনই হয়ে যায়।
যেহেতু আজকের ওয়েব ব্রাউজার গুলো সরাসরি পিডিএফ ফাইল রীড করতে পারে, তাই এই পয়েন্টে আমি অ্যাডোবি পিডিএফ রিডার ইন্সটল করারও প্রয়োজন বোধ করি না। কিন্তু আপনি যদি পিডিএফ রীড করা ছাড়াও আলাদা ফিচার গুলো পেতে চান, সেক্ষেত্রে অ্যাডোবি পিডিএফ রিডার বা আলাদা পিডিএফ রিডার সফটওয়্যার গুলো ইন্সটল করতে পারেন। আমি রেকমেন্ড করবো Sumatra PDF রিডার সফটওয়্যার’টি ব্যবহার করতে, এটি সত্যি ফ্রী আর পাওয়ারফুল!
কিভাবে পিডিএফ ফাইল এডিট করবেন?
অ্যাডোবি অ্যাক্রোব্যাট পিডিএফ এডিট করার জন্য সবচাইতে জনপ্রিয় সফটওয়্যার। কিন্তু আপনি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহার করেও পিডিএফ এবং আলাদা এক্সটেনশনের ডকুমেন্ট ফাইল এডিট করতে পারবেন। তাছাড়া আরেকটি সফটওয়্যার পিডিএফ এডিটর হিসেবে বেশ জনপ্রিয়, ফ্যানটম পিডিএফ! এটাও ব্যবহার করে দেখতে পারেন। শুধু ডেক্সটপ সফটওয়্যার নির্ভর পিডিএফ এডিটর নয়, অনেক অনলাইন নির্ভর পিডিএফ এডিটর রয়েছে, ব্যাস আপনার ফাইলটি অনলাইনে আপলোড করে দিন, এর পরে এডিট করে আবার কম্পিউটারে ডাউনলোড করে নিন, এতোটাই সহজ! FormSwift’s Free PDF Editor, PDFescape, DocHub, এবং PDF Buddy ফ্রী অনলাইন এডিটর হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
নোটঃ যদি আপনারা চান, সেক্ষেত্রে আমি পিডিএফ ফাইল এডিট করার বিস্তারিত টিউটোরিয়াল পাবলিশ করবো, তবে সেটা আমাকে নিচে কমেন্ট এর মাধ্যমে রিকোয়েস্ট করতে হবে।
কিভাবে পিডিএফ ফাইল কনভার্ট করবেন?
অনেকে পিডিএফ ফাইলকে আলাদা ডকুমেন্ট ফাইলে কনভার্ট করতে চায়, যাতে তারা সেটাকে আলাদা আলাদা ভাবে এডিট করতে পারে, এবং কাজ করিয়ে নিতে পারে সেই পিডিএফ থেকে। পিডিএফ কনভার্ট করা মানে সেই ফাইলকে শুধু পিডিএফ রিডার নয়, আলাদা সফটওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করেও যাতে এডিট করা যায়। যেমন অনেকে পিডিএফ ফাইলকে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ডকুমেন্ট ফাইল ডট ডিওসি বা ডিওসিএক্স ফরম্যাটে কনভার্ট করতে চায়। এতে ফাইলটি শুধু অফিস ওয়ার্ড বা অ্যাডোবি ফটোশপ নয়, বরং OpenOffice এবং LibreOffice দ্বারাও ওপেন করা যাবে।
এই প্রোগ্রাম গুলোর সাহায্যে পিডিএফ’কে ওপেন করার মাধ্যমে পিডিএফ ফাইলকে আরো বিস্তারিতভাবে এডিট করা যাবে। তাই অবশ্যই ফাইল কনভার্ট করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যদি আপনি সরাসরি পিডিএফ ফাইলকেই এডিট করতে চান, সেক্ষেত্রে আমি উপরে তো কিছু সলিউসন লিখেই দিয়েছি। শুধু পিডিএফ থেকে আলাদা ফরম্যাটে নয়, আলাদা ফরম্যাট ফাইলকেউ পিডিএফ ফাইলে কনভার্ট করতে পারেন। আপনি যেকোনো মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ডকুমেন্ট, ইমেজ, টেক্সট সবকিছুকেই পিডিএফ ফরম্যাটে কনভার্ট করতে পারবেন। কিছু কিছু প্রোগ্রাম একসাথে সবকাজই করে দিতে পারে, যেমন আপনি একসাথে পিডিএফ কনভার্ট করতে পারবেন, আলাদা ফরম্যাট ফাইলকে পিডিএফ বানাতে পারবেন, আবার পিডিএফ এডিটও করতে পারবেন। Calibre —কে আপনি এই ধরণের প্রোগ্রামের উদাহরণ হিসেবে নিতে পারেন, এটি ইবুক ফরম্যাট থেকে পিডিএফ কনভার্ট করতে পারে আবার পিডিএফ থেকে ইবুকে কনভার্ট করতে পারে।
পিডিএফ ফাইল সিকিউরিটি
পিডিএফ ফাইলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি ফিচার, আপনি একে পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড বানাতে পারবেন, অর্থাৎ ফাইলটি ওপেন করার জন্য, এডিট করার জন্য, কমেন্ট যোগ করার জন্য, পেজ যোগ করার জন্য পাসওয়ার্ড প্রয়োজনীয় হবে। এতে আপনার ডকুমেন্ট ফাইলকে সিকিউর বানানো যাবে। অনেক সফটওয়্যার প্রোগ্রাম রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ফাইলকে পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড বানাতে পারবেন। পিডিএফ-প্রটেক্ট ব্যবহার করে আপনি যেকোনো পিডিএফ’কে পাসওয়ার্ড প্রটেক্টেড বানাতে পারবেন। যাই হোক, এখানে আরেকটি সমস্যা রয়েছে, যদি আপনি পিডিএফ ফাইল পাসওয়ার্ড নিজেই ভুলে যান, সেক্ষেত্রে আপনি নিজের ফাইলের উপর নিজেই অ্যাক্সেস হারিয়ে ফেলতে পারেন, আর এটা সত্যিই বিরাট মাথা ব্যাথায় পরিনত হতে পারে। তাই, দুর্ভাগ্যবসত পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে পিডিএফ-ক্র্যাক, জিইউএ-পিডিএফ, ফ্রী মাই-পিডিএফ (অনলাইন টুল) —এই টুল গুলো ব্যবহার করে সহজেই পিডিএফ পাসওয়ার্ড রিকভার করতে পারবেন!
নোটঃ যদি আপনারা চান, সেক্ষেত্রে আমি পিডিএফ ফাইল পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করার বিস্তারিত টিউটোরিয়াল পাবলিশ করবো, তবে সেটা আমাকে নিচে কমেন্ট এর মাধ্যমে রিকোয়েস্ট করতে হবে।
কেন এখনো পিডিএফ গুরুত্বপূর্ণ?
পিডিএফ এখনো সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপক জনপ্রিয়, এর সবচাইতে বড় কারন হচ্ছে পোর্টাবিলিটি। আরেকটি ব্যবহার হচ্ছে, আপনি কোন ডিভাইজ থেকে ফাইলটি দেখবেন সেটা কোন ব্যাপার না, আপনি কম্পিউটার থেকে দেখেন, মোবাইল থেকে দেখেন, ট্যাবলেট থেকে দেখেন, সব জায়গাতে সমান এক্সপেরিয়েন্স এবং সমান দক্ষতা দেখতে পাবেন। আপনি পিডিএফ ফাইলে কোন ফন্ট ব্যবহার করেছেন, সেটা যদি আলাদা কোন কম্পিউটারে ইন্সটল নাও থাকে, তারপরেও সমস্যা নেই, কেনোনা ফন্ট পিডিএফ’এ নিজে থেকে এমবেড করা থাকে, তাই নো প্রবলেম।
তাছাড়া চিন্তা করে দেখুন ডকুমেন্ট শেয়ারিং এর কথা, আপনি কাউকে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ডকুমেন্ট সেন্ড করলেন, অবশ্যই তার কম্পিউটারে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা আলাদা ডকুমেন্ট ভিউয়ার সফটওয়্যার ইন্সটল থাকতে হবে, যদিও গুগল ডকস ব্যবহার করেও ওয়ার্ড ফাইল অ্যাক্সেস করা যায়, কিন্তু সেটা অনেকেই জানে না। ব্যাট যদি কথা বলি পিডিএফ নিয়ে, সেক্ষেত্রে যে ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ফাইলটি ডাউনলোড করেছেন, সেখানেই আরামে ভিউও করতে পারবেন, নো আলাদা টেনশন!
তো আপনি কতোটা পিডিএফ ফাইলের ভক্ত বা কতোবার পিডিএফ ফাইল ব্যবহার করেন? নাকি ওয়ার্ড ফাইলকে আপনি প্রাইমারী ডকুমেন্ট ফাইল হিসেবে ব্যবহার করেন? আমাদের সবকিছু নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিন। আপনার পিডিএফ ফাইল পাসওয়ার্ড কি আপনি ভুলে গেছেন? নিচে কমেন্ট করে জানান, অথবা আপনি আলাদা ডকুমেন্ট এক্সটেনশন ফাইল ব্যবহার করলে, সেটা কেন ব্যবহার করেন, আমাদের সবকিছু শেয়ার করুণ!
Images: Shutterstock.com